ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশের মুখোমুখি ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভকারীরা৷ ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে মঙ্গলবার ১২টার দিকে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা৷ এরপর তাদের সঙ্গে যোগ দেন প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী, লেখক, কবি, শিল্পী, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও নারী অধিকারকর্মীরা৷

বেলা সোয়া ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ মোড় থেকে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা ঘুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশ তাদের আটকে দেয়৷ এ সময় পুলিশের সাথে মিছিলকারীদের হাতাহাতি হয়৷ পরে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে ছাত্র ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন৷

মঙ্গলবারের বিক্ষোভ থেকে ধর্ষক ও নিপীড়কদের শাস্তির পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের পদত্যাগও দাবি করা হয়৷

‘ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘যে রাষ্ট্র ধর্ষণ পোষে, সেই রাষ্ট্র চাই না’, ‘আমার বোনকে ধর্ষণ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘নিপীড়ক যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’- ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল শাহবাগ ও তার আশেপাশের এলাকা৷

ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য মাহমুদা দীপা বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন৷ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন সঙ্গীরা৷

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও রবিবার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়৷ ঢাকায় এমন এক বিক্ষোভে অংশ নেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর৷ এই সময় তিনি বলেন, ‘‘এই গণধর্ষণের ঘটনা দেশের আইনি ব্যবস্থার মুখোশ খুলে দিচ্ছে৷ আজকে এই আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রের সব বিভাগে দুর্বৃত্তায়ন করেছে৷’’

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী মশাল মিছিল বের করে ছাত্র ফেডারেশন৷

ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সোমবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন৷ মঙ্গলবারও তাদের দেখা গেছে৷

উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় মঙ্গলবার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা৷

উত্তরায় গণজমায়েতে হাতে হাত রেখে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন অনেকে।

আন্দোলনের কারণে উত্তরায় যানজট দেখা দেয়৷

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাবারক হোসেন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ গিয়েছিলেন৷

এক শিক্ষার্থী শিশুসহ ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন৷

দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৩২ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের জরিপ অনুসারে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ধর্ষণ করে সেই কথা স্বীকারও করেন৷

দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ দেশটির প্রতি এক লাখ নারীরর মধ্যে ৯৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷

দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক দেশ লেসোথোয় ২০১৯ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানকার এক লাখ নারীর মধ্যে ৮৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ জন৷

সোয়াজিল্যান্ডে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৭৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩০ জন৷ সেই হিসেবে ২০১৯ সালে এ দেশে ৮৯৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷

দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৭ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ অনেক দেশেই যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতারিবোধী আইন থাকলেও নানান অসঙ্গতিতে তা ঠিকমতো প্রয়োগ হয় না৷

ইউরোপের এই দেশটিতে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৩ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিত হন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও বিশ্বজুড়ে পুরুষরাও প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷

দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ সরিনামের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৪৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়৷ দেশটিতে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করে৷ গত বছর দেশটিতে ২৬২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷

মধ্য অ্যামেরিকার দেশ কোস্টা রিকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩৭ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ গবেষণা বলছে, ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের নারীদের ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি৷

মধ্য অ্যামেরিকার এই দেশটির প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ন৩২ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০২ জন৷ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ডটকম বলছে, অনেক নারী যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে অভিযোগই করেন না৷

ক্যারিবীয় এই দেশটির প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৩১ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার তিনজন৷ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি কলেজ ছাত্রীরাও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকেন৷

১১৮টি দেশের মধ্যে চালানো এই জরিপে ১৪তম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৪০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ ৪২তম অবস্থানে থাকা জার্মানিতে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৯ জনেরও বেশি ধর্ষিত হন৷ আর ভারতের প্রতি লাখ নারীর মধ্যে এক দশমিক ৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷