নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের একটি বড় অংশ আনা ফ্রাংকের ঐতিহাসিক বাড়িটি দেখতে যান৷ তার কাছেই অবস্থিত প্রায় আড়াইশ’ বছরের পুরনো একটি বাড়ির চিলেকোঠায় বাস করেন দুই ডিজাইনার৷
বিজ্ঞাপন
চলুন ঘুরে আসি এক স্বপ্নের বাড়ি থেকে...
02:56
তাঁরা হলেন অলিভার মিচেল আর জর্জ গটেল৷ আমস্টারডামের কেন্দ্রে অবস্থিত জোরদান এলাকায় ব্ল্যোমগ্রাখট রাস্তার ধারে বসবাস তাঁদের৷ পুরনো আসবাবপত্র আর আধুনিক ডিজাইনের মিশেল ঘটিয়ে তাঁরা ঘরগুলো সাজিয়েছেন৷
জর্জ গটেল বলেন, ‘‘জায়গাটি বেছে নেয়ার কারণ এটি অনেক বড় জায়গা৷ এছাড়া অনেকদিন এখানে কেউ থাকেননি৷ বাড়িটি তৈরি হয়েছে ১৭৬৩ সালে৷ এখানে কোনো দেয়ালও ছিল না৷ তাই আমস্টারডামে চিলেকোঠায় থাকার পরিকল্পনাটি আমাদের ভালো লেগেছে৷ এরকম তো সাধারণত কেউ করে না৷
আমস্টারডামের সাইকেল ‘‘খোয়াড়’’
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি৷ অবস্থা এমন যে, সাইকেলের কারণে রাস্তাঘাটে চলাই দায়৷ ফলে শহর কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে পার্ক করা সাইকেলগুলো তুলে নিয়ে রেখে দেয় এক বিশেষ জায়গায়৷
ছবি: DW/C. Nasman
সাইকেল অনেক, জায়গা কম
আমস্টারডাম শহরে মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি৷ নেদারল্যান্ডসের রাজধানীর জনসংখ্যা সাত লাখের মতো৷ আর সাইকেলের সংখ্যা আনুমানিক দশ লাখ৷ সাইকেল পার্ক করার নির্দিষ্ট জায়গা আছে শহরে৷ কিন্তু সেগুলো ভরা থাকে অধিকাংশ সময়৷ তাই অনেকে রাস্তার পাশে অবৈধভাবে রাখেন সাইকেল৷ সেখানে সাইকেল চুরিও এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার৷
ছবি: DW/C. Nasman
সাইকেল যখন মাথাব্যাথার কারণ!
আমস্টারডামে সাইকেল পার্ক করা এক জটিল ব্যাপার৷ রাস্তাগুলো সরু আর সাইকেল পার্ক করার নির্দিষ্ট জায়গাও কম৷ এই সাইকেল আরোহী আমস্টারডাম ট্রেন স্টেশনের বাইরে সাইকেলটি রাখার জায়গা খুঁজছেন৷
ছবি: DW/C. Nasman
আগে আসলে, আগে পাবেন
আমস্টারডাম ট্রেন স্টেশনের বাইরে একটি খালের উপর গড়ে তোলা সাইকেল রাখার জায়গার ছবি এটি৷ তিন তলা এই পার্কিংয়ে আড়াই হাজারের বেশি সাইকেল বিনা খরচায় রাখা যায়৷ তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাইকেল সরিয়ে নিতে হয়৷ আগে আসলে, আগে পাবেন ভিত্তিতে সাইকেল রাখার জায়গা পাওয়া যায় এখানে৷
ছবি: DW/C. Nasman
সাইকেল বন্যার ঝুঁকি
পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গার বাইরে রাখা সাইকেলগুলো শহর কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যায়৷ এরপর সেগুলোকে রাখা হয় সাইকেলের খোয়াড়ে, নেদারল্যান্ডসের ভাষার যাকে বলে ‘‘ফিয়েটসডিপো৷’’ আমস্টারডামের সাইকেলের খোয়াড়ের ম্যানেজার পিটার বের্কহ্যুট এই বিষয়ে বলেন, ‘‘সাইকেলগুলো না সরানো হলে গোটা শহর সাইকেলে ঢেকে যাবে৷ তখন হাঁটাচলা অসম্ভব হয়ে যাবে৷’’ ২০১২ সালে খোয়াড়ে জমা হয়েছিল ৬৫,০০০ সাইকেল৷
ছবি: DW/C. Nasman
নতুন আগত
আমস্টারডাম ট্রেন স্টেশনের কাছ থেকে তুলে আনা সাইকেলগুলো গাড়ি থেকে নামাচ্ছেন খোয়াড় কর্মীরা৷ হঠাৎ একদিন শহর কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে পার্ক করা সাইকেলের সন্ধানে বের হন৷ এরপর সেসব সাইকেলের লক কেটে গাড়িতে তুলে খোয়াড়ে নিয়ে আসেন৷ সেখানে একসঙ্গে ১২ থেকে ১৭ হাজার সাইকেল রাখা যায়৷
ছবি: DW/C. Nasman
রেকর্ড রাখা
এই সাইকেলগুলোকে খোয়াড়ে জমা করার জন্য রাখা হয়েছে৷ একটু লক্ষ্য করে দেখা যাবে প্রতিটি সাইকেলে কমলা রংয়ের ট্যাগ জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ এভাবে সাইকেলের রং, নকশা, সিরিয়াল নম্বর, তুলে নেয়ার স্থানসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহে রাখা হয়৷ কোনো সাইকেল আগে চুরি হয়েছিল কিনা সেটাও পরীক্ষা করে দেখা যায় এই পদ্ধতিতে৷
ছবি: DW/C. Nasman
হ্যালো, পুরনো বন্ধু!
রাস্তায় সাইকেল পার্ক করার কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে যদি দেখেন সেটি হাওয়া হয়ে গেছে, তখন কেমন লাগবে? নিঃসন্দেহে কষ্ট পাবেন আপনি৷ ২৭ বছর বয়সি ইমকা লিগ্টহার্ট একবার এমন পরিস্থিতিতে পরেছিলেন৷ তবে তিনি দ্রুতই ফোন করেন সাইকেলের খোয়াড়ে৷ পরেরদিন খোয়াড়ে গিয়ে সাইকেলটিও খুঁজে পান৷ তবে সেটি ফেরত পেতে দশ ইউরো জরিমানা গুনতে হয়েছিল তাঁকে৷
ছবি: DW/C. Nasman
প্রমাণ করুন
ফিলিপ বঙ্কের (২৬) জন্য সেদিনটা এমনিতেই খারাপ যাচ্ছিল৷ তার উপর টের পেলেন সাইকেলটাও হাওয়া৷ তবে তিনি মনে করেন, অবৈধভাবে পার্ক করে রাখা সাইকেল তুলে নেয়া ভালো, কেননা এতে করে অন্যরা পার্কিংয়ের জায়গা পায়৷ খোয়াড় থেকে নিজের সাইকেল ফিরে পেতে অবশ্য পরীক্ষা দিতে হয়েছিল ফিলিপকে৷ সাইকেলের লকে ঠিকঠাক চাবি ঢুকিয়ে পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি৷
ছবি: DW/C. Nasman
ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা
‘‘আমরা এগুলো মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই৷ এটাই আমারদের মূল উদ্দেশ্য’’, বলেন খোয়াড়ের ম্যানেজার বের্কহ্যুট৷ মালিকদের ফিরিয়ে দিতে সাইকেলগুলো তিন মাসের মতো খোয়াড়ে রাখা হয়৷ এই সময়ের মধ্যে মালিকরা সাইকেল নিতে না আসলে সেগুলো নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়৷ বের্কহ্যুটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অনেক মালিকই হারিয়ে যাওয়া সাইকেলের খোঁজে খোয়াড়ে আসেন না৷ তাঁরা মনে করেন সাইকেল চুরি হয়ে গেছে৷
ছবি: DW/C. Nasman
9 ছবি1 | 9
২০০৭ সালে সংস্কারের সময় বাড়িটির আসল রূপ যতটা সম্ভব ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷
মার্কিন নাগরিক জর্জ গটেল আর ফ্রান্সের নাগরিক অলিভার মিচেল পেশাগত জীবনে হোটেল আর কর্পোরেট অফিসের নকশা করেন৷ তবে ব্যক্তিগতভাবে তাঁরা একটু অন্যরকম থাকতে পছন্দ করেন৷
জর্জ গটেল বলেন, ‘‘আমরা ভবনটির যে অংশে আছি সেটি আসলে ছিল একটি গুদাম৷ তাই পুরো জায়গাটি ছিল ফাঁকা, মাঝে কোনো দেয়াল ছিল না৷ আমরাও চেয়েছি কোনো দেয়াল না রাখতে৷ তাই পর্দা দিয়ে বেডরুম আর গেস্টরুমগুলো আলাদা করেছি৷’’
ঘর সাজানো প্রসঙ্গে অলিভার মিচেল বলেন, ‘‘আমাদের এখানে যে জিনিসগুলো আছে সেগুলো দেখতে সুন্দর আর কুৎসিতের মাঝামাঝি কিছু একটা৷ আমরা সেরকমই পছন্দ করি৷ তাই আমি বলবো বাড়িটা একটু অন্যরকম, কারণ এখানে সুন্দর-অসন্দুর অনেক কিছু আছে৷’’