শিথিল করার বদলে সম্ভবত আরও কড়া লকডাউনের পথ বেছে নিচ্ছে জার্মানি৷ সোমবার চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷ করোনা সংকটের ‘তৃতীয় ঢেউ' নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
বেশ কয়েক মাস ধরে জার্মানিতে লাগাতার লকডাউনচলে আসছে৷ কখনো বিধিনিয়ম কড়া করা হচ্ছে, কখনো সামান্য শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে৷ করোনা সংকটের মোকাবিলায় সরকার ও প্রশাসন অন্য কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে জোরালো সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ একাধিক সূত্র অনুযায়ী সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পর্যালোচনা করে লকডাউনের মেয়াদ ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়াতে চলেছেন৷ সেইসঙ্গে করোনা সংক্রমণের হার কমাতে আরও কড়া পদক্ষেপও ঘোষণা করতে পারেন তারা৷ রাত থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করার প্রস্তাবও বিবেচনা করছেন তাঁরা৷
রোববার জার্মানিতেপ্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সাপ্তাহিক গড় সংক্রমণের হার ১০০ পেরিয়ে গেছে৷ অথচ সপ্তাহান্তে করোনা পরীক্ষার সব তথ্য রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের কাছে না পৌঁছানোর কারণে প্রকৃত চিত্র পাওয়া কঠিন হয়৷ তাই চলতি সপ্তাহে সংক্রমণের হার আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটগুলিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ মে মাসের শুরুতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের এমন জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন৷
ইউরোপের দেশে দেশে ভ্রমণে কড়াকড়ি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ভ্রমণের ক্ষেত্রে সীমান্তে কড়াকড়ি, করোনা পরীক্ষা, কোয়ারান্টাইনসহ বেশ কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে৷
ছবি: Alexander Farnsworth/picture alliance
ফিনল্যান্ড
যারা এই দেশে ভ্রমণ করবেন তাদের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি নিয়ম চালু করেছে ফিনিশ সরকার, যা ২৭ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে৷ সীমান্তে করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক৷ শেনজেন অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অবাধ চলাচলের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে৷ এসব দেশ থেকে জরুরি কাজ বা প্রয়োজনের কাগজ দেখিয়ে তবে ফিনল্যান্ডে প্রবেশ করা যাবে৷
ছবি: Vesa Moilanen/Lehtikuva/AFP/Getty Images
সুইডেন
ইইউ-র বাইরের ইউরোপের দেশগুলো থেকে যারা আসবেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করা করোনা পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ ফলাফল দেখাতে হবে, অন্যথায় ফেরত যেতে হবে৷ ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ থেকে এটা কার্যকর হয়েছে৷ যুক্তরাজ্য, নরওয়ে ও ডেনমার্কের নাগরিকদের সুইডেন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ সুইডিশরা অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে৷
ছবি: Alexander Farnsworth/picture alliance
ডেনমার্ক
ডেনমার্কে ভয়াবহ মাত্রায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ নেগেটিভ করোনা সার্টিফিকেট, যা ২৪ ঘণ্টার বেশি পুরোনো নয় এবং ভ্রমণের প্রয়োজন সংক্রান্ত কাগজ দেখাতে পারলেই কেবল এদেশে প্রবেশ করা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/Bildbyran/P. Arvidson
সুইজারল্যান্ড
দেশটি ইউরোপের দেশগুলোর সাথে ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেনি৷ তবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের কমপক্ষে ১০ দিন কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে৷ যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Geisser
লুক্সেমবার্গ
শেনজেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের করোনা ‘নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে৷ জানুয়ারির ২৯ তারিখ থেকে বোর্ডিঙের সময় সার্টিফিকেট দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷
ছবি: imago/alimdi
চেক প্রজাতন্ত্র
করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দেশটি তিনটি সীমান্তই বন্ধ করে দিয়েছে৷ বসানো হয়েছে সীমান্তরক্ষী৷ তারা পর্যবেক্ষণ করছেন সীমান্ত দিয়ে কেউ যাতে অন্য দেশে প্রবেশ করতে না পারে এবং অন্য দেশ থেকে কেউ চেক প্রজাতন্ত্রে ঢুকতে না পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa
নরওয়ে
দেশটি সব সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে৷ কেবল যাদের খুব প্রয়োজন তারাই প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন৷ ২৯ জানুয়ারি থেকে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/J. Nix
পোল্যান্ড
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে প্রয়োজন ছাড়া কেউ পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারবে না৷ পহেলা জানুয়ারি থেকে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ ইইউ দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের অবশ্যই ১০দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে৷ তবে ভ্যাকসিন নেয়ার সার্টিফিকেট থাকলে কোয়ারান্টিনের প্রয়োজন নেই৷
ছবি: Beata Zawrzel/NurPhoto/picture alliance
তুরস্ক
তুরস্কে প্রবেশ করতে হলে ৬ বছরের বেশি বয়সিদের করোনা ‘নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে৷ পাশাপাশি হেল্থ স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক৷ যুক্তরাজ্য থেকে সব ফ্লাইট বাতিল করেছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/R. Hackenberg
ক্রোয়েশিয়া
এই দেশে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে ‘ট্রাফিক লাইট সিস্টেমের’ মধ্যে দিয়ে যেতে হবে৷ অর্থাৎ, আপনার করোনার লক্ষণ আছে কিনা অথবা গত ১৪ দিনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে৷ পরীক্ষায় সবুজ সংকেত পেলে তবেই প্রবেশ করতে পারবেন ক্রোয়েশিয়ায়৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar/B. Hoyen
জার্মানি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে চেক প্রজাতন্ত্র এবং অস্ট্রিয়ার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি৷ ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে৷ তবে জার্মান নাগরিকদের দেশে ঢুকতে কোনো বাধা নেই৷ তাদের ৪৮ ঘণ্টার কম পুরোনো করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে৷ এছাড়া চিকিৎসক ও জরুরি কাজের সঙ্গে যুক্তদের ছাড় দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Odd Andersen/AFP
11 ছবি1 | 11
আসন্ন ইস্টারের ছুটিতে পরিস্থিতির আরও অবনতি এড়াতে তাই কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন দেখছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিন্তু সরকারের প্রতি মানুষের বেড়ে চলা অসন্তোষ সত্ত্বেও কড়াকড়ি কার্যকর করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে৷ দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ও সংকট মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ জোরালো হচ্ছে৷
মোটকথা জার্মানিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চলমান ‘তৃতীয় ঢেউ' আরও মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন৷ এখনও সবার জন্য সহজে করোনা পরীক্ষা ও করোনার টিকার যথেষ্ট জোগান না থাকায় পরিস্থিতির উন্নতির আশা অত্যন্ত ক্ষীণ৷ এপ্রিল মাস থেকে টিকার সরবরাহ বাড়তে শুরু করলে এবং দেশজুড়ে টিকাদানকর্মসূচির গতি বাড়ানো সম্ভব হলে তবেই কিছু অগ্রগতি সম্ভব৷ তার আগে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করার উপর জোর দিচ্ছে প্রশাসন৷
অথচ চ্যান্সেলর ও মুখ্যমন্ত্রীরা গত বৈঠকে বিধিনিয়ম আরও শিথিল করার আশা প্রকাশ করেছিলেন৷ গত বৈঠকে কড়া শর্তে চুল কাটার সেলুন, দোকান-বাজার ইত্যাদি খোলার পর চলতি সপ্তাহে খোলা আকাশের নীচে রেস্তোরাঁ খোলার মতো সিদ্ধান্ত নেবার কথা ছিল৷ বেড়ে চলা সংক্রমণের হার সেই প্রত্যাশা কেড়ে নিচ্ছে৷ এমন বিলম্বের ফলে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে৷