1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আমার পুতের তো গুলি খাইয়া মরার কথা না'

২ সেপ্টেম্বর ২০২২

‘‘সকালে রাইন্ধা-বাইড়া খাওয়াইয়া দিসি৷ কামে বাইর হইছিল৷ অ্যাহন শুনি গুলি খাইছে৷ পুতেরে আইনা দেও, বুকে নিমু-’’ এভাবেই আহাজারি করছিলেন নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে নিহত শাওনের পাগলপ্রায় মা৷

ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর বাড়ির উঠানে পা ছড়িয়ে আহাজারি করছিলেন শাওনের মাছবি: bdnews24.com

তার ছোট ছেলে ২০ বছর বয়সি শাওন প্রধান বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটিতে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন৷ ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে পাগলপ্রায় মা পঞ্চাশোর্ধ্ব ফরিদা বেগম৷

ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর বাড়ির সামনে উঠানে পা ছড়িয়ে আহাজারি করছিলেন৷ পাগলপ্রায় মা পঞ্চাশোর্ধ্ব ফরিদা বেগম বলছিলেন, ‘‘ আমার পুতে জানি কয়বার মা কইয়া ডাকছে৷ আমার পুতে জানি কেমন করতেছে৷ তোমরা কেউ আমারে নিতেছ না ক্যান?’’

নারায়ণগঞ্জের পূর্ব গোপালনগরের বাড়ির অদূরে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তৈরির কারখানায় কাজ করতেন শাওন৷ নিহত শাওন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ও বক্তাবলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পূর্ব গোপালনগর এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে৷ নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে শাওনদের একতলা বাড়ি৷

ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বোন ছুটে আসেন; মায়ের কোলে আছড়ে পড়েন তিনিও৷

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে স্থানীয়রা জানান, চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শাওন সবার ছোট ৷ বছর দুয়েক আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বড় মেয়ে হেনা ৷  তার এক মাস পর মানসিক ভারসাম্যহীন বড় ছেলে লিটন গলায় ফাঁস লাগিয়ে মারা যান ৷ পরপর দুই সন্তানের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠলেও ছোট ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না ফরিদা বেগম ৷

তাকে বারবার সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন পাশে বসে থাকা বোন জমিলা বেগম ৷ প্রতিবেশীরাও নানাভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তাকে কিন্তু কিছুতেই মানছেন তা ফরিদা ৷

চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘ আল্লায় নিলে নাইলে মানা যাইতো৷ আল্লায় তো নিলো না৷ আমার পুতের তো গুলি খাইয়া মরার কথা না৷’’

মা-কে উঠানে কাঁদতে দেখে একছুটে তার বুকে লুটিয়ে পড়েন শাওনের বোন শিল্পীছবি: bdnews24.com

এ সময় শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ঢোকেন ফরিদার আরেক মেয়ে শিল্পী ৷ ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জের জাজিরা থেকে ছুটে এসেছেন তিনি৷ মা-কে উঠানে কাঁদতে দেখে একছুটে তার বুকে লুটিয়ে পড়েন শিল্পী৷ মা-ও মেয়ের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে আশেপাশের বাতাস৷

পরিবারের সদস্যরা জানান, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শাওনের৷ বাড়ির অদূরে একটি ইজিবাইক তৈরির কারখানায় গত তিনমাস যাবত কাজ করতেন শাওন৷

শাওন প্রতিদিন সকাল ৯টায় কারখানায় গেলেও বৃহস্পতিবার সকালে যাননি বলে জানান একই কারখানার শাওনের সহকর্মী মো. হাবিবউল্লাহ৷

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ ওয়েল্ডিং শ্রমিক হিসেবে কাজ করত শাওন৷ প্রতিদিন সকাল ৯টার দিকে কাজে আসার কথা৷ আজকে আসে নাই৷ শুনছি শহরে বিএনপির মিছিলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে সে৷’’

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল ১০টায় নগরীর ডিআইটিতে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি নেয়৷ এতে পুলিশ বাধা দিলে নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়৷ বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এই সংঘর্ষ৷ এই সময় গুলিবিদ্ধ হন শাওন৷

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাওনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন৷ তাদের মধ্যে একজন নিজেকে দেওভোগের বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা ও বিএনপির কর্মী বলে পরিচয় দেন৷তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জানিয়ে ডান পায়ে গুলির আঘাত দেখান৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ বছর বয়সওই ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ওর (শাওন) লগে আরও লোক আছিল৷ আমরাও ছিলাম৷ তয় ওরে আমরা চিনতাম না৷ ওয় অন্য গ্রুপের লগে আইছে৷ পুলিশ যখন গুলি করতেছিল তখন আমরা গুলশান হলের গেটের সামনে ছিলাম৷ দুই পাশ দিয়াই ইট-পাটকেল মারতাছিল অনেকে৷ ওই পোলায় একটা ইট হাতে নিয়া রাস্তায় নামার পরই একটা গুলি আইসা তার বুকে লাগে৷ নিচে পইড়া গেলে তারে তুইলা গুলশান হলের গেটের সামনে আইনা রাখি৷ পরে ওয় কয়, ‘ভাই আমারে হাসপাতালে নিয়া যান, আমার ভাল্লাগতাছে না'৷ হাসপাতালে আসার পর ডাক্তার কইছে ওয় মারা গেছে৷’’

এদিকে শাওনের মৃত্যুর পরপর ফেসবুকে বিএনপির একটি মিছিলের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে৷ ওই মিছিলের অগ্রভাগে ডোরাকাটা টি-শার্ট ও কালো রঙের জিন্স প্যান্ট পরা অবস্থায় শাওনকে দেখা যায়৷ হাসপাতালে শাওনের মরদেহেও একই টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট রয়েছে৷

যদিও শাওন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করেছে তার পরিবারের লোকজন৷

শাওনের বড়ভাই ফরহাদ প্রধান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ আমার ভাই কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত না৷ স্থানীয় যুবদলের কয়েকজন নেতার ডাকে শাওন মিছিলে যায়৷ দুপুর ১২টার দিকে জানতে পারি গুলিবিদ্ধ হইয়া শাওন হাসপাতালে৷’’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত শাওন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলীর ভাতিজা৷

শওকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ শাওনের বাবা সাহেব আলী আমার আপন চাচাত ভাই ছিল৷ সেই হিসেবে শাওন আমার ভাতিজা৷ শাওনের বড়ভাই মিলন আমার সাথেই থাকে৷ আমি নিজে আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি৷ তবে ওরা ভাইরা সরাসরি কোনো দল করে না৷ ডাক দিলে আমার লগেও যায়, আবার অন্য কেউ ডাক দিলেও যায়৷ এলাকার কারও ডাকে শহরে বিএনপির মিছিলে গেল কিনা সেই বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত না৷’’

এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)    

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ