গতবছর কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। এবার আমিরাত সফরে গেলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট।
আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছেন বেনেট। ছবি: Haim Zach/Israel Gpo/ZUMA Wire/imago images
বিজ্ঞাপন
রোববার আমিরাত পৌঁছান বেনেট। আবু ধাবিতে পা রাখার পর তিনি বলেন, এই সফর ঐতিহাসিক। এই প্রথমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আমিরাতে আনুষ্ঠানিক সফরে এলেন।
তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বেনেট বলেন, তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। তিনি জানান, ''আমি আমিরাত আসতে পেরে খুবই উত্তেজিত এবং আনন্দিত। এই প্রথম ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এখানে এলেন। আমরা দুই দেশের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে চাই।''
সোমবার থেকে সরকারি পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো ভালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তেল আভিভ ছাড়া আগে বেনেট বলেন. তার সফরের লক্ষ্য, দুই দেশের মধ্যে সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো। তার দাবি, এখন দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, তা খুবই ভালো। সেই সম্পর্ককে আরো জোরালো ও উষ্ণ করতে হবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত, বাহরাইনের চুক্তি
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের ঐতিহাসিক চুক্তি হোয়াইট হাউসে সই হলো। ইসরায়েল লাভবান হলো। বিক্ষোভ প্যালেস্টাইনে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
দীর্ঘ বিরোধের অবসান
কয়েক দশক ধরে চলা বিরোধের অবসান। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে চুক্তিতে সই করল ইসরায়েল। কূটনৈতিক,সম্পর্ক গড়ে তুলবে তারা। চুক্তিতে সই করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আমিরাতের বিদেশ মন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন আল নেহয়ান এবং বাহরাইনের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল জায়ানি।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
ট্রাম্পের সভাপতিত্ব
হোয়াইট হাউসে চুক্তি সই হয়েছে। সভাপতিত্ব করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ভোটের আগে এই চুক্তি তাঁর অন্যতম তুরুপের তাস। ট্রাম্প বলেছেন, ''মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ভোর হলো। এই চুক্তি ঐতিহাসিক।'' তার আশা, বাকি আরব দেশগুলিও আমিরাত ও বাহরাইনকে অনুসরণ করবে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
উচ্ছ্বসিত নেতানিয়াহু
এতদিন আরব দুনিয়ায় কার্যত একঘরে ছিল ইসরায়েল। এ বার আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হবে। তাই উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি আরব-ইসরায়েল সংঘাত চিরতরে শেষ করে দিতে পারে। তাই এই চুক্তি ঐতিহাসিক। শান্তির ভোর হলো। তার মতে, করোনা নামক অতিমারির দিন শেষ হবে, কিন্তু আজ যে চুক্তি হলো, তার জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি থাকবে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
খুশি আমিরাত, বাহরাইন
নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ দিয়েছেন আমিরাতের বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল যে শান্তির পথ বেছে নিয়েছে এবং প্যালেস্টাইনের এলাকা দখল করবে না বলেছে, তাতে তিনি খুশি। কয়েক দশক ধরে বিভাজন ও সংঘাতের পর শান্তি ফিরল। ইতিহাসের গতি পরিবর্তন হলো। খুশি বাহরাইনও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
খারিজ করল প্যালেস্টাইন
হোয়াইট হাউসে যখন এই চুক্তি সই হচ্ছে, তখন প্যালেস্টাইনে বিক্ষোভ চলছে। বিশেষ করে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইসরায়েল যে এলাকা দখল করে রেখেছে, তা ছেড়ে না দিলে শান্তি আসবে না। প্যালেস্টাইন এই চুক্তিকে খারিজ করে বলেছে, তাদের পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে।
ছবি: Reuters/M. Salem
বিরোধে সৌদি, ইরান, তুরস্ক
এই চুক্তির বিরোধিতা করে প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব, ইরান এবং তুরস্ক। সৌদি আরব বলেছে, তারা প্যালেস্টাইন সমস্যার প্রকৃত সমাধান চায়। তাদের দাবি, স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে তার রাজধানী করতে হবে। ইরান ও তুরস্কও চুক্তির বিরোধী। এই চুক্তিতে শুধু নতুন করে প্যালেস্টাইনের এলাকা দখন না করার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল।
ছবি: Reuters/T. Brenner
লাভ কতটা
এক দল বিশেষজ্ঞের মতে, এই চুক্তির ফলে লাভ খুব বেশি হবে না। কারণ, এমনিতেই ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের সংঘাত একেবারেই কমে গিয়েছিল। লাভটা হলো, তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হলো। ওই বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিন দেশের একটাই লক্ষ্য, ইরানের প্রভাব কমানো। সে জন্যই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
ট্রাম্প কতটা সুবিধা পাবেন
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি করিয়ে ট্রাম্প তার ক্ষমতা দেখাতে পারলেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। এর ফলে ভোটের আগে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হলো বলে তারা মনে করছেন। এর সুবিধা কি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাবেন? ট্রাম্প-বিরোধীরা মনে করছেন, তার ভাবমূর্তি করোনা ও কৃষ্ণাঙ্গ-হত্যার ফলে যে জায়গায় নেমেছে, সেখান থেকে ওঠার আশা কম।
ছবি: Reuters/T. Brenner
8 ছবি1 | 8
এক বছর আগে
এক বছর আগেই ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য চুক্তি সই করে। এর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এরপর বাহরিন, সুদান, মরক্কোর মতো দেশের সঙ্গেও ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করা নিয়ে চুক্তি হয়।
বেনেট বলেছেন, ''এক বছরের মধ্যে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। তবে দুই দেশের সম্পর্ক সবে শুরু হয়েছে। এটা অনেকটা দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যাবতীয় সম্ভাবনা রয়েছে।''
ইরান নিয়ে উদ্বেগ
ইরানের সঙ্গে এখন পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে জর্মানি, চীন, অ্যামেরিকা সহ কয়েকটি দেশ। ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে ইসরায়েল ও আমিরাত উদ্বিগ্ন। ইসরায়েল ও আমিরাত কূটনৈৌতিক সম্পর্ক শুরু করে নেয়ায় ইরানও উদ্বিগ্ন। ইরান বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করার জন্য। সম্প্রতি ইসরায়েল বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি কূটনৈতিক প্রয়াসের ফলে ইরান আবার পরমাণু চুক্তিতে ফেরে তাহলে ঠিক আছে, নইলে তারা সামরিক ব্যবস্থা নেবে।
গত সোমবার জাতীয় সুরক্ষা পরামর্শদাতা বা এনএসএ-কে তেহরান পাঠিয়েছিল আমিরাত। তিনি সেখানে ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং এনএসএ-র সঙ্গে কথা বলছেন।