প্রথমে বোরকা, তারপর বুর্কিনিও নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্স৷ কিন্তু মুসলিম নারীদের এই পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ফল হয়েছে উল্টো৷ বুর্কিনির বিক্রি আরো বেড়েছে!
বিজ্ঞাপন
শুধু মুসলিম নারীরা নয়, এখন অনেক অমুসলিম নারীও কিনতে শুরু করেছেন বুর্কিনি৷ বুর্কিনির ডিজাইনার আহেদা জানেত্তি নিজেই জানিয়েছে কথাটা৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের বিক্রি আরো বাড়ছে৷ ওরা যতই নিষিদ্ধ করুক, যতই বাতিল ঘোষণা করুক, তার মানে তো এই নয় যে সবাই এটা পরা বন্ধ করে দেবে৷'' আহেদা জানান, এখন মোট বিক্রির প্রায় ৪০ শতাংশ বুর্কিনিই উঠছে অমুসলিম নারীদের হাতে৷
২০০৪ সালে শুধু মুসলিম নারীদের কথা ভেবেই সাঁতারের এই বিশেষ পোশাকটির ডিজাইন করেছিলেন লেবানন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানো আহেদা জানেত্তি৷ ‘বুরকা', অর্থাৎ বোরকা এবং স্নানের পোশাক বিকিনি – এই দুয়ের ধারণার সমন্বয়ে তৈরি বলে পোশাকটির নাম ‘বুর্কিনি' দিয়েছিলেন আহেদা৷ ভেবেছিলেন, মুসলিম নারীদের ওপর চোখ-মুখ ঢাকা বোরকা পরায় যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে তা থেকে এই পোশাক রেহাই পাবে৷ আরো ভেবেছিলেন সাধারণ অবস্থায় তো বটেই চাইলে সাঁতারের সময়ও এই পোশাক পরতে পারবেন মুসলিম নারীরা৷
Burkini creator sees increase in sales after French ban
01:01
কিন্তু সম্প্রতি ফ্রান্সে বুর্কিনিও নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফরাসি সরকার বলছে, বোরকা বা নিকাব তো বটেই, এমনকি মুখমণ্ডল ছাড়া শরীরের বাকি সব অংশ ঢেকে রাখার পোশাক বুর্কিনিও সে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে বেমানান৷ তারপর থেকেই চলছে বিতর্ক৷ কেউ কেউ বলছেন, বুর্কিনি নিষিদ্ধ করা একেবারেই ঠিক হয়নি৷ কেউ আবার বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না৷
তবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া সবাই যা-ই বলুন, বাজারে কিন্তু তার খারাপ কোনো প্রভাব পড়েনি৷ বরং বিতর্ক বাজারকে আরো চাঙা করেছে৷ আহেদা জানেত্তি আশা করছেন, সারা বিশ্বে বুর্কিনির বিক্রি আরো বাড়বে৷
এসিবি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)
আপনিও কি একটি বুর্কিনি কিনতে চান? লিখুন নীচের ঘরে৷
যেসব দেশে বোরকা নিষিদ্ধ, যেখানে চলেছে আলোচনা
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷