সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স অর্থাৎ ভবিষ্যৎ বাদশাহ মহম্মদ বিন সালমান বলেছেন, তাঁর দেশ আরও ‘উদারপন্থি’ ও ‘উন্মুক্ত’ হয়ে উঠবে৷ দেশ থেকে মৌলবাদী ইসলামি আদর্শ ‘দূর' করারও অঙ্গীকার করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার রিয়াদে বিনিয়োগকারীদের এক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন৷ ‘‘আমরা আগে যেমন ছিলাম সেই অবস্থায় ফিরছি - এমন একটি দেশ, যেখানে উদারপন্থি ইসলাম বিরাজমান এবং যেটি সব ধর্মের মানুষজন ও বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত থাকবে,’’ বলেন সালমান৷ ৩২ বছর বয়সি এই ক্রাউন প্রিন্স বলেন, ‘‘আমরা শিগগিরই জঙ্গিবাদের যেটুকু বাকি আছে, তা সমূলে উৎপাটন করব - আমরা ইসলামের উদারপন্থি শিক্ষা ও নীতির প্রতিনিধিত্ব করি৷’’
চলতি বছর বিন সালমান ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্ব পাওয়ার পর সৌদি আরবে নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছেন৷ এছাড়া দেশটিতে আবারও সিনেমা হল চালুর অনুমতিও দেয়া হতে পারে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷
৫০০ বিলিয়ন ডলারের শহর!
বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান জানান, ভবিষ্যতে ৫০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে একটি শহর গড়ে তোলা হবে৷ এটি হবে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সেখানে সৌদি আরবের অন্যান্য এলাকার নিয়মকানুন প্রযোজ্য হবে না৷ শহরটি পুরোপুরি বিকল্প জ্বালানি দিয়ে চলবে৷ ‘এনইওএম’ নামক একটি প্রকল্পের আওতায় এই শহর গড়ে তোলা হবে৷ সেখানকার সব সেবা ও ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় হবে বলে জানা গেছে৷ তবে কবে নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে পারে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময় জানা যায়নি৷
‘ভিশন ২০৩০’-এর আওতায় বিন সালমান সৌদি আরবকে শুধুমাত্র তেলভিত্তিক অর্থনীতির উপর নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন৷ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন খাত তৈরির পরিকল্পনা করছেন তিনি৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)
যে ১০টি অধিকার পেয়েছেন সৌদি আরবে নারীরা
ছবিঘরে দেখে নিন কবে আর কী কী অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারীরা, সে দেশের নারী জাগরণে যা মাইলফলক হয়ে থাকবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৫৫: মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল, ১৯৭০: মেয়েদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এখন বিপুল সংখ্যক ছাত্রীকে স্কুলে যেতে দেখা যায়৷ কিন্তু আজ থেকে ৬২ বছর আগে চিত্রটা এমন ছিল না৷ সৌদি আরবে মেয়েদের প্রথম স্কুল দার আল হানান৷ আর রিয়াদ কলেজ অফ এডুকেশন সৌদি নারীদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি চালু হয় ১৯৭০ সালে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
২০০১: নারীদের জন্য পরিচয়পত্র
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ সৌদি আরবে নারীদের পরিচয়পত্র নিতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হতো৷ ২০০১ সালে সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই পরিচয়পত্র নেয়ার সুযোগ পান৷
ছবি: Getty Images/J. Pix
২০০৫: জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ
২০০৫ সালে সৌদি আরবে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ হয়৷
ছবি: Getty Images/A.Hilabi
২০০৯: প্রথম নারী মন্ত্রী
২০০৯ সালে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রথম নারী মন্ত্রী নিয়োগ করেন৷ নূরা আল কায়েজ নারী বিষয়ক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সে বছর সরকারে যোগ দেন৷
ছবি: Foreign and Commonwealth Office
২০১২: অলিম্পিকে প্রথম নারী অ্যাথলিট
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেন সৌদি নারীরা৷ তাঁদের মধ্যে সারাহ আত্তার নারীদের ৮০০ মিটার দৌড়ে লন্ডন অলিম্পিকের ট্র্যাকে নেমেছিলেন হিজাব পড়ে৷ আসর শুরুর আগে নারীদের অংশগ্রহণ করতে না দিলে সৌদি আরবকে অলিম্পিক থেকে বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছিল আইওসি৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.-G.Mabanglo
২০১৩: সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি
ঐ বছর সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি পান সৌদি নারীরা৷ তবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় এবং ইসলামি রীতিতে পুরো শরীর ঢেকে এবং কোনো পুরুষ আত্মীয়ের উপস্থিতিতে তা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
২০১৩: শুরায় প্রথম নারী
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের রক্ষণশীল কাউন্সিল ‘শুরা’য় প্রথমবারের মতো ৩০ জন নারীকে শপথ বাক্য পাঠ করান৷
ছবি: REUTERS/Saudi TV/Handout
২০১৫: ভোট দেয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার
২০১৫ সালে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান৷ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড নির্বাচনে নারীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করেছিল ১৮৯৩ সালে, জার্মানিতে তা চালু হয় ১৯১৯ সালে৷ ২০১৫ সালে সৌদি আরবের ঐ নির্বাচনে ২০ জন নারী নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Batrawy
২০১৭: সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম নারী
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারপার্সন হিসেবে সারাহ আল সুহাইমির নাম ঘোষণা করে আরেক ইতিহাস রচনা করে৷
ছবি: pictur- alliance/abaca/Balkis Press
২০১৮: গাড়ি চালানোর অনুমতি
গত ২৬শে সেপ্টেম্বর সৌদি আরব নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করে৷ ২০১৮ সালের জুন মাসে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে৷ এর ফলে নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না এবং স্বতন্ত্র লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা৷