ব্রিটেনে বসবাসরত নেপালের ব্লগার লেক্স লিম্বু সম্প্রতি এক ইউটিউব ভিডিওতে তাঁর সমকামিতার বিষয়টি প্রকাশ করেছেন৷ এ বিষয়ে তাঁর মায়ের প্রতিক্রিয়াও আছে ভিডিওতে৷
ছবি: Privat
বিজ্ঞাপন
গত রবিবার ইউটিউবে সতেরো মিনিটের ভিডিওটি পোস্ট করা হয়৷ এখন পর্যন্ত সেটি প্রায় ৩৯ হাজার বার দেখা হয়েছে৷ মন্তব্য এসেছে প্রায় চারশ’টি৷ বেশিরভাগই লেক্স লিম্বুর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন৷
ভিডিওতে লিম্বুকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমার বয়স ২৫৷ জীবনে এখন আমি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী৷ আমি ছেলে, ভাই, বন্ধু এবং আমি একজন সমকামী৷''
প্রকাশ্যে এই প্রথম সমকামিতার কথা জানালেও লিম্বুর কাছের মানুষ ও অনুসারীদের অনেকে বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন কিংবা ধারণা করতেন৷
ফেসবুকে লিম্বুর ভেরিফায়েড পাতা লাইক করেছেন এক লক্ষ ১৫ হাজার জনের বেশি৷ এছাড়া তাঁর একটি ওয়েবসাইটও আছে৷ এ সব জায়গায় নেপালের নানান বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সমকামিতা, সমকামীদের অধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখেন৷ নেপালে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের আয়োজিত প্রাইডেও অংশ নিয়েছেন তিনি৷
দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে নেপালে সমকামিতা বৈধ এবং দেশটি সমলিঙ্গের বিয়েরও স্বীকৃতি দেয়ার কথা বিবেচনা করছে৷ তবুও সামাজিকভাবে অনেক স্থানে এখন সমকামিতা একটি ট্যাবু বিষয়৷ তাই নিজের সমকামিতার বিষয়টি খোলাখুলিভাবে বলার বিষয়টি সহজ ছিল না বলে ডয়চে ভেলেকে জানান লিম্বু৷ তিনি বলেন, ‘‘সমকামীদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা এখনও প্রবল৷ এমনকি তাঁদের নিজেদের পরিবারও তাঁদের সমর্থন করেনা৷ এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এই বিষয়টির প্রতি সমর্থন জানাতে হবে৷''
লিম্বুর যখন দুই বছর বয়স তখন তাঁর পরিবার তাঁকে নিয়ে ব্রুনেই চলে গিয়েছিল৷ এরপর ২০০০ সাল থেকে তাঁরা ব্রিটেনে আছেন৷ তাই লিম্বুর পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা সেখানে৷ তবে বছরে অন্তত একবার নেপাল যান লিম্বু৷ তাঁর লেখালেখি জুড়েও রয়েছে নেপাল৷
কিশোর বয়স থেকে নিজের সমকামিতার বিষয়টি বুঝতে শুরু করেন লিম্বু৷ সময়টা বেশ কঠিন ছিল বলে জানান তিনি৷ ‘‘টিনএজ বয়সে আমি অনেক চাপ অনুভব করেছি৷ সেই সময় অনেক প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ যেমন তুমি কাকে ভালোবাস? ছেলে না মেয়ে? ইত্যাদি৷''
এরপর গতবছরের জুলাইতে মা-বাবাকে তাঁর সমকামী হওয়ার বিষয়টি জানান লিম্বু৷ তখন তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়েছিল তা ইউটিউব ভিডিওতে জানিয়েছেন তাঁর মা৷ তিনি জানান, শুরুতে কষ্ট পেলেও পরে এটা মনে হয়েছে যে, তাঁর ছেলেকে কতটা কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে৷ লিম্বুর মা তাঁকে সমর্থন জানানোয় ইউটিউব ভিডিওর নীচে মন্তব্য করা অনেকেই তাঁর মায়ের প্রশংসা করেছেন৷
সমকামী বিয়ে বৈধ যে সব দেশে
এ পর্যন্ত কোন কোন দেশের জনগণ সমকামীদের মধ্যে বিয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন বা কোন দেশে সমকামী বিয়ে বৈধতা পেয়েছে, সে তথ্যই তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Becerra
নেদারল্যান্ডস
বিশ্বে সর্বপ্রথম সমকামী বিয়ে বৈধ হয় এই দেশে৷ ২০০০ সালে বৈধতা পাওয়ার পর ২০০১ সালে সমকামী বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv/T. Linkel
কলম্বিয়া
২০১৬ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Rubio
আয়ারল্যান্ড
২০১৫ সালে গণভোটের মাধ্যমে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় এই দেশে৷
ছবি: picture-alliance/empics/N. Carson
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী বিয়ে বৈধ হয় ২০১৫ সালে৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
স্কটল্যান্ড
২০১৪ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধ হয়৷
ছবি: Reuters/R. Cheyne
ফিনল্যান্ড
২০১৫ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধ হয়৷
ছবি: dapd
লুক্সেমব্যর্গ
২০১৪ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Pigozne
গ্রিনল্যান্ড
২০১৫ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
ফ্রান্স
২০১৩ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Reuters/R. Duvignau
ইংল্যান্ড, ওয়ালস
২০১৩ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় এখানে৷
ছবি: Getty Images
ব্রাজিল
২০১৩ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: AFP/Getty Images
উরুগুয়ে
২০১৩ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. I. Mazzoni
ডেনমার্ক
২০১২ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
আইসল্যান্ড
২০১০ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Irlmeier
পর্তুগাল
২০১০ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.M. Ribeiro
আর্জেন্টিনা
২০১০ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Imago/Agencia EFE/M. Arduin
সুইডেন
২০০৯ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding
নরওয়ে
২০০৮ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/O. Morin
দক্ষিণ আফ্রিকা
২০০৬ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: DW
স্পেন
২০০৫ সালে এখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিউজিল্যান্ড
২০১৩ সালে এখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/Air New Zealand
বেলজিয়াম
২০০৩ সালে এখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Ghirda
ক্যানাডা
২০০৫ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Getty Images/D.Pensinger
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় সমকামীদের বিয়ে বৈধতা পেয়েছে। ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রতিনিধি পরিষদে এ-সংক্রান্ত বিল পাস হয়৷ এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৬টি এবং বিপক্ষে পড়ে মাত্র ৪টি ভোট৷ এর আগে ১৫ই নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিকস বা এবিএস ঘোষণা করে যে, দেশটির জনগণ সমকামী বিয়ের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷ সমকামী বিয়ে বৈধতা আইনে গণভোটের পক্ষে ভোট দেন ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
অস্ট্রিয়া
২০১৭ সালে দেশটির সাংবিধানিক আদালত সমকামী বিয়ের অধিকারের পক্ষে রায় দেয়৷ ২০১৯ সাল থেকে তা কার্যকর হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Bruna
জার্মানি
২০১৭ সালের ৩০শে জুন জার্মানিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷ অর্থাৎ ইউরোপের ১৫তম দেশ হিসেবে জার্মানিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পেল৷ জার্মান পার্লামেন্টে এর পক্ষে ৩৯৩টি ভোট পড়ে আর বিপক্ষে পড়ে ২২৬টি ভোট৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী পার্টি সমকামী বিয়ের বিপক্ষে থাকলেও, সংসদীয় নির্বাচনের ক’মাস আগে হঠাৎ করেই ম্যার্কেল ঘোষণা করেন যে, এ বিষয়ে ভোটাভুটি হবে৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
মাল্টা
২০১৭ সালের জুলাই মাসে মাল্টায় সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়, যদিও এর বিরোধিতা করেছিল ক্যাথলিক চার্চ৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
বলিভিয়া
২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধন করে সমকামী বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বলিভিয়া৷ কিন্তু ২০১৬ সালে তারা ট্রান্সজেন্ডারদের নানারকম অধিকার দেয়াকে সমর্থন করে৷ দুই বছরের আইনী লড়াইয়ের পর ২০২০ সালে দেশটিতে এক সমকামী যুগল বিয়ের স্বীকৃতি পায়৷
ছবি: Reuters/D. Mercado
তাইওয়ান
২০১৯ সালের ১৭ মে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে তাইওয়ানের সংসদ সমকামী বিয়েকে আইনগত বৈধতা দিয়ে একটি বিল পাস করে৷ ফলে সে দেশের সমকামীরা এখন তাদের বিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন৷