জাতিসংঘে চিন ও রাশিয়াও আরও কড়া নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবে সমর্থন দেবার পর পর উত্তর কোরিয়ার উপর চাপ বাড়ছে৷ বর্তমান সংকট কাটাতে আলোচনার পথ খুলতে চাইছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ৷
শনিবার সর্বসম্মতিক্রমে এক প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে, যার ফলে উত্তর কোরিয়ার প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের বাৎসরিক রপ্তানির মাত্রা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে৷ এই পরিমাণ রাজস্ব হারালে প্রায় একঘরে হয়ে থাকা এই রাষ্ট্রের অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ তাছাড়া উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকরাও আর সহজে বিদেশে কাজ করতে পারবেন না৷ সেই সঙ্গে সে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পথ কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷ এমন প্রস্তাবে ঐকমত্যের ফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
সোমবার ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন টেলিফোনে কথা বলেন৷ তাঁরা দুজনেই উত্তর কোরিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখার বিষয়ে একমত৷ চলতি মাসের শেষে অ্যামেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া এক যৌথ সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে৷ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, উত্তর কোরিয়া তার পরমাণু কর্মসূচি বর্জন করলে সংলাপের পথ এখনো খোলা আছে৷
সপ্তাহান্তে ফিলিপাইন্সের ম্যানিলা শহরে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার প্রসঙ্গটি প্রাধান্য পেয়েছে৷ সেখানে রবিবার সন্ধ্যায় নৈশভোজে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতও হয়েছে৷ দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর সতীর্থকে কাং কিউংহোয়া তাঁর দেশের প্রস্তাবগুলিতে সাড়া দেবার আহ্বান জানান৷ জবাবে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং হো বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রস্তাব আন্তরিক নয়৷ কারণ সে দেশ অ্যামেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে উত্তর কোরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে৷
উত্তর কোরিয়ার প্রধান সহযোগী চীন বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম অস্বস্তিতে ভুগছে৷ উত্তেজনা প্রশমন করতে দুই কোরিয়ার মধ্যে অবিলম্বে যোগাযোগের আশা প্রকাশ করেছে সে দেশ৷ নিষেধাজ্ঞায় সম্মতি দিয়েও চীন বলেছে, এটা চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না৷ অ্যামেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যেও উত্তেজনা কমানোর ডাক দিয়েছে বেইজিং৷ ম্যানিলায় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, উত্তর কোরিয়া আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেনি৷
ম্যানিলায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, চীন ও রাশিয়াও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে সমর্থন জানানোর ফলে উত্তর কোরিয়া কড়া বার্তা পেয়েছে৷ তবে সে দেশের প্রতি কিছুটা সুর নরম করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত হলে উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংলাপ শুরু হতে পারে৷ সে দেশ যাতে নিরাপদ বোধ করে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে চলতে পারে, তা নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত দেন তিনি৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, ডিপিএ)
কিম জং-উন স্টাইল
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন৷ বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন এই দেশের ছবি খুব বেশি দেখা যায় না৷ তবে দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি, কেসিএনএ প্রায়ই উন-এর ছবি প্রকাশ করে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
ছোট্ট উন?
উত্তর কোরিয়ার সরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিও থেকে নেয়া এই ছবিতে ছোট্ট কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে৷ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পাওয়া এই ছবিটি রয়টার্সের৷ তবে ছবিতে আসলেই উনকে দেখা যাচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি সংবাদ সংস্থাটি৷ যেমনটা নিশ্চিত নয় উনের জন্মসালও৷ তবে ১৯৮৩ বা ১৯৮৪ সালে যে তাঁর জন্ম সেটি অবশ্য নিশ্চিত!
ছবি: Reuters
২০১১ সাল থেকে ক্ষমতায়
সে বছরের ১৭ ডিসেম্বর বাবা কিম জং-ইল মারা যাওয়ার কয়েকদিন পরই উত্তর কোরিয়ার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন উন৷ ছবিতে সামরিক বাহিনীর এক মহড়ায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে৷ সম্প্রতি ছবিটি প্রকাশ করে কেসিএনএ৷
ছবি: Reuters/KCNA
পুরুষালি নন!
এই ‘অভিযোগ’-এর কারণেই উনের তিন বছরের বড় ভাই কিম জং-চল উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় যেতে পারেননি বলে মনে করা হয়৷ তো ছবি দেখে আপনিই বলুন উনকে কেমন লাগছে৷ নতুন নির্মিত একটি নার্সারি ও এতিমখানা দেখতে গিয়ে ক্যামেরায় এভাবেই ধরা পড়েন তিনি৷ শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সংবাদপত্র ‘রোডোং সিনমুন’ ২০১৫ সালের ২ জুন ছবিটি প্রকাশ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
স্কুলের পড়াশোনা সুইজারল্যান্ডে
বড় ভাই কিম জং-চলের মতো কিম জং-উনও স্কুল পর্যায়ের পড়াশোনা করেছেন সুইজারল্যান্ডে৷ এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকান দেশে গিয়ে৷ সেখানকার একটি সামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়েছেন বলে জানা যায়৷ ছবিতে উনকে একটি মেডিক্যাল অক্সিজেন ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/KCNA
উনের স্ত্রী
শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টি প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি ‘অল-ফিমেল’ ব্যান্ডের পারফর্মেন্স উপভোগ করছেন উন৷ তাঁর ডানপাশে বসে আছেন স্ত্রী রি সল-জু৷ তিনি একজন সংগীত শিল্পী ছিলেন বলে ধারণা করা হয়, এবং একটি অনুষ্ঠানে তাঁর পারফর্মেন্স দেখেই উন মুগ্ধ হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
কেমন লাগছে?
কোরীয় উপত্যাকার সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট পেকদুতে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন উন৷ ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল ছবিটি প্রকাশ করে কেসিএনএ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
‘ফিল্ড গাইডেন্স’
কেসিএনএ-র প্রকাশ করা ছবিগুলোর ক্যাপশনে প্রায়ই এই শব্দ দু’টি থাকে৷ বিশ্লেষকরা বলেন, উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে উনের প্রতি আনুগত্য দেখানোর এটি একটি উপায়৷ ফলে তিনি যেখানেই যান না কেন – হোক সেটি আপেল খেত পরিদর্শন (ছবিতে যেমনটা দেখছেন) কিংবা অন্যকিছু (পরের ছবিটি দেখুন), উন পরামর্শ দিতেই সেখানে গিয়েছেন বলে প্রচার করা হয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
আমদানি কমাতে পরামর্শ
শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করে এমন একটি কারখানায় গিয়ে উন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি কমাতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন৷ ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর ছবিটি প্রকাশ করে কেসিএনএ৷