1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আমাদেরও অনেক ভুল আছে’

১ ডিসেম্বর ২০১০

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা দিতে চলেছি আমরা৷ ইতিমধ্যে অনেক বিজয়ী সেনাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ কিন্তু যারা বেঁচে আছেন, কেমন আছেন তাঁরা?

Bangladesch | 49. Jahrestag Bangladesch-Krieg
ছবি: bdnews24.com

এই প্রশ্ন নিয়ে ডয়চে ভেলে হাজির হয় এক বিজয়ী সেনার কাছে৷ তিনি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে. এম. সফিউল্লাহ৷ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের সপ্তাহখানেক আগেই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে নিজের দল নিয়ে বিদ্রোহ করেন তিনি৷

৩ নম্বর সেক্টর

সফিউল্লাহ মুক্তিযুদ্ধে তিন নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ তৎকালীন সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, কিশোরগঞ্জ মহকুমা, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ ছিল এই সেক্টরের আওতাভুক্ত৷ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সেক্টর নিয়েই ছিলেন তিনি৷ সে সময়কার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে সফিউল্লাহ বলেন, এপ্রিলের চার তারিখ আমার হেড কোয়ার্টারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানি সেনা প্রধান হবেন৷

এস ফোর্সের প্রধান

শুধু সেক্টর কমান্ডারই নন, মুক্তিযুদ্ধের তিনটি বিশেষ ব্রিগেডের একটির অধিনায়ক ছিলেন সফিউল্লাহ৷ তাঁর নামেই এই বাহিনীর নামকরন করা হয় 'এস ফোর্স'৷ ৩ নম্বর সেক্টর ছিল এই বাহিনীর আওতায়৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরো সংঘবদ্ধভাবে লড়তে গড়ে তোলা হয় এসব বিশেষ ব্রিগেড৷ এগুলোর সঙ্গে সমরাঙ্গনে ভারতীয় বাহিনী যুক্ত হয়ে তৈরি হয় জয়েন্ট কমান্ড ফোর্স৷ কে. এম. সফিউল্লাহ এই বিষয়ে জানান, আমরা যুদ্ধ করছিলাম গেরিলা ওয়্যারফেয়ার আকারে৷ তখন আমার সেক্টরে ত্রিশ হাজারের বেশি প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা ছিল৷ আগস্ট পর্যন্ত এই যোদ্ধার পুরো এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখে৷

তিনি বলেন, এই আধিপত্য বজায় থাকতেই আমরা ভাবতে থাকি কিভাবে পাকিস্তানিদের পুরোপুরি পরাস্ত করা যায়৷ এই কাজ করতে আমাদের এয়ার কভার এবং দূরপাল্লার অস্ত্রের প্রয়োজন ছিল৷ এসবের সুবিধা পেতেই আমাদেরকে কিন্তু ভারতের সঙ্গে জয়েন্ট কমান্ড ফোর্স তৈরি করতে হয়েছে৷ ফলে আমরা যখন বাংলাদেশের মধ্যে ঢুকতাম, তখন ভারতীয় বাহিনী এসব সুবিধা দিত৷

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কে এম সফিউল্লাহ (ফাইল ফটো)ছবি: AP

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সফিউল্লাহ

এভাবেই নয় মাস যুদ্ধের পর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ৷ ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রমনা ময়দানে বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাদের নিয়ে গড়া মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী৷ সেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কে এম সফিউল্লাহ৷ তিনি বলেন, আমাকে খবর দেওয়া হলো যে ১৬ তারিখ সাড়ে চারটার সময় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে৷ আমি যেন সেই অনুষ্ঠানে থাকি৷ এবং জেনারেল অরোরা ঢাকায় নামবেন সাড়ে তিনটায়৷ আমি যেন তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাই৷

সেদিনের অভিজ্ঞতা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আপ্লু এই বীর সেনা বলেন, বিমানবন্দরে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে দেখা হয়৷ আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, হাউ আর ইউ স্যার? সে আমার কথার কোন উত্তর দেয়নি৷ চুপ করে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল৷

বীর উত্তম

মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন কে এম সফিউল্লাহ৷ মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান 'বীর উত্তম' উপাধি লাভ করেন তিনি৷ ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেনা প্রধানের পদ হারান সফিউল্লাহ৷

১৯৭৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়া, ক্যানাডা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি৷ এরপর ১৯৯৬ সালে নারায়নগঞ্জ এক আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এই বিজয়ী সেনা৷

প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেকবার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন সফিউল্লাহ৷ কিন্তু তাঁর ভাগ্য ভালো৷ একবার শত্রুর ছোঁড়া গুলি তাঁর পিস্তলে লেগে ফিরে যায়৷ এই যোদ্ধা স্বাধীনতার পর ৪০ বছর বাংলাদেশকে দেখেছেন৷ তাঁর কাছে জানতে চাই, যে প্রত্যাশা নিয়ে দেশ স্বাধীন করতে লড়েছিলেন, সেই প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির কোন মিল কি এখন আর খুঁজে পান? সফিউল্লাহ বলেন, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি বলতে গেলে আমাদের অনেক ভুল আছে৷ সত্যি কথা বলতে, ১৬ই ডিসেম্বরের পরে আমরা হলাম বিজয়ী সৈন্য৷

তিনি বলেন, আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমাদেরও একটা প্রতিপক্ষ থাকতে পারে৷ কিন্তু তারা যে এই কতগুলো বছর ধরে সংঘবদ্ধ হতে ছিল, তা আমরা খেয়াল করিনি৷ তাই, আজকে এই অবস্থা বাংলাদেশের মধ্যে৷

খানিকটা হতাশ এই বিজয়ী সেনার মন্তব্য, আমরা একটা সুন্দর দেশ তৈরি করবার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম৷ কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি তারাই দেশ শাসন করতে শুরু করেছে, ৭৫ এর পর৷

তবুও আশাবাদী সফিউল্লাহ

বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম সম্পর্কে বেশ আশাবাদী সফিউল্লাহ৷ তিনি মনে করেন, বর্তমান প্রজন্ম অনেক সচেতন৷ তাঁর কথায়, নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধটাকে সম্মানের সাথে দেখে৷ এবং তারা মুক্তিযুদ্ধ ধারণ করে৷ যে কাজগুলো শেষ করতে পারিনি তারা সে কাজগুলো করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ