করোনা মহামারি সামনের দিনে আরো খারাপ রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ যতদিন না ভ্যাকসিন পাওয়া যায় ততদিন আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার ম্যার্কেল বলেছেন আগামী মাসগুলোতে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে৷ তিনি বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য দেশটির জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন৷ বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘এটা খুবই গুরুতর৷ যতটা আগে ছিল ততটাই৷ এবং এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিন৷’’
করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত জুলাই থেকে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করে জার্মান সরকার৷ কিন্তু সম্প্রতি ভাইরাসের প্রকোপ আবারও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে দেশটিতে৷ জার্মানির রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে নতুন করে আট হাজারের উপরে মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন৷ শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫৭১ জন শনাক্ত হয়েছেন৷
করোনা-কালে বেহাল জার্মান অর্থনীতি
করোনা-কালে জার্মান অর্থনীতির অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার আভাস মিলেছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Welz
টোল সংগ্রহ কমছে
রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাকের পরিমাণ বুঝিয়ে দেয় দেশের অর্থনীতি কোন পথে চলছে। পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কম মানে, জিনিসের চাহিদা কমছে। প্রতি বছর পণ্যবাহী ট্রাকের থেকে টোল আদায় করে সরকার। এর থেকে সরকার ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করে। করোনা কালে জার্মানিতে টোল সংগ্রহ চোখে পড়ার মতো কমেছে।
ছবি: Imago Images/M. Stein
উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ
মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জার্মানিতে লকডাউন ছিল। ফলে ওই সময় জার্মান কারখানাগুলিতেও কাজ কম হয়েছে। করোনাকালে জার্মানিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জার্মানিতে ২০২০ সালের শেষে বিদ্যুতের চাহিদা ২০১৯ এর তুলনায় ১০ শতাংশ কম হবে। তবে শিল্প উত্পাদন আস্তে আস্তে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
ছবি: MEHR
ম্যাপ অ্যাপের ব্যবহার কমেছে
অ্যাপল এবং গুগলের মতো সংস্থাগুলি গুগল ম্যাপের মতো অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা দেয়। এই অ্যাপগুলি থেকে মানুষের জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এ বছরের ডেটা বলছে, মার্চে লকডাউন হওয়ার পর থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি জার্মান ম্যাপ অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা বাড়ির বাইরে খুব বেশি বেরচ্ছেন না। এর থেকে প্রমাণ হয়, করোনার কারণে জার্মানদের গতিশীলতা আগের চেয়ে অনেকটা কমে গিয়েছে।
ছবি: picture alliance/dpa/U.Zucchi
রেস্তোঁরা বুকিং
মার্চ মাসে অনলাইন সার্ভিস সংস্থা 'ওপেন টেবিল' একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের গোড়ায় অনলাইনে রেস্তোরাঁ বুকিং চোখে পড়ার মতো কমেনি। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়ার পরে এবং লকডাউন হওয়ার পরে বুকিং কার্যত শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রায় সমস্ত রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জুলাই থেকে অবশ্য রেস্তোরাঁ আবার খুলতে শুরু করেছে। তবে এখনও বুকিং আগের মতো হচ্ছে না।
ছবি: Reuters/A. Gebert
বিমান চলাচলে সমস্যা
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জার্মানি থেকে প্রায় দেড় কোটি যাত্রী দেশে এবং বিদেশে যাতায়াত করেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যত শূন্য হয়ে যায়। ফ্লাইট ট্র্যাকার ফ্লাইটারাডার ২৪ নামক একটি সংস্থা সমীক্ষা করে দেখিয়েছে, বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে বিশ্বজুড়ে কী পরিমাণ বিমান হ্যাঙারে ঢুকে গিয়েছে। তাদের সমীক্ষা বলছে, গত বছরের তুলনায় করোনাকালে গোটা বিশ্বে অন্তত ৭৫ হাজার বিমান কম উড়েছে।
ছবি: picture-alliance/M. Mainka
বেকারত্বের সমস্যা
অর্থনৈতিক সংকটের আরও বড় একটি সূচক হলো বেকারত্ব। জার্মানিতে বেকারের সংখ্যা ছিল চার লাখ ১৫ হাজার। এপ্রিলে তা এক লাফে ২৫ লাখে পৌঁছে যায়। কারণ, বহু ছোট সংস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে জার্মান সরকার বেকার ভাতা দিয়ে এই সমস্যাকে অনেকটাই হাতের মধ্যে রাখতে পেরেছে। অন্য বহু দেশের মতো জার্মান বেকারদের সমস্যায় পড়তে হয়নি।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন
করোনাকালে গাড়ি কেনা বেচাও চোখে পড়ার মতো কমেছে জার্মানিতে। মার্চ মাসে গাড়ি বিক্রি ৩৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এপ্রিল মাসে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এপ্রিলের তুলনায় এ বছর ৬১ শতাংশ গাড়ি কম বিক্রি হয়েছে। মনে রাখা দরকার, গাড়ি শিল্পে জার্মানি পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এসজি/জিএইচ (ডিডাব্লিউ)
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Welz
7 ছবি1 | 7
ম্যার্কেল জানান, তার সরকার সমাজের বেশি খারাপ অবস্থায় থাকা অংশকে রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য৷ তিনি বলেন, শিশুরা যাতে এই মহামারিতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য সবকিছু করা হবে৷ স্কুল ও ডে কেয়ার সেন্টারগুলোতে নতুন ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি৷
করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ৷ প্রতিষেধক পেতে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা চলছে বলে জানান ম্যার্কেল৷ তবে যতদিন না টিকা পাওয়া যায় ততদিন আগের জীবন যাত্রায় ফেরা যাবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি৷
ম্যার্কেল সতর্কবার্তা দিলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিদ্যমান সরকারি বিধিনিষেধগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছেন মানুষ৷ স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় এই ধরনের বিক্ষোভের উপরে গত সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বার্লিন পুলিশ৷ কিন্তু জার্মানির একটি প্রশাসনিক আদালত শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রায় দিয়েছে৷