আমলা-রাজনীতিবিদ: ‘দ্বন্দ্ব’ কেন? সমাধান কোথায়?
২৭ আগস্ট ২০২১এসব ক্ষেত্রে নিজের সহকর্মীদের পাশে পাচ্ছে উভয়পক্ষই৷ বিপরীতপক্ষের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে সীমালঙ্ঘনের অভিযোগ৷
বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের কথা বলা হয়েছে৷ এর মধ্যে রাজনীতিবিদরা থাকেন দুটিতে৷ প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রিসভার পাশাপাশি চার স্তরের স্থানীয় সরকার-সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে নির্বাহী বিভাগে৷ জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকার হলেও এর নির্বাহী কর্তৃত্ব খুবই কম৷ এই নির্বাহী বিভাগেই কাজ করে আমলাতন্ত্র৷
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের মতে,এখানে নির্বাহী বিভাগের অনেক অংশ আছে৷ সামরিক বাহিনী আছে৷ বেসামরিক প্রশাসনের অসংখ্য শাখা প্রশাখা আছে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে৷
রাজনীতিবিদদের কাজের দ্বিতীয় জায়গা আইন বিভাগ৷ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে তারা আইন সভায় যান৷ সেখানে তৈরি করেন আইন৷ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ হওয়ার কথা এখানেই৷
সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাহী ও আইন-উভয় জায়গায় থাকা ব্যক্তিদের সাথেই দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে আমলাতন্ত্র৷ তবে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ ৷ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ হাওলাদারের মতে, মাঠ পর্যায়ে এই দ্বন্দ্ব মূলত আমলাতন্ত্রের একটা ক্যাডারের সাথে৷ প্রশাসন ক্যাডার৷
বরিশালে সংঘাত
সম্প্রতি বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে পুলিশ-আনসারদের সাথে সংঘাতে জড়িয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা৷ শেষ পর্যন্ত এই ঘটনা দাঁড়িয়ে যায় বরিশাল সিটি মেয়র বনাম ইউএনও'তে৷ উভয়পক্ষ উভয়পক্ষের বিরুদ্ধে গুলি বর্ষণের অভিযোগ করে৷ মেয়রের বিরুদ্ধে একটি মামলায় বাদী হন ইউএনও মুনিবুর রহমান৷ আবার মেয়রপক্ষের মামলার আসামী তিনি৷
সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর ছেলে৷ তাই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই তার পক্ষে দাঁড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ৷
অন্যদিকে ইউএনও মুনিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা৷ সমসাময়িক শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা তার জন্য সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়৷ তবে তার পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে এগিয়ে আসে সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন৷
তবে তাদের বিবৃতিতে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত' শব্দমালা ব্যবহারের কারণে এটা বুমেরাং হয়ে যায়৷ এর সাথে সচিবরা একমত নন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব, যদিও বিবৃতিটি একজন সচিবের স্বাক্ষরেই এসেছিল৷
জেলায় জেলায় সচিব, সংসদে উত্তাপ
করোনাভাইরাসে স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সরকারি কার্যক্রম সমন্বয়ে ৬৪ জেলায় সচিবদেরকে দায়িত্ব দেয়ার পর গত জুন মাসে এই ইস্যু উত্তাপ ছড়িয়েছে সংসদে৷
ওই দায়িত্ব দেয়ার মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের কর্তৃত্ব কাজ, ম্লান হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ৷ তিনি বলেন, তাদের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে জেলার দায়িত্ব পেতো মন্ত্রীরা৷ এখন সেটা আমলারা নিয়ে নিয়েছে৷
একই দিন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দেশ চালাচ্ছে জগৎশেঠ আর আমলারা৷ রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে৷
জেলায় জেলায় সচিবদের দায়িত্ব দেয়া প্রসঙ্গে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, যে কাজটা আমলাতন্ত্র করছে, সেটা তাদেরই করার কথা৷ সংসদে যে আলোচনা হয়েছে, তারাতো আইন প্রণেতা৷ তাদের আইন প্রণয়ন করার কথা৷
সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমিতো মনে করি, রিলিফের কাজ সুষ্ঠুভাবে হয়েছে কি-না, এটা দেখা আমলাদেরই কাজ৷ আপনার গাড়ি ড্রাইভার চালায়, এখন ড্রাইভার কি মালিক হয়ে গেল?
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশের ক্ষমতার মালিক জনপ্রতিনিধি বা আমলা কেউ নন৷ সংবিধান অনুসারে দেশের ক্ষমতার মালিক জনগণ৷ জনগণ যে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে, সংবিধান অনুসারে তাদের সুনির্দিষ্ট কাজ থাকে৷ ‘‘এক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা ও নির্বাচিত নির্বাহীরা (মন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত) উভয়ে নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন৷ এর বাইরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও (এমপিরা) যখন তখন নির্বাহী কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না৷ তবে তিনি এদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কাজ করতে পারেন৷ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং নিয়োগকৃত সরকারি কর্মকর্তা উভয়েরই সরকার পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে৷ সুতরাং তাদেরকে নিজের সীমানায় থাকতে হবে৷’’
আমলাদের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এসংক্রান্ত একটি জাতীয় কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷ কিন্তু সভাপতি হলেও অনেক সিদ্ধান্ত তাকে না জানিয়ে নেয়া হয় বলে গত এপ্রিলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন তিনি৷ আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের থেকে সিদ্ধান্ত না নিলেও অন্তত পরামর্শ তো করতে পারে৷ আমরা তাহলে আমাদের মতামতটা দিতে পারি৷’’
কমিটি গঠনের এক মাস পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘আমি দেশ বিদেশের সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি৷ আমি তাদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারি না৷’’
দ্বদ্বের কেন্দ্রে প্রশাসন ক্যাডার
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে উপজেলা পরিষদ হয়েছে, যাকে প্রশাসনিক একাংশ বলা হয়৷’’
‘‘এর নিকট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের ১৭টি দপ্তর এবং তাদের কার্যাবলী হস্তান্তরের কথা৷ বাস্তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যতিরেকে বাকি ১৬টি দপ্তরের কর্তৃত্ব এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ন্যস্ত৷ এ কারণে উপজেলা পরিষদ একটি অকার্যকর ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে৷’’
ইউএনওদের যে আনসার নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে, সেটিও তৃণমূলে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন এই উপজেলা চেয়ারম্যান৷
তিনি বলেন, ‘‘এখন দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেখানেই যে কাজ করেন, সশস্ত্র আনসার প্রহরায় করেন৷ মনে হয় যেন ওই উপজেলায় একটি বিকল্প পুলিশ থানা তৈরি করা হয়েছে৷’’
‘‘তারা কিন্তু প্রশাসক নয়, তারা কর্মকর্তা-কর্মচারী৷ প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয় ব্যতীত নিচের যে চারটি স্তর রয়েছে, সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাছে মর্যাদাহীন অবস্থায় আছে৷’’
‘‘তারা এমনকি মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান সবাইকে ‘মহোদয়' বলে অ্যাড্রেস করেন৷ কিন্তু নিজেদের মধ্যে ‘স্যার' অ্যাড্রেস করেন৷’’
‘‘একজন চৌকিদারের বেতনও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে হতো৷ এখন সেটাও ইউএনও'র স্বাক্ষরে হয়৷’’
‘‘স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা আইন ভাঙলে তারা বরখাস্ত হচ্ছে৷ আপনি দেখান তো, আইন ও সংবিধান লংঘনের কারণে কোন ইউএনও, কোন উপসচিব, কোন সচিবের চাকরি গেছে? না, যায়নি৷ কেবল জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তাদের প্রচণ্ড অবহেলা৷ এই অবহেলা মূলত জনগণের প্রতি৷’’
‘‘কর্মচারীরা এখন দেশের মালিক হয়ে গেছে৷ তা-ও কেবল একটা ক্যাডার৷’’
এক্ষেত্রে অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করছেন, উপজেলা পর্যায়ে আমলারা পরিষদের অধীনেই কাজ করার কথা৷ কিন্তু পরিষদ নেতৃবৃন্দ তাদের সক্ষমতার অভাবে এবং সরকারের কিছু নিয়ম নীতির বাধার কারণে পরিষদকে পুরোপুরি কার্যকর করতে পারেননি৷ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউএনও মূলত উপজেলা পরিষদেরই একজন হস্তান্তরিত কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা৷ তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তথা প্রধান নির্বাহীর অধীনে কাজ করার কথা৷ কিন্তু সেই কাজটি হচ্ছে না৷ তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত৷
‘দ্বন্দ্বের চেয়ে মিলই বেশি’
তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘আমলাতন্ত্রকে কাজ করানোর ক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতিবিদদের দুইটা ঘাটতি৷ একটা হচ্ছে, তাদের সততার অভাব৷ তারা ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক স্বার্থে রাজনীতিকে ব্যবহার করে৷ সে কারণে তারা সরকারি কর্মচারীদের অনুগ্রহ প্রার্থী হয়৷ তাই সরকারি কর্মচারীরা তাদেরকে যথোপযুক্ত সমীহ করে না৷
‘‘দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, জনপ্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতার অভাব৷ তারা মনোযোগ দিয়ে আইন বিষয়ক কোন কাগজপত্র পড়েন না৷ গঠনমূলক সমালোচনার পরিবর্তে তারা মেঠো বক্তব্যের স্টাইলে সরকারি কাজের সমালোচনা করেন৷ এটা রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াত্ব এবং আমাদের দুর্ভাগ্য৷ পশ্চিমে রাজনীতিবিদরা সচিবদের চেয়েও বেশি পড়াশোনা করে৷’’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিবিদরাই রাজনীতিকে অফিসারদের হাতে তুলে দিয়েছেন৷ এখন আপনি পার্টিকে অর্গানাইজ করেন না, ভোটে প্রার্থীর জয়-পরাজয় সরকারি কর্মচারীদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তারা উল্টো জনপ্রতিনিধির উপর খবরদারি করছে৷’’
তার মতে, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা প্রকল্পের অর্থে সম্পূর্ণ কাজ না করে প্রায়শই দুর্নীতি করেন৷ এক্ষেত্রে দেখা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তারা সমঝোতার মাধ্যমে এই দুর্নীতি করেন৷ “এখানেতো দ্বন্দ্বের চেয়ে মিলই বেশি৷ সমঝোতা করে লুটপাট হয়,’’ বলেন তিনি৷
‘সবাইকে থাকতে হবে নিজ সীমানায়’
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পৌরসভার মেয়র৷ পরে এমপি হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন এখনকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক৷ নির্বাহী বিভাগের তিন স্তরে এবং আইন বিভাগে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তার৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা রাজনীতি করি, যারা সরকারি কর্মচারী-তারা যার যার সীমার মধ্যে যদি আমরা থাকি, তাহলে কখনোই কোন সমস্যা হবে না৷ কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী না৷’’
‘‘বুরোক্রেসি কোনো দলের না৷ এটা হলো রাষ্ট্রের৷ তারপরও দলীয় সরকার যখন থাকে, সেখানে দল যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছে৷ সেটা তারা বাস্তবায়ন করবে৷ সেই কাজে পরিপূর্ণভাবে সহযোগিতা করবে আমলাতন্ত্র৷ অর্থাৎ পলিসি ঠিক করবে রাজনীতিবিদরা, বাস্তবায়ন করবে আমলাতন্ত্র৷ এটা দুইজনের কাজ৷ আমরা যার যার কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি৷’’
স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কাজে সংসদ সদস্যরা থাকতে চান-এমন দৃষ্টি আকর্ষণের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব রোডস, এলজিইডি, পিডাব্লিউডির৷ কিন্তু কোন রাস্তা হবে, কোন ব্রিজ হবে, কোন ভবন হবে--এগুলো সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব সরকারের রাজনৈতিক অংশের৷’’
‘‘আমি তো আর টেন্ডার ডাকবো না৷ ঠিকাদারি করবো না৷ এটা তারা দেখবে৷ তবে কেউ নিয়মমতো কাজ না করে, যদি বুঝি এখানে অন্যায়ভাবে কাজ হয়েছে, একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে তার দায়িত্ব আছে৷’’
উন্নত আমলাতন্ত্র কীভাবে হবে?
বিশ্বব্যাংকের গভর্ন্যান্স ইন্ডিকেটরকে অনেকে আমলাতন্ত্রের দক্ষতার মাপকাঠি হিসাবে দেখেন৷ তারা ছয়টি ক্যাটাগরিতে এই ইন্ডিকেটরকে বিবেচনা করে থাকেন৷ এগুলো হচ্ছে, মত প্রকাশ ও জবাবদিহিতা; রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ফলপ্রসূ সরকার ব্যবস্থা, রেগুলেটরি মান, আইনের শাসন ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ৷
২০৪১ সালের উন্নত দেশে একটি উন্নত ও কার্যকরি আমলাতন্ত্র পেতে এখনই নানা পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার৷
তিনি বলেন, ‘‘উন্নত প্রশাসন পেতে কেবল প্রশাসনের দিকে নজর দিলেই হবে না৷ প্রশাসনকে উঁচু মানে নিতে হলে রিক্রুট করতে হবে মেধাবী লোকদের৷ আর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান খারাপ হলে মেধাবী লোক পাওয়া যাবে না৷
‘‘পিএসসির ভাইভায় দেখি অ্যাভারেজ লোকই আসছে৷ অনেকেই বিদেশে চলে যাচ্ছে৷এদেরকে আনতে আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা দিতে হবে৷ পদায়ন-পদোন্নতিতে আনবায়াজড থাকতে হবে৷ দক্ষ ও যোগ্য লোকরাই যাতে পদোন্নতি পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলেছি, এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাও কিন্তু এখানে ভালো প্রশাসন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়৷’’
‘‘অভিযোগ আসছে, তারা আমলানির্ভর হয়ে পড়ছে৷ এটা কিন্তু আসতো না যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব যথাযথ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করতো৷’’
‘‘পাশাপাশি তারা আবার দলের প্রতি অনুরাগী কিনা বা দলের বিপরীতে কারো অবস্থান আছে কিনা, এই জিনিসগুলো তারা যাচাই-বাছাই করে৷ যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এটা করে, করে চলেছে এবং বেড়ে যাচ্ছে৷ এটাও কিন্তু প্রশাসনের মান কমে যাওয়ার জন্য দায়ী৷ এটা বন্ধ করতে হবে৷’’