১৯তম দলীয় কংগ্রেসে নতুন সেন্ট্রাল কমিটি শি-র দ্বিতীয় কর্মকাল নিশ্চিত করে৷ পলিটবুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঁচটি নতুন মুখ রেখেছেন শি, তবে জ্যেষ্ঠতার নিয়ম ভঙ্গ না করে৷
ছবি: Getty Images/W.Zhao
বিজ্ঞাপন
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যসংখ্যা প্রায় নয় কোটি৷ দলের জাতীয় কংগ্রেস প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়৷ এক সপ্তাহব্যাপীএই সম্মেলনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রায় ২,৩০০ প্রতিনিধি বেইজিংয়ে সম্মিলিত হন৷ পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যসংখ্যা ২০৪৷ বুধবারের বৈঠকে নতুন সেন্ট্রাল কমিটি পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি নির্বাচন করেছে৷ ইতিপূর্বে শি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে আরো পাঁচ বছরের সনদ পান৷ তবে এই কংগ্রসের সবচেয়ে লক্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিকাশধারা সম্ভবত এই যে, মঙ্গলবারের অধিবেশনে ‘শি জিনপিংয়ের চিন্তা'কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সংবিধানে স্থান দেওয়া হয়েছে৷
মাও সে তুং ও ডেং জিয়াওপিং-এর সঙ্গে এক কাতারে?
শি জিনপিং ও তাঁর মতাদর্শকে সরকারিভাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ এই বিরল পদক্ষেপ সূচিত করে যে, শি মাও সে তুং থেকে চীনের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হতে চলেছেন৷
কলকাতার চীনারা
চীনা ব্যবসায়ী টং অছির পরবর্তী প্রজন্ম রয়ে গিয়েছেন এই শহর ও তার লাগোয়া অঞ্চলে৷ শরীরে চীনা রক্ত বইলেও এঁরা কিন্তু পুরোদস্তুর ভারতীয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
ইতিহাস
প্রায় ২০০ বছর আগে ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় টং অছি নামে এক চীনা ব্যবসায়ীর হাত ধরে কলকাতায় চীনাদের প্রবেশ ঘটে৷ সেই থেকে শুরু৷ নানা ব্যবসার হাত ধরে শহরে পা রাখেন চীনের হাক্কা কমিউনিটির মানুষরা৷ পুরনো কলকাতার চীনা ইতিহাসের রঙ আজ বড়ই ফিকে৷
ছবি: DW/P. Samanta
এ দেশ তোমার আমার
মূলত টেরিটি বাজার অঞ্চলটিকেই চীনারা নিজেদের ‘ঘরদোর’ বানিয়ে এ দেশের জলহাওয়া আর মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন৷ পরে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়েছেন অন্যান্য অঞ্চলে, এমনকি শহরতলি, অলিগলিতে৷ বাষট্টির ভারত-চীন যুদ্ধের পর অবশ্য তাঁদের ‘হিন্দি চীনি ভাই ভাই’ বিশ্বাসে চিড় ধরেছে৷
ছবি: DW/P. Samanta
চাই না যুদ্ধ
১৯৬২-র ভারত-চীন যুদ্ধ দেখেছেন বৃদ্ধ লি চুং৷ বললেন, ‘‘সেটা মনে না করাই ভাল৷ তখন টেরিটি বাজার থেকে হাওড়া যেতে গেলেও অনুমতি নিতে হত৷ পাঁচ বছর লাগাতার এই চলেছে৷ কোনও পরিস্থিতিতে যুদ্ধ যেন না বাঁধে৷ এটাই প্রার্থনা৷’’
ছবি: DW/P. Samanta
অনেকটা বাঙালি
এতদিন ধরে কলকাতায় বাস করায় চীনাদের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস ও ধর্মচর্চার বাঙালিকরণ ঘটেছে৷ বাঙালিদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে মহানগরের বুকে তাঁরাও সকালবেলা বাজার করেন চুটিয়ে৷
ছবি: DW/P. Samanta
যিনি রাঁধেন
কলকাতার পূর্ব অংশে ট্যাংরা এলাকায় অবস্থিত চীনাপাড়ায় চীনা খাবারের ছোটবড় রেস্তোরাঁ আছে৷ সেগুলো চালাতে মহিলারাও যথেষ্ট পারদর্শী৷ তাঁরা নিজেরাই অনেকে কাঁচামাল কিনে আনেন৷
ছবি: DW/P. Samanta
রন্ধনে চীন
বাঙালির ভোজের তালিকায় চীনা খাবারের রমরমা ক্রমশ বাড়ছে৷ বাঙালি ক্রমেই মজেছে চীনা ম্যাজিকে৷ মোমো-চাউমিন-চিলি চিকেনের হাত ধরে খাঁটি চীনা রেস্তোরাঁর সঙ্গে বঙ্গজীবনের অন্যতর যোগ আজও বিদ্যমান!
ছবি: DW/P. Samanta
প্রাতঃরাশের স্বর্গ
মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজার এলাকায় ব্ল্যাকবার্ন লেন৷ পাশেই ছাতাওয়ালা গলি৷ সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে এখানে পা দিলেই চীনা খাবারের গন্ধ পাওয়া যায়৷ প্রাতঃরাশের দুর্দান্ত সম্ভার নিয়ে মহানগরের ‘নীল আকাশের নীচে’র চীনাম্যানরা হাজির হন এখানে৷ মমো, স্যুপের স্বর্গরাজ্যে তাই রোজই ভিড়৷
ছবি: DW/P. Samanta
রক্তে ব্যবসা
৬২-র পর চীনাদের ব্যবসা ধাক্কা খেলেও সময়ের ফেরে চীনা আলো বা পোশাক থেকে চীনা খাবার - সব কিছুতেই আবার চীনাদের ব্যবসা ভারতীয়দের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে চলেছে৷ ছাতাওয়ালা গলির ব্রেকফাস্ট টেবিলে সে কথা স্বীকার করে নিলেন তরুণ ব্যবসায়ী লি হান কুয়ান৷
ছবি: DW/P. Samanta
বদলে যাবে ব্ল্যাকবার্ন লেন
ব্ল্যাকবার্ন লেনে চীনাদের ব্যবসা ঐতিহ্য, জৌলুস হারিয়ে টিমটিম করছে৷ শোনা যাচ্ছে সিঙ্গাপুরের সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে রাজ্যের পর্যটন দফতরের৷ তৈরি হবে ব্রেকফাস্ট মার্কেট, প্রভিশন স্টোরস, ফুড স্ট্রিট, নাইট মার্কেট, হেরিটেজ ট্রেল, হেরিটেজ সেন্টার৷ চীনাদের অভাব অভিযোগ এবার মিটবে৷
ছবি: DW/P. Samanta
ক্ষুদ্রশিল্পে
চীনারা অনেকেই বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ক্ষুদ্রশিল্প৷ চিংড়ির চিপস, নুডুলস, সস তৈরি করে অনেকেই তা বাজারে নিয়ে আসেন৷
ছবি: DW/P. Samanta
আজ সংখ্যালঘু
অভিবাসী হিসেবে সেই ১৮ শতকে এদেশে আসা— তারপর বন্দরে কাজ কিংবা চামড়ার ব্যবসা বা রেস্তোরাঁ খুলে চীনারা জমিয়ে দিয়েছিলেন চায়না টাউন৷ কলকাতায় চীনাদের সংখ্যাটাও ছিল এক লাখের মতো৷ এখন সেই সংখ্যাটা কমে মাত্র ২ হাজার৷ অন্যান্যদের ভিড়ে আজ হারিয়ে যেতে বসেছেন কলকাতার চীনারা৷
ছবি: DW/P. Samanta
11 ছবি1 | 11
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি মঙ্গলবার ঘোষণা করে যে, শি জিনপিং ও তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শকে দেশের সংবিধানে যোগ করা হচ্ছে৷ ‘‘এক নতুন যুগের জন্য চীনা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত সমাজতন্ত্র সম্পর্কে শি জিনপিংয়ের চিন্তা'' – সরকারি বয়ানে এই হলো তার শীর্ষক৷ সেই ‘চিন্তা’ কমিউনিস্ট চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুংয়ের চিন্তাধারার পাশে স্থান নিতে চলেছে৷ ইতিপূর্বে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেং জিয়াওপিংয়ের নাম তাঁর মৃত্যুর পর সংবিধানে যোগ করা হয়েছিল৷
২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে শি যে গতিবেগ ও সংকল্পের সাথে নিজের ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন, এই বিরল পদক্ষেপ তার প্রমাণ৷
সংবিধান সংশোধনের সরকারি বয়ানে বলা হয়েছে যে, শি-র মতাদর্শ ‘‘পার্টির কর্মধারার জন্য একটি আলোকবর্তিকা’’ হিসেবে কাজ করবে৷ শি-র মতাদর্শের একটি মূল নীতি হলো অর্থনীতি থেকে সোশ্যাল মিডিয়া অবধি সমাজজীবনের প্রতিটি অঙ্গে ও প্রতিটি ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকাকে সম্যক গুরুত্ব দেওয়া৷
‘আজীবন নেতা'
হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উইলি লাম-এর মতে, শি-কে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে তিনি ‘‘মাও সে তুংয়ের মতো আজীবন নেতা থাকার সুযোগ পাবেন, যদি তাঁর স্বাস্থ্য ভালো থাকে৷’’
লক্ষণীয় যে, শি অপরাপর প্রেসিডেন্টের মতো তাঁর কোনো সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর নামকরণ করেননি৷
অপরদিকে শি জাতীয় কংগ্রেস উদ্বোধনের সময় এক ‘নতুন যুগ’-কে স্বাগত জানান, যে যুগে চীন ২০৫০ সালের মধ্যে ‘‘এক বিশ্বব্যাপি নেতৃস্থানীয় দেশে’’ পরিণত হবে, বলে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন৷
এসি/এসিবি (এএফপি, এপি, রয়টার্স)
প্রাচীন মিশর ও চীনের মধ্যে মিল
মানব ইতিহাসে প্রাচীন দুই সভ্যতার ধারক চীন ও মিশর৷ হাজার হাজার কিমি. দূরের এই দুই সভ্যতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর৷ তবে এবার বার্লিনের একটি প্রদর্শনীতে সভ্যতা দু’টোর বেশ কিছু বিস্ময়কর মিল খুঁজে পাওয়া যায়৷
ছবি: Ägyptisches Museum und Papyrussammlung, Staatliche
Museen zu Berlin, Margarete Büsing
মৃতদের অবিনশ্বর করতে বিশেষ পোশাক
কেবল মিশরীয়দের ক্ষেত্রে নয়, চীনারাও বেশ জটিল একটা শেষকৃত্যের পোশাক বানিয়েছিল৷ এর উদ্দেশ্য ছিল এই জীবনের পর তাদের মৃতদের সুরক্ষা দেয়া৷ রাজ পরিবারের সদস্যদের যে পোশাক পরানো হতো, সেটা প্রায় ২ হাজার ২১৬টি ছোট ছোট ‘জেড’ প্লেটে তৈরি করা হতো৷ এগুলো জোড়া লাগাতেই এক কিলোগ্রাম সিলভারের তন্তু দরকার হতো৷
ছবি: Xuzhou Museum
মমির মাস্ক
প্রাচীন মিশরে ব্যক্তির কথা মাথায় রেখে সকল মমির জন্য আলাদা আলাদা মাস্ক বানানো হতো৷ আংশিক স্বর্ণের এই মাস্ককে বলা হয় ‘টা-শেরিট-এন-হর’৷ এখানে ‘উডজাট আই’-এ একটা ম্যাজিক রয়েছে৷ কপালের লাল অংশে এটা দেখা যায়৷ এটাকে হরুসের চোখও বলা হয়৷ হরুস হচ্ছেন আলোর দেবতা৷
ছবি: Ägyptisches Museum und Papyrussammlung, Staatliche
Museen zu Berlin, Margarete Büsing
উৎসবে অ্যালকোহল
প্রাচীন এই উভয় সভ্যতাতেই অ্যালকোহল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ চীনে এটা তৈরি করা হতো ভুট্টা থেকে এবং ধর্মীয় উৎসবে ব্যবহার করা হতো৷ পেঁচা আকৃতির এই জারের মত মূল্যবান পাত্রে এটা সংরক্ষণ করা হতো৷ পশ্চিম হান রাজবংশ থেকে এটা এসেছে৷
ছবি: Shanghai Museum
পূর্বসুরীদের জন্য মদ
প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান এবং পুরাকীর্তিক লেখায় দেখা গেছে, চীনে ত্যাগের উদ্দেশ্যেও মদ ব্যবহার করা হতো৷ কাঠ কয়লায় এটাকে উত্তাপ দেয়া হতো, যাতে পূর্বপুরুষরা বাষ্প উপভোগ করতে পারেন৷ মৃতদের আত্মা এবং দেবতার সন্তুষ্টির জন্য পাথর এবং ঝর্ণায় এটা ঢেলে দেয়া হতো৷ প্রদর্শনীতে ষাঁড়ের মত মদের জারও স্থান পেয়েছে, যা খ্রিষ্টপূর্ব ১৩শ শতাব্দী থেকে ১১শ শতাব্দী সময়ের৷
ছবি: Shanghai Museum
লেখালেখি
প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে মিশর এবং চীন লিপির ব্যবহার করেছিল৷ খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সালেই মিশরে লিখন পদ্ধতি ছিল৷ লেখার কাজে তাঁরা প্রায়ই প্যাপিরাস ব্যবহার করতো৷ অন্যদিকে চীনের মানুষ প্রথমদিকে লেখালেখির কাজে ‘বাঁশের ফালা’ ব্যবহার করতো৷
ছবি: Ägyptisches Museum und Papyrussammlung, Staatliche Museen zu Berlin, Andreas Paasch
পোশাক
প্রাচীন কাল থেকেই জলবায়ুগত কারণে মিশরে লিনেনের পোশাক অনেকদিন সংরক্ষণ করা যেত৷ অন্যদিকে চীনে প্রথমদিকে ঘাসের তৈরি পোশাক, পরে কটনের পোশাক সংরক্ষণ করা যেত৷ এখানে চিত্রিত চাকরের ভাস্কর্যে পশ্চিম হান রাজবংশের ফ্যাশন সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়৷