স্বাধীনতা দিবসে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ এ লক্ষ্যে এখন চলছে তহবিল সংগ্রহ আর প্রচারণা৷ তবে এ জন্য ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে সরকারের টাকা নেয়ার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে৷
বিষয়টি নিয়ে ব্লগ আর ফেসবুকে আলোচনা হচ্ছে৷ আমারব্লগে শিমুল জিতুর পোস্টের শিরোনাম, ‘‘তিন কোটি টাকা: আমার বিবেকের দাম এত কম?'' তিনি লিখেছেন, ‘‘বাহ! প্রধানমন্ত্রী বাহ! জাতির পিতার জম্মদিনে বড় কষ্ট হচ্ছে আপনার এই বিবেকহীনতা দেখে৷ তিন কোটি টাকা, মাত্র তিন কোটি টাকা আপনি হাত পেতে নিলেন ইসলামী ব্যাংক থেকে, যারা আমার দেশের মানুষ পোড়ানোতে অর্থায়ন করে, যাদের কিনে দেওয়া ককটেলে আমার বোন আহত হয়, যাদের টাকায় গড়ে উঠে জঙ্গিদের রাজ্য, যারা আমার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসে না, তাদের টাকা দিয়ে এখন আমরা উৎসব করবো? বিশ্ব রেকর্ড করবো? আরে আমরা ১৭ কোটি মানুষ, আপনার মানুষ, হাত পাতলে আমাদের কাছে পাততেন, আমরা ২ টাকা করে দিলেও জামায়াতের টাকার ১০ গুন বেশি অর্থ পেতেন, আমরা ভালোবেসে দিতাম৷ আমরা সহজ সরল মনে হেসে কেঁদে দিতাম আপনাকে, আমরা খুশি হতাম৷ কিন্তু ম্যাডাম আজ আঘাতটা যে আপনি আমাদের বুকে দিলেন, আমাদের অহংকার আমাদের আত্মসম্মান যে আজ ধুলোয় মিশে গেল৷'' এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমাও করবেন না বলে জানিয়েছেন৷ ‘‘তিন কোটি টাকায় আমার যেই সম্মান আপনি নষ্ট করলেন তার জন্যে আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী৷''
বাঙালির কাছে এবার বিজয় দিবস নতুন রূপে ধরা দিয়েছে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির তিনদিন পর এই বিজয় উৎসব জাতিকে ভিন্ন মাত্রায় উজ্জীবিত করেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিলো ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র, পেয়েছে নতুন মানচিত্র৷ আজ ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তি৷ সেই উপলক্ষ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিরোধী নেতার শ্রদ্ধা
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া৷
বড়দের সঙ্গে এসেছিল শিশুরাও৷ বুঝে হোক, কিংবা না বুঝে, বড়দের সাথে সাথে তারাও শ্রদ্ধা জানিয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
"বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা"
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির হাজার প্রাণের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷ তাদের পরাজয়ে উদিত হয় একটি নতুন দেশের সূর্য৷ সূচিত হয় নতুন ইতিহাস, নতুন পতাকা৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরি করেন প্রায় ত্রিশ হাজার সেনা সদস্য, স্কুল শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
নতুন রূপে বিজয় দিবস
এবারের বিজয় দিবস বাঙালির কাছে নতুন রূপে ধরা দিয়েছে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির তিনদিন পর এই বিজয় দিবস জাতিকে ভিন্ন মাত্রায় উজ্জীবিত করেছে, দিয়েছে নতুন সাহস৷ ৪২ বছর ধরে জাতি যা চেয়েছে, তার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নয় মাসের আত্মত্যাগ
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাঙালি নিধন শুরু করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ তার জবাব দেয়া হয় স্বাধীনতা ঘোষণা আর মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে৷ যুদ্ধকালীন ৯ মাসের চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷ স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ৩০ লাখ মানুষ৷
ছবি: AP
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামসসহ স্বাধীনতা বিরোধীরা ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিল৷ হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা৷ এই সব রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনতে কয়েক দশক সময় লেগে যায়৷
ছবি: Reuters
মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য আন্দোলনরত ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো হয়৷ রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে শহিদ হন৷ সেই সময়ই রচিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি৷
ছবি: DW/M. Mamun
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করেছিল সেই জায়গায় লাখো কণ্ঠে একসঙ্গে উচ্চারিত হলো ‘‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি৷'' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটিই একাত্তরের রণাঙ্গণে বাঙালি জাতিকে প্রেরণা যুগিয়েছিল, শক্তি দিয়েছিল –যা পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে গ্রহণ করা হয়৷ ‘বিজয় ২০১৩' মঞ্চে বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে এই গানে কণ্ঠ মেলান উপস্থিত লাখো জনতা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
...মা তোর বদন খানি মলিন হলে
আমি নয়ন
ও মা আমি নয়ন জলে ভাসি
সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালোবাসি
এরপর তিনি লেখেন, ‘‘আজ আমার চোখে অশ্রু, আমাদের চোখে অশ্রু, কারণ আমাদের মায়ের বদনখালি আজ মলিন৷''
ব্লগার কাজল আব্দুল্লাহ ইসলামী ব্যাংকের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বিশ্বরেকর্ডের দরকার নাই....শত ব্যাখ্যায়, শত যুক্তিতে ইসলামী ব্যাংকের টাকায় জাতীয় সংগীতের বিশ্বরেকর্ডের পক্ষে সাফাই হবে না৷ শত গ্যালন পারফিউমেও এই চেকের দূর্গন্ধ হাত থেকে দূর হবে না৷''
একই ব্লগে ইমতিয়াজ ইমন লিখেছেন ‘‘ইসলামী ব্যাংকের দেশপ্রেম জাগ্রত হয়েছে৷ আর তাদের এই জাগ্রত দেশপ্রেম দেখে আমাদের চেতনাধারী সরকারও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন৷ তাই মহান রাজাকারদের অর্থের মূল উৎস ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করতে সরকার মহাশয় দ্বিধাবোধ করেননি৷''
এদিকে, এই ঘটনায় ব্লগার আরিফ জেবতিক তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ভাগ্যিস বেকুবদের দাবি অনুসারে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত বলে অভিযুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে তদন্ত চালানো হয়নি৷ নইলে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে জাতীয় সংগীত – আমাদের কিছুই করা হয়ে উঠত না৷'' এছাড়া জেবতিক তাঁর ফেসবুকে লুৎফর রহমান রিটনের লেখা একটি ছড়াও শেয়ার করেন৷