উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি অজয় রাই মনে করেন, আমেঠি রায়বেরিলিতে রাহুল ও প্রিয়াংকাই দলের প্রার্থী হবেন।
বিজ্ঞাপন
উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস সভাপতি ও বারাণসী লোকসভার প্রার্থী অজয় রাই জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন, নিশ্চিতভাবেই কংগ্রেস কর্মীদের দাবি মেনে রাহুল ও প্রিয়াংকা আমেঠি ও রায়বেরিলি থেকেই লড়বেন। ডিডাব্লিউকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অজয় রাই বলেছেন, ‘'আমেঠি ও রায়বেরিলি থেকে গান্ধী পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে লড়ছেন। ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী আমেঠি ও রায়বেরিলিতে লড়েছেন। এমন জায়গা কেন ছেড়ে দেবে গান্ধী পরিবার?''
আমেঠি ও রায়বেরিলি কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে সাসপেন্স বজায় রেখেছে কংগ্রেস। আগামী ২০ মে এখানে্ ভোট, তা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত তারা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। কংগ্রেস নেতা, মুখপাত্ররা জানিয়েছেন, যথাসময়ে প্রার্থীর নাম জানানো হবে। বিজেপি অবশ্য এই দুই কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম জানিয়ে দিয়েছে। গত দুইবারের মতো আমেঠিু থেকে লড়ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।
অজয় রাই বলেছেন, ‘'এটা ঠিক, নানান কাজে ব্যস্ত থাকায় রাহুল খুব বেশি সময় আসতে পারেনি বা সময় দিতে পারেননি। কিন্তু আমেঠিতে যে উন্নয়নের কাজ হয়েছে, তা রাহুলই করেছেন। স্মৃতি কিছুই করেননি।‘'
লোকসভা ২০২৪: কৃষক, যুব, ছাত্র, শ্রমিকদের জন্য কংগ্রেসের সাত গ্যারান্টি
এখনো লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণা হয়নি। কিন্তু এর মধ্যেই কংগ্রেস জানিয়ে দিলো, ভোটে জিতলে সাতটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। কংগ্রেসের গ্যারান্টি।
ছবি: Hindustan Times/IMAGO
খালি পদে চাকরি
কংগ্রেস জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রীয় সরকারের ৩০ লাখ শূন্য পদ পূরণ করা হবে। যুবদের চাকরি দেয়া হবে। রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ৩০ লাখ পদ খালি আছে। নরেন্দ্র মোদী তা পূরণ করছেন না। শুধু এই সব খালি পদে নিয়োগই নয়, ভবিষ্যতে যে পদ খালি হবে, তাতেও দ্রুত নিয়োগ করা হবে। দেরি করা হবে না। কংগ্রেস এই গ্যারান্টির নাম দিয়েছে 'ভর্তি ভরোসা'।
ছবি: Subrata Goswami/DW
'পহেলি নোকরি পাক্কি'
কংগ্রেসের গ্যারান্টি, ক্ষমতায় এলে তারা এই আইন করবে যে, যুবরা স্নাতক হওয়ার পরই একবছর কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থায় ইন্টার্ন হিসাবে কাজ করতে পারবেন। সরকার তাদের ওই এক বছর মোট এক লাখ টাকা দেবে। রাহুল জানিয়েছেন, শিক্ষা শেষ করার পর প্রথম কর্মসংস্থান নিয়ে পড়ুয়াদের চিন্তা করতে হবে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গিগ কর্মীদের গ্যারান্টি
গিগ কর্মী মানে তাদের বোঝায় যারা পরিষেবা খাতে একজন ঠিকাদারের অধীনে বা ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করেন। যারা গাড়ি চালান, বাড়িতে জিনিস পৌঁছে দেন, এদের মতো অসংখ্য গিগ কর্মীর জন্য রাহুল গান্ধীর গ্যারান্টি, ক্ষমতায় এলে তাদের সামাজিক সুরক্ষা ও কাজের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইন করা হবে।
ছবি: Nasir Kachroo/NurPhoto/picture-alliance
স্টার্ট আপ তহবিল
তরুণ উদ্যোগপতিদের জন্য কংগ্রেসের গ্যারান্টি, প্রতিটি জেলার জন্য পাঁচ বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হবে। তা দিয়ে স্টার্ট আপগুলিকে সাহায্য করা হবে। নিজের শিল্প বা ব্যবসার জন্য ৪০ বছরের কম বয়সিরা এই তহবিলের থেকে অর্থসাহায্য পাবেন।
ছবি: Hindustan Times/IMAGO
'পেপার লিক সে মুক্তি'
কংগ্রেসের আরেকটি গ্যারান্টি হলো, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা হবে। এর জন্য নতুন কড়া আইন করা হবে। চাকরি-সহ সব পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস কড়াহাতে বন্ধ করা হবে।
ছবি: Naveen Sharma/ZUMAPRESS.com/picture alliance
কৃষকদের গ্যারান্টি
কংগ্রেস জানিয়েছে, আন্দোলনরত কৃষকদের অন্যতম দাবি হলো, ফসলের ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যকে আইনি রূপ দেয়া। যাতে সকলেই ওই ন্যূনতম দামে কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনে। রাহুল বলেছেন, কংগ্রেস এলে এই আইন করা হবে। এটা কৃষকদের জন্য তাদের গ্যারান্টি।
ছবি: Manish Swarup/AP
জাতিগত জনগণনা
কংগ্রেসের আরেকটি গ্যারান্টি হলো, ক্ষমতায় এলে জাতিগত জনগণনা করা হবে। তাতে স্পষ্ট হয়ে যাবে, উচ্চবর্ণ, অনগ্রসর, অতি অনগ্রসর, দলিত, অতি-দলিত, আদিবাসীদের সংখ্যা কত। প্রতিটি রাজ্যে কোন জাতের কত মানুষ বাস করেন।
ছবি: Pradeep Gaur/SOPA/Zuma/picture alliance
মোদী বনাম কংগ্রেসের গ্যারান্টি
ভারতে এখন গ্যারান্টির লড়াই চলছে। টিভি, রেডিও, কাগজ, হোর্ডিংয়ে মোদীর গ্যারান্টির প্রচার চলছে। সেখানে বলা হচ্ছে, গরিবদের পাঁচ বছর রেশন দেয়া মোদীর গ্যারান্টি, গরিবদের পাঁচ লাখ টাকা বিমা হলো মোদীর গ্যারান্টি, উন্নত ভারত হলো মোদীর গ্যারান্টি, পাঁচ বছরে বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হলো মোদীর গ্যারান্টি। তার মোকাবিলা করতেই কংগ্রেস ইস্তাহার প্রকাশের অনেক আগেই সাত গ্যারান্টির প্রতিশ্রুতি দিলো।
রাহুল ওয়ানাড়ে
কংগ্রেসের প্রথম প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়ে গেছে। সূত্র জানাচ্ছে, রাহুল গান্ধী আবার কেরালার ওয়ানাড়েই লড়বেন। কেরালায় ২০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস লড়বে ১৬টি আসনে বাকি চারটি দেয়া হবে শরিকদের। শশী থারুরও সম্ভবত তিরুবনন্তপুরমে কংগ্রেস প্রার্থী হবেন।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
প্রিয়াংকা রায়বেরিলিতে লড়তে পারেন
সোনিয়া গান্ধীর কেন্দ্র রায়বেরিলি থেকে লড়তে পারেন প্রিয়াংকা গান্ধী। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট করে লড়ছে কংগ্রেস। তাই রায়বেরিলিতে জয়ের ব্যাপারে কংগ্রেস আশাবাদী।
ছবি: Getty Images/AFP/A. Deep
10 ছবি1 | 10
তবে আমেঠি ও রায়বেরিলিতে রাহুল ও প্রিয়াংকার প্রার্থী হওয়ার পক্ষে অজয় রাইয়ের সবচেয়ে বড় যুক্তি হলো, এই দুই কেন্দ্র গান্ধী পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই সেটা ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। তিনি বারাণসীর প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ‘'এই দেখুন না, আমি বারাণসীতে বড় হয়েছি, এখানে থেকেছি, তাই এখান থেকেই ভোটে লড়ি। যাই হোক না কেন, আমি বারাণসী ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি না। এটা আমার জায়গা।‘' সেই একই যুক্তিতে গান্ধী পরিবারেরও আমেঠি ও রায়বেরিলিতে দাঁড়ানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।
২০১৯ সালেই সোনিয়া গান্ধী জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আর লোকসভা ভোটে দাঁড়াবেন না। সেটাই হয়েছে। সোনিয়া রাজস্থান থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে রায়বেরিলিতে মায়ের নির্বাচনী কাজ দেখে এসেছেন প্রিয়াংকা। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। তাকে মেয়েরা পরিবারের মানুষের মতোই দেখে। ফলে রাজনীতিতে নামার পর এবং উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে দীর্ঘদিন থাকার পর সোনিয়ার মেয়েই রায়বেরিলিতে প্রার্থী হবেন বলে কংগ্রেস কর্মীদের আশা। কিন্তু তার নামঘোষণা না হওয়ায় এবং মাঝখানে রবার্ট বাঢরার নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হওয়ার পর বিভ্রান্তি দেখা দেয়।
অজয় রাই অবশ্য বলছেন, রাহুল ও প্রিয়াংকাকেই প্রার্থী হিসাবে চান কংগ্রেস কর্মীরা এবং তারাও নিশ্চিতভাবে এই দাবি মানবেন। কিন্তু গতবার তো রাহুল আমেঠিতে হেরে গেছিলেন। তারপর তিনি নির্বাচনকেন্দ্র হিসাবে ওয়ানাড়ের উপরই মনোযোগ দিয়েছিলেন। স্মৃতি সেখানে বারবার গেছেন। বাড়ি কিনে বসবাস করেছেন। আ্মেঠির মানুষের রাহুল সম্পর্কে মনে হয়েছে, তোমার দেখা নাই। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়ালেও তিনি জিতবেন কি?
অজয় রাইয়ের দাবি, ‘'আপনি মানুষের সঙ্গে একটু বেশিক্ষণ কথা বলুন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এত বেড়ে গেছে আর যূবকরা চাকরি পাচ্ছেন না, এই দুইটি বিষয় নিয়ে তারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। এই ক্ষোভের প্রতিফলন গোটা ভারতের ভোটে পড়বেই। প্রধানমন্ত্রী গতবার ১৩ টাকা কেজিতে চিনি দেবেন বলেছিলেন, তার কী হলো? এটা নিয়েও মানুষ কথা বলছেন।‘' ফলে এবার আমেঠিতে রাহুল গান্ধীর জিততে কোনো অসুবিধা নেই বলে তার দাবি।