জীবন যখন কেবল ঠাকুরমার ঝুলি দিয়ে শুরু হয়েছিল, তখন পাখি বলতে চিনি কেবল টুনটুনি পাখিকে৷ পথে কুড়িয়ে পাওয়া পয়সা নিয়ে টুনটুনি পাখি বলে উঠেছিল, ‘‘রাজার কাছে যে ধন আছে, আমার কাছে সে ধন আছে৷''
বিজ্ঞাপন
এটি একদমই ছেলেবেলার গল্প৷ বড় হতে হতে প্রকৃতিতে আর টুনটুনি পাখি দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি৷
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে থেকে ঠাকুরমার ঝুলি আর টুনটুনি পাখি একসঙ্গে উধাও হয়ে যাচ্ছে৷
ছোটবেলার একটা স্মৃতি ভীষণ নাড়া দেয় এখনো – মা রুটি বানাচ্ছেন, সেখান থেকে আটার গোলা নিয়ে কাক খাওয়াচ্ছি, মিনিট দশেকের মধ্যে কাকের আওয়াজে আর কানপাতা দায়, আর ঠোকরের ভয়ে হাত থেকে ফেলে দিয়েছি আটার গোলা৷ সেই নিয়ে কাকদের মধ্যে চলছে লড়াই৷
ছোটবেলার সেই কাক আর কবিময় ঢাকা শহরে কবিরা রয়ে গেলেও কাক একদম নেই বললেই চলে৷ সেই কাকগুলো কোথায় গেছে? গ্রামে যায়নি এটি নিশ্চিত৷ গ্রামে সাবান আগলে রাখা হতো৷ কখন কাক নিয়ে উড়াল দেয়৷ শুধু কী সাবান, শুটকি, আঁচার, নিত্যদিনকার সংসারের জিনিস কাকের নজর থেকে আড়ালে রাখার সে কী প্রাণান্ত চেষ্টা ছিল! এখন তেমন করে কাকের মিছিল চোখেই পড়ে না৷ সে কী গ্রাম, কী ঢাকা শহর!
বাংলাদেশে কেমন আছে পাখিরা
‘চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা, কোথায় উজল এমন ধারা...তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি, পাখির ডাকে জেগে৷’ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কালজয়ী এ গানের মতোই বাংলাদেশের গ্রাম-বাংলা পাখির কলকাকলিতে মুখর ছিল একসময়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশের পাখি
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বাংলাদেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ৬৫০টি৷ এর মধ্যে ৩০টি বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত৷ অবশিষ্ট ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়, বাকি ১৪৩ প্রজাতি অনিয়মিত দেখা যায়৷ নিয়মিত ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের ‘আবাসিক’ এবং ১৭৬ প্রজাতি ‘পরিযায়ী’ পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল৷ দেশের সব জায়গাতেই পাখিটি দেখা যায়৷ গাছের প্রাকৃতিক খোঁড়লে কিংবা ঝোঁপঝাড়ে এরা বাসা বাঁধে৷ ছোট এ পাখিটির ইংরেজি নাম ওরিয়েন্টাল ম্যাগপাই রবিন আর বৈজ্ঞানিক নাম ‘কপসিকাস সলারিস’৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি
তীব্র শীত ও খাদ্যাভাব থেকে বেঁচে থাকার জন্য শীত মৌসুমে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিযায়ী পাখিরা সাময়িকভাবে আবাস গড়ে৷ বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর মাসে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে এবং এপ্রিল মাস পর্যন্ত থাকে৷ বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির সবচেয়ে বড় কয়েকটি আবাস হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল ও হাকালুকি হাওর, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, ফেনীর মুহুরি সেচ প্রকল্প ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
লোকালয়ের পাখি
বাংলাদেশের লোকালয়ের আশপাশে কিছু পাখি সচরাচর দেখা যায়৷ দোয়েল, শালিক, কাক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ বাংলাদেশের সব জায়গাতেই এসব পাখি প্রচুর দেখা যায় এখনো৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বনের পাখি
বাংলাদেশের বনাঞ্চলে বেশ কিছু পাখি দেখা যায়, যেগুলো সাধারণত লোকালয়ে দেখা যায় না৷ এ ধরনের পাখির মধ্যে ধনেশ, পাহাড়ি ময়না, মদনা টিয়া, লালবুক টিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যানগুলোতে এসব পাখির দেখা মেলে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
উপকূলীয় পাখি
বাংলাদেশের উপকূল ও চরাঞ্চলে নানা রকম পাখি দেখা যায়৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গাঙচষা, বিভিন্ন প্রজাতির গাঙচিল, পানচিল, বাটান, গুলিন্দা উল্লেখযোগ্য৷ উপকূলীয় পাখি বিভিন্ন আবাসস্থলের মধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়ায় দমারচর, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ, পটুয়াখালীর সোনারচর ও ভোলার চরকুকরিমুকরি উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জলাশয়ের পাখি
বাংলাদেশের সব এলাকার জলাশয়গুলোতে প্রায় সারা বছরই দেখা যায় কিছু পাখি৷ খাবারের খোঁজে এসব পাখি জলাশয়ে ঘুরে বেড়ায়৷ নানারকম বক, পানকৌড়ি এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পোষা পাখি
বাড়িতে অনেকেই পাখি পোষেন৷ পোষা পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিদেশি ঘুঘু, কবুতর, বাজরিগার, কাকাতুয়া, লাভ বার্ডসহ নানা রকমের পাখি৷ পোষা পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাজরিগার, কাকাতুয়া আর লাভ বার্ডের৷ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকে ময়না, টিয়া, দেশি ঘুঘু ইত্যাদিও খাঁচায় পুষে থাকেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পোষা পাখির বাজার
বাংলাদেশে পোষা পাখির সবচেয়ে বড় বাজার ঢাকার কাঁটাবনে৷ এখানকার শতাধিক দোকানে বিক্রি হয় নানা রকম খাঁচার পোষা পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বনের পাখি বিক্রি
বন্যপ্রাণি আইনে বনের পাখি বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও খোদ ঢাকাতেই বিক্রি হয় বনের পাখি৷ অনেকে খাঁচায় পোষার জন্য কেনেন এসব পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখি শিকার
বন্যপ্রাণী আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না থাকার কারণে বাংলাদেশে পাখি শিকার হরহামেশাই হয়ে থাকে৷ গ্রামে গ্রামে পাখি শিকারের অন্যতম হাতিয়ার এয়ারগান৷ এছাড়া বিভিন্ন রকম ফাঁদ, বিষটোপ দিয়েও প্রচুর পাখি শিকার করা হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখি যখন খাবার
খাবার জন্য বনের পাখি শিকার নিষিদ্ধ৷ তবে বাংলাদেশে অনেকেই ফাঁদ পেতে পাখি ধরেন মাংস খাওয়ার জন্য৷ আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এসব পাখি বিক্রিও হয় বিভিন্ন জায়গায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
12 ছবি1 | 12
অর্থাৎ, পাখি কমছে৷ গল্পের কাহিনিতে পাখির বিচরণ কমার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবজীবনে পরিবেশ প্রকৃতিতে পাখির সংখ্যা কমছে৷ গল্পের হীরামন পাখিরা এখন যেমন ঘুম পারায় না, তেমনি সকালে পাখির ডাক শুনে ঘুম ভাঙে না৷ শেষ কবে পাখির ডাকে ঘুম ভেঙেছে নগরবাসীর? কিংবা গ্রামেই কী এখন কেউ মাঝরাতে প্যাঁচার ডাকে ঘুম ভেঙে আঁতকে ওঠে?
সারা দেশে পাখির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে৷ রীতিমতো ভীতিকর একটি সংখ্যা জানিয়েছে পাখি জরিপকারী সংস্থাগুলো৷ প্রতিবছরই পাখির সংখ্যা কমছে৷ বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন ২০১৮ সালের জুন মাসে একটি যৌথ জরিপ প্রকাশ করে৷ সেখানে দাবি করা হয়, এক বছরে পাখির বিচরণ কমেছে প্রায় ৪০ হাজার৷ বিশেষ করে উপকূল ও দ্বীপ এলাকায় সবচেয়ে বেশি পাখি কমেছে৷ এর মধ্যে সোনাদ্বীপ উল্লেখযোগ্য৷
২০১৮ সালের ১৫ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালে প্রথম যখন পাখি জরিপ করা হয়, তখন পাখি পাওয়া গিয়েছিল প্রায় ৮ লাখ। ২০১৭ সালে পাখি দেখা গেছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩২টি, যা ২০১৮ সালে নেমে এসেছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১টিতে৷ ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর আরো পাখি কমবে৷ আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়ের মতো বিষয়কে পাখি কমার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
সেই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, ‘‘বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্যরা চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসের বিভিন্ন সময়ে পাখি বেশি থাকে দেশের এমন পাঁচটি এলাকায় শুমারিটি করেছেন৷ ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর একই সময়ে তাঁরা জরিপটি করে থাকেন৷ এ বছর দেশের উপকূলীয় এলাকার ভোলা ও নোয়াখালীর চর সোনাদিয়া দ্বীপ, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, সিলেট ও মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর ও বাইক্কার বিলে জরিপটি করা হয়৷ শীতের এই সময়টাতে ওই এলাকাগুলোতে পাখি বেশি থাকে বলে জরিপটি করা হয়৷’’
জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভারিক্কী বিষয়ের সঙ্গে ব্যক্তি-দায় উল্লেখ করলে ভীষণ ক্লিশে হয়ে যাবে বিষয়টি৷ কিংবা, গুরুত্ব হারাবে৷ তবে ব্যক্তি মানুষ হিসেবে ব্যক্তি-দায় উল্লেখ না করে পারছি না৷ আমরা মানুষ সবচেয়ে সভ্য প্রজাতি হলেও আমাদের আচরণগত কিছু ত্রুটিপূর্ণ কর্মকাণ্ড আমাদের পাখিদের থেকে বিচ্যুত করেছে৷ নয়তো সেই গল্প তো খুব বেশিদিনের পুরানো নয়, যখন আমাদের ইট-কাঠের দালানেও পাখি বাসা করতো৷
শহরে আধুনিক জীবন যাপনের নামে আর গ্রামে উন্নয়নের নামে আমরা পাখির আবাস ধ্বংস করেছি৷ নিজেরাই তো মনে করতে পারি না শেষ কবে প্রচণ্ড দাবদাহে বাড়ির বাইরে মাটির খোলায় পানি রেখেছিলাম পাখির জন্য৷ কিংবা কবে শেষ ভাত ছড়িয়েছিলাম কাকের জন্য? আমাদের উচ্ছিষ্ট খাবার এখন যায় ডাস্টবিনে পলিথিনে প্যাকেট হয়ে৷ অথচ চাইলেই আমরা সানসেটে কিংবা বারান্দায় পাখির জন্য একটু খাবার ছড়িয়ে রাখতে পারতাম৷ এইটুকু মানবিক আচরণ আমরা পাখির জন্য করতে পারি না বলেই পাখিগুলো কমে যাচ্ছে৷
এখনো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখি আসে প্রতি শীতে৷ তবে কতদিন আসবে সেটা প্রশ্নযোগ্য৷ কারণ, পাখি দেখতে গিয়ে যে হারে চিপসের প্যাকেট, কোকের ক্যান, বর্জ্য লেকের পানিতে ফেলে আসি, তাতে প্রতি বছর বিদ্যুৎগতিতে পাখি না কমার কোনো কারণ নেই৷ এ বছরের এখনো এক মাস যায়নি, এরমধ্যেই প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমে খবর এসেছে, শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে পাখি কমেছে৷ বাইক্কা বিল পাখিদের জন্য অভায়শ্রমই ছিল৷
এখানকার কচুরিপানা, নলখাগরা পাখিদের খাবার ও আশ্রয়স্থল৷ পাখিরা এগুলো খায়, এখানেই থাকতো৷ কিন্তু নদীর দুধারে গড়ে ওঠা বাড়িঘর ও ফিশারি পাখিদের ভীত করছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা৷ অন্যদিকে ফিশারি মালিকরা দুইদিন পরপর বিল পরিষ্কারের নামে কচুরিপানা, নলখাগড়া পরিষ্কার করছেন৷ এতে পাখির খাদ্য এবং আবাস দুইই নষ্ট হচ্ছে৷
এইতো কদিন আগেই চারপাশে শালিকের এত আনাগোনা দেখেছি৷ এক শালিকে বিপদ, দুই শালিকে সুখ৷ শেষ কবে শালিক দেখেছেন ভেবে দেখুন তো? কিংবা হলুদ রঙের ইষ্টি পাখি, বাড়ির গাছে যে পাখি বসলে সবাই মনে করতো আজ মেহমান আসবে৷
ঢাকা শহরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক কিংবা বলধা গার্ডেনেও এখন সেই কলকাকলিমুখর পরিবেশ নেই৷ এখন আর লাল টুকটুকে তেলাকচু ফল খেতে টিয়া পাখি বসে না৷ গাছের কাঁচামরিচ গাছেও জাল দিয়ে ঢাকা দিতে হয় না৷ আমাদের প্রতিদিনকার জীবন থেকে হারিয়েই যাচ্ছে পাখি৷ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের গল্পে আর লেখা হবে না পাখির কথা৷
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর৷ ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের কোলে বিশাল এ জলাভূমি পাখিদের জন্য যেন এক স্বর্গ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল
স্থানীয়রা টাঙ্গুয়ার হাওরকে বলেন ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল’৷ সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুরের দশটি মৌজার ছোট-বড় ১২০টি বিল নিয়ে এ হাওরের বিস্তৃতি৷ দুই উপজেলার ৪৬টি গ্রামসহ পুরো টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার আয়তন প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে ২ লক্ষ ৮০ হাজার ২৩৬ হেক্টরই জলাভূমি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টাঙ্গুয়ার হাওরের পাখি
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রেজা খানের মতে, টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি আছে প্রায় ২৫০ প্রজাতির৷ এসব পাখির বড় একটি অংশই পরিযায়ী পাখি৷ টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো এত বেশি পরিযায়ী পাখি দেশের অন্য কোথাও দেখা যায় না৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখির অভয়ারণ্য
টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রধান দুটি পাখির অভয়ারণ্য হলো লেউচ্ছামারা ও বেরবেড়িয়ার বিল৷ এছাড়াও যে বিলগুলোতে পাখিদের আনাগোনা বেশি থাকে, সেগুলো হলো রৌয়ার বিল, গজারিয়ার বিল, আলমের ডোয়ার, সাংসার বিল, কৈখালি বিল, ছুনখোলা বিল, জিততলার গোপ, ফইল্লার বিল, রূপাভুই বিল, সত্তার বিল, মইষের গাতা, হাতির গাতা, বালোয়ার ডোবা, আমছারের বিল, কাউয়ার বিল, আনসারের বিল, খাজুরী বিল, আইন্নার বিল, নলকাঠির বিল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখি দেখা
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওরে পরিযায়ী পাখিরা দল বেঁধে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসতে শুরু করে৷ এ হাওরে তাই পাখি দেখার সবচেয়ে ভালো সময় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তাঁবু বাস
শীত মৌসুমে পাখি দেখতে টাঙ্গুয়ার হাওরে ছুটে যান পাখিপ্রেমী মানুষেরা৷ নানান পাখির ছবি তুলতে জায়গাটিতে অনেকেই তাঁবুতেও বাস করেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
লালঝুঁটি-ভুতিহাঁস
পাখিটি রাঙ্গামুড়ি নামেও পরিচিত৷ টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা অতিথি পাখির বড় একটা অংশই হাঁস জাতীয় পাখি৷ এর মধ্যে দেখতে সুন্দর এই পাখিটির নাম লালঝুঁটি-ভুতিহাঁস৷ ইংরেজি নাম রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
দেশি মেটেহাঁস
এটি পাতিহাঁস নামেও পরিচিত৷ ইংরেজি নাম স্পট বিলড ডাক৷ আকারে অনেকটাই গৃহপালিত হাঁসের মতো৷ এটি অবশ্য পরিযায়ী নয়, বাংলাদেশের আবাসিক পাখি৷ তবে বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বলে বিবেচিত এবং বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত এই প্রজাতিটি এ হাওরেই বেশি দেখা যায়৷ পাখিটি সাধারণত স্ত্রী-পুরুষের জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গিরিয়া হাঁস
পাখিটির ইংরেজি নাম গার্গানি৷ বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর অ্যামেরিকা, ওশেনিয়া ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়৷ ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়া এদের প্রধান প্রজননস্থল৷ শীতকালে এসব অঞ্চল থেকে এরা ভারতীয় উপমহাদেশ, অস্ট্রেলেশিয়া ও আফ্রিকায় পরিযান করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মরচে রং ভুতিহাঁস
হাঁস জাতীয় এ পাখিটির ইংরেজি নাম ফেরুজিনাস ডাক৷ এ পখিটিও অনেকটাই গৃহপালিত হাঁসের মতো৷ আকারে ৩২ থেকে ৩৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে৷ পাখিটির মাথা, গলা, ঘাড়, বুক ও পিঠ ঘন তামাটে রঙের৷ লেজের নিচের অংশ সাদা৷ পুরুষের চোখ সাদা আর স্ত্রী পাখির চোখ কালচে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পিয়াং হাঁস
বাদামি রঙের এ হাঁসটিও শীতে প্রচুর দেখা যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে৷ ৩৯ থৈকে ৪৩ সেন্টিমিটার আকারের এ পাখিটি পুরুষের পিঠ কালো-বাদামি রঙের; পেট সাদা রঙের হয়৷ স্ত্রী পাখিটি দেখতে অনেকটা পুরুষ পাখিটির মতো৷ তবে এদের সারা দেহে বাদামি বর্ণের ছোপ ছোপ দেখা যায়৷ এদের ঠোঁট হলুদ সাথে কালো রঙের দাগ থাকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
লেঞ্জা হাঁস
উত্তুরে লেঞ্জা হাঁস নামেও পরিচিত৷ এর ইংরেজি নাম নর্দান পিনটেইল৷ বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও পৃথিবীর বহু দেশে এদের দেখা যায়৷ ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর অ্যামেরিকার উত্তরাঞ্চলে এরা প্রজনন করে৷ প্রজাতিটি স্বভাবে পরিযায়ী এবং শীতকালে এর প্রজননস্থলের দক্ষিণে বিষুবীয় অঞ্চলের দিকে চলে আসে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাতারি হাঁস
পাতি তিলি হাঁস নামেও পরিচিত এ পাখিটির ইংরেজি নাম কমন তিল৷ পুরুষ ও স্ত্রী পাখির বর্ণে পার্থক্য রয়েছে৷ পাতি তিলিহাঁস দলবদ্ধভাবে বসবাস করে এবং অপ্রজননকালীন মৌসুমে বিশাল দলে বিচরণ করে৷ বড় সংরক্ষিত জলাশয়ে এদের সহজে দেখা যায়৷ উদ্ভিদ বীজ ও ছোট ছোট জলজ জীব এদের প্রধান খাদ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাতি কুট
ইউরেশীয় কুট নামেও পরিচিত এ পাখিটি শীত মৌসুমে প্রচুর দেখা যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে৷ প্রধানত এক ধরনের জলচর পাখি এরা৷ পাখিটির শরীর ঘন কালো, চোখ ও কপাল সাদা, পা সাদাটে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ধুপনি বক
টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন হাওর ও বিলে এদের দেখা যায়৷ ধূসর বক নামেও পরিচিত এ পাখিটির ইংরেজি নাম গ্রে হেরন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বেগুনি বক
লালচে বক নামেও পরিচিত এ পাখিটির ইংরেজি নাম পার্পল হেরন৷ বেগুনি বক আফ্রিকা ছাড়াও, মধ্য এবং দক্ষিণ ইউরোপের পাশাপাশি দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় এই পাখি দেখতে পাওয়া যায়৷ ধূসর বকের মতো অনেকটা দেখতে হলেও বেগুনি বক আকারে কিছুটা ছোট৷ সাধারণত জলাশয়ের আশেপাশে এই পাখির বসবাস৷ মাছ, ব্যাঙ ও জলজ পোকা বেগুনি বকের প্রধান শিকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নেউ পিপি
জল কুকরা নামেও পরিচিত৷ পাখিটির ইংরেজি নাম ফেজান্ট টেইলড জ্যাকানা৷ একটি মেয়ে জল কুকরা এক সঙ্গে কয়েকটি ছেলে কুকরার সঙ্গে জোড়া বেঁধে পদ্মপাতায় ডিম পাড়ে৷ তারপর উড়ে চলে যায়৷ ডিমে তা দেয় ছেলে কুকরারা৷ পোকামাকড়ই এদের প্রধান খাদ্য৷ ৩১ সেন্টিমিটার দৈর্ঘের এ পাখি এই জলাশয়ের স্থায়ী বাসিন্দা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পানকৌড়ি
টাঙ্গুয়ার হাওরে শীত মৌসুমে দেখা যায় নানান প্রজাতির পানকৌড়ি৷ শীতের মধ্যেও এরা পানিতে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে৷ মাঝে মাঝে বিলের পাশে কিংবা ডালপালায় বসে রোদ পোহাতেও দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বেগুনি কালেম
কালিম, কায়িম, কায়েম, সুন্দরী পাখি ইত্যাদি নানা নামেই পরিচিত পাখিটি৷ এর ইংরেজি নাম পার্পল সোয়াম্প হেন৷ পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ওশেনিয়া, আফ্রিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়৷ টাঙ্গুয়ার হাওরের শুকনো জলাশয়ের পাশে এদের দলে দেলে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শিকারী পাখি
শীত মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা যায় নানা রকম শিকারী পাখি৷ এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বড় চিত্রা ঈগল, সিন্ধু ঈগল, মাছমুরাল, শঙ্খচিল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মেটে মাথা তিতি
টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমির আশপাশের শুকনো ঘাসের মধ্যে মেটে মাথা তিতি বেশি দেখা যায়৷ পাখিটির ইংরেজি নাম গ্রে-হেডেট ল্যাপউইং৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জল মোরগ
পাখিটি পাতি-পান মুরগি নামেও পরচিতি৷ ইংরেজি নাম কমন মুরহেন৷ টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাশয়ের পাশের তৃণভূমিতে বেশি দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কালো লেজ জৌরালি
টাঙ্গুয়ার হাওরে শীত মৌসুমে দেখা যায় কালো লেজ জৌরালির দল৷ পাখিটির ইংরেজি নাম ব্ল্যাক টেইলড গোডউইট৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নীড়ে ফেরা
শীত মৌসুমে খুব ভালো সূর্যাস্ত দেখা যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে৷ সূর্যাস্তের সময় পাখিদের দলে দলে নীড়ে ফিরে যাবার দৃশ্যও খুব ভালোভাবে দেখা যায়৷