1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমার সরকার, আমার জনগণ যেন এক থাকেন: সি আর দত্ত

১৫ ডিসেম্বর ২০১০

সি আর দত্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন ১৯৫১ সালে৷ এরপর প্রায় ২০ বছর কাটিয়েছেন পশ্চিম পাকিস্তানে৷ মাঝে মাঝে ঘুরে যেতেন নিজের এলাকা, হবিগঞ্জ থেকে৷ ৭১-ও পূর্ব পাকিস্তানে বেড়াতেই এসেছিলেন তিনি৷

সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত, বীর উত্তমছবি: bdnews24.com/Mustafiz Mamun

পূর্ব পাকিস্তানে ছুটি কাটাতে এসেই যুদ্ধে যুক্ত হয়ে পড়েন মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্ত৷ শুরুতে মাত্র ৩০-৩৫ জন সেনা আর কিছু সনাতন থ্রি নট থ্রি রাইফেল ছিল তাঁর সম্বল৷ অথচ প্রতিপক্ষ ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী৷ তারপরও পিছপা হননি তিনি৷ বরং এই সেনাদেরই মনোবল রণক্ষেত্রে তাকে এগিয়ে নিয়েছে৷ জীবন সায়াহ্নে এসে অনেক কিছুই ভুলে গেছেন সি আর দত্ত৷ কিন্তু ভোলেননি সেই সহযোদ্ধাদের কথা৷ তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় যে ছেলেগুলোকে আমি পেয়েছিলাম, তাঁরা আমাকে বলেছিল যে স্যার আমরা যারা আছি তারাই পাকিস্তানিদের ধ্বংস করতে পারবো৷ এই যে একটা শক্তি আমি তাদের কাছ থেকে পেলাম, সেটা দারুণ কাজে লেগেছে৷ এই শক্তি নিয়েই আমরা এগিয়ে গিয়েছি এবং পাকিস্তানিদের ধ্বংস করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি৷

সিলেট শত্রুমুক্ত করতে হবে

গত ১৪ই নভেম্বর স্ত্রী মণীষা দত্ত চিরতরে বিদায় নিলেন সি আর দত্তের কাছ থেকে৷ তাঁর নিজের বয়সও এখন ৮৩ বছর৷ এই বয়সে দিন তারিখ আর মনে থাকে না তাঁর৷ কিন্তু ৭১ এর যুদ্ধের কথা জিজ্ঞেস করতেই তাঁর মুখে যেন খুই ফুটলো৷ তিনি বলেন, আমার বাড়ি হলো সিলেটের হবিগঞ্জে৷ আমি যখন ছুটিতে সেখানে ছিলাম, তখন জেনারেল রব একদিন আমাকে তাঁর বাসায় ডাকলেন৷ তো তাঁর বসার ঘরে গিয়ে আমি দেখলাম কয়েকজন ছেলে সেখানে বসে আছে৷ আমি তখন দাদাকে (রব) বললাম, এদেরকে আপনি কোথায় পেলেন৷ তখন দাদা বললেন, যেভাবেই হোক পাকিস্তানিদের কাছ থেকে সিলেট শত্রুমুক্ত করতে হবে৷

পূর্ব পাকিস্তানে ছুটি কাটাতে এসেই যুদ্ধে যুক্ত হয়ে পড়েন মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্তছবি: bdnews24.com/Mustafiz Mamun

ধন্যবাদের তালিকায় রব, মানিক চৌধুরী, ওসমানি

সি আর দত্ত মূলত যুদ্ধ করেছেন সিলেট অঞ্চলে৷ মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর চার এর কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তিনি৷ শুরুতে তাঁর সঙ্গে স্বল্প সংখ্যক সেনা আর হালকা অস্ত্র থাকলেও একসময় তা বাড়তে থাকে৷ শেষমেষ সেনা সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে তিনশো'র মতো৷ সঙ্গে ভারী অস্ত্রশস্ত্র৷ তাই নিয়েই সিলেট জয় করেন এই বীর সেনা৷ তিনি বলেন, সিলেটের যুদ্ধের সময় আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না৷ তবুও পশ্চিম পাকিস্তানে একজন মেজর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার ছিল৷ সেসময় সেই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য যে সৈন্য সামন্ত আমাকে দেয়া হয়েছিল সেজন্য আমি জেনারেল রব ও মানিক চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানাই৷ সঙ্গে জেনারেল ওসমানি সাহেবকেও আমি ধন্যবাদ জানাই৷

ভারতীয় সেনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা

স্বাধীনতার পর কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো এক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তার নাম অনায়াসে মনে করতে পারেন দত্ত৷ ৭১-এ ভারতীয় সেনারাও যে মুক্তিসেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ রেখে লড়েছেন৷ প্রয়োজনে ভারী অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছেন৷ যুদ্ধ জয়ের পর তাই কৃতজ্ঞতা স্বীকারের তালিকায় সেই নামটাও যোগ করে দিলেন দত্ত৷ তিনি বলেন, ভারতীয় সৈন্য এবং ভারতীয় কমান্ডার যারা ছিলেন, ব্রিগেডিয়ার ওয়াসকে, আমাকে সকল দিক থেকে সাহায্য করেছেন৷ দু'জায়গায় আমার যুদ্ধের সময় ওনারা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে শেলিং করেছেন৷ পাকিস্তানিদের ধ্বংস করেছেন৷ ভারতীয়রা আমাকে হাতিয়ার দিয়েও সাহায্য করেছে৷

সবাইকে এক থাকার অনুরোধ

মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য ‘বীর উত্তম' উপাধি লাভ করেন সি আর দত্ত৷ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করেন তিনি৷ জানালেন, এই দেশের কাছে যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন৷ অবশ্য তারপরও একটা আশা এখনো রয়ে গেছে৷ এই বিজয়ী সেনা চান, বাংলাদেশে সবাই মিলেমিশে থাকুক৷ সবাই মিলেই দেশটাকে আরো সুন্দর করে গড়ে তুলুক৷

এই বিজয়ী সেনা বলেন, আমার সরকার, আমার জনগণ তারা যেন এক হয়ে থাকেন, সিলেটকে এক করে রাখেন এবং সারা বাংলাদেশে যেন আমরা এক হয়ে থাকতে পারি৷ এই অনুরোধ আমি সবাইকে রাখছি৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ