অসুখ হলে অনেকেরই মুড়িমুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাবার অভ্যাস রয়েছে৷ অথচ এর ভুল বা অপ্রয়োজনীয় প্রয়োগের ফলে মাল্টিরেজিস্টেন্ট জীবাণু সেই অ্যান্টিবায়োটিককে অকেজো করে দিতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
ওয়াটার স্পোর্টস অনুরাগী, পথিক ও পর্যটক – সবার কাছে জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের সুইশেনআনার মেয়ার হ্রদ স্বর্গরাজ্যের মতো৷ কিন্তু সেখানেই মাল্টিরেজিস্টেন্ট জীবাণু পাওয়া গেছে৷ সেই এক্সটেন্ডেড স্পেকট্রাম বিটাল্যাকটামেস বা ইএসবিএল জীবাণু এবং মাল্টিড্রাগ-রেজিস্টেন্ট গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বা এমআরজিএন একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে৷
সেই জীবাণু মূত্রাশয় বা ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটাতে পারে – এমনকি রক্তে বিষক্রিয়াও ঘটাতে পারে৷ এই ধরনের জীবাণু সাধারণত এমন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বড় মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় – যেমন হাসপাতাল বা পশুখামার৷
জলাশয়েও তাদের চিহ্ন পেয়ে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী প্রো. ইয়োহানেস ক্নোবলখ-এর মতো বিশেষজ্ঞরা মোটেই বিস্মিত হননি৷ তবে তাঁরা এমন ধরনের জীবাণু আশা করেননি৷ সব রকম অ্যাকটিভ সাবস্ট্যান্স ব্যর্থ হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধে যে জীবাণু ব্যবহার করা যায়, হ্রদের পানিতে সেটি পাওয়া গেছে৷ প্রো. ক্নোবলখ বলেন, ‘‘জার্মানিতে রোগীদের শরীরে এই ধরনের রেজিস্টেন্স এখনো অত্যন্ত বিরল৷ তা সত্ত্বেও আমাদের মনে এ সম্পর্কে চরম ভীতি কাজ করে৷ কীভাবে সেগুলির প্রসার ঘটে, তা নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করি৷ আগামী কয়েক বছরে এ ক্ষেত্রে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন হবে৷''
ক্নোবলখ হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি বিভাগের প্রধান৷ শোধনাগারগুলি মাল্টিরেজিস্টেন্ট জীবাণু কতটা নিষ্ক্রিয় করতে পারে, ২০১৭ সাল থেকে এক গবেষণামূলক প্রকল্পের আওতায় তিনি সেই পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
স্বাস্থ্য সম্পর্কে সাম্প্রতিক গবেষণার কিছু তথ্য
আপনি কি প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কষ্ট পাচ্ছেন? শরীর ও মনের ব্যথা ভুলতে মাসাজের কোনো ভূমিকা আছে কি? কিংবা গ্লুটেন কেন খাবেন অথবা টিনিটাস হলেই বা কী করবেন৷ এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল থেকে৷
ছবি: Colourbox
কানের রোগ টিনিটাস
ঘরে বা বাইরের বিকট বা জোরে শব্দ থেকে অনেকের কানে হঠাৎ করে মাঝে মাঝে শোঁ শোঁ শব্দ হয়৷ এই অসুখকে ডাক্তারি ভাষায় টিনিটাস বলা হয়৷ সাম্প্রতিক সময়ের এক সুইডিশ গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, টিনিটাস শুধু শব্দ থেকে নয়, বংশগত কারণেও হতে পারে৷ এই ফলাফল টিনিটাস রোগীকে সুচিকিৎসা দিতে সহজ হবে বলেই গবেষকরা মনে করছেন৷
ছবি: Fotolia/Jürgen Fälchle
গ্লুটেন কেন খাবেন
স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়া বা অ্যালার্জির কারণে অনেকে ময়দার মধ্যে থাকা আঁঠালো পদার্থ বা ‘গ্লুটেন’ খান না৷ অন্যদিকে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও বলছেন গ্লুটেন স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তবে গ্লুটেনের অভাব নাকি ডায়াবেটিস টাইপ ২-এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে৷
ছবি: Colourbox
অ্যান্টিবায়োটিক পেটকে বিভ্রান্ত করে
অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পর অনেকেরই পেটে সমস্যা দেখা দেয় বা বদহজম হয়৷ এক্ষেত্রে ঘরে পাতা সাদা দই বেশ উপকারী, কারণ দই-এ থাকা ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া যা পেটকে শান্ত করে এবং হজমশক্তি বাড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
হৃদয় ব্যথায় করণীয়
আপনি কি প্রেমে ব্যর্থ, হৃদপিন্ডে ব্যথা হচ্ছে? চিন্তা নেই৷ প্লাসিবো নামের পিল বা ট্যাবলেট সেবন করুন, ভাঙা হৃদয় আবার সুস্থ হয়ে যাবে৷ এটি শরীরেও অন্য কোনো ক্ষতি করে না৷ হ্যাঁ এই তথ্যই প্রকাশ করেছে ‘জার্নাল অফ নিউরোসায়েন্স’৷ গবেষণাটি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদল৷ যাদের নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে তাদের অতিরিক্ত লবণযুক্ত এই পিল সেবন করায় তারা হালকা অনুভব করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. P. Sakki
মাসাজ শরীর ও মনে সুখ আনে
ঘাড় বা শরীর ব্যথা করলে পার্টনারকে মাসাজ করতে দিন৷ দেখবেন, এতে যে শুধু ব্যথা কমবে তা নয়, মনও ভালো হবে৷ হ্যাঁ, গবেষণার মাধ্যমে এই তথ্যটি খুঁজে বের করেছেন নর্থআম্ব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷ যার ফলাফল ব্রাইটনে অনুষ্ঠিত ব্রিটিশ সাইকোলজি সোসাইটির বাৎসরিক কনফারেন্সে পেশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
5 ছবি1 | 5
অনেক প্লান্ট এমন জীবাণু আংশিকভাবে ছেঁকে নিতে পারে৷ ফলে সেই জীবাণু বিশেষ করে হাসপাতাল বা পশুখামারের কাছের পানিতে পৌঁছে যায়৷ বিশেষ করে প্রবল বৃষ্টিপাতের পর জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ কারণ বৃষ্টির পানির সঙ্গে কখনো প্রাণিজ সার ও অপরিশোধিত নর্দমার পানি সরাসরি নদীনালা ও হ্রদে পৌঁছে যায়৷
পাখি ও বন্য প্রাণীরাও মাল্টিরেজিস্টেন্ট জীবাণু বহন করে পানিতে নিয়ে আসে৷ তবে সৌভাগ্যবশত বেশিরভাগ জীবাণু বেশি সময় পানিতে জীবিত থাকতে পারে না৷ কিন্তু তার ফলে সমস্যার সমাধান হয় না৷ প্রো. ইয়োহানেস ক্নোবলখ বলেন, ‘‘রেজিস্টেন্স উধাও হয় কিনা, সে বিষয়ে এখনো আমরা নিশ্চিত নই৷ ব্যাকটেরিয়া নিজেদের মধ্যে প্রতিরোধ শক্তি আদানপ্রদানের ক্ষমতা রাখে৷ ফলে কোনো একদিন রেজিস্টেন্সের জেনেটিক তথ্য এমন ব্যাকটেরিয়ার কাছে ফেরত যেতে পারে, যারা মানুষকে অসুস্থ করে তুলতে পারে৷''
অন্য প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে রেজিস্টেন্স হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার ফলে রোগের এমন প্যাথোজেন সৃষ্টি হতে পারে, কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই যাকে কাবু করতে পারবে না৷ যত বেশি প্রতিরোধী জীবাণু পানিতে থাকবে, তাদের মধ্যে আদানপ্রদানের ঝুঁকিও ততটা বাড়বে৷
এখনো পর্যন্ত নদীনালা বা হ্রদে তাদের পরিমাণ যথেষ্ট কম৷ কিন্তু বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া কি সেখান থেকে পানীয় জলেও মিশে যেতে পারে?
অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল বা অপ্রয়োজনীয় প্রয়োগের কারণেও প্রতিরোধ দেখা দেয়৷ এমন আচরণে পরিবর্তন না হলে কোনো এক সময় কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই কাজ হবে না৷
ওষুধের সাথে যেসব খাবার খাবেন না
অ্যান্টিবায়োটিক আর দুধ যে একসাথে খাওয়া ঠিক নয়, সেকথা অনেকেই জানেন৷ তবে এবার জেনে নিন এমন আরো অনেক ওষুধ ও খাবারের কথা, যেগুলো একসাথে খেলে শরীরেরে উপকার না হয়ে ক্ষতিও হতে পারে!
ছবি: Colourbox/Odilon Dimier/6PA/MAXPPP
গ্রেপফ্রুট আর ট্যাবলেট একসাথে নয়!
ওষুধকে পুরোপুরি কাজে লাগতে গ্রেপফ্রুট বা স্বাদে টক, বড় কমলাজাতীয় ফলের ভেষজ উপাদান অন্ত্র বা পেটের এনজাইমকে দমন করে বা বাধা দেয়৷ তাই ওষুধের সাথে গ্রেপফ্রুট না খাওয়াই স্রেয়৷ অর্থাৎ চিকিৎসা চলাকালীন গ্রেপফ্রুটকে একেবারে দূরে রাখুন৷
ছবি: Fotolia
কফি বা চায়ের সাথে আয়রন ট্যাবলেট নয়!
আয়রন ট্যাবলেটের কাজ হচ্ছে অন্ত্রের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করা৷ কিন্তু এই ট্যাবলেটের সাথে যদি চা বা কফি পান করা হয়, তাহলে তা মুত্রের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়৷ ফলে আয়রন ট্যাবলেটের উপকারিতাও কমে যায়৷ তাই রক্তস্বল্পতার কারণে যারা আয়রন ট্যাবলেট খান, তারা অবশ্যই ট্যাবলেট সেবনের দু’ঘণ্টা আগে অথবা পরে চা বা কফি পান করবেন৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
রক্তের ঘনত্ব কমানোর ওষুধের সাথে সবুজ সবজি নয়!
ব্রকোলির মতো সবুজ সবজি বা সালাদে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’, যা রক্ত জমাট না বাঁধতে সাহায্য করে৷ তবে যারা রক্তের ঘনত্ব কমাতে, বিশেষ করে পা ফুলে যাওয়ার জন্য ওষুধ খান, তাদের বলছি, সেসব ওষুধের সাথে সবুজ সবজি খেলে ওষুধের উপকারিতা কমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
অ্যান্টিবায়োটিক আর দুধ একসাথে নয়!
অ্যান্টিবায়োটিকের বিশেষ কিছু উপাদান ক্যালশিয়ামের সাথে মিশে দানা বা জট হয়ে যায়৷ ফলে তা পেটের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করতে পারে না৷ তাই অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে দুধ খাওয়া উচিত নয়৷ তবে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার দু’ণ্টা আগে বা পরে দুধ পানে বাধা নেই৷
ছবি: Colourbox
রেডিমেড মাংসের সাথে ডিপ্রেশনের ওষুধ নয়!
তৈরি মাংসের খাবারে, যা মূলত পশ্চিমা বিশ্বেই বেশি পাওয়া যায়, থাকে প্রচুর পরিমাণে টিরামিন৷ তাই যারা বিষণ্ণতায় ভোগেন তাদের চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে এ সব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো৷ কারণ তা সুস্থ হওয়া দীর্ঘায়িত করে এবং এতে উচ্চরক্তচাপও হতে পারে৷
ছবি: imago/McPHOTO
চিপসের সাথে ‘কর্টিসোন’ নয়!
কর্টিসোন হলো এক ধরণের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিনিঃসৃত হরমোন৷ যখন কেউ কর্টিসোন সেবন করবেন, তখন কোনোভাবেই তার সঙ্গে চিপস খাবেন না, বিশেষ করে কর্টিসোন ওষুধটি যদি ত্বকের সমস্যার জন্য হয়ে থাকে৷ কারণ কর্টিসোনে থাকা ন্যাট্রিউম পেট ব্যথা ও গলা ব্যথার কারণ হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Airio
সেরিয়ালের সাথে ‘প্যারাসিটামল’ খাবেন না
সেরিয়াল বা বিভিন্ন দানায় থাকা আঁশ ব্যথার ওষুধকে ভালোভাবে কাজ করতে তো দেয়ই না, বরং বাঁধার সৃষ্টি করে৷ অর্থাৎ পেট বা অন্ত্রকে দমন করে থাকে সেরিয়াল৷ তাই শষ্যদানা, আঁশ জাতীয় খাবার কোনো ব্যথার ওষুধের সাথে খাবেন না, কেমন?
ছবি: Colourbox/zemgalietis
অ্যাজমার ওষুধ আর গোলমরিচ একসাথে নয়!
যারা অ্যাজমা বা হাঁপানির ওষুধ সেবন করেন, তাদের গোলমরিচ না খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ৷ কারণ গবেষণায় বলছে, গোলমরিচের ঝাঁঝ অ্যাজমার ওষুধের কর্মক্ষমতা কমিয়ে তার গতিও ধীর করে দেয়৷ তাই যাদের হাঁপানি আছে, তারা গোলমরিচ এড়িয়ে চলুন৷
ছবি: macroart - Fotolia.com
পরামর্শ
যে কোনো ওষুধ সেবন করার আগে ওষুধের ভালো-মন্দ দিকগুলো ডাক্তারের কাছে জেনে নিন এবংওষুধের সাথে থাকা ছোট্ট তথ্যপুস্তিকাটি ফেলে না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন৷ ওষুধ সুস্থ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তার পাশ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানুন৷ আপনার খাদ্যাভ্যাস যেন আপনার চিকিৎসার পথে বাধা সৃষ্টি না করে৷ এদিকে নজর রাখলেই তাড়াতাড়ি ও পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব৷