মুম্বই পুলিশ নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর অফিসারদের ফলো করছে বলে অভিযোগ। এনসিবি-র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতার পাল্টা অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খানের গ্রেপ্তারের পরে মুম্বই পুলিশ এবং নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। সোমবার বিষয়টি চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছে। নারকোটিক্স কন্ট্রোল দুই অফিসার সোমবার মুম্বই পুলিশ প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছেন। সূত্র জানাচ্ছে, সেখানে তারা মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বলা হয়েছে, মুম্বই পুলিশ তাদের ফলো বা অনুসরণ করছে।
যত কাণ্ড বলিউডে
বলিউড মানেই চাঞ্চল্যকর ঘটনার স্রোত। বলিউডের অন্দরে লুকিয়ে আছে নানা কেলেঙ্কারি, ঘটনা-দুর্ঘটনা। তার মধ্যে বাছাই করা কিছু ঘটনা নিয়ে এই ছবিঘর।
ছবি: IANS
গুরু দত্তের আত্মহত্যা না কি দুর্ঘটনা
গুরু দত্ত ছিলেন পরিচালক, প্রযোজক, নায়ক। পঞ্চাশ ও যাটের দশকে একের পর এক ক্লাসিক হিন্দি ছবির জনক। ১৯৬৪-র ১০ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। মদের সঙ্গে প্রচুর ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে। তাঁর ছেলের দাবি, দুর্ঘটনা। কিন্তু বলিউডের অধিকাংশ লোকের বিশ্বাস, আত্মহত্যা। পারিবারিক জীবনের দুঃখ, কাজের চাপ, আবেগপ্রবণ মনের কারণেই না কি তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। গুরু দত্ত আগেও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তৃতীয়বারে সফল হন।
ছবি: Guru Dutt Films
সঞ্জয় দত্ত ও মাদক
মাদক নিয়ে এখন তোলপাড় বলিউড। কিন্তু সঞ্জয় দত্ত নিজেই জানিয়েছিলেন তাঁর মাদকাসক্তির কথা। ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকার কনক্লেভে সঞ্জয় দত্ত জানান, কলেজে পড়ার সময় তিনি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। দশ বছর লেগেছিল তাঁর ওই মাদকের নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে। রিহ্যাবে যেতে হয়েছিল। আর বাবা সুনীল দত্ত ছেলের পাশে থেকে তাঁর নেশামুক্তি ঘটিয়েছিলেন।
ছবি: Eros International
সঞ্জয় দত্তের অস্ত্র কেলেঙ্কারি
১৯৯৩ সাল। একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে মুম্বই। সেই বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত আবু সালেম ও রিয়াজ সিদ্দিকির কাছ থেকে অস্ত্র নিয়েছিলেন সঞ্জয়। তাঁকে টাডায় গ্রেফতার করা হয়। মুম্বই বিস্ফোরণেও জড়ানো হয়। সঞ্জয় অস্ত্র নেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, পরিবারের সুরক্ষার জন্য নিয়েছিলেন। মুম্বই বিস্ফোরণের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেও বেআইনি অস্ত্র রাখার দায়ে তাঁর ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।
ছবি: picture alliance/AP Photo
সলমন খান ও কৃষ্ণসার হরিণ
১৯৯৮ সাল। যোধপুরে শুটিং করতে গিয়েছিলেন সলমন খান এবং অন্য তারকারা। তখনই সলমন একটি কৃষ্ণসার হরিণ মারেন বলে অভিযোগ। নিম্ন আদালতে তাঁর পাঁচ বছরের জেল হয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গে থাকা সইফ আলি খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করে দেয় আদালত। সলমন এক সপ্তাহ জেল খেটেছেন। এখন তিনি জামিনে। তাঁর শাস্তির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন জানিয়েছেন।
ছবি: DW/S. Zain
সলমন খান এবং হিট অ্যান্ড রান
চার বছর পর অর্থাৎ ২০০২ সালে সলমন আবার গ্রেফতার হন বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে একজন ফুটপথবাসীকে মারা ও তিনজনকে আহত করার দায়ে। ২০১৫ সালে মুম্বইয়ের সেশন কোর্ট সলমনকে দোষী বলে রায় দেয় ও জানায় তিনি মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁর পাঁচ বছরের জেল হয়। কিন্তু যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ না থাকায় হাইকোর্ট তাঁকে অভিযোগমুক্ত বলে ঘোষণা করে। এখন মামলা সুপ্রিম কোর্টে।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Paranjpe
একের পর এক আত্মহত্যা
সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা বা মৃত্যুরহস্য নিয়ে তোলপাড় বলিউড। কিন্তু শুধু গুরু দত্ত বা সুশান্ত নন, প্রচুর বলিউড তারকা আত্মহত্যা করেছেন। ১৯৯৬-তে সিল্ক স্মিতা, ২০০৫ এ ময়ূরী, ২০০৮-এ কুনাল সিং, ২০১৩-তে জিয়া খান, ২০১৫তে শিখা জোশী, ২০১৬-তে প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২০১৭তে নীতিন কাপুর এবং তারপর ২০২০-তে সুশান্ত সিং রাজপুত। অবশ্য সুশান্তের মৃত্যুরহস্য নিয়ে এখন তদন্ত করছে সিবিআই।
ছবি: picture-alliance/dpa
বলিউড ও মি টু
মি টু মুভমেন্টের আঁচ ভালো করেই লেগেছিল বলিউডে। শুরু হয়েছিল নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে তনুশ্রী দত্তের অভিযোগ দিয়ে। তারপর একের পর এক অভিনেতা মি টু-তে বিদ্ধ হয়েছেন। যেমন অলোক নাথ। টিভি প্রযোজক বিনতা নন্দা অভিযোগ করেন, অলোক নাথ তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। অলোক নাথ অস্বীকার করেন। একাধিক অভিনেত্রীর অভিযোগ, অলোকনাথের হাতে তাঁদের লাঞ্ছিত হয়ে হয়েছে। মি টুতে বিদ্ধ হয়েছেন কৈলাশ খের, সলমন খান, সাজিদ খান, অণু মালিকরাও।
ছবি: Getty Images/AFP
মাদক ও দীপিকা
সুশান্তের মৃত্যুর পর তদন্ত করতে নেমে মাদক রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীকে। কিন্তু সেখানেই মাদককাণ্ড শেষ হয়নি। সম্প্রতি দীপিকা পাড়ুকোন সহ চার নায়িকাকে জেরা করে নারকোটিকস ব্যুরোর আধিকারিকরা। পাঁচ ঘণ্টা জেরার পর দীপিকার ফোন সিজ করা হয়েছে। দীপিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি পার্টির জন্য মাদক জোগাড় করেছিলেন।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Jaiswal
সারা আলি খানকেও জেরা
শুধু দীপিকা পাড়ুকোন নয় সারা আলি খান এবং শ্রদ্ধা কাপুরকেও জেরা করেছে নারকোটিকস ব্যুরোর আধিকারিকরা। সারার বিরুদ্ধেও মাদককাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তাঁর মোবাইলও নিয়ে নিয়েছে নারকোটিকস ব্যুরো। মাদককাণ্ডে এই নায়িকাদের যোগাযোগ নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন দেখা দিয়েছে বলিউডে।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Jaiswal
9 ছবি1 | 9
আরিয়ান-কাণ্ডের প্রধান অফিসার এনসিবি-র জোনাল ডিরেক্টর সমীর ওয়াংখেড়ে। মুম্বই পুলিশের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন, গত কয়েকদিন ধরে তাকে মুম্বই পুলিশের দুই কনস্টেবল ফলো করছে। প্রতিদিন কাজের শেষে একটি গোরস্থানে মায়ের কবর দেখতে যান সমীর। অভিযোগ, সেখানেই তিনি খেয়াল করেন, দুই কনস্টেবল তাকে ফলো করছেন। শুধু তা-ই নয়, মুম্বই পুলিশ ওই গোরস্থানের সিসিটিভি ফুটেজও নিয়েছে বলে তার অভিযোগ। যদিও সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
এনসিবি-র আরেক অফিসার মুথা জৈনও একই অভিযোগ করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, সমস্ত অভিযোগ লিখিত আকারে পুলিশের কাছে দেওয়া আছে। আলাদা করে এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য চান না।
এদিকে আরিয়ান-কাণ্ডে এনসিবি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা নবাব মালিকের। তার দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরিয়ানকে। তার অভিযোগ, ওইদিন অবৈধভাবে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল এনসিবি। শুধু তা-ই নয়, কয়েকজনকে সেদিন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
এর আগেও কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে মহারাষ্ট্র প্রশাসনের বিতর্ক প্রকাশ্যে এসেছে। এবার আরিয়ান-কাণ্ডেও সেই সংঘাত প্রকাশ্যে চলে এলো।