আগামী ১২ই জুন সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প-কিম বৈঠক সম্ভব করতে দুই শিবিরেই জোরালো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়ার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বেইজিং হয়ে নিউ ইয়র্কে যাচ্ছেন৷ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে মতপার্থক্য কাটাতে আলোচনা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
কোরীয় উপদ্বীপে সংকট নিরসনের আশা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ প্রত্যাশিত ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে উত্তর কোরিয়ার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বুধবার নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন৷ সে দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ও কিম জং উনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা জেনারেল কিম ইয়ং চল চলতি সপ্তাহের শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও'র সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ গত এপ্রিল ও মে মাসে কিম জং উন ও পম্পেও'র দুটি বৈঠকের সমন্বয় করেছিলেন তিনি৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে এক টুইট বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন৷ তাঁর ধারণা, গত ২৪শে মে উত্তর কোরিয়ার নেতাকে লেখা তাঁর নিজের চিঠির জোরেই এই গুরুত্বপূর্ণ সফর সম্ভব হচ্ছে৷
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কালো তালিকায় তাঁর নাম থাকলেও বিশেষ ব্যতিক্রম হিসেবে তাঁর অ্যামেরিকা সফর সম্ভব করা হচ্ছে৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কন্যা ও উপদেষ্টা ইভানকার পাশে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল৷ উল্লেখ্য, ২০০০ সালের পর উত্তর কোরিয়ার এত উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তা অ্যামেরিকা সফর করেননি৷
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারা সান্ডার্স বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ট্রাম্প দুই পক্ষের মধ্যে চলমান আলোচনা সম্পর্কে অত্যন্ত সন্তুষ্ট৷ তবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি মূল গুরুত্ব পেলেই শীর্ষ বৈঠক সম্ভব হবে, বলেন সান্ডার্স৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, যে ট্রাম্প আগামী ৭ই জুন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে'র সঙ্গে বৈঠক করবেন৷
কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের সংজ্ঞা নিয়ে দুই পক্ষের মতপার্থক্য দূর করা সম্ভব হবে কিনা, তার উপর সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠক ও তার সাফল্য নির্ভর করছে৷ মার্কিন প্রশাসন চায়, উত্তর কোরিয়া একতরফাভাবে তার পরমাণু অস্ত্রত্রাণ্ডার ত্যাগ করার অঙ্গীকার করুক৷ পিয়ং ইয়ং অবশ্য এমন একতরফা পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে৷ এমনকি কোনো সার্বিক চুক্তির আওতায় উত্তর কোরিয়া শেষ পর্যন্ত রাজি হলেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার জন্য ১৫ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷ গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র ধারণা উত্তর কোরিয়া তার পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার ত্যাগ করার বিষয়ে আন্তরিক নয়৷
ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠকের ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকার গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নহাপ সংবাদ সংস্থার সূত্র অনুযায়ী কিম ইয়ং চল অ্যামেরিকা যাবার আগে বেইজিংয়ে চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন৷ কিম জং উনের সাম্প্রতিক দুটি বেইজিং সফরেও কিম ইয়ং চল সঙ্গে ছিলেন৷
এদিকে মার্কিন কূটনীতিক ও কোরিয়া বিশেষজ্ঞ সুং কিম বুধবারও কোরিয়া সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করছেন৷ গত রবিবার থেকে তিনি লাগাতার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ সিঙ্গাপুরেও এক মার্কিন প্রতিনিধিদল সম্ভাব্য বৈঠকের কৌশলগত প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ সংবাদ সংস্থা এএফপি'র সূত্র অনুযায়ী কিম জং উনের ‘চিফ অফ স্টাফ’ বলে পরিচিত কর্মকর্তা কিম চাং সন-কেও সিঙ্গাপুরে একটি হোটেলে দেখা গেছে৷ মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্প-কিম বৈঠক সম্ভব করতে দুই শিবিরেই জোরালো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
উত্তর কোরিয়া ও কিম জং উনের বিশেষ কিছু জিনিস
উত্তর কোরিয়ায় যেখানে সাধারণ মানুষ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নেতা কিম জং উনের আরাম-আয়েশ-বিলাসিতার কোনো কমতি নেই৷ দেখে নিন তার কিছু নমুনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
অপূর্ব প্রাসাদ
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ এই বিশাল প্রাসাদ রয়েছে৷ কুমসুসান প্রাসাদটি কিম ইল সুং এর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশ্বে আর কোন কমিউনিস্ট নেতার এমন বিশাল প্রাসাদ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
হোটেল
রিউগইয়ং বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেলগুলোর একটি৷ পিরামিড আকারের ১০৫ তলা এ হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে৷ সেই সময় দেশে কিম ইল সুং এর শাসন ছিল৷ কিম ইল সুং ছিলেন কিম জং উনের দাদা৷ এখনও হোটেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
আকাশে শাসন
উত্তর কোরিয়ার কাছে বিভিন্ন ধরণের এক হাজারটি বিমান আছে, যেগুলোর বেশিরভাগ সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা চীনে তৈরি৷ এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন হেলিকপ্টার, যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং ড্রোন৷ কিম জং উনের কাছে এএএম এবং ট্রিপল এ সিস্টেমের মতো কিছু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: Reuters/Kcna
স্কি রিসোর্ট
কিম জং উনের নির্দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৬০ মিটার উঁচুতে মাসিকরিয়ং নামে এক জায়গায় একই নামে একটি স্কি রিসোর্ট বানানো হয়েছে৷ এই স্থানটি উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার৷ পর্যটকদের জন্য এখানে ১২০ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেল রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
জং উনের মোবাইল নেটওয়ার্ক
শোনা যায়, উত্তর কোরিয়ায় কেবল কিম জং উন এবং তাঁর কাছের মানুষদের ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কোরীয় লিংক নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি পরিচালক আহমাদ আল নোয়ামিনি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ এই মোবাইল পরিষেবার সুবিধা ভোগ করতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/KCNA via KNS
ব্যক্তিগত দ্বীপ
দেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি গোপন দ্বীপ রয়েছে৷ কিম জং উনের অতিথি হয়ে উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক তারকা৷ এই দ্বীপে রাখা হয়েছিল তাঁকে৷ শোনা যায়, এখানে আনন্দ বিনোদনের সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিম জং উনের ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গাও রয়েছে সেখানে৷
ছবি: Tourism DPRK
গল্ফ কোর্স
কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ায় অসাধারণ কিছু গল্ফ ক্লাব রয়েছে৷ সরকারি কর্মচারীরা গল্ফ ক্লাবগুলোকে সবসময় ঝকঝকে করে রাখে৷ গল্ফ ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি আর কুস্তি জনপ্রিয় খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
সেনা ঘাঁটি
উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে অনেক যুদ্ধ জাহাজ, টহল নৌকা এবং বড় বড় সামরিক জাহাজ রয়েছে৷ নিজেদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করা উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য৷ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি৷
ছবি: REUTERS/KCNA
বিলাসবহুল গাড়ি
শোনা যায়, ২০১৪ সালে কিম জং উন ১ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে গাড়ি কিনেছিলেন৷ এর মধ্যে মার্সিডিজ বেনৎস, লিমোজিন আর আছে লাক্সারি স্পোর্টস কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
পিয়ানো ভীষণ পছন্দ
শোনা যায়, কিম জং উনের কাছে ২০টিরও বেশি পিয়ানো আছে৷ এমন গুজবও রয়েছে যে, তিনি প্রতিদিনই পিয়ানো বাজান, আর যদি সুরের কোনো গণ্ডগোল হয়, সেটাকে তিনি পিয়ানোর দোষ হিসেবে মনে করেন, নিজের নয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
সাবমেরিন
কিম জং উনের কাছে সোভিয়েত আমলের কিছু পুরানো সাবমেরিন রয়েছে৷ এছাড়া দেশটির কাছে আরো বেশ কয়েকটি চীনের সাবমেরিন রয়েছে৷ আর কিছু সাবমেরিন উত্তর কোরিয়ার সেনারা নিজেরাই তৈরি করেছে৷