গভীর শ্রদ্ধায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরিয়েল শারনকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে ইসরায়েল৷ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে মিত্র দেশগুলোর নেত্রীবৃন্দও গিয়েছেন সেখানে৷ সোমবারই তাঁকে সমাধিস্থ করার কথা৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার ৮৫ বছর বয়সে মারা যান ইসরায়েলের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রী আরিয়েল শারন৷ নিজের দেশের হয়ে প্রতিটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তিনি৷ যু্দ্ধের সাফল্য তাঁকে এনে দিয়েছে বীরের মর্যাদা৷ সেই মর্যাদা অবশ্য শুধু ইসরায়েলবাসী এবং ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলোর কাছে৷ ফিলিস্তিন এবং তাদের মিত্রদের কাছে শারন চিরকালই ছিলেন সমালোচিত এবং নিন্দিত৷ ফিলিস্তিনীদের চোখে আরিয়েল শারন শুধু খলনায়কই নন, তিনি একজন ‘যুদ্ধাপরাধী'-ও৷
জীবদ্দশায় শুধু আরব দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলের জয়েই ভূমিকা রাখেননি, ফিলিস্তিনের ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলে ইহুদিদের আবাস গড়ে তোলার কাজেও রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা৷ তবে জীবন সায়াহ্নে গাজা উপত্যকা থেকে সৈন্য এবং ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারী প্রত্যাহারেও ভূমিকা রেখেছেন শারন৷ বিশ্বের অনেক দেশ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের বিরোধ নিষ্পত্তিতে এই প্রয়াসের জন্যই স্মারণ করবে তাঁকে৷
জার্মানিতে শেষ ঠিকানা- হৃদয়ের বাগান
কবরস্থান শুনলেই কেমন যেন ভয়ে আঁতকে উঠি সবাই৷ তবে জার্মানির কোনো কবরস্থানে ঘুরে এলে ভয় খানিকটা কেটে যায় বৈকি! প্রতিটি কবর সুন্দর করে বাঁধানো এবং সুন্দর করে সাজানো এক একটি বাগান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে
কবিগুরু যেমন লিখেছিলেন, ‘‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানুষের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’’– এ কথা যে আমাদের সবারই৷ কিন্তু উপায় নেই, এক সময় এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে আমাদের সবাইকেই চলে যেতে হবে৷ তবে কার শেষ ঠিকানা কোথায়, কেউ কি জানে?
ছবি: DW/A. Termeche
কবরস্থান মানেই ভয় নয়
কবরস্থান শুনলেই কেমন যেন ভয়ে আঁতকে উঠি সবাই৷ তবে জার্মানির কোনো কবরস্থানে ঘুরে এলে ভয় খানিকটা কেটে যায় বৈকি! প্রতিটি কবর সুন্দর করে বাঁধানো এবং সুন্দর করে সাজানো এক একটি বাগান৷
ছবি: DW
দেখতে ঠিক যেন পার্কের মতো
বিশাল এলাকা জুড়ে এক একটি কবরস্থান, ঢোকার সময় প্রথমেই মনে হবে চারিদিকে সবুজে ঘেরা কোনো পার্কে ঢুকছি৷ খানিকটা ভেতরে গেলে মনে হয় বিশাল পার্কে ছোট ছোট অনেক বাগান৷ একটি কবরস্থানে বড়দের এবং বাচ্চাদের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Termeche
নাম ফলক
প্রতিটি কবরেই পাশেই নানা রংয়ের পাথরের ওপর প্রয়াতদের নাম, জন্ম এবং মৃত্যুর তারিখ লেখা থাকে৷ অনেক সময় দেখা যায় কোনো কবরে একটি নামফলক৷ শায়িত আছেন একজনই কিন্তু জায়গাটি বেশ বড় করে বাঁধানো৷ অর্থাৎ সেখানে স্বামী বা স্ত্রীর জন্য জায়গা রাখা হয়েছে৷ তবে যিনি বেঁচে আছেন, তিনি তার পরিচর্যা করেন৷
ছবি: DW/A. Termeche
ফুলের বাগান
কবরস্থানে যে কেউ ঢুকে পুরোটাই ঘুরে বেড়াতে পারে৷ এতে কোনো বাধানিষেধ নেই৷ ছোট ছোট জায়গা ভাগ করা আছে, তবে ভেতর দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে৷ অনেকে শুধু হাঁটাহাঁটি করার জন্যও কবরস্থানে যায়, অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গা৷ গ্রীষ্মে কোনো কবরস্থানকে ফুলের বাগান বললে ভুল হবেনা৷ প্রায় প্রতিটি কবরস্থানের কাছেই একটি করে ফুলের দোকান থাকে৷
ছবি: DW
পরিবার বা প্রিয়জনদের পরিচর্যা
জার্মানরা অনেকেই নিয়মিত কবরস্থানে যান তাদের প্রিয়জনের সমাধিতে ফুল দিতে৷ জ্বালিয়ে রাখেন মোমবাতি আর ছোট্ট বাগানটুকু করেন পরিষ্কার৷ তবে পুরো কবরস্থান পরিচর্যার জন্য থাকে বেতনভোগী আলাদা লোক৷
ছবি: Fotolia/forelle66
মুসলমানদের কবরস্থান
জার্মানিতে প্রথম মুসলমানদের কবরস্থান তৈরি করা হবে, আর তার আইন পাসও হয়ে গেছে৷ তৈরি হবে ভুপার্টাল শহরে৷ একই জায়গায় খ্রিষ্টান, ইহুদি এবং মুসলিম – এই তিন ধর্মের মানুষকে কবর দেওয়া হবে এবং একই গেট দিয়ে তিন কবরস্থানেই যাওয়া যাবে৷
ছবি: DW/C. Ignatzi
তাজা ফুল
জার্মানিতে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশিদিন বাঁচেন৷ আর তা কোনো কবরস্থানে গেলেও কারো দৃষ্টি এড়ায় না৷ অনেক বৃদ্ধাকেই দেখা যায় প্রতি সপ্তাহেই স্বামীর কবরে তাজা ফুল দিতে৷ শীত গ্রীষ্ম কখনো তার ব্যতিক্রম হয়না৷ এতো যত্ন করে কবরস্থানে ফুল দিতে দেখলে কবি জসীমউদ্দিনের ... ‘‘এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দু’নয়নের জলে’’-র কথাই মনে করিয়ে দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
আরিয়েল শারন রাজনীতিতে যোগ দেন ১৯৭৩ সালে৷ তবে প্রধানমন্ত্রী হতে দীর্ধদিন অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে তাঁকে৷ ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হন শারন৷ ২০০৫ সালে ডানপন্থী লিকুদ পার্টি ছেড়ে গড়ে তোলেন অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থী দল কাদিমা পার্টি৷ ধারণা করা হচ্ছিল, আবার নির্বাচিত হয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন৷ কিন্তু ২০০৬ সালে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি৷ কোমায় চলে যান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে৷ জীবনের শেষ আটটি বছর এভাবেই বেঁচে ছিলেন আরিয়েল শারন৷
সোমবার ইসরায়েলের সংসদ ভবনের সামনে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় আরিয়েল শারনকে৷ ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ দেশটির অনেক শীর্ষনেতা এবং বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতাও উপস্থিত ছিলেন৷ শিমন পেরেস এবং নেতানিয়াহু ইহুদিদের জন্য স্বাধীন দেশ গড়া এবং দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় অসাধারণ অবদানের জন্য সদ্য প্রয়াত নেতার প্রশংসা করেন৷ আরিয়েল শারনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট পেরেস বলেন, ‘‘দেশের মানুষের সেবা, দেশের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার কাজ অক্লান্তভাবে করে গেছ তুমি৷ এ দেশের ইতিহাস তোমাকে চিরকাল উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখবে৷'' যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ারও ইসরায়েলের স্বার্থের প্রশ্নে কোনোদিন আপোষ না করায় শারনের প্রশংসা করেছেন৷
দীর্ঘ আট বছর কোমায় থাকার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা আরিয়েল শারনকে সোমবার তাঁর পারিবারিক খামার বাড়িতে সমাধিস্থ করার কথা৷