২০১০ সালের ১৭ই জানুয়ারি টিউনিশিয়ার সিদি বুজিদ শহরে মোহামেদ বুয়াজিজি নামের এক ফেরিওলা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান৷ ২০১১ সালের ১৪ই জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট বেন আলিকে সরে দাঁড়াতে হয়৷
বিজ্ঞাপন
WorldLink: Rapping against IS
বেন আলি ২৩ বছর ধরে টিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷ তাঁকে যে প্রতিবাদের জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তার ছোঁয়া লাগে একের পর এক আরব দেশে, সব মিলিয়ে যার নাম দাঁড়ায় আরব বসন্ত৷
বসন্ত মানে আশা, আকাঙ্খা, উদ্দীপনা৷ কিন্তু আরব বসন্ত নিয়ে সাংবাদিক-পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকরা আজ যখন লেখেন, তখন তারা যেন খরগ্রীষ্ম কিংবা শীতেরই ছোঁয়াচ পান৷ কেননা আরব বসন্ত আশাপূরণের পরিবর্তে আশাভঙ্গের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
‘দ্য ইকনমিস্ট' পত্রিকায় প্রকাশিত একটি মানচিত্র এখন বার বার রি-টুইট হচ্ছে, আয়ান ব্রেমার যেমন করেছেন৷ মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে আরব বসন্তের পাঁচ বছর পরে আরব দুনিয়ার পরিস্থিতি: একটি দেশ – টিউনিশিয়ায় – গণতন্ত্র বজায় আছে; নয়ত পাঁচটি দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম ও তিনটি দেশ বস্তুত ‘ফেইল্ড স্টেট' বা ব্যর্থ রাষ্ট্র, যারা রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম৷ অর্থাৎ আরব বসন্তের সামগ্রিক খতিয়ান খুব গৌরবজনক নয়৷
মিশরে হোসনি মুবারককে বিদায় করে বিশেষ লাভ হয়নি৷ আরেক সামরিক প্রধান আবদেল ফাতাহ আল-সিসি দেশের প্রথম বেসামরিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুর্সিকে কারাবন্দি করে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া হাতে দমন অভিযান চালাচ্ছেন৷
লিবিয়ায় ন্যাটোর সাহায্যপুষ্ট সশস্ত্র বিপ্লবে মুয়ম্মর আল-গদ্দাফিকে বিতাড়ন ও হত্যা করা সম্ভব হলেও, তারপর শুধুমাত্র সংঘাত ও রাজনৈতিক অরাজকতা চলেছে৷ ইয়েমেনেও দীর্ঘকালের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ গণপ্রতিবাদের মুখে সরে দাঁড়ান৷ তাঁর উত্তরসূরি আবেদরাব্বো মনসুর হাদিকে হুথি বিদ্রোহীদের ভয়ে রাজধানী ছেড়ে পালাতে হয়৷ আপাতত সৌদি আরব ও তার সহযোগীরা ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে৷
আরব বসন্তের ব্যর্থতার একটি দিক হলো জনগণের আশা পূর্ণ না করতে পারা৷ অপরদিকে সিরিয়া বা ইরাকের দিকে যদি তাকানো যায়, তাহলে আরব বসন্তের আর একটি বিভীষণ ফলশ্রুতি চোখে পড়বে, যার নাম হলো ইসলামি জঙ্গিবাদ, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট যার সবচেয়ে বড় প্রতিভু৷ ব্যঙ্গচিত্র হিসেবে এই বিকাশধারাটি দেখতে পাওয়া যাবে ক্রিস্টিন ডেভিডসনের টুইট করা একটি কার্টুনে৷
বস্তুত আরব বিশ্বে যা কিছু ঘটছে, তার সঙ্গে আরব বসন্তের কোনো না কোনো সংযোগ খুঁজে পাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা৷ যেমন ‘কোয়ার্ৎস' টুইট করেছেন: ‘ইরান-সৌদি আরব সংকট আরব বসন্তের রক্তাক্ত উত্তরাধিকারের প্রমাণ৷'
আরব বসন্তের পাঁচ বছর পরে বাকি বিশ্বের মনোভাব কী হওয়া উচিত, তার একটা আভাস পাওয়া যাবে ডেভিড জোন্স-এর টুইটে: ‘আরব বসন্ত যে সুশাসন আনতে ব্যর্থ হয়েছে, সেটা বিয়োগান্ত৷ কিন্তু আমাদের আরব বসন্তের আদর্শগুলিকে সমর্থন করে যেতে হবে৷'
এসি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)
বন্ধুরা, আরব বসন্তের ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় দিক কোনটা? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
আরব বসন্তের পাঁচ বছর পর কোন দেশের কী অবস্থা
টিউনিশিয়ায় শুরু৷ এরপর সেটা ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দেশে৷ কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল সেই লক্ষ্য কি পূরণ হয়েছে?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Khalil Hamra
নিজ গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ
২০১০ সালের ১৭ই জানুয়ারি টিউনিশিয়ার সিদি বুজিদ শহরে মোহামেদ বুয়াজিজি নামের এক ফেরিওয়ালা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হলে ২০১১ সালের ১৪ই জানুয়ারি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বেন আলিকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল৷ আরব বসন্তের শুরু তখন থেকেই৷
ছবি: AP
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে টিউনিশিয়ার অনেক সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে নিরাপত্তা সমস্যা৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে সেখানকার একটি পর্যটন এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা হলে ৩৮ জন নিহত হন৷ এর বেশিরভাগই ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Bounhar
মিশর
টিউনিশিয়ার ঢেউয়ের প্রথম আঁচড় লাগে মিশরে৷ সেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ২০১১ সালের ২৫শে জানুয়ারি৷ এর কদিন পর ১১ই ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা হোসনি মুবারক৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Abed
বর্তমান পরিস্থিতি
মিশরে হোসনি মুবারককে বিদায় করে বিশেষ লাভ হয়নি৷ আরেক সামরিক প্রধান আবদেল ফাতাহ আল-সিসি দেশের প্রথম বেসামরিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুর্সিকে কারাবন্দি করে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া হাতে দমন অভিযান চালাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
লিবিয়া
১৯৬৯ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত লিবিয়া শাসন করেন মুয়ম্মর গাদ্দাফি৷ এরপর আরব বসন্তের ছোঁয়া লিবিয়া স্পর্শ করলে এক পর্যায়ে লিবিয়া জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়৷ যোগ দেয় আন্তর্জাতিক বাহিনী৷ ২০১১ সালের জুন মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে গাদ্দাফিকে অভিযুক্ত করা হয়৷ এর কয়েক মাস পর অক্টোবরের ২০ তারিখ তাঁকে হত্যা করা হয়৷
ছবি: Christophe Simon/AFP/Getty Images
বর্তমান পরিস্থিতি
লিবিয়ার উপর এখন সে দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই৷ ২০১২ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সরকার ক্ষমতায় গেলেও শান্তি ফিরে আসেনি৷ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরক্কো
দেশটিকে রাজতন্ত্র বিদ্যমান৷ ১৯৯৯ সাল থেকে দেশ পরিচালনায় আছেন রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ (ছবি)৷ তবে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খুলে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়৷ বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ এরপর মার্চের ১০ তারিখে সংস্কারের ঘোষণা দেয় রাজতন্ত্র৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Jocard
বর্তমান অবস্থা
গণভোটের মাধ্যমে রাজার কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদকে দেয়া হয়৷ রাজা আর এখন আগের মতো যাঁকে খুশি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে পারেন না৷ এ জন্য তাঁকে সংসদে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দল থেকে একজনকে বেছে নিতে হয়৷