সফলভাবে শুরু হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের মঙ্গল গ্রহ অভিযান। জাপানের রকেটে করে আমিরাতের মহাকাশযান হোপ গেল লাল গ্রহের দিকে।
বিজ্ঞাপন
আরব দুনিয়ার প্রথম মহাকাশ অভিযান। তাই হোপ-এর উৎক্ষেপণের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। জাপানের তানেগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে জাপানি রকেটে করে হোপ-এর নিখুঁত উৎক্ষেপণ হলো। সাতমাস লাগবে মঙ্গল পৌঁছতে। তারপর তা কাজ শুরু করবে এবং মঙ্গলের পরিবেশ ও আবহাওয়া নিয়ে তথ্য পাঠাবে।
আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলের কক্ষপথে ঢুকবে হোপ। তারপর দুই বছর ধরে মঙ্গলের চারপাশে ঘুরবে। মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি মঙ্গলের উপরিভাগের আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পাঠাবে।
আমিরাতের দাবি, তাঁদের এই মঙ্গল অভিযানের ফলে বিভিন্ন ঋতুতে লাল গ্রহের আবহাওয়া কেমন থাকে তা জানা যাবে। হোপ এ বিষয়ে পুরো তথ্য দেবে, যা আগে পাওয়া যায়নি। গত ১৪ জুলাই হোপের মহাকাশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য দুই বার উৎক্ষেপণ পিছিয়ে দিতে হয়।
মঙ্গল গ্রহের পথে আরব আমিরাত
জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের উজ্জ্বল অতীতের উপযোগী করে বর্তমান এবং ভবিষ্যতকেও গড়তে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাই এবার মঙ্গলগ্রহে পা রাখতে চলেছে দেশটি৷ বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Emirates Mars Mission/MBRSC
মঙ্গলের পথে ‘আশা’
২০ জুলাই প্রথম আরব দেশ হিসেবে মঙ্গলগ্রহে বিশেষ ধরনের মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ মহাকাশযানটির নাম ‘আল আমাল’, অর্থাৎ আশা৷ মহাকাশযানটি অভিনব, কারণ, এতে কোনো মানুষ নেই৷
ছবি: Emirates Mars Mission/MBRSC
কেন এ সময়ে
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্ণ হবে আগামী বছর৷ এ উপলক্ষেই মঙ্গল অভিযানের পরিকল্পনা করেছে তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ৷ মাহাকাশযানটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে মঙ্গলে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Emirates Mars Mission/MBRSC
করোনার ধাক্কা
১৪ জুলাই ‘আল আমাল’-এর যাত্রা শুরু করার কথা ছিল৷ তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে দিতে হয়৷ অবশ্য তাতে খুব একটা দেরি হয়নি৷ পরের সপ্তাহেই মহাকাশযানটির সফল উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়৷
ছবি: Emirates Mars Mission/MBRSC
উৎক্ষেপণ জাপান থেকে
আল আমাল বা হোপ প্রোব উৎক্ষেপণ করা হয়েছে জাপানের তানেগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে৷
ছবি: Emirates Mars Mission/MBRSC
জাপানের রকেট
মঙ্গলগ্রহে গিয়েছে জাপানের এইচ-আইআইএ রকেট৷
ছবি: Emirates Mars Mission/MBRSC
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
অভিযানটিকে এক অর্থে শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাতের না বলে, আন্তর্জাতিক বললেও ভুল হবে না৷ এ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলরাডোর ল্যাবরেটরি ফর অ্যাটমোস্ফেয়ার অ্যান্ড স্পেস ফিজিক্স, ইউনিভার্সিটি অব ক্যারিফোর্নিয়ার দ্য স্পেস সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড স্পেস এক্সপ্লোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে আমিরাতের মোহাম্মেদ বিন রাশিদ স্পেস সেন্টার৷
ছবি: Emirates Mars Mission/MBRSC
অভিযানের উদ্দেশ্য
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ বিন রাশিদ বলেছেন, ‘‘এক সময় সারা বিশ্বে মানুষের জ্ঞানের জগতে খুব বড় অবদান রেখেছে আরব সভ্যতা৷ এ অভিযান সেরকম কাজই করবে৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন এবং উন্নয়নমুখী যাত্রাপথের সমন্বয় এই হোপ প্রোব৷’’
ছবি: Emirates Mars Mission/MBRSC
ভেবেচিন্তে কাজ
গ্রহলোকে নিজেদের প্রথম যাত্রা হঠাৎ শুরু করছে না সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ ২০১৩ সালে এমন অভিযানের সম্ভাব্যতা যাচাই করে ২০১৪ সালে এমন একটি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার৷
বিশ্বে এই প্রথম
অভিযান সফল হলে মঙ্গলের চারপাশে ঘুরে বেড়াবে আল আমালা৷ এমনটি আগে কখনো হয়নি৷
ছবি: Emirates Mars Mission/MBRSC
নেতৃত্বে নারী
আরব আমিরাতের এই মঙ্গল অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সারাহ বিন্তে ইউসিফ আল আমিরি৷ তিনি দেশটির স্যাটেলাইট প্রকল্প দুবাই স্যাট-১ এবং দুবাই স্যাট-২ এর প্রোগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন৷ কাউন্সিল অব সায়েন্টিস্টদের প্রধান হিসেবে আমিরাতের উন্নয়ন এবং অর্থনীতিতে কিভাবে বিজ্ঞানের অবদান বাড়ানো যায় সেই দায়িত্বটি এখন তার কাঁধে৷ পাশাপাশি দেশটির আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও সারাহ আল আমিরি৷
ছবি: picture-alliance/RoverImages/E. Othman
10 ছবি1 | 10
মঙ্গল অভিযানের কথা আমিরাত প্রথম ঘোষণা করে ২০১৪ সালে। এতদিন পর্যন্ত তারা ছিল পুরোপুরি তেল-নির্ভর দেশ। সেখান থেকে সরে এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা পাওয়ার প্রয়াস শুরু হয় তখন থেকে। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া হোপ-এর সাফল্যের দিকে আমিরাত অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। কারণ, তাঁদের লক্ষ্য, ২১১৭ সালে মঙ্গলে বসতি স্থাপন করা।
আমিরাত মঙ্গল অভিযানের প্রধান ওমর শরাফ বলেছেন, ''এটা আরবের তরুণদের কাছেও আশার বার্তা পাঠিয়েছে। যদি আমিরাতের মতো নবীন দেশ ৫০ বছরের কম সময়ের মধ্যে মঙ্গলে পৌঁছতে পারে, তা হলে আমরা এবং এই এলাকার দেশগুলি অনেক কিছু করতে পারি।''
এর আগে আমিরাত তিনটি উপগ্রহ পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারা পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে কোনো অভিযান করেনি। এ বারই তারা প্রথম মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠাল।