আরজি করে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায় দোষী প্রমাণিত বলে জানালেন বিচারক অনির্বান দাস।
বিজ্ঞাপন
বিচারক জানিয়েছেন, এই ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড ও সবচেয়ে কম শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে শনিবার এই সাজার কথা ঘোষণা করেননি বিচারক। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার সাজা ঘোষণা করা হবে।
কী হলো আদালতে?
আদালতে ১২ মিনিটের শুনানি হলো। বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয় রায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ''আপনি ওইদিন আরজি করে গিয়ে চিকিৎসকের গলা টিপেছিলেন, তাকে যৌন নিগ্রহ করেছেন। তাকে হত্যা করেছেন।''
সঞ্জয়ের কাছে বিচারক জানতে চান, ''আপনি কি কিছু বলতে চান?''
সঞ্জয় তখন বিচারককে বলে, ''আমি নির্দোষ। আমায় ফাঁসানো হচ্ছে। আইপিএস অফিসার যা বলেছে তাই করেছি। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা রয়েছে। আমি অপরাধ করলে তা ছিঁড়ে পড়ে যেত।''
বিচারক জানান, ''আমার সামনে যে তথ্যপ্রমাণ রাখা হয়েছে এবং সিবিআই যা বলেছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট।''
তখন সঞ্জয় আবার বলেন, তিনি নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
বিচারক তখন জানান, ''আপনার সব কথা শুনব। তবে আপনি দোষী, আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে। সোমবার সাজা জানিয়ে দেব।''
বিচারক এটাও জানান, এই অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড ও সবচেয়ে কম সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
সিবিআই কী তথ্য দিয়েছিল?
সিবিআই ঘটনাস্থলে সঞ্জয় ঘোষের ঢোকা ও বেরনোর সিসিটিভি ছবি দিয়েছে। তারা সঞ্জয়ের মোবাইল টাওয়ার দেখিয়ে প্রমাণ করেছে, ঘটনার সময় সঞ্জয় ওখানে ছিল। ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্যাতিতার গায়ের আঁচড় সঞ্জয়ের নোখ থেকে এসেছে। ফরেনসিক রিপোর্টেও সঞ্জয়কে দায়ী করা হয়েছে।
সিবিআই সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে।
চিকিৎসকদের দাবি
শনিবার শিয়ালদহ আদালতের কাছেই বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তাররা। তাদের দাবি ছিল, শুধু সঞ্জয় রায় নয়, তার সঙ্গে আরো কয়েকজন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এটা একা সঞ্জয়ের কাজ হতে পারে না।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের নেতা অনিকেত মাহাতো বলছেন, ''আমরা খুশি এটা কী করে বলতে পারি? আমরা প্রথম থেকে বলছি, এর সঙ্গে অনেকে জড়িত। সঞ্জয়ের শাস্তি হলো, এটা ন্যায়ের প্রাথমিক বিষয়। কিন্তু আরো অনেক প্রশ্ন থাকছে। সঞ্জয় একা নয়, অনেকে ছিল। যারা অভিযোগ নষ্ট করেছে, তারা কেন জামিনে মুক্ত? একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকলে তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি কী হবে? এসব নিয়ে স্পষ্ট উত্তর না এলে ন্যায় হলো না বলে আমরা মনে করি।''
আরজি করে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন থেকে মামলার রায়
আরজি করে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করার পাঁচ মাস নয় দিন পর রায় এলো। সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুন
৯ অগাস্ট ২০২৪: কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উদ্ধার হয়েছিল এক নারী চিকিৎসকের দেহ। অভিযোগ উঠেছিল, ওই চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। ঘটনার পাঁচ মাস নয় দিন পরে ১৮ জানুয়ারি, শনিবার সেই ধর্ষণ-খুনের মামলায় রায় ঘোষণা হলো শিয়ালদহ আদালতে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিভিক ভল্যান্টিয়ার গ্রেপ্তার
১০ অগস্ট: ঘটনার তদন্তে নেমেই এক সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআইও তদন্ত চালিয়ে ধৃত সিভিক ভল্যান্টিয়ারকেই ‘একমাত্র অভিযুক্ত’ হিসাবে বর্ণনা করে আদালতে চার্জশিট পেশ করে। তার দুই দিন পরেই নিহত ছাত্রীর বাড়িতে পৌঁছে তাঁর বাবা, মায়ের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত
১৩ অগস্ট: সিবি আই তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পাঁচ দিনের মাথায় সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকে এই বিষয়ে মামলা শুরু করে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নারীদের রাত দখলের ডাক
১৪ অগস্ট: কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা রাত দখলের ডাক দেন। নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে কাতারে কাতারে মানুষ ‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নামেন। নজিরবিহীন ‘নাগরিক আন্দোলন’ দেখে কলকাতা সহ সারা দেশ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আরজি করে হামলা
১৪ অগস্ট: মধ্যরাতেই দুষ্কৃতী তাণ্ডব চলে আরজি কর হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ে। ভেঙে তছনছ করে ফেলা হয় সরকারি সম্পত্তি সহ আন্দোলনকারীদের অবস্থান মঞ্চ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
লালবাজার অভিযান
২ সেপ্টেম্বর: কলকাতা পুলিশ কমিশনারের ইস্তফা চেয়ে মিছিল করে লালবাজার অভিযান জুনিয়র ডাক্তারদের। লালবাজারের দু-শো মিটার আগেই ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয় তাদের। সেখানেই অবস্থান শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অবস্থান তার পরের দিন পর্যন্ত চলে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশ কমিশনারের কাছে
৩ সেপ্টেম্বর: জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল কলকাতা পুলিশের তৎকালীন কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করেন। দাবিসনদ-সমেত তার হাতে তুলে দেন একটি ‘প্রতীকী শিরদাঁড়া’।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান শুরু
১০ সেপ্টেম্বর: সলটলেকের স্বাস্থ্যভবনের সামনে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবস্থান শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের জন্য তাদের নবান্নে ডাকেন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি ছিল, বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করতে হবে। লাইভ স্ট্রিমিং না হওয়ায় সেই বৈঠক ভেস্তে যায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চে
১৪ সেপ্টেম্বর: হঠাৎ করেই সবাইকে চমকে দিয়ে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান মঞ্চে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সন্দীপ ঘোষ গ্রেপ্তার
১৪ সেপ্টেম্বরে: ধর্ষণ-খুনের ওই মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিতে না পারায় সন্দীপ এবং অভিজিৎ দু’জনেই জামিন পান। অভিজিতের জেলমুক্তি হলেও সন্দীপ এখনও জেল হেফাজতে রয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সরানো হলে পুলিশ কমিশনারকে
১৪ সেপ্টেম্বর, দুই দিনের ব্যর্থ চেষ্টার পর মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠক হয়। সরাসরি সম্প্রচার ছাড়াই এই বৈঠকে রাজি হন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেখানে খানিক ‘পিছু হটে’ সরকার। সরানো হয় পুলিশ কমিশনার বিনীতকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কর্মবিরতি উঠলো
২০ সেপ্টেম্বর: স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থান তুলে কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহার করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আমরণ অনমশন শুরু
৫ অক্টোবর: ধর্মতলার মোড়ে আমরণ অনশন শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সাত জুনিয়র ডাক্তারের পাশাপাশি বহু মানুষ অনশন মঞ্চে এসে প্রতীকী অনশনে অংশ নেন। ১৯ অক্টোবর অনশন মঞ্চে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ আসেন এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে কথা বলান। ২১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর ১৭ দিনের দীর্ঘ অনশনের অবসানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআইের চার্জশিট
৭ অক্টোবর: ধর্ষণ ও খুনের মামলায় আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। কলকাতা পুলিশ যে পথে তদন্ত শুরু করেছিল, সিবিআইও সেই পথে হেঁটেই একজনকেই অভিযুক্ত হিসেবে দাড় করায়। ৪ নভেম্বর ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হয় এবং ১১ নভেম্বর থেকে শিয়ালদহ আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিচার শুরু
১১ নভেম্বর: আরজি কর মামলায় মোট ৫০ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে শিয়ালদহ আদালতে। সেই তালিকায় রয়েছেন নিহত চিকিৎসকের পিতা, সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার, কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী অফিসার, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং নিহতের কয়েক জন সহপাঠী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রায় দিলেন বিচারক
১৮ জানুয়ারি: শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বান দাস রায় দিলেন। খুন এবং ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হলো সঞ্জয় রায়কে। আদালতে বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয়কে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ। আপনার অপরাধ প্রমাণিত। দোষী সাব্যস্ত করা হলো। এই অপরাধে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড এবং সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাবাস। সোমবার সাজা ঘোষণা করা হবে। সঞ্জয় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, তিনি নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।