প্রতিদিন আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন করোনা ভাইরাসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট আশঙ্কা আরও বাড়াল।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিল। বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, করোনা ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি করছে। প্রাথমিক ভাবে চীনে যখন এই ভাইরাস ছড়িয়েছিল তখন এক লক্ষ মানুষকে আক্রান্ত করতে ভাইরাসের সময় লেগেছিল ৬৭ দিন। এক লক্ষ থেকে দুই লক্ষে পৌঁছতে সময় লেগেছে ১১ দিন। আর তিন লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে মাত্র চার দিনে। শুধু তাই নয়, চীন থেকে ইউরোপে পৌঁছতে যতটা সময় লেগেছিল এই ভাইরাসের, বাকি বিশ্বে ছড়াতে তার চেয়ে অনেক কম সময় লাগছে। বস্তুত, এই মুহূর্তে কার্যত পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে করোনা সংক্রমণের খবর মিলছে। ইউরোপ এবং এশিয়ার মতো বহু আফ্রিকার দেশও লকডাউন এবং কার্ফু ঘোষণা করে দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ জনের। মোট আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৬২ হাজার জন। তবে এর মধ্যে প্রায় এক লক্ষ মানুষ চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।
করোনা থেকে বাঁচতে যা কিছু সাবধানে ধরবেন
কোন কোন জিনিসে করোনা ভাইরাস লুকিয়ে থাকতে পারে? কোন জিনিসগুলোতে বুঝেশুনে হাত দিতে হবে? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/Kontrolab/IPA/S. Laporta
দরজার হাতল
গবেষণা বলছে, দরজার হাতলে পাঁচ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে করোনা ভাইরাস। সুতরাং, সাবধান! সব সময় পরিষ্কার রাখুন দরজার হাতল। অথবা হাত দিলে সেই হাত খুব ভালো করে ধুয়ে নিন।
ছবি: picture-alliance/dpa Themendienst/F. Gabbert
চামচ
আপনার এলাকায় এখনো রেস্তোরাঁ বা অফিসের ক্যাফেটেরিয়া খোলা আছে? করোনার আতঙ্কের এই সময়েও সেখানে খেতে হয়? তাহলে চামচ বা কাঁটাচামচ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান। অনেকেই বলছেন, করোনায় সংক্রমিত কেউ ব্যবহার করলে চামচে অনেকক্ষণ জীবাণু থেকে যেতে পারে।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
টেডি বিয়ার
এমনিতে টেডি বিয়ার নিরাপদ। এমন খেলনার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকির কথা কোনো গবেষণায় উঠে আসেনি। তবে খেলনা তৈরিতে প্লাস্টিক, কার্ডবোর্ড ইত্যাদি ব্যবহার করলে তার মাধ্যমে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
প্যাকেট, চিঠি ইত্যাদি
যুক্তরাষ্ট্রের রকি মাউন্টেন ল্যাবরেটরির এক গবেষণা বলছে, কার্ডবোর্ড বা কাগজে তৈরি কোনো দ্রব্যে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে করোনা ভাইরাস।
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Weller
পোষা প্রাণীতেও ঝুঁকি?
না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে পোষা প্রাণীর মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার কথা এখনো গবেষকরা নিশ্চিত করে বলেননি।
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Tarantino
ফলমূল, শাকসবজি
না, ভালো করে ধুয়ে নিলে ফলমূল, শাক সবজির মাধ্যমেও করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নেই। সুতরাং প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করে নিশ্চিন্তে খান।
ছবি: picture-alliance/Kontrolab/IPA/S. Laporta
ফ্রোজেন ফুড
করোনা ভাইরাস তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ২০ ডিগ্রি নীচে নেমে গেলেও তরতাজা থাকে। সুতরাং ফ্রিজে রাখা প্যাকেটজাত খাবার খুব ভালো করে গরম না করে একদম খাবেন না।
ছবি: picture-alliance /imageBROKER/J. Tack
7 ছবি1 | 7
বহু টালবাহানার পর অবশেষে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্যও। সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। দেশের সমস্ত লোককে বাড়ি থেকে না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের একাংশ বলছেন, আরও আগেই এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কারণ প্রতিদিনই সেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। যুক্তরাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৩৩৫। মোট আক্রান্ত ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ।
এ দিকে ইটালিতে মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। সোমবার ৬০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার জেরে মোট মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেল। আক্রান্ত প্রায় ৬৪ হাজার মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইটালিতে মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। শনিবার সংখ্যাটি সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। তার পর থেকে ধীরে ধীরে কমছে। যদিও এখনও সেখানে যত মানুষ প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
করোনা ভাইরাসের কারণে স্তব্ধ ইউরোপ
সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের বড় শহরগুলির রাজপথ প্রায় খালি৷ করোনা ভাইরাসের প্রসার থামাতে ইউরোপে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
প্যারিসে লকডাউন
গত মঙ্গলবার দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার পর প্যারিসের ব্যস্ত রাজপথ জনশূন্য হয়ে পড়েছে৷ কেনাকাটা, ডাক্তারের কাছে বা কাজে যাওয়া ছাড়া বাসার বাইরে যাবার নিয়ম নেই৷ বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলায় প্যারিসের মেয়র অবশ্য আরও কড়া পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
জার্মানির রাজধানীতে জনজীবন স্তব্ধ
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রবিবার জার্মানিতে আরও কড়া পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন৷ প্রকাশ্যে দুই জনের বেশি একসঙ্গে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার৷ নয় দফার এই পদক্ষেপের আওতায় মানুষের মধ্যে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ রেস্তোরাঁ, সেলুন ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে রোববার ম্যার্কেল নিজে কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
বিদেশিরা অনাকাঙ্ক্ষিত, সীমান্ত বন্ধ
দেশের মধ্যে মানুষের চলাচলের উপর কড়া নিয়ম চালু করার পাশাপাশি জার্মানি দেশে বিদেশিদের প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে৷ সে কারণে দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্টে কার্যকলাপ অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
বাভেরিয়ার মানুষ গৃহবন্দি
করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে জার্মানির দক্ষিণে বাভেরিয়া রাজ্যে গত সপ্তাহে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত পদক্ষেপের আওতায় মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ৷ রেস্তোরাঁসহ অনেক দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/S. Babbar
ব্রিটেনে সামাজিক দূরত্বের আবেদন
করোনা ভাইরাসের হুমকি রুখতে ব্রিটেন সব বার, পাব ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সব নাগরিকের উদ্দেশ্যে অতি প্রয়োজনীয় নয়, এমন ভ্রমণ বন্ধ রাখার আবেদন করেছেন৷ সেইসঙ্গে অনির্দিষ্ট কালের জন্য মানুষে-মানুষে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে বলেছেন জনসন৷
ছবি: AFP/T. Akmen
মহামারির কেন্দ্রস্থল মিলান
সাম্প্রতিক কালে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীন থেকে ইটালিতে স্থানান্তরিত হয়েছে৷ সে দেশে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতদের সংখ্যা মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে৷ ১০ই মার্চ ইটালিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Bruno
ভ্যাটিকানের দরজা বন্ধ
ইটালির উত্তরে লম্বার্ডি অঞ্চলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পর দেশের বাকি অংশেও জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ রোম ও ভ্যাটিকান সিটিতে মানুষের সমাবেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে৷ সেন্ট পিটার্স চত্বরের মতো পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/E. Inetti
স্পেনের অবস্থা গুরুতর
রোববার স্পেনের সরকার দেশে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আগামী ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ ফলে ১৪ই মার্চ থেকে প্রায় এক মাস পর্যন্ত স্পেনেল জনজীবন স্তব্ধ থাকবে৷ ইউরোপে ইটালির পর স্পেনেই করোনা ভাইরাস সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ বিশেষ করে বার্সেলোনা ও মাদ্রিদ শহরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/X. Bonilla
অস্ট্রিয়ায় সংক্রমণের হার কমছে
সপ্তাহান্তে অস্ট্রিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তবে এর আগে ৪০ শতাংশ সংক্রমণের হারের তুলনায় তা অনেক কম৷ সরকার দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ নেবার ফলে সুফল দেখা যাচ্ছে৷ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার আরও কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: AFP/H. Neubauer
9 ছবি1 | 9
উপমহাদেশের পরিস্থিতিও যথেষ্ট আশঙ্কার। ভারত এবং পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তুলনায় কম হলেও বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে আতঙ্ক। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় পতিতাপল্লি। সরকার জানিয়েছে, সেখানকার পতিতাদের খাবার, সামান্য অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে। কিন্তু সূত্র জানাচ্ছে, সরকারের কাছে দ্রুত সাহায্য দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন যৌনকর্মীরা। তাঁদের দাবি, জীবনধারণের সমস্ত রসদ ফুরিয়ে গিয়েছে।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে নিউজিল্যান্ডেও। দেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ৫০ লক্ষ মানুষের স্বার্থে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন শুরু হবে সেখানে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক তুরস্কেও। সেখানেও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। মোট আক্রান্ত দেড় হাজারেরও বেশি। মৃত্যু হয়েছে ২৯৩ জনের। অন্য দিকে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট করোনা সংক্রমণ আটকাতে এজলাসে বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানানো হয়েছে, বেশির ভাগ বিচারই এখন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হবে। সওয়াল জবাবের পরে বিচারপতি রায়ও দেবেন ভিডিও কনফারেন্সেই। এ দিকে ফ্রান্স করোনার সংক্রমণ আটকাতে একটি নতুন ডিক্রি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন আইনে দেশের নাগরিকরা বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে শরীর চর্চা করতে পারবেন। জগিং করতে পারবেন। কিন্তু তার চেয়ে দূরে যাওয়া যাবে না।
অ্যামেরিকার অবস্থাও ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। দেশের প্রতিটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। নিউ জার্সি বেশ কিছু জেলবন্দিকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন সেনা জানিয়েছে, নিউ ইয়র্ক এবং সিয়াটেলে দুইটি ফিল্ড হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই দু'টি তৈরি হলে দেশের অন্য জায়গাগুলিতেও হাসপাতাল তৈরি হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ দিকে, করোনার জেরে এ বার অলিম্পিক পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানালো ইরান। একই কথা জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডও। রবিবার এই দাবি তুলেছিল কানাডা এবং নিউজিল্যান্ড।