1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভাসমান স্কুল’

আরাফাতুল ইসলাম২০ নভেম্বর ২০১৪

২০০৭ সালের কথা৷ বাংলাদেশে শোরগোল এক প্রকল্প নিয়ে৷ নৌকার মধ্যে স্কুল তৈরি করেছে এক যুবক৷ আর সেই স্কুল একের পর এক অ্যাওয়ার্ড, ফান্ড পাচ্ছে ইন্টেল, গেটস ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে৷ তাই গিয়েছিলাম ‘ভাসমান স্কুল’ দেখতে৷

Organisation Shidhulai Swanirvar Sangstha in Bangladesh
ছবি: Getty Images

সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা৷ চলনবিল এলাকায় কাজ করে সংস্থাটি৷ স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ান এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী৷ খুব দ্রুতই তাঁর ‘ভাসমান স্কুল' প্রকল্প নাম করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে৷ একদিন গেটস ফাউন্ডেশন থেকে ‘মিলিয়ন ডলার ফান্ড’ পান তো আরেকদিন ইন্টেল তাঁকে অ্যাওয়ার্ড দেয়৷ অথচ বাংলাদেশের সাংবাদিকরা প্রকল্প সম্পর্কে তেমন একটা জানেই না৷

চলনবিল ঢাকা থেকে কাছাকাছি কোনো জায়গা নয়৷ আর রেজওয়ান তখন একটু প্রচারবিমুখ ধরনের ছিলেন৷ মোবাইলে তাঁকে পাওয়া যায় না, দেশি গণমাধ্যমের ইমেলের উত্তরও তেমন একটা আসে না৷ ফলে আমার প্রিয় আলোকচিত্রী সাংবাদিক সালাউদ্দিন টিটুর সঙ্গে রওয়ানা দেই চলনবিলের উদ্দেশ্যে৷ ‘ভাসমান স্কুল' নিজেরাই খুঁজে দেখবো৷

ভাসমান স্কুলের মধ্যে চলছে পাঠদানছবি: Getty Images

২০০৭ সালের কথা৷ পুরোটা এখন মনে করা সম্ভব নয়৷ তবে নাটোর থেকে চলনবিলের দিকে কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পরেই আমরা পেয়েছিলাম ভাসমান স্কুলের খোঁজ৷ একটি নৌকার ছাদে রয়েছে কয়েকটি সোলার প্যানেল৷ আর ভেতরে একটি কম্পিউটার৷ ছোট্ট একটি নদীর ঘাঁটে দাঁড়িয়েছিল নৌকাটি৷ ভেতরে আবার কম্পিউটারও রয়েছে৷ আর কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও পেয়ে যাই নৌকার মধ্যে৷

শুরুর দিকে রেজওয়ান তাঁর প্রকল্পকে একটি বড় করেই দেখাচ্ছিলেন৷ তবে তাঁর ধারণাটা অবশ্যই ব্যতিক্রমী এবং আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব৷ তবে একেবারে অভিনব নয়৷ নদীমাতৃক বাংলাদেশে বহু আগে থেকেই নৌকায় বেচাবিক্রির প্রচলন রয়েছে৷ দক্ষিণাঞ্চলে নৌকায় করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্যপণ্য বিক্রি করতেন সওদাগররা৷ আর বেদেরা নৌকায় বাস করছেন বহুকাল ধরে৷

রেজওয়ান তাঁর ভাসমান স্কুল প্রকল্পে এই ধারণাটা কাজে লাগিয়েছেন৷ আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি কয়েকটি কারণে খুব দ্রুত ব্যতিক্রমী প্রকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে৷

প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার এক উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এটি৷ পানি বাড়বে, ফলে স্কুল শিক্ষার্থীরা আরো অসহায় হয়ে পড়বে৷ এই অবস্থায় ভাসমান স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য এক চমৎকার বিকল্প৷

ভাসমান হলেও তথ্য প্রযুক্তি সুবিধা রয়েছে এই স্কুলেছবি: Getty Images

দ্বিতীয়ত, রেজওয়ানের স্কুলগুলো চলে সৌরশক্তিতে৷ ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের এক চমৎকার উদাহরণ হতে পারে এগুলো৷ শুধু তাই নয়, এই নৌকাগুলোর সোলার প্যানেল আবার বিশেষ ধরনের বাতি চার্জ দিতে ব্যবহার হয়৷ এসব বাতি জ্বালিয়ে রাতের বেলা শিক্ষার্থীরা বাড়িতে পড়ালেখা করতে পারে৷

তৃতীয়ত, তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা একেবারে সাধারণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার এক উপায় বের করেছেন রেজওয়ান৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের কাছে এটাও গুরুত্বপূর্ণ৷

এ সব কারণে রেজওয়ান খুব দ্রুতই আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন৷ মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিএনএন থেকে শুরু করে অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁর প্রকল্প এবং তাঁকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন, ফিচার করছে, করেছে৷ আজ বিশ্ব শিশু দিবসে ইউনিসেফের ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে ‘ভাসমান স্কুল' নিয়ে রেজওয়ানের লেখা একটি নিবন্ধ৷ টুইটারে টপ ট্রেন্ড এটি৷

আমার মনে আছে, চলনবিলের কাছে ঘোরাঘুরির সময় রেজওয়ানের কর্মীরা খুব দ্রুতই আমাদের শনাক্তে সক্ষম হয়েছিলেন৷ যদিও আমরা তাঁদের না জানিয়েই ভাসমান স্কুল প্রকল্প দেখতে যাই৷ এরপর তারা তাদের মতো করে আরো নৌকা আমাদের ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন৷ সেসময় চলনবিলের একটি নৌকায় বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম৷ কথা বলেছি স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে৷ তারা নৌকায় থাকা লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ে৷ আবার ফেরত দেয়৷

ডয়চে ভেলের সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলামছবি: DW/Matthias Müller

শুরুতেই বলেছি, রেজওয়ান তাঁর প্রকল্প নিয়ে একটু বাড়িয়ে বলতেন৷ আমি সেটার প্রমাণ পেয়েছিলাম৷ তিনি ‘ভাসমান স্কুলের' যে সংখ্যা বিদেশি গণমাধ্যমকে বলতেন, ততগুলো নৌকা তাঁর সেসময় ছিল না৷ এখন আছে কিনা জানি না৷ তবে এ ধরনের প্রকল্পের দরকার বাংলাদেশে নিশ্চয়ই রয়েছে৷ বিশেষ করে শিশুরা এই প্রকল্প থেকে অনেক লাভবান হতে পারে৷ তাই শুধু চলনবিল নয়, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের আরো বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে পানির কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে, সেসব জায়গায় ‘ভাসমান স্কুল' হতে পারে এক চমৎকার সমাধান৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ