সম্মেলনের নাম ‘আরাকান কনফারেন্স – রোহিঙ্গা সমস্যা ও তার সমাধান'৷ নাম শুনেই মনে হয়েছিল, জটিল এ সমস্যার যদি সত্যিই একটা সমাধান সূত্র পাওয়া যায়, তাহলে ক্ষতি কী? ইমতিয়াজ মামাও বার বার বলেছিলেন, ‘‘চলে আয়, আড্ডা হবে৷''
বিজ্ঞাপন
সময়মতো পৌঁছে গেলাম ভেন্যুতে৷ দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে মামা, ওরফে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর৷ নিজেও ‘জেনোসাইড' নিয়ে একটি সেন্টার খুলেছেন৷ বললাম, ‘‘যে মানুষগুলোর কিচ্ছু নেই, যাঁরা নিঃস্ব, যাঁরা বছরের পর বছর ধরে নির্যাতনের শিকার, ঘৃণা-বিদ্বেষের শিকার, সেই মানুষগুলোর পাশে বাংলাদেশ অন্তত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে৷ এটা ভেবেও কেমন গর্ব হয়৷ তাই আজ তাঁদের কথা শুনতে এসে দারুণ লাগছে...৷''
কথা বলতে বলতেই এগোচ্ছিলাম৷ কিন্তু মিনিটখানেক পরেই থামতে হলো৷ অসম্ভব ভিড়৷
কোলন শহরের নামকরা মারিটিম হোটেল, তারই হলে বিশাল আয়োজন৷ সংগঠক ‘হাসেনে' বলে একটি গোষ্ঠী৷ সত্যি বলতে কি, হাসেনের নাম আগে আমি কখনও শুনিনি৷ অনুষ্ঠান কক্ষে গিয়ে দেখলাম অন্তত শ'তিনেক অংশগ্রহণকারী তো হবেই৷ তাঁদের অনেকেই বহুদিন ধরে হাসেনের সঙ্গে যুক্ত – জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, ইটালি, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, তুরস্ক – সর্বত্রই যে তাদের দপ্তর আছে৷ আছে কাজের বাহারও৷ পানি নিয়ে প্রকল্প, শিক্ষা নিয়ে প্রকল্প, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রকল্প, খাদ্য সংক্রান্ত প্রকল্প, অনাথ বাচ্চাদের নিয়ে নানা পরিকল্পনা এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে চর্চা৷
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
বাব্বা, এত কিছু? নিজেকে কেমন যেন মূর্খ মনে হতে লাগলো৷ তার ওপর বক্তাদের তালিকাটি হাতে নিয়েও চোখ ছানাবড়া৷ কে নেই সেখানে? মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সাংসদ থেকে শুরু করে চীন, মিয়ানমার, তুরস্কের ইমাম, বাংলাদেশ থেকে আসা মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক, জাতিসংঘের অগুন্তি প্রতিনিধি, যুক্তরাজ্যের সোয়াস বা যুক্তরাষ্ট্রের ডসন কলেজের প্রফেসর, সাহায্য সংস্থা, মিডিয়ার লোক, ছাত্র-ছাত্রী – কোনো শেষ নেই৷
বেশ উৎসাহিত বোধ করলাম৷ আসলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর এহেন ‘ইন্টেলেকচুয়াল' সম্মেলন বা বুদ্ধিজীবীদের আড্ডায় যাওয়ার আর যে বিশেষ সুযোগ হয় না আমার৷ মাঝেমধ্যেই বিশ্বের চলতি রাজনৈতিক বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনার অভাব বোধ করি৷ তাই তাড়াতাড়ি নিজের নোটপ্যাডটা বের করলাম৷ বাহ্, রোহিঙ্গাদের ইতিহাস, সমস্যা, সমাধান – সব কিছু লিখে নিতে হবে না?
কিন্তু প্রথম ‘কি-নোট স্পিচ'-এর আগে পবিত্র কোরআন থেকে সুরা পাঠ শুরু করলেন এক ব্যক্তি, সম্ভবত তুর্কি৷ থতমত খেলাম৷ এটা কেন? চারিদিকে তাকিয়ে দেখি অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক নারী, কিন্তু তাঁদের অন্তত ৯৫ শতাংশই হিজাবধারী৷
আমি ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, কিন্তু একটি সম্মেলনকক্ষে এত বেশি হিজাব পরিহিতাদের দেখে একটু দমেই গেলাম৷ তাহলে কি রোহিঙ্গাদের সমস্যাকে ‘মুসলমানদের সমস্যা' বলে ধরে নিচ্ছে এরা? তবে কি বৌদ্ধধর্ম বনাম ইসলাম – এমনই সাদা-কালো এ লড়াই?
জানি, রোহিঙ্গা সমস্যার রাতারাতি কোনো সমাধান সম্ভব নয়৷ জানি, বাংলাদেশও আর এই রোহিঙ্গাদের ভার এককভাবে বইতে পারছে না৷
ওদিকে মানুষগুলোকে নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে, হচ্ছে নোংরামি৷ ভারত মিয়ানমারের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে৷ চীনের মাথায় ঘুরছে রাখাইনের প্রকৃতিক সম্পদের ‘লিস্ট', যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডাসহ পশ্চিমা বিশ্ব, জাতিসংঘ মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যার কোনো বিচার হচ্ছে না৷
ইতিহাস অবশ্য অন্য কথা বলে৷ মনে আছে, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ রাজের হাত থেকে স্বাধীন হওয়ার পর বার্মা তার সীমানাভুক্ত সব জাতিগোষ্ঠীকে পূর্ণ নাগরিক বলে স্বীকার করে নিয়েছিল৷ পরে ১৯৮০-এর দশকে দেশটির সামরিক শাসকেরা হঠাৎ করেই যেন আবিষ্কার করে বসে যে রোহিঙ্গারা বার্মিজ নয়৷ কেড়ে নেওয়া হয় নাগরিকত্ব৷
তখন থকেই শুরু৷ এরপর একে একে নব্বইয়ের দশক পার হয়, পার হয় ২০১২, ২০১৬, ২০১৭ – ‘মন্থর' এ গণহত্যা আরো বেশি শক্তিশালী, আরো বেশি বিভৎস হয়ে ওঠে৷ অথচ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা বার্মায় যায়নি, বার্মিজরাই রোহিঙ্গাদের মাটিতে এসেছিল?'' তাহলে আজ মিয়ানমার সরকার বোবা কেন? কেন বধির গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সান সু চি?
আমি বলবো, কারণ রাজনীতি৷ ক্ষমতার রাজনীতি আর মানবিকতার চরম অধঃপতন৷ তাই তো বসনিয়া ও রুয়ান্ডায় গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান যখন বলেন, ‘‘মিয়ানমারের এ শোচনীয় পরিস্থিতি না পালটালে মানবতার ইতিহাসে ফের কালো ছাপ পড়বে'', তখন তিনি এ কথা কি মানবাধিকারের স্বার্থে বলেন? নাকি বলেন শুধুমাত্র তাঁর মুসলমান ভাইদের দলে টানার জন্য?
সম্মেলনে একজনের পর একজন বক্তা বক্তব্য রাখেন৷ মিয়ানমারের মানবাধিকার কর্মী ড. মায়ু জার্নি, ড. হাবিব সিদ্দিকি, বাংলাদেশ থেকে আসা প্রফেসর ড. সি আর আবরার, ড. ইমতিয়াজ আহমেদ অথবা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রধান প্রফেসর ডেভিড জে শেফার বার বার মিয়ানমারের মানসিকতা, ভারত-চীনের স্বার্থদ্বন্দ্ব, বাংলাদেশের অবস্থানের কথা বলেন, তুলে ধরেন সমাধানের নানা পথ৷
তারপরও উপস্থিত সকলেই প্রায় রোহিঙ্গাদের বর্ণনা দেন হয় রোহিঙ্গা মুসলিম বলে অথবা জাতি বা ভাষাগত সংখ্যালঘু হিসেবে৷ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে একটি বিশেষ ধর্মের, জাতির চাদরে মুড়ে দেওয়া কি ঔপনিবেশিক ভাবধারার প্রতিফলন নয়? এঁরা কি জানেন না, রোহিঙ্গাদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীও আছেন? আছেন ভিন্ন ভাষার মানুষও?
তাহলে তাঁদের মানবাধিকারের দাঁড়পাল্লায় কেন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না? কেন আমরা তাঁদের শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে পারছি না? কেন পারছি না এই গণহত্যার বিরুদ্ধে তাঁদের হাতে হাত রেখে সবাই মিলে রুখে দাঁড়াতে? কেন আমরা বলতে পারছি না, ‘‘আমরাও রোহিঙ্গা, কারণ আমরা মানবতার অংশ৷ আমরা সবার আগে মানুষ?''
বন্ধু, আমরা কি সত্যিই এই গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি না? লিখুন নীচের ঘরে৷
রোহিঙ্গাদের ইতিহাস
একটা সময় ছিল যখন কয়েকজন রোহিঙ্গা মিয়ানমার সংসদে সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ আর এখন রোহিঙ্গাদের ভোট দেয়ারই অধিকার নেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
স্বাধীনতার আগে
বর্তমানে মিয়ানমার নামে পরিচিত দেশে ১২ শতক থেকে মুসলমানরা বাস করছে বলে দাবি অনেক ইতিহাসবিদ ও রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন বলছে, মিয়ানমার যখন ব্রিটিশ শাসনের অধীন (১৮২৪-১৯৪৮) ছিল তখন বর্তমানের ভারত ও বাংলাদেশ থেকে অনেকে শ্রমিক হিসেবে সেখানে গিয়েছিল৷ তবে তারা যেহেতু ব্রিটিশ আমলে এসেছে তাই স্বাধীনতার পর মিয়ানমার তাদের অবৈধ হিসেবে গণ্য করে৷ প্রতিবেদন পড়তে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
রোহিঙ্গা সাংসদ
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সংসদকে জানান, বার্মায় ১৯৫১ সালের নির্বাচনে পাঁচজন ও ১৯৫৬ সালে ছ’জন রোহিঙ্গা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ সব মিলিয়ে মিয়ানমার সংসদে মোট ১৭ জন রোহিঙ্গা সাংসদ ছিলেন বলে জানান তিনি৷ এর মধ্যে দুজন ছিলেন নারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Gacad
অভ্যুত্থান
১৯৬২ সালে বার্মায় সামরিক অভ্যুত্থান হয়৷ এরপর সব নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধন কার্ড করতে বলা হলেও রোহিঙ্গাদের দেয়া হয়েছিল বিদেশি পরিচয়পত্র৷ ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য চাকরি ও পড়াশোনার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়৷ ছবিটি ১৯৬২ সালের ৪ মার্চ তৎকালীন বার্মার রাজধানী রেঙ্গুন থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AFP
প্রথমবার বিতাড়ন
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে তাড়াতে ১৯৭৭ সালে নির্যাতন শুরু করা হয়৷ ফলে ১৯৭৮ সালের মে মাসের মধ্যে প্রায় দু’লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর জুলাইতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ জাতিসংঘও মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল৷ ফলে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল মিয়ানমার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/K. Huda
‘গোপন’ চুক্তি
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া ঐ চুক্তির উপর ‘সিক্রেট’ অর্থাৎ ‘গোপন’ শব্দটি লেখা ছিল৷ ২০১৪ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়টি চুক্তিটি প্রকাশ করে৷ এতে দেখা যায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে যাঁদের পরিবারের একসময় জাতীয় নিবন্ধন কার্ড ছিল তাঁদের মিয়ানমার সরকার ‘বার্মার বৈধ বাসিন্দা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ চুক্তিটি পড়তে উপরে (+) চিহ্ন ক্লিক করুন৷
ছবি: http://dataspace.princeton.edu
রাষ্ট্রহীন
১৯৮২ সালে পাস হওয়া নতুন নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের বস্তুত রাষ্ট্রহীন করে দেয়া হয়৷ ঐ আইনে মিয়ানমারের ১৩৫টি জাতিগত গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, যার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম নেই৷ এই আইনের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য পড়াশোনা, চাকরি, ভ্রমণ, ধর্মীয় রীতিনীতি পালন, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া ইত্যাদি সীমিত হয়ে যায়৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভোটের অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
দ্বিতীয় পর্যায়ের বিতাড়ন
১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে আবার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার৷ ফলে প্রায় আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর তাদের ফিরিয়ে নিতে দুই দেশ একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছিল৷ বিবৃতিতে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমারের বাসিন্দা’ এবং ‘মিয়ানমার সমাজের সদস্য’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল৷
সবশেষ ঘটনা
গত আগস্টের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে অভিযান শুরু করে৷ ইতিমধ্যে এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ৷ নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ছয় লক্ষ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে৷ তবে তাদের ফিরিয়ে নিতে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷