1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অপরাধভারত

আরজি কর মামলায় হাইকোর্টে ধাক্কা খেল পশ্চিমবঙ্গ সরকার

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরজি কর মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চেয়ে হাইকোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য৷ ডিভিশন বেঞ্চ এক রায়ে বলেছে, রাজ্যের এই আর্জি জানানোর এক্তিয়ার নেই৷ সিবিআইয়ের আবেদনের ভিত্তিতে মামলা চলবে৷

কলকাতা হাইকোর্ট
আরজি কর মামলায় ধৃত সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ড চাওয়ার অধিকার রাজ্য সরকারের নেই বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টছবি: Sudipta Bhowmick/PantherMedia

গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়৷ সেই মামলায় ধৃত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে আজীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছিল শিয়ালদহ আদালত৷ এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানায় রাজ্য

আদালতের রায়

শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস গত ২০ জানুয়ারি কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ চার্জশিটে তাকেই একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করেছিল সিবিআই৷ ফাঁসির দাবি করা হলেও বিচারকের যুক্তি ছিল, এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ নয়৷

এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এর পরেই রাজ্যের তরফে সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়৷ পরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-ও একই আবেদন করে৷ সঙ্গে তারা প্রশ্ন তোলে, এই মামলায় রাজ্য সরকারের মৃত্যুদণ্ড চাওয়ার অধিকার আছে কি?

শুনানিতে বিচারপতি দেবাংশু বসাক বলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যদি আবেদন না করে, একমাত্র সেক্ষেত্রে তদন্তের অগ্রগতির স্বার্থে রাজ্য আপিল করতে পারে৷ গত ২৭ জানুয়ারি সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির আর্জি সংক্রান্ত রাজ্য ও সিবিআইয়ের আবেদন মামলায় শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছিল ডিভিশন বেঞ্চ৷ বৃহস্পতিবার জানানো হয়, শুক্রবার আদালত রায় ঘোষণা করবে৷

রাজ্যের আবেদন এ দিন খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা চাইতে পারবে না রাজ্য সরকার৷ শুরু থেকেই সিবিআই এই মামলার সঙ্গে যুক্ত৷ তারাই তদন্ত চালাচ্ছে৷ তাই এখন সর্বোচ্চ সাজা চাওয়ার এক্তিয়ার নেই রাজ্য সরকারের৷ পরবর্তী সময় কারা ফাঁসির দাবিতে উচ্চতর আদালতে আবেদন জানাতে পারবে, সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছে হাইকোর্ট৷ 

রাজ্যের সওয়াল খারিজ

সঞ্জয়ের ফাঁসি চাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের আইনি বৈধতা নিয়ে জোরালো সওয়াল করেছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত৷ কিন্তু আদালত সেটা গ্রহণ করেনি৷

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল শুনানিতে বলেছিলেন, দিল্লি পুলিশ এস্টাবলিসমেন্ট অ্যাক্টের ৪১৭-র (২) ধারা অনুযায়ী রাজ্যও এক্ষেত্রে আবেদন জানাতে পারে ৷ এই ধরনের অপরাধে যদি আসামি বেকসুর খালাস করার নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে আবেদন করা যায়৷ নিম্ন আদালতে যে শাস্তির নির্দেশ দিয়েছে, সেটা যদি উপযুক্ত মনে না হয়, তা হলেও আর্জি জানানো যেতে পারে৷

এই সওয়াল নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্টের বিচারপতিরা৷ রাজ্যের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ জবাবে সর্বোচ্চ আদালতের একাধিক রায়ের উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট জেনারেল দাবি করেন, ফাঁসির সাজা কার্যকর করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের৷ আইনশৃঙ্খলাও রাজ্যের অধীনে৷ তাই তাদের বক্তব্য অবশ্যই গ্রহণযোগ্য৷ পালটা সিবিআইয়ের তরফে সওয়ালে বলা হয়, নিম্ন আদালতে শুনানির সময় রাজ্য সরকারকে পক্ষ করা হয়নি৷ তাহলে কোন অধিকারে হাইকোর্টে ফাঁসির সাজা চাইতে এসেছে তারা৷

সিবিআইয়ের বক্তব্য, তারাও সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে৷ কিন্তু নিহতের পরিবার, তদন্তকারী সংস্থা কিংবা অপরাধী নিজে হাইকোর্টের দ্বারস্থ না হলে, রাজ্য কি আবেদন করতে পারে? উদাহরণ হিসাবে বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের মামলার প্রসঙ্গও টেনে এনেছিলেন সিবিআই কৌঁসুলি৷ বলেছিলেন, লালুপ্রসাদের মামলার ক্ষেত্রেও রাজ্যের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি৷

এই সওয়াল যুদ্ধের পর শেষমেশ রাজ্যের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে৷ এখন সিবিআইয়ের মামলার ভিত্তিতে শুনানি হবে৷ 

আইনজীবী ফিরদৌস শামীম এ বিষয়ে ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এই মামলায় রাজ্যের কোনো ভূমিকা থাকারই কথা নয়৷ তার কারণ রাজ্যের অধীনস্থ পুলিশ প্রথমেই তদন্ত শুরু করেছিল, সেই তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছিল না বলেই কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার দিয়েছিল৷ তারপর রাজ্যের কি এমন আগ্রহ রয়েছে যে, অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে?''

রাজ্য কি কাউকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়ে অন্য কাউকে বাঁচাতে চাইছে: ফিরদৌস শামীম

This browser does not support the audio element.

এর নেপথ্যে অন্য কারণ আছে বলে দাবি শামীমের৷ বলেন, ‘‘রাজ্য কি কাউকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়ে অন্য কাউকে বাঁচাতে চাইছে? সিবিআই প্রথম চার্জশিটে কলকাতা পুলিশের একজনের নাম দিয়েছিল যিনি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত, তিনি সাক্ষ্য লোপাট করেছেন৷ তিনি টালা থানার ওসি৷ সিবিআই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট দিতে পারেনি, ফলে তিনি ছাড়া পেয়েছেন৷ রাজ্য ঠিকভাবে তদন্ত করতে পারিনি বলেই তো সেই দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে৷ তাহলে রাজ্যের এত আগ্রহ কিসের দোষীকে ফাঁসির শাস্তি দেওয়ার জন্য?''

তৃণমূল নেতৃত্ব বারবার বলেছেন, সঞ্জয় রায়কে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল৷ সেই সঞ্জয়কে সাজা দিয়েছে আদালত৷ কোনো প্রমাণ লোপাট করা হয়নি৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে বিরোধীরা অভিযোগ তুলছে৷ তাদের প্রশ্ন, সিবিআই তদন্ত করেছে, তার ভিত্তিতে আদালত রায় দিয়েছে, এতে রাজ্যের ভূমিকা কোথায়? বরং সব স্তরে রাজ্যের আইনজীবী সর্বোচ্চ শাস্তির কথাই বলেছেন৷

বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো চাইবেই ফাঁসি হোক৷ কারণ তারা প্রথম থেকেই সমস্ত প্রমাণ লোপাট করে দিয়েছে৷ যদি কিছুদিন আর এই ছেলেটা বেঁচে থাকে, তাহলে তার মধ্যে থেকে কোনো প্রমাণ উঠে আসতে পারে কিনা, সেই আতঙ্কে ওরা ফাঁসি চাইছে৷''

সুপ্রিম শুনানি

আরজি কর মামলার জরুরি শুনানির আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা৷ তাদের আর্জি ছিল, ফের তদন্ত হোক৷ এই আর্জির জন্য দ্রুত শুনানির কথা বলেছিলেন তারা৷ কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া দিল না শীর্ষ আদালত৷ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নির্ধারিত দিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ শুনানি হবে৷

শুক্রবার শীর্ষ আদালতে মামলার জরুরি শুনানির জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সিনিয়র আইনজীবী করুণা নন্দী৷ বলেন, হাইকোর্ট মামলা শুনতে পারবে কি না, শুধু এই মর্মে ব্যাখ্যা চায় পরিবার৷ প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, এই আবেদন শোনার জন্য কোনও তাড়াহুড়ো নেই৷ আগামী ১৭ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ