1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরব আমিরাতে প্রাক-ইসলাম যুগের খ্রিস্টান মঠের সন্ধান

৬ নভেম্বর ২০২২

সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলের একটি দ্বীপে প্রাচীন একটি খ্রিস্টান মঠ আবিষ্কৃত হয়েছে৷ কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন৷ এই মঠটি খুব সম্ভবত আরব দেশগুলিতে ইসলাম ধর্ম প্রসারের আগে নির্মিত হয়েছিল৷

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংস্কৃতি মন্ত্রক এই খননকাজে অর্থায়ন করেছে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংস্কৃতি মন্ত্রক এই খননকাজে অর্থায়ন করেছেছবি: Kamran Jebreili/AP Photo/picture alliance

সিনিয়াহ দ্বীপের মঠটি পারস্য উপসাগরের তীরে প্রাথমিক খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে নতুন দিশা দেখাল৷ উম আল-কুওয়াইনের শেখডমের অংশ সিনিয়াহ৷ আমিরাতে পাওয়া দ্বিতীয় মঠ এটি৷ প্রায় এক হাজার ৪০০ বছরের মঠটি যখন তৈরি হয়, তখন মরুভূমির বিস্তার ঘটেনি৷ এখনকার মতো সমৃদ্ধ তেল শিল্পের সূচনাও হয়নি৷ আবুধাবি এবং দুবাইয়ের আকাশছোঁয়া অট্টালিকা তখন কল্পনার বাইরে ছিলো৷

সময়ের ইতিহাসের কাছে হারিয়ে গিয়েছে দুটি মঠ৷ পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন, খ্রিস্টানরা ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্ম নেন৷ ইসলাম পরবর্তীতে অনেক বেশি প্রচলিত হয়৷

আজ খ্রিস্টানরা বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংখ্যালঘু৷ এরই মাঝে পোপ ফ্রান্সিস বৃহস্পতিবার মুসলিম নেতাদের সঙ্গে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রচারের জন্য নিকটবর্তী বাহরাইনে গিয়েছেন৷

সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের সহযোগী অধ্যাপক টিমোথি পাওয়ার এই মঠ আবিষ্কারের কাজে যুক্ত৷ তার কথায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত ‘একটি জাতির গলিত পাত্র'৷

তার কথায়, ‘‘হাজার বছর আগে এখানে অসাধারণ কিছু ঘটেছিল৷ সেই কথা জানা প্রয়োজন৷''

সিনিয়াহ দ্বীপের মঠটি পারস্য উপসাগরের তীরে প্রাথমিক খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে নতুন দিশা দেখাল৷ছবি: Kamran Jebreili/AP Photo/picture alliance

মঠটি সিনিয়াহ দ্বীপে অবস্থিত৷ এটি উম্ম আল-কুওয়াইনের খোর আল-বেইদা জলাভূমিকে রক্ষা করে৷ পারস্য উপসাগরের উপকূল বরাবর দুবাই থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) উত্তর-পূর্বের আমিরাত দ্বীপ এটি৷

এর নামের অর্থ হল ‘ফ্ল্যাশিং লাইট', সম্ভবত তপ্ত সূর্যের প্রভাবের কারণ এই নাম৷ বালির স্তূপের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়ে মরুভূমিতে৷ দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মঠটি খুঁজে পেয়েছেন৷

৫৩৪ এবং ৬৫৬ সালের মধ্যে মঠের ভিত্তিতারিখে নমুনার কার্বন ডেটিং করা হয়েছে৷ ইসলামের নবী মোহাম্মদ (সা:) জন্মগ্রহণ করেন ৫৭০ সালে৷ বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা জয় করার পর ৬৩২ সালে মৃত্যু হয় তার৷

উপর থেকে দেখা গেলে বোঝা যাবে, সিনিয়াহ দ্বীপে খ্রিস্টান উপাসকরা চার তলার মঠের একটি একক ঘরের গির্জার মধ্যে প্রার্থনা করতেন৷ ভিতরের কক্ষগুলিতে ব্যাপটিজমাল হরফ রয়েছে৷ রুটি বেক করার জন্য একটি চুলা বা গোষ্ঠীবদ্ধ রীতিপালনের জন্য ওয়েফার রয়েছে৷ একটি বেদিও ছিল সেখানে৷ গির্জার মূল অংশে ওয়াইনের জন্য একটি ইনস্টলেশনও ছিল৷

মঠের পাশে চারটি ঘরের দ্বিতীয় ভবন রয়েছে৷ সম্ভবত চারপাশে মঠের উঠান ছিল৷ অনুমান করা হচ্ছে, গির্জা বা মঠের প্রথম বিশপের বাড়ি ছিল এটি৷

বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আমিরাতের সংস্কৃতি ও যুব মন্ত্রী নওরা বিনত মোহাম্মদ আল-কাবি এবং উম্ম আল-কুওয়াইনের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান, আমিরাতের শাসকের ছেলে শেখ মজিদ বিন সৌদ আল মুল্লা এটি পরিদর্শন করেন৷

দ্বীপটি শাসক পরিবারের সম্পত্তির অংশ হিসেবে রয়ে গিয়েছে৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশিরভাগ অংশ দ্রুত বিকশিত হয়েছে৷ তাই এই জায়গাগুলি দ্রুত আবিষ্কার করে সংরক্ষণের চেষ্টা হচ্ছে৷

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংস্কৃতি মন্ত্রক এই খননকাজে অর্থায়ন করেছে৷ খননের কাজ এখনো চলছে৷ প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করেন, গির্জা থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার (গজ) দূরে, ভবনগুলি প্রাক-ইসলামি গ্রামের অংশ ছিল৷

ইতিহাসের নিদর্শনস্থল পরিদর্শন চলছেছবি: Kamran Jebreili/AP Photo/picture alliance

দ্বীপের অন্য অংশে কাছাকাছি একটি গ্রামও রয়েছে, যেটিকে ব্রিটিশরা ১৮২০ সালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল৷ এই অঞ্চলটি ট্রুশিয়াল স্টেটস নামে পরিচিত ছিল৷ এটিকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সূচনা বলা যায়৷ সেই গ্রামের ধ্বংসলীলা মূল ভূখণ্ডে উম আল-কুওয়াইনের আধুনিক কাঠামো তৈরি করেছে৷

ইতিহাসবিদরা বলেছেন, শুরুর দিকের গির্জা এবং খ্রিস্টান মঠগুলি পারস্য উপসাগর বরাবর বর্তমান ওমানের উপকূল এবং ভারত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল৷ প্রত্নতাত্ত্বিকরা বাহরাইন, ইরাক, ইরান, কুয়েত এবং সৌদি আরবে অনুরূপ গির্জা এবং মঠ খুঁজে পেয়েছেন৷

নয়ের দশকের গোড়ার দিকে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম খ্রিস্টান মঠটি স্যার বানি ইয়াস দ্বীপে আবিষ্কার করেন৷ এটি আজ সৌদি সীমান্তের কাছে আবু ধাবির উপকূলে একটি প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং বিলাসবহুল হোটেলের জন্য বিখ্যাত৷ উম আল-কুওয়াইনে আবিষ্কৃত মঠের সময়কালেই সেটি তৈরি হয়েছিল বলে ধারণা৷

উম আল-কুওয়াইনের খোর আল-বেইদা জলাভূমির প্রাথমিক জীবনের প্রমাণটি নিওলিথিক যুগের৷ পাওয়ার বলেন, অন্তত ১০ হাজার বছর ধরে এই এলাকায় মানুষের বসবাস ছিল৷

জলাভূমির কাছাকাছি এলাকাটি আমিরাতের বারাকুডা বিচ রিসোর্টে কম দামের মদের দোকানের জন্য বেশি পরিচিত৷ সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, কর্তৃপক্ষ ‘মৃত্যুর বণিক' নামে পরিচিত একজন রাশিয়ান বন্দুকবাজের সঙ্গে যুক্ত একটি সোভিয়েত-যুগের কার্গো প্লেন ধ্বংস করতে বাধ্য হয়েছে৷ কারণ এটি ৬৭৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে রিয়েল এস্টেট উন্নয়নের জন্য সিনিয়াহ দ্বীপে একটি সেতু তৈরি করছে৷

পাওয়ার বলেন, উন্নয়ন প্রত্নতাত্ত্বিক কাজকে উত্সাহ দেয়ায় মঠটি আবিষ্কার করা গিয়েছে৷ এলাকাটিকে ঘিরে ফেলে সুরক্ষিত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি৷ তার কথায়, অতীতের কোন রহস্যগুলি দ্বীপের বালির পাতলা স্তরের নীচে লুকিয়ে রয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷

তার কথায়, ‘‘এটি সত্যিই একটি আকর্ষণীয় আবিষ্কার, কারণ এটি গুপ্ত এক ইতিহাস৷ এটির কথা ব্যাপক অর্থে সবাই জানেন না৷''

আরকেসি/জেডএইচ (এপি)

পম্পেইতে খনন করে মধ্যবিত্তের ঘর পাওয়া গেল

00:47

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ