একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘নৌকার জয় হবেই৷ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির জয় হবেই৷''
বিজ্ঞাপন
রোববার সকাল ৮টায় ভোটের শুরুতেই ঢাকার সিটি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দেন প্রধানমন্ত্রী৷ এ কেন্দ্রে তিনিই ছিলেন প্রথম ভোটার৷ ভোট দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে৷''
জয়ের বিষয়ে কতটা আত্মবিশ্বাসী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী৷ কারণ আমার জনগণের প্রতি বিশ্বাস আছে৷'' ফলাফল মেনে নেবেন কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন,‘‘অবশ্যই মেনে নেব৷ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি৷ জনগণকে বিশ্বাস করি৷ জনগণ যে রায় দেবে মেনে নেব৷''
সব সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ৷ প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছর পরও দাপটের সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছে দলটি৷ স্বাধীন দেশে সরকার গঠন করেছে ৪ বার৷ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কিছু চিত্র...
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সর্বাধিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশের ১০টি সংসদ নির্বাচনের মাত্র দুটিতে অংশ নেয়নি৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করায় সংকটে পড়ে দলটি৷ ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে দলের দু’টি অংশ আলাদাভাবে অংশ নেয়৷ ১৯৮১ সালে দলকে ঐক্যবদ্ধ করেন শেখ হাসিনা৷ ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে দলটি অংশ নেয়নি৷ এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও তারা বর্জন করে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়
১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই নির্বাচনে ৩০০টির মধ্যে ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ৷ সেবার এক কোটি ৯৩ লাখ ২৯ হাজার ছয়শ' ৮৩ ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭১৭ ভোট৷
ছবি: bdnews24
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই আওয়ামী লীগ
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নেতৃ্ত্ব সংকটে জর্জরিত আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়৷ এ নির্বাচনে আবদুল মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসন পায় এবং মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন অংশ পায় দু’টি আসন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বিরোধী দলের ভূমিকায়
১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃ্ত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ ৭৬টি আসনে জয় লাভ করে৷ সেই নির্বাচনে দলটি ২৬ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পায়৷ সেবারই প্রথমবারের মতো সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে যোগ দেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
আবার বিরোধী দলে
স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসনে জয় লাভ করে আবার প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যায়৷ ৮৮টি আসন পেলেও মোট ভোটে আওয়ামী লীগ ১৪০টি আসন জয়ী বিএনপির কাছাকাছিই ছিল৷ আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৩০ দশমিক এক শতাংশ ভোট আর বিএনপি পেয়েছিল ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট৷
ছবি: Sarah Kabori/Nur Uddin, Dhaka
২১ বছর পর ক্ষমতায়
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে ২১ বছর পর আবার ক্ষমতায় ফেরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ৷ এর আগে বিএনপি সরকারের অধীনে আয়োজিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন তারা বয়কট করে৷ সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ১৪৬টি আসন এবং ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায়৷ সেই সুবাদে প্রথম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন দলনেত্রী শেখ হাসিনা৷
ছবি: Saiful Islam Kallol
ভোট বিস্ময়
৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৬২টি আসন পায় আওয়ামী লীগ৷ সেবার নির্বাচনে জয়ী বিএনপি পায় ১৯৩টি আসন আর ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ ভোট, যেখানে আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২ আসনে জয়ী হয়ে ৪০ দশমিক ২ শতাংশ ভোট৷ এর আগে ’৯১-এর নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ আসন অনেক কম পেলেও ভোট অনেক বেশি পেয়েছে৷ এবারও ২ কোটি ২৩ লাখের বেশি ভোট পায় দলটি, যেখানে তিনগুণ বেশি আসনে বিজয়ী বিএনপি পায় ২ কোটি ৩০ লাখ ভোট৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
ভোটের জোয়ার
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ২৩০ আসনে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ আর ভোট পায় ৪৯ শতাংশ৷
ছবি: bdnews24
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ আসন
বেশিরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিরোধেও তৎপর হওয়ায় আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ আসনে জয় লাভ করে৷ ৮১টি আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয়ী হয়৷ মোট ২৩৪ আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ৷ তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস করায় ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই হয় এই নির্বাচন৷
ছবি: imago/Xinhua
9 ছবি1 | 9
বিএনপির বিরুদ্ধে ভোট ঘিরে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ এনে বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক যে, গতকালও আমাদের ৪ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে৷ একই কায়দায় কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ এই কয়দিনের সহিংসতায় আমাদের প্রায় ১০ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন৷''
প্রার্থীদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি মনে করি নৌকার জয় হবেই হবে৷''
ভোট দিয়ে বেরিয়ে দুই আঙুল তুলে বিজয়ের চিহ্ন দেখান শেখ হাসিনা৷