আমস্টারডাম শহরের নানা মিউজিয়াম পর্যটক ও বিশেষজ্ঞদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ এবার নতুন এক মিউজিয়াম ইনস্টলেশন আর্টের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর নানা সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরছে৷ দর্শকরা সেই জগতে কার্যত ডুব দিতে পারছেন৷
বিজ্ঞাপন
আমস্টারডাম শহরে ডিজিটাল শিল্পের নতুন মিউজিয়ামের নাম ‘নেক্সট’৷ দর্শকরা সেখানে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারঅ্যাক্টিভ অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে পারেন৷ প্রথম প্রদর্শনীতে সাতটি সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরা হয়েছে৷ মুখচ্ছবি শনাক্ত করার প্রযুক্তি, ডিজিটাল নজরদারি অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণামের মতো বিষয় তাতে উঠে এসেছে৷
আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেলে কী অবশিষ্ট থাকবে? প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক উপাদানে ভরা এক ইন্টারঅ্যাকটিভ শিল্পের জগত কি আসল প্রকৃতির মতো অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে?
নেদারল্যান্ডসের শিল্পী হেলেন ব্লানকেন-এর ‘হ্যাবিটাট’ নামের ইনস্টলেশন ঠিক সেই প্রশ্নেরই জবাব খোঁজার আহ্বান জানাচ্ছে৷ হেলেন বলেন, ‘‘শুনছি, মানুষ কখনো ৫০ মিনিট ধরে বসে থাকছে৷ এই সৃষ্টিকর্মের মধ্যে ডুবে গিয়ে তারা যেন প্রকৃতিকেই দেখতে পাচ্ছে৷ অর্থাৎ এটা একটা অসাধারণ ফল বলে আমি মনে করি৷’’
ইন্টারঅ্যাক্টিভ অভিজ্ঞতার স্বাদ নেয়ার মিউজিয়াম
03:24
আড়াই বছর আগে মেরেল ফান হেল্সডিংখেনের মাথায় এই মিউজিয়াম তৈরির আইডিয়া আসে৷ আমস্টারডাম শহরের উত্তরে তিনি সেই প্রকল্পের জন্য আদর্শ জায়গা খুঁজে পান৷ অতীতে সেটা ছিল এক টেলিভিশন স্টুডিও৷ বিপণন বিশেষজ্ঞ হিসেবে এবং ‘নিউ মিডিয়া আর্ট' সম্পর্কে উৎসাহ সম্বল করে তিনি অসংখ্য বিনিয়োগকারীর সাহায্যে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন৷ মেরেল বলেন, ‘‘আমার ধারণা, মানুষ ভবিষ্যৎ ও প্রযুক্তি নিয়ে অত্যন্ত মাতামাতি করছে এবং নতুন প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটছে৷ আমরা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, শিল্প, বিজ্ঞান, সংগীত – এ সব নিয়ে মিলিয়ে মিশিয়ে একই ছাঁচে গড়ে তুলতে চাই এবং দর্শকদের ভবিষ্যতের অভিজ্ঞতা, ভবিষ্যতের বিষয়গুলির স্বাদ দিতে চাই৷’’
পরিবেশ শিল্পী টাইস বিয়ার্স্টেকারের ‘ইকন্টিনাম’ নামের ইনস্টলেশন মাটির নীচে দুটি গাছের মধ্যে সংলাপ দৃশ্যমান করে তুলছে৷ সেই সিমুলেশনের মাধ্যমে দর্শকদের উপস্থিতির কারণে সৃষ্ট কার্বন নির্গমন, কম্পন বা বেড়ে চলা তাপমাত্রার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ টাইস বলেন, ‘‘শিল্পের ক্ষেত্র হিসেবে ডিজিটাল আর্ট উঠে আসছে৷ এর মাধ্যমে মানুষ যে শুধু বিজ্ঞান ও অন্যান্য তথ্যপ্রবাহ আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছে তাই নয়, ডিজিটাল আর্ট এই প্রজন্মের নতুন রং৷’’
প্রদর্শনীতে এমন সাতটি ইনস্টলেশন তুলে ধরা হচ্ছে, যেগুলি স্পেস ভরিয়ে দেয় এবং সব ইন্দ্রিয় সজাগ করে তোলে৷ সেগুলির মাঝে বিশ্রামের জায়গা৷ সুইজারল্যান্ডের শিল্পী বেনইয়ামিন মুৎসিনের অ্যানিমেশন সেই খালি অংশে দর্শকদের স্নায়ু কিছুটা শিথিল করে পরের ইনস্টলেশনের জন্য প্রস্তুত করে তুলছে৷ একজন বললেন, অসাধারণ অভিজ্ঞতা৷ ঠিক যেন কোনো শিল্পকর্মের মধ্যে থাকার অনুভূতি৷ আরেকজনের কাছে বিশাল আকার বিস্ময়কর৷ নেপথ্যের কাহিনির মাধ্যমে তাঁর অসাধারণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে৷ এক নারী জানালেন, ইন্টারঅ্যাক্টিভ অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে সত্যি তাঁকে স্পর্শ করে৷ বিশ্বে খুব বেশি এমন জায়গা নেই, যেখানে এভাবে শিল্প দেখার অভিজ্ঞতা সম্ভব৷
ভবিষ্যতে সত্যি কী হবে, নেক্সট মিউজিয়ামের ইনস্টলেশনগুলি তার নিখুঁত পূর্বাভাষ দিতে পারে না৷ তবে আমস্টারডামের নতুন এই মিউজিয়ামে ভবিষ্যতের বিভিন্ন সম্ভাবনার জগতে ডুব মারার সুযোগ রয়েছে৷
পিয়ের প্রেচ/এসবি
চঞ্চল, আধুনিক, ঐতিহ্যবাহী আমস্টারডাম
ইউরোপের যে ক’টি শহর সত্যিই দর্শনীয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহরগুলির মধ্যে নিশ্চয় করে পড়বে আমস্টারডাম৷ এ শহরে স্ফূর্তি-আমোদের কোনো অভাব নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/K. Van Weel
আমস্টারডামের খাল
আমস্টারডাম শহরটিকেও বলা হয় ‘উত্তরের ভেনিস’৷ শহরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার খাল আছে, ওলন্দাজ ভাষায় যাকে বলা হয় ‘গ্রাখটেন’৷ এগুলি তৈরি হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীতে, প্রধানত মালপত্র বহনের জন্য৷ আজ এই খালগুলি একটি বড় টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
সাইকেল, সাইকেল
আমস্টারডামকে বলে সাইকেলের শহর৷ এখানে মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যাই বেশি, প্রায় আট লক্ষ৷ সাইকেলে চড়ে জলের শহর আমস্টারডাম দেখার মজাই আলাদা!
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
আমস্টারডামের স্থাপত্য
তেকোনা ‘গেবল’ বা চুড়ো দিয়ে সাজানো বাড়িগুলোকে আমস্টারডামের ট্রেডমার্ক বলা চলে৷ বিভিন্ন ধরনের চুড়ো দেখে বাড়ি তৈরির ইতিহাসের একটা আন্দাজ করা যায়৷ খালের ধারের বাড়িগুলোর প্রতিটিই যেন এক টুকরো ইতিহাস৷
ছবি: picture-alliance/RIA Novosti/A. Kudenko
অঙ্কণশিল্প
আমস্টারডামে শিল্পকলা দেখতে গেলে বেশ কয়েক দিন সময় হাতে করে যেতে হয়: রেমব্রান্ট, হাল্স, ভেরমিয়ার, স্টেন প্রভৃতি ডাচ মাস্টার্স বা ওস্তাদ ওলন্দাজ চিত্রকরেরা তো আছেনই – ফান গখকে (বানানভেদে ভ্যান গগ) ভুললেও চলবে না৷ তবে প্যারিসে মোনালিসা যা, আমস্টারডামে রেমব্রান্ট-এর ‘দ্য নাইট ওয়াচ’ বা ‘নৈশ প্রহরা’ ছবিটিও তা৷ দেখতে পাওয়া যাবে রাইখ্স-মিউজিয়ামে৷
ছবি: picture-alliance/RIA Novosti/A. Kudenko
অ্যান ফ্র্যাঙ্ক
আমস্টারডামের প্রিন্সেনগ্রাখ্ট খালের ধারের একটি বাড়িতেই আনে ফ্রাঙ্ক ও আরো সাতজন দু’বছর ধরে লুকিয়ে ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন৷ ইহুদি কিশোরীর ডায়েরিটি অনুদিত হয়েছে বিশ্বের ষাটটি ভাষায়৷ মূল বাড়িটি আজ একটি মিউজিয়াম; এমনকি সিক্রেট অ্যানেক্সটিও বজায় আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Vrijdag
সূর্যমুখী
ভিনসেন্ট ফান গখ একাধিকবার সূর্যমুখী ফুলের ছবি এঁকেছিলেন৷ আজ সেগুলিকে অমূল্য বললেও কম বলা হবে৷ আমস্টারডামের ফান গখ মিউজিয়ামে শুধু তাঁর সাতশো ছবি আর ড্রয়িংই নয়, সেই সঙ্গে শিল্পীর বহু চিঠি ও তাঁর সমসাময়িক শিল্পীদের আঁকা নানান ছবি রাখা রয়েছে৷ ২০১৫ সালে মিউজিয়ামটি যখন আবার খোলা হয়, তখন তার চারপাশে সূর্যমুখী ফুলের মেলা বসেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.de Waal
নিষিদ্ধ পল্লী
যৌনতার সঙ্গে আমস্টারডামের সম্পর্ক শুধু তার রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টেই প্রতিফলিত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সেক্স মিউজিয়াম এখানেই, তার নাম ভেনাস টেম্পল৷ এই মিউজিয়ামে যৌনতার ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পাওয়া যায়৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম গণিকাবৃত্তির মিউজিয়াম৷ নাম: রেড লাইট সিক্রেটস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Utrecht
কফি শপ
মারিজুয়ানা, অর্থাৎ গঞ্জিকাসেবনের প্রতি আমস্টারডামের নীতি যে খুব উদার, তা বিশ্ববাসী জানে৷ শহরের বিভিন্ন কফি শপে কফির সঙ্গে সঙ্গে ‘জয়েন্ট’ স্মোক করা চলে, যা বহু টুরিস্টদের টানে৷ তার একটি ফলশ্রুতি: আমস্টারডামে ড্রাগ টুরিজম নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache
ভবিষ্যতের আমস্টারডাম
প্রথাগত রেনেসাঁস স্থাপত্যের পাশাপাশি গজিয়ে উঠছে অত্যাধুনিক নানা বাড়ি ও সেতু, যেমন জনপ্রিয় লেক্স ফান ডেল্ডেন ব্রিজ৷ রেনজো পিয়ানোর সৃষ্ট নেমো বিজ্ঞান সংগ্রহশালা (ছবি) আমস্টারডাম বন্দরের নৌ-ঐতিহ্যের কথা জানাচ্ছে, আবার ভবিষ্যতের আভাস দিচ্ছে৷