1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আমাদের কোনো উপায় নাই’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ জুলাই ২০২১

লকডাউনে বাংলাদেশে রাজধানীর দিন আন দিন খাওয়া মানুষেরা চরম বিপদে পড়েছেন৷ কাজ নেই আবার কোনো সহায়তাও পচ্ছেন না৷ রিকশা চললেও যাত্রী না থাকায় চালকরা দিশেহারা, কাজহীন দিনমজুর ও নির্মাণ শ্রমিকরা৷

চরম বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ৷ছবি: Mortuza Rashed

কঠোর লকডাউনেও রবিবার বৃষ্টি থামার পর দুপরের দিকে মৎস্য ভবনের সড়কের ফুটপাথে একটি কাঠের বাক্সের ওপর চা, বিস্কুটসহ আরো কিছু পণ্য সাজিয়ে বসেন লাবনী বেগম৷ কথা বলতে গেলে ইতস্তত বোধ করেন৷ যেন কিছুটা ভয় পেয়েছেন৷ সব কিছু গুটিয়ে চলে যেতে চান৷ তবে সাংবাদিক পরিচয় দিলে কিছুটা আশ্বস্ত হন৷ প্রশ্ন করি লকডাউনে তো এরকম রাস্তার পাশে দোকান দেয়া যাবে না৷ বাইরে বের হওয়া নিষেধ৷ কেন বের হয়েছেন? জবাবে জানালেন, তার স্বামী মারা গেছেন৷ একটি ছেলে আছে যে কিডনি রোগে আক্রান্ত৷ সন্তানের চিকিৎসা থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যয় তাকে একাই সামলাতে হয়৷ ‘‘আমার কোন উপায় নেই৷  কারণ এই চা সিগারেট বিক্রির টাকা দিয়েই বাচ্চার চিকিৎসা চলে৷ আমার ছেলের প্রতিদিন রাতে ৩৬০ টাকান ওষুধ লাগে,’’ বলেন লাবনী৷

তারপরও ঠিকমত বসতে পারেন না৷ পুলিশ এসে তুলে দেয়৷ মালপত্র ফেলে দেয়৷ আরেক জায়গায় গিয়ে বসেন৷ জীবন বাঁচাতে তিনি এখন চোর-পুলিশ খেলতে বাধ্য হচ্ছেন৷

বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের জন্য ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে৷ জরুরি সেবা, শিল্প কারখানা, পণ্য পরিবহনের যানবাহন ও রিকশা ছাড়া আর সব কিছু বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষেধ৷

তবে লকডাউনের চতুর্থ দিনে রাস্তায় ব্যক্তিগত যানবাহন একটু বেশি দেখা গেছে৷ লোকজনও কিছুটা বেশি৷ দুপুরে বৃষ্টি থামার পর শ্রমজীবী মানুষকে কাজের আশায় সড়কের মোড়ে মাড়ে দঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়৷ রিকশা চালকরা বিভিন্ন মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করলেও যাত্রী তেমন মিলছে না৷বাংলা মোটর মোড়ে কথা হয় রিকশা চালক সাদেক মিয়ার মঙ্গে বিকাল তিনটার দিকে৷ তিনি আড়াই ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে মাত্র ৫০ টাকা রোজগার করেছেন৷ কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না৷ তিনি জানান, তার চারজনের পরিবারের খাবারসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ-ছয়শো টাকা লাগে৷ স্বাভাবিক সময়ে তিনি প্রতিদিন ছয়-সাতশো টাকা আয় করতে পারেন৷ কিন্তু এখন তিন-চারশো ঢাকার বেশি হয় না৷ এরমধ্যে মালিককে দিতে হয় ১০০ টাকা৷ ‘‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও যাত্রী পাই না৷ সরকারের দিক থেকে কেনো সহায়তাও পাইনি৷ লকডাউনে কীভাবে সংসার চালাব জানি না৷ সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে,’’ বলেন তিনি৷

‘টাকা জোগাড় করতে না পারলে ছেলেকে বাঁচাতে পারব না’

This browser does not support the audio element.

নির্মাণ শ্রমিকসহ আরো যারা দিন মজুরের কাজ করেন তারাও পড়েছেন চরম বিপাকে৷ সোনারগাঁও রোডে এরকম কয়েকজন দুপুরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কাজের আশায়৷ তাদেরই একজন মফিজুর রাহমান বলেন, ‘‘লকডাউনেও বের হচ্ছি কাজের আশায়৷ কিন্তু কাজ পাচ্ছি না৷ পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচেছ৷’’

লকডাউনের সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ৩৩৩-এ ফোন করলে সহায়তা পাওয়ার কথা৷ কিন্তু তাদের কেউই এই খবর জানেন না, ফোন করা তো দূরের কথা৷ তারা বলেন, এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছেও গিয়েছিলেন কোনো সহায়তা পাননি৷

হোটেল খোলা আছে৷ কিন্তু সেখান থেকে খাবার নেয়া যাবে, বসে খাওয়া যাবে না৷ বাংলা মোটরের আমজাদ হোটেলের মালিক আমজাদ মিয়া জানান, ‘‘সব কিছু বন্ধ থাকায় ক্রেতা নাই৷ যা বিক্রি হয় তা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব নয়৷ আবার সামনে কোরবানি৷ বোনাস দেব কীভাবে বুঝতে পারছি না৷’’ কষ্টে আছেন পরিবহন শ্রমিকরাও৷

বাংলাদেশে করোনার সময় দারিদ্র্য বেড়ে গেছে৷ এখন কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছেন৷ নতুন দরিদ্রদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী , হোটেল কর্মচারী, রিকশা চালক ও ভাসমান শ্রমিক৷ এই লকডাউনে তারাই সবচেয়ে বিপদে আছেন৷ অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘তাদের খাদ্য সহায়তা খুবই জরুরি৷ নগদ সহায়তাও প্রয়োজন৷ তা না হলে এই লকডাউনে তারা বিপন্ন হয়ে পড়বেন৷’’

সহায়তার জন্য ৩৩৩

ডা. এনামুর রহমান

This browser does not support the audio element.

তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, করোনার সময়ে এই লকডাউনে জরুরি সহায়তা অব্যাহত আছে৷ ৩৩৩-এ ফোন করে করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৪ লাখেরও বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা লজ্জায় হাত পাততে পারেন না তারা এখানে ফোন করলে সহায়তা পান৷ তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া হয়৷ চাল, ডাল, বাচ্চার দুধ যে যেরকম সহায়তা প্রয়োজন সেরকম সহায়তা দেয়া হয়৷ আর প্রচলিত যে সহায়তা জেলা উপজেলা পর্যায়ে তা অব্যাহত আছে৷’’

তিনি জানান, ৩৩৩-এর জন্য রবিবার ১৪ হাজার ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ আর প্রত্যেক জেলায় দুই লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ ঈদের জন্য সারাদেশে এক লাখ ১৭৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে এক কোটি ১০ হাজার ৬৫১ পরিবারের জন্য৷ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ৫০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ চাল দেয়া হয়েছে ১০০ টন করে৷ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনকে ২৫ লাখ টাকা ও ৫০ টন করে চাল দেয়া হয়েছে৷ ৩২৮ পৌরসভার প্রত্যেকটিতে ১০ মেট্রিক টন চাল ও এক লাখ করে টাকা দেয়া হয়েছে৷

এই সহায়তা সরকারের বিভন্ন সহায়তা কর্মসূচির আওয়তায় যারা তালিকাভুক্ত তারাই পাবেন৷ কিন্তু যারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন, যারা ভাসমান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তারা পাচ্ছেন না৷ শহুরে দরিদ্র রিকশা চালক, দিনমজুর, বস্তিবাসী তারাও হচ্ছেন বঞ্চিত৷

১ জুলাইর ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ