1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমাদের শহীদ মিনার, তার পাশেই ‘লজ্জার মিনার'

আশীষ চক্রবর্ত্তী৭ মে ২০১৫

কত ‘অপরাধী' দাপটে ঘুরে বেড়ায়, অথচ নভেরা আহমেদকে নীরবে ছাড়তে হয় দেশ৷ তাঁর খোঁজ রাখে না কেউ৷ মরার আগেই মেরে ফেলা হয়৷ কী লজ্জা! কী লজ্জা! তাঁর সুকীর্তির সাক্ষী শহীদ মিনার৷ পাশেই যেন জাতীয় লজ্জার অদৃশ্য এক মিনার!

Dhaka Feierlichkeiten zum Tag der Muttersprache 21.02.2014
ছবি: Reuters

এখন প্রচুর লেখালেখি, বলাবলি চলছে নভেরা আহমেদকে নিয়ে৷ বিখ্যাত কেউ মারা গেলে যেমন হয় আর কি! গুণকীর্তন চলছে৷ ‘তাঁর প্রতি অবিচার হয়েছে', ‘প্রাপ্য সম্মান পাননি', ‘জীবদ্দশায় উপযুক্ত স্বীকৃতি পেলেন না' – এ সব বলা, লেখার মানুষের অভাব নেই৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে এমন হয় না, তা নয়৷ হয়৷ তবে নভেরা আহমেদকে নিয়ে যা হয়েছে, কোনো ‘সভ্য' দেশে এমন হয় কিনা আমার জানা নেই৷

ভাবুন, ১৯৭৩ সালে দেশ ছাড়লেন নভেরা, ২৪টি বছর কোথাও তাঁর কোনো খবরই নেই৷ ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা যখন প্যারিসে গেলেন, জানা গেল, বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্যের অন্যতম পথিকৃৎ নভেরা প্যারিসে স্থায়ী হয়েছেন৷ ভালো কথা৷ শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার হিসেবে তাঁকে সে বছরই একুশে পদক দেয়া হলো৷ বেটার লেট দ্যান নেভার৷ ভালো কাজ দেরিতে হলেও মন্দ কি! কিন্তু পরের বছরই বাংলাদেশ লেখক সংসদ প্রকাশ করল ‘বাংলাদেশের নারী চরিতাভিধান'৷ কৃতী নারীদের জীবনীর সংকলন৷ সেখানে গ্রন্থটির লেখিকা সাঈদা জামান জানালেন, নভেরা আহমেদ ১৯৮৯ সালে মারা গেছেন৷ তা-ই যদি হবে, তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সালে তাঁকে দেখলেন কী করে! জীবিত ধরে নিয়ে সে বছর তাঁকে একুশে পদকই বা দেয়া হলো কীভাবে!

চিরস্মরনীয় নারীদের নিয়ে লেখা বইটির সেই ভুল পরে হয়ত সংশোধন করা হয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশ তা থেকে শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হয় না৷

সংবাদমাধ্যম অন্তত নেয়নি৷ নভেরা আহমেদের শোক সংবাদেই নমুনার ছড়াছড়ি৷ দু-একটা উদাহরণ না দিলেই নয়৷ দেশের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক লিখেছে, ১৯৩০ সালে কলকাতায় জন্ম, ৮৫ বছর বয়সে অবসান হলো তাঁর নস্বর জীবনের৷ অন্যদিকে দেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক জানিয়েছে, মৃত্যুর সময় নভেরা আহমেদের বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর৷ তাঁর শিক্ষাজীবন, ব্যক্তি জীবন নিয়েও সংবাদমাধ্যম জুড়ে বিভ্রান্তিকর তথ্যের ছড়াছড়ি৷

আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

এগারো বছর বয়সে বাবা বিয়ে দিতে চাইলে প্রতিবাদ করেছিলেন নভেরা আহমেদ৷ পঞ্চাশের দশকে মুসলিম পরিবারের মেয়ে হয়েও হয়েছেন ভাস্কর৷ আইয়ুবি শাসনের চোখ রাঙ্গানি পরোয়া না করে হামিদুর রহমানের পাশে থেকে করেছেন জাতীয় শহীদ মিনারের নকশা৷ তবে নকশাকার হিসেবে বহুকাল শুধু হামিদুর রহমানের নামই জেনেছে সবাই৷ হামিদুর রহমান নিজেও নাকি কোনো সাক্ষাৎকারে নভেরা আহমেদের অবদানের কথা বলেননি৷ ১৯৭৩ সালে দেশ ছেড়ে গিয়ে নভেরা আহমেদ আর ফেরেননি৷ অন্তরালেই কেটে গেল বাকি জীবন৷ অবশেষে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে সত্যি সত্যি চলেও গেলেন ৷ তবে চলে যাওয়া মানে তো প্রস্থান নয়! বাঙালির ইতিহাস থাকবে, শহীদ মিনার থাকবে, নভেরা আহমেদও থাকবেন, মাথা উঁচু করে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ