জার্মানিতে ইসলাম বিরোধী পেগিডা আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ড্রেসডেনে আবার সমাবেশ, আবার গালিগালাজ৷ উদ্বাস্তু সমস্যার পাশাপাশি এই মনোভাবটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াছে, বলে মনে করেন ক্রিস্টফ স্ট্রাক৷
বিজ্ঞাপন
পেগিডা শব্দটি যে সব জার্মান কথার সমষ্টি, তা বোঝায়: প্রতীচ্যের ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী ইউরোপীয়দের জোট৷ পেগিডার প্রথম বার্ষিকীতে ড্রেসডেনের থিয়াটারপ্লাৎস চত্বরে সম্ভবত পনেরো থেকে বিশ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ পেগিডা'র ফ্রন্ট ম্যান লুৎস বাখমান ইউরোপের রাইট উইং পপুলিস্ট, অর্থাৎ কট্টর দক্ষিণপন্থিদের ড্রেসডেনে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
আনুষ্ঠানিকভাবে সভা শুরু হবার আগেই শোনা যায় ‘‘ম্যার্কেলকে বিদায় করো!'' ধ্বনি৷ পেগিডা সমাবেশের ‘স্টার গেস্ট' এবার ছিলেন এক তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান, আকিফ পিরিঞ্চি৷ জাতিতে তুর্কি জার্মান নাগরিক আকিফ পিরিঞ্চি জার্মান রাজনীতিকদের বললেন ‘‘স্বজাতির বিরুদ্ধে কর্মকর্তা'' - তা'ও আবার ‘গাওলাইটার', অর্থাৎ নাৎসি আমলের কর্মকর্তা৷ পিরিঞ্চির কাছে শরণার্থীরা হলেন ‘‘অনুপ্রবেশকারী''৷ নাৎসি আমলের বন্দিশিবির যে আর নেই, সেজন্য দুঃখপ্রকাশ করা থেকে শুরু করে বার্লিন প্রাচীরে গুলিচালনা নিয়ে উল্লাস - পেগিডা'র মাননীয় অতিথি এ'দিন কিছুই বাদ দেননি৷ ওদিকে বাখমান বলেছেন, তিনি পিরিঞ্চির ব্যাপারে গর্বিত৷
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
6 ছবি1 | 6
ড্রেসডেনের সুবিখ্যাত নাট্যশালা চত্বরে সোমবার সন্ধ্যায় যারা দাঁড়িয়েছিলেন, তারা সকলেই কিন্তু চরম দক্ষিণপন্থি ছিলেন না৷ অনেকেই ছিলেন সাধারণ নাগরিক, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে শুরু করে সন্তানসহ তরুণ দম্পতি৷ পিরিঞ্চির বিষোদ্গারণে কেউই আপত্তি করেননি৷ এরা ঠিক সেই জার্মানিই দেখতে চান - যা আমার জার্মানি নয়৷
কাজেই রাজনীতি ও আইন বিভাগকে সক্রিয় হতে হবে৷ সোমবারের পেগিডা সমাবেশের আগেই ফেডারাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেইজিয়ার পেগিডা'র অভ্যন্তরে ‘‘কঠোর চরম দক্ষিণপন্থিদের'' কথা বলেছিলেন৷ সেই চরম দক্ষিণপন্থিরা কি এ'ভাবে মঞ্চে আবির্ভূত হতে পারে? শরণার্থী সমস্যার পাশে পেগিডা'র পরিমণ্ডলই একটা অশুভ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷
আরো একটি অশনি সংকেত: সোমবার সন্ধ্যায় পেগিডা সমাবেশে সাংবাদিকদের গালমন্দ করা হয়েছে, এমনকি হাতাহাতিও হয়েছে৷ ডয়চে ভেলে'র এক রিপোর্টারও সেই দাঙ্গায় পড়ে কিছু মারধোর, ঠেলাঠেলি সহ্য করে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন৷