গত ১৪ আগস্ট তিন পুলিশ অফিসার আরজি করে ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই হাসপাতালে হামলা চালায় কয়েকহাজার দুর্বৃত্ত।
বিজ্ঞাপন
যে তিনজন অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দু'জন অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার এবং একজন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার। পুলিশ সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, ১৪ অগাস্টের ঘটনার পর বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই ওই তিন অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
আরজি করে এক যুবতী চিকিৎসক খুনের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য। গত ১৪ অগাস্ট 'রাত দখলে'র কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। কোনো রাজনৈতিক দল নয়, সাধারণ মানুষ জেলায় জেলায় রাস্তায় নেমে পড়েন। আরজি করের সামনেও মিছিল এবং প্রতিবাদের ব্যবস্থা হয়। তার আগে থেকেই আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকেরা মঞ্চ বেঁধে হাসপাতালের সামনে প্রতিবাদ করছিলেন। ১৪ অগাস্ট রাতে আচমকাই মিছিলের ভিতর থেকে একটি বড় বাহিনী হাসপাতালের ঢুকে পড়ে। পুলিশের উপস্থিতিতেই তারা প্রতিবাদীদের মঞ্চে ভাঙচুর চালায়। এরপর তারা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে এমার্জেন্সি বিভাগে ভাঙচুর চালায়।
মধ্যরাতে আরজি করে দুষ্কৃতী হামলা, তছনছ জরুরি বিভাগ
নিরাপত্তার দাবিতে মেয়েরা যখন রাস্তায় রাতদখলের কর্মসূচি করছেন, তখন আরজি কর দখল করে নিলো দুষ্কৃতীরা।
ওষুধের স্টোররুমেও দুষ্কৃতীরা আক্রমণ চালায়। সেই হামলার পর গিয়ে দেখা যায়, ওষুধ-পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ওষুধ রাখার ফ্রিজও ভাঙা হয়েছে। চারিদিকে কেবল তাণ্ডবের চিহ্ন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আর কোথায় আক্রমণ চালানো হলো?
পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। লোহার রড হাতে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালায়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা আক্রান্ত হন। টিভি৯-এর ক্যামেরা ভেঙে দেয়া হয়েছে। পরে পুলিশ জানায়, আরজি করের চারতলায় থাকা সেমিনার রুম আক্রান্ত হয়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফাইলপত্র
দুষ্কৃতীদের হামলার পর চারদিকে ফাইলপত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। জরুরি বিভাগের সবকিছুর উপর হামলা হয়েছে। সব জায়গায় দুষ্কৃতীদের সেই হামলার চিহ্ন ছড়িয়ে আছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ভাঙা হলো প্রতিবাদমঞ্চ
কয়েকদিন আগে আরজি কর হাসপাতালে নাইট ডিউটি করার পর এক নারী চিকিৎসক যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখন তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। তারপর থেকে পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। সেই প্রতিবাদমঞ্চ ভেঙে দেয়া হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কারা এই দুষ্কৃতী?
আরজি করের কাছে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে যখন নারীদের রাত দখলের আন্দোলন শুরু হয়, তারপরেই কিছু মানুষ রড, লাঠি নিয়ে আরজি করে ঢুকে পড়ে। অনেকের গায়ে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি। তারা কাছাকাছি এলাকার মানুষ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তারা কারা সেই পরিচয় জানা যায়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মেয়েদের আন্দোলন
আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পর আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মেয়েরা রাত দখল করো। দাবি ছিল, মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আরজি করের কাছে মধ্যরাতে যখন মেয়েদের বিক্ষোভ চলছে, তখনই একদল দুষ্কৃতী হাসপাতালে ঢুকে এই ভাঙচুর করে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন এই হামলা?
আরজি করে নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পর এই হামলা কি প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা? মধ্যরাতের হামলার পর এই প্রশ্ন উঠেছে। নারীদের প্রতিবাদ কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তাতে প্রচুর প্রশ্ন উঠছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, পুলিশ কেন এই হামলা প্রতিহত করতে পারলো না? কেন সেখানে উপযুক্ত সংখ্যক পুলিশ ছিল না? কলকাতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল জায়গায় কী করে বারবার এরকম ভয়ংকর কাণ্ড ঘটতে পারে?
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশ যা বলেছে
আরজি করের তদন্তভার পুলিশের হাত থেকে নিয়ে সিবিআই-কে দিয়েছে হাইকোর্ট। যেভাবে পুলিশের তদন্ত হচ্ছিল তাতে তারা আস্থা রাখতে পারেনি। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল রাতেই ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেছেন, '' হামলায় ডিসি নর্থ গুরুতর আহত হয়েছেন। এখানে ভুল প্রচারের জন্য এরকম হয়েছে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
দাঙ্গারোধী পুলিশ
ভাঙচুর শুরুর পর দাঙ্গারোধী পুলিশ নামানো হয়। তারা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। তারা দুষ্কৃতীদের তাড়া করে। দুষ্কৃতীরা ইট-মারতে থাকে। পুলিশ তখন তাদের তাড়া করে। দুষ্কৃতীরা কিছুটা পিছিয়ে যায়। পাশে খালপাড় দিয়ে কিছু দুষ্কৃতী পালায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রশ্ন অনেক
প্রথমে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যা, তারপর এই তাণ্ডবের পর অনেক প্রশ্ন উঠছে? কলকাতার একটি প্রমুখ সরকারি হাসপাতালে কী করে এই অবস্থা হতে পারে? ধর্ষণ ও হত্যার পর দুষ্কৃতীদের এতটা সাহস হয় কী করে? কারা এর পিছনে আছে? পরপর দুইটি ঘটনা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্নও তুলে দিয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রতিবাদীর কান্না
এই তাণ্ডবের পর বিক্ষোভরত পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তাররা রীতিমতো বিচলিত হয়ে পড়েছেন। এক জুনিয়র ডাক্তার তো চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। যে কাণ্ড হয়েছে, তারপর এই প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক।
ছবি: Subrata Goswami/DW
12 ছবি1 | 12
ঘটনার পর কলকাতা পুলিশ জানায়, দৃর্বৃত্তরা সংখ্যায় অনেক ছিল। পুলিশ তাই তাদের আটকাতে পারেনি। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ওই দিনের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পুলিশের আচরণ এবং দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। প্রধান বিচারপতি সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, যখন ওই ঘটনা ঘটছে, পুলিশ তখন কী করছিল? বস্তুত, এর পরেই তিন অফিসারকে সাসপেন্ড করার কথা জানানো হয়।
এদিকে ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আরজি করের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কলকাতা পুলিশও ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছে। এখনো পর্যন্ত ওই ঘটনায় ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তারপরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, পুলিশ কেন ওই দিন দুর্বৃত্তদের আগেই আটকে দেয়নি।