মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটির খোঁজে এখনও অব্যাহত তল্লাশি অভিযান৷ সোমবার ভারত মহাসাগরে আবারো ভাসমান বস্তুর দেখা পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিমান৷ কিন্তু মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের ধারণা আরোহীদের কেউ বেঁচে নেই৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে সোমবার সকালে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়া জানায়, চীনা ইলিউশিন আইএল-৭৬ বিমানটি ভারত মহাসাগরের বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাসমান বড় একটি বস্তু এবং ছোট ছোট সাদা রঙের কিছু বস্তুর দেখা পেয়েছে, যা এলাকাব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে৷ তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে, চীনা সরকার এখনো নিশ্চিত নয় যে বস্তুগুলো আসলেই নিখোঁজ বিমানের কিনা৷ মঙ্গলবার চীনের চারটি জাহাজ ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছানোর কথা৷
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত অনুসন্ধানী বিমান মার্কিন নৌ-বাহিনীর পি-৮ পোসেইডন চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর, সোমবার সেখানে তল্লাশি শুরু করেছে৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার মেরিটাইম সেফটি অথরিটি বা এএমএসএ একটি মেইলে রয়টার্সকে জানিয়েছে যে, চীনা বিমানটি ৩৩ হাজার ফুট উপর থেকে বস্তুটি লক্ষ্য করার পর তাদের অনুসন্ধানী বিমান পি-৮ পোসেইডন ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে৷ সোমবার দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিমানও দুটি বস্তু দেখতে পায় এবং শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী তল্লাশি চালাতে তাদের একটি জাহাজ ঐ স্থানে যাচ্ছে৷
তবে এগুলি ছাড়াও এদিন বেশ কয়েকটি দেশের জাহাজ ও বিমান ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে খোঁজ চালিয়েছে৷ এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও অ্যান্টার্কটিকার ৫৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে ১০টি বিমান৷
এর আগে শনিবার অস্ট্রেলিয়ান একটি বিমান পশ্চিম উপকূল থেকে অনেক দূরে কাঠের তক্তা এবং আরো কিছু জিনিসের সন্ধান পায়৷ অস্ট্রেলিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী ওয়ারেন ট্রুস বলেছেন, যেখান থেকে যতটুকু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সবই অনুসন্ধান করে দেখছেন তারা৷
এদিকে মার্কিন নৌ-বাহিনী ভারত মহাসাগরে একটি বিশেষ ডিভাইস পাঠাতে যাচ্ছে, যা বলে দেবে বিমানটির ‘ব্ল্যাক বক্স' কোথায় রয়েছে৷ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এই যন্ত্রটি ২০,০০০ ফিট গভীরের ব্ল্যাক বক্সের সন্ধান দিতে পারে৷ তবে ব্ল্যাক বক্সটি অনুসন্ধান যত দ্রুত চালানো সক্ষম ততই ভালো কেননা, ৩০ দিন পর এর সিগনাল বন্ধ হয়ে যায়৷
মালয়েশিয়ার বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমানটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি৷ এটি নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা৷ চলুন জানা যাক বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো৷
ছবি: Reuters
কেন নিখোঁজ?
২০১৪ সালের ৮ই মার্চ নিখোঁজ হওয়া এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি নিয়ে এখন যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পাইলট কি নিকটবর্তী কোনো স্থানে বিমানটি অবতরণ করাতে চয়েছিলেন? বিমানটি কি অন্য একটি বিমানের রাডার সিগন্যালের আড়ালে চলতে চয়েছিল? বা এটি কি সত্যিই মালদ্বীপ পর্যন্ত উড়ে গিয়েছিল?
ছবি: Reuters
দ্রুত অবতরণের চেষ্টা
মালয়েশিয়ার এই বিমানটি নিখোঁজের ১২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত কারণগুলোর একটি হচ্ছে, বিমানটির ককপিটে কোনো কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে এবং সেকারণে পাইলট এটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দ্রুত কাছাকাছি কোনো বিমানক্ষেত্রে অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন৷ এ জন্যই হয়ত বিমানটি গতিপথ বদলে ছিল৷
ছবি: Reuters
ছিনতাই চেষ্টা
বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ছিনতাইকে এখনো উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না৷ অনেকে সন্দেহ করছেন, বিমানের পাইলট বা ছিনতাইকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানের কমিউনিকেশন সিস্টেমে ভিন্ন একটি ঠিকানা প্রবেশ করিয়েছিলেন৷ ফলে উড়ালের এক পর্যায়ের বিমানটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়৷ অনেকের সঙ্গে মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকও এমন ধারণা করছেন৷
ছবি: Reuters
অন্য বিমানের আড়ালে চলার চেষ্টা
এ ধারণাটি অবশ্য হলিউড ছবির জন্য চমৎকার প্লট হতে পারে৷ কেউ কেউ মনে করছেন, এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের বেশ কাছাকাছি থেকে কিছুক্ষণ উড়েছিল, যাতে করে সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের রাডার সিস্টেমের ছায়াতলে অবস্থান করে নিজেদের পরিচয় কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
উল্কার আঘাতে বাষ্পীভূত
মালয়েশিয়ার এই বিমানটিতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীর দুই তৃতীয়াংশই চীনা নাগরিক৷ চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে যে, উল্কার আঘাতে বিমানটি ধ্বংস এবং বাষ্পীভূত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
মালদ্বীপ থেকে দেখা গেছে বিমানটি
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের একটি ছোট্ট দ্বীপের বাসিন্দারা ৮ই মার্চ সকালে খুব নীচু থেকে উড়ে যাওয়া একটি বিমান দেখেছেন বলে দাবি করেছেন৷ বিমানটি সাদা রংয়ের এবং এতে লাল রংয়ের লাইন আঁকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা, যা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে মিলে যায়৷ বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখছেন মালদ্বীপ পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান খুঁজছেন কয়েক লাখ মানুষ
এমএইচ৩৭০ উড়ালের এই বিমানটি ইন্টারনেটে খুঁজছেন কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ৷ স্যাটেলাইট সংস্থা ‘ডিজিটালগ্লোব’ জানিয়েছে, বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে তাদের অনলাইন ম্যাপ দেখা হয়েছে ২৫৭ মিলিয়ন বার৷
ছবি: NASA/dpa
আসলে কি কেউ কিছু জানে?
বিমানটি খোঁজার অগ্রগতি সম্পর্কে এক মালয়েশীয় কর্মকর্তা জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই৷’’ বুধবার (১৯.০৩.১৪) পর্যন্ত এটাই বাস্তবতা৷ ফলে বিমান নিখোঁজ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ক্রমশই বাড়ছে, যার কোনটি সত্য কেউ জানে না! (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ অবশ্য নিখোঁজ বিমানটির স্বজনদের জানিয়ে দিয়েছেন, সব তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এমএইচ৩৭০ হারিয়ে গেছে এবং আরোহীদের কেউ বেঁচে নেই৷
ওদিকে সোমবার ও মঙ্গলবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া অধিদপ্তর৷ ফলে অনুসন্ধানকাজ আরো ধীর গতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে ৮ই মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়৷
অন্যদিকে সোমবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সৌলগামী একটি বিমান বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে হংকং এ অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছে৷ পরে সেখান থেকে ২৭১ জন যাত্রীকে অন্য বিমানে সৌল রওনা করা হয় বলে হংকং-এর বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে৷