আরও ছোঁয়াচে করোনা সংস্করণের জন্য জার্মানিতে প্রস্তুতি
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
জেনোমিক সেকোয়েন্সিং পদ্ধতির আরও ব্যাপক প্রয়োগ করে জার্মানি ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা মিউট্যান্টের প্রসার সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পেতে চাইছে৷ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা বাড়াচ্ছে সরকার৷
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও গোটা বিশ্বে সেই ভাইরাসের প্রকৃতি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়ে গেছে৷ একমাত্র জেনেটিক সিকোয়েন্সিং পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে মূল স্রোতের ভাইরাসের পাশাপাশি আরও ছোঁয়াচে বা মারাত্মক সংস্করণ শনাক্ত করা সম্ভব৷ জার্মানিতেও এমন পরীক্ষার অভাবের কারণে ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বা ব্রাজিলের মতো দেশ থেকে আসা মিউট্যান্ট সংস্করণ চিহ্নিত করা এতকাল কঠিন ছিল৷ এবার কর্তৃপক্ষ নড়েচ়ড়ে বসেছে৷ ফেডারেল সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, জার্মানিতে মিউটেশনের প্রসার সম্পর্কে সার্বিক ধারণা পেতে জোরালো উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ আগামী সপ্তাহের শুরু থেকেই সরকারি পরিসংখ্যানে এই বিষয়টির উল্লেখ থাকবে৷
সরকারি সূত্র অনুযায়ী গত মঙ্গলবারের মধ্যে জার্মানিতে ১১৪ জনের শরীরে ব্রিটিশ এবং ৫২ জনের শরীরে দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্করণ পাওয়া গেছে৷ তবে কর্তৃপক্ষের ধারণা, বাস্তবে এমন সব বিপজ্জনক সংস্করণ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে৷ ফলে সার্বিকভাবে করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকলেও এমন পরিস্থিতিতে লকডাউন শিথিল করার বিপক্ষে রায় দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
করোনার টিকা কি হালাল, শিশু ও গর্ভবতীরা কি টিকা নিতে পারবে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি, কতদিন স্বাস্থ্য়বিধি মানতে হবে- এমন সব প্রশ্নের উত্তর থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Leon Neal/Getty Images
কতগুলো টিকা অনুমোদন পেয়েছে
ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বায়োনটেক-ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, এই তিন টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷ এর বাইরে রাশিয়া স্পুটনিক ৫ ও চীন সিনোভ্যাক টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷
ছবি: Sven Hoppe/dpa/picture alliance
পার্থক্য
বায়োনটেক-ফাইজার ও মডার্নার টিকা হচ্ছে এমআরএনএ টিকা৷ মডার্নার টিকা ঘরের রেফ্রিজারেটরে সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার মতো মডার্নার টিকাকে পরিবহনের সময় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয় না৷ আর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি ভেক্টর ভাইরাস টিকা, যা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে রাখা যায়৷
ছবি: ULMER Pressebildagentur/picture alliance
দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা?
তিনটি টিকার ক্ষেত্রেই দুটো করে ডোজ দিতে হয় এবং ডোজ দুটো একই টিকার হতে হবে৷ কারণ দুই ডোজে দুই ধরনের টিকা নিলে কী হতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য নেই৷
ছবি: TASR/dpa/picture alliance
করোনা হলেও টিকা নিতে হবে?
হ্যাঁ, নেয়া ভালো৷ কারণ একবার সংক্রমিত হলে পরে আর হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
ছবি: Abdesslam Mirdass/Hans Lucas/imago images
কী অবস্থায় টিকা নেয়া যাবেনা?
করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় এবং সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে সেই সময় টিকা নেয়া যাবে না৷ কোয়ারান্টিনে থাকার সময়ও টিকা নেয়া যাবে না৷ যাদের কোনো বিষয়ে অ্যালার্জি আছে তাদের বেশিরভাগই টিকা নিতে পারবেন৷
ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance
শিশুদের টিকা?
টিকাগুলো ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সিদের দেয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছে৷ শিশুদের টিকা দেয়ার বিষয়ে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছে জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
গর্ভবতীরা টিকা নিতে পারবেন?
‘জার্মান স্ট্যান্ডিং কমিশন অন ভ্য়াকসিনেশন’ বা স্টিকো গর্ভবতীদের টিকা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেনা৷ আবার না-ও করছেনা৷ তবে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তারা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ঝুঁকি-লাভ বিবেচনা করে টিকা নিতে পারেন বলে জানিয়েছে স্টিকো৷ এদিকে, এমআরএনএ টিকা গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশ্বাস করেননা বিশেষজ্ঞরা৷ তবে এ বিষয়ে এখন প্রাণীর উপর গবেষণা চলছে৷
টিকা নেয়ার পর তিনদিনের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে৷ যেমন টিকার স্থান ফুলে যাওয়া, মাথাব্য়াথা, জ্বর, দুর্বল লাগা ইত্যাদি৷ তবে দুদিনের মধ্যে এগুলো সেরে যাবার কথা৷
ছবি: Imago Images/M. Eichhammer
অন্য টিকা নিতে কতদিন অপেক্ষা?
ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, রুবেলা কিংবা টিটেনাসের টিকা নিতে চাইলে করোনার টিকা নেয়ার আগে বা পরে ১৪ দিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
টিকা হালাল?
ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্ররা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন তাদের টিকায় শূকরের কিছু নেই৷
ছবি: Dominic Lipinski/picture-alliance
টিকা নেয়ার পরও হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরতে হবে?
টিকা আপনাকে কতদিন রক্ষা করতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো গবেষণা নেই৷ তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে৷
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
11 ছবি1 | 11
উল্লেখ্য, জার্মানিতে সর্বশেষ দৈনিক সংক্রমণের হার ১৪,২১১ এবং দৈনিক মৃত্যুর হার ৭৮৬৷ আপাতত ১৪ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে৷ আগামী ১০ই ফেব্রুয়ারি চ্যান্সেলর ম্যার্কেলও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন৷
ব্রিটেন থেকে আসা বিওয়ানওয়ানসেভেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ইফোরএইটফোরকে সংস্করণ সম্পর্কে বার বার সতর্ক করে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷ জার্মান ভাইরোলজিস্ট আলেক্সান্ডার কয়েকলা সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-কে বলেছেন, এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই সব মিউট্যান্ট আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং কয়েকটি সংস্করণের ক্ষেত্রে টিকাও সম্ভবত প্রতিরোধ করতে অক্ষম৷
এদিকে একটানা লকডাউনের কারণে জার্মানির অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে৷ অদূর ভবিষ্যতে কড়াকড়ি শিথিল করার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না৷ ফলে সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে জার্মান মন্ত্রিসভা কিছু নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ এর আওতায় কম আয়ের মানুষের জন্য সরাসরি আর্থিক সহায়তা এবং কোম্পানিগুলির লোকসান মেটাতে করের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে৷ তাছাড়া প্রত্যেক সন্তানের জন্য পরিবারগুলি এককালীন দেড়শো ইউরো ভাতা পাবেন৷ হোটেল রেস্তোরাঁ শিল্পের সংকট কিছুটা লাঘব করতে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিক্রয় করের হার ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশে আনা হচ্ছে৷