আরব দেশগুলো কাতারে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেওয়ার যে দাবি জানিয়েছিল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ এই দাবি মেনে নেয়া কাতারের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানার সামিল বলে মন্তব্য করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Pool Presidential Press Service
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তান্বুলে রবিবার ঈদের নামাজ শেষে এর্দোয়ান বলেন, ‘‘আরব দেশগুলো সেনা ঘাঁটি প্রসঙ্গে যে দাবি জানিয়েছে, তা অসম্মানজনক৷ তুরস্ক নিজেদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার চুক্তির ব্যাপারে কখনোই অন্যের অনুমতি নিয়ে কাজ করে না৷'' ২০১৪ সালে কাতারে তুরস্কের সেনা ঘাঁটি স্থাপনের ব্যাপারে প্রস্তাব পাস হয় আংকারার পার্লামেন্টে৷ এর্দোয়ান বলেছেন, ‘‘কাতারের কাছে আরব দেশগুলোযে ১৩টি দাবি জানিয়েছে তা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী৷''
তথাকথিত ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে ‘মদদ দিচ্ছে'– এই অভিযোগ তুলে গত ৫ জুন প্রতিবেশী সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন ও মিশর কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়৷ সেইসঙ্গে কাতারের সব নাগরিককে দেশে ফেরার নির্দেশও দেওয়া হয়৷
২৩ শে জুন সম্পর্ক ছিন্ন করা পাঁচ আরব দেশ কাতারের উপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে ১৩টি দাবির একটি তালিকা দোহায় পাঠায়৷ দাবি মেনে নেওয়ার জন্য কাতারকে ১০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়৷ দাবির অন্যতম হলো আল-জাজিরা চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া, ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করা এবং কাতারে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেওয়া৷
কাতারের সমর্থনে এর্দোয়ান আরও বলেন, ‘‘এই ১৩ দাবির বিরুদ্ধে কাতারের আচরণকে সমর্থন এবং প্রশংসা করছি আমরা৷ কেননা, আপনি একটি দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত করতে পারেন না৷'' যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেক্স টিলারসন সংকট সমাধানে আরব দেশগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস সন্ত্রাসবাদ দমনে আরব দেশগুলো একজোট হয়ে কাজ করবে৷''
সৌদি ক্ষমতাকেন্দ্রে তারুণ্য
সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বাদশাহ মহম্মদ বিন সালমান ‘এমবিএস’ নামেও পরিচিত৷ গত কয়েক বছরে ক্ষমতাকেন্দ্রে তাঁর উত্থান সবার নজর কেড়েছে৷ এই তরুণ নেতা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানা আছে?
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাদশাহর আস্থাভাজন
অশীতিপর বাবা বাদশাহ সালমান কার্যত দেশের ক্ষমতা প্রিয় ছেলের হাতেই তুলে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আরামকো ও দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন৷ উপ প্রধানমন্ত্রী পদও তাঁর দখলে ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saudi Press Agency
ঝুঁকি নিতে ভয় পান না
প্রচণ্ড পরিশ্রমী বলে পরিচিত মহম্মদ বিন সালমান সৌদি শাসকগোষ্ঠীর এতকালের ধীরস্থির ভাবমূর্তি ভেঙে দিয়েছেন৷ অর্থনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি এতদিনের নানা প্রথা ভেঙে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন৷ তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে দেশে এমন নেতারই প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Balkis Press
পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন
এতকালের সংযম ভেঙে ফেলে সৌদি আরব গোটা অঞ্চলে নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ইরানের প্রতি বৈরি মনোভাব, ইয়েমেনে সেনা অভিযান থেকে শুরু করে কাতারকে একঘরে করে ফেলার সিদ্ধান্তের পেছনেও মহম্মদ বিন সুলতানের স্বাক্ষর স্পষ্ট৷ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার স্থপতিও তিনি৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
রাজপরিবারে উত্থান
সৌদি রাজপরিবারের জটিল ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে বাদশাহর ঠিক পরে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর মতো অসাধ্যসাধন করেছেন ‘এমবিএস’৷ শুধু তাই নয়, এতকাল মনোনীত ‘ক্রাউন প্রিন্স’ মহম্মদ বিন নায়েফ (বামে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও উপাধি খুইয়েও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Reuters/Saudi Press Agency
ব্যতিক্রমী জীবন
সৌদি রাজপরিবারের সন্তানরা সাধারনত বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যান৷ মহম্মদ বিন সালমান সেই পথে না গিয়ে দেশে থেকেই আইন নিয়ে পড়েছেন এবং বাবার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন৷ বাদশাহ সালমান যখন নিজে ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন, তখনও তিনি বাবার রাজসভার দায়িত্বে ছিলেন৷
ছবি: Getty Images
পেট্রোলিয়ামের উপর নির্ভরতা
সৌদি অর্থনীতি এতকাল তার বিশাল পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডারের উপর নির্ভর করে ছিল৷ মহম্মদ বিন সালমান অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ২০৩০ সালের মধ্যে সেই পরিস্থিতি বদলানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ ভরতুকিসহ অনেক সুযোগসুবিধা বন্ধ করে তিনি বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Ali Jarekji
ধর্মীয় অনুশাসন
সৌদি আরবের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এখনো কোনো বড় সংঘাতে যাননি মহম্মদ বিন সালমান৷ তবে দেশের বিশাল যুবসমাজের কথা ভেবে তিনি সংগীতের জলসা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন৷ সেইসঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের তত্ত্বাবধায়ক পুলিশের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমিয়েছেন৷