বোর্ডের সভাপতির পদ হারাতে চলেছেন সৌরভ। পরবর্তী সভাপতি হতে চলেছেন রজার বিনি। এই অবস্থায় প্রথম মুখ খুললেন সৌরভ।
বিজ্ঞাপন
সৌরভ জানিয়েছেন, তিনি আরো বড় লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন। সেই লক্ষ্য কী, তা তিনি বলেননি। তিনি আইসিসি-র প্রধান হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে চলছেন কি না, তাও জানাননি। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ''আমি ভারতের হয়ে খেলেছি। তারপর প্রথমে বাংলার ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি হয়েছি। সেখান থেকেই বিসিসিআই সভাপতি হই। আমি ভবিষ্যতে আরো বড় কিছু করব। কিন্তু এটাও জানিয়ে রাখি, খেলোয়াড় জীবনের ১৫ বছর আমার জীবনের সেরা সময়।''
ভারতে ক্রিকেট প্রশাসক হিসাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ইনিংস আপাতত শেষ। তিনি চাননি, এখনই ইনিংস শেষ হোক। কিন্তু সূত্র জানাচ্ছে, পরিস্থিতির চাপ এতটাই বেশি ছিল এবং যেভাবে শেষ বোর্ড মিটিংয়ে সৌরভের সমালোচনা হয়েছে এবং যেভাবে বিজেপি নেতৃত্ব তাকে আর রাখতে চায়নি, তারপর আর কিছু করার ছিল না সৌরভের।
রজার বিনি ইতিমধ্যে বোর্ড সভাপতির পদে মনোনয়নপত্র ভরে দিয়েছেন। সবকিছু স্পষ্ট হওয়ার পর সৌরভও সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন। বলেছেন, সবাইকেই একদিন প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়তে হয়।
নিজে থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিরাট কোহলি। আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলার সময় তিনি এই ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, বোর্ডকে আগে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন, রোহিত শর্মাকেও জানিয়েছিলেন। সেইসময়ের কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গেও তার কথা হয়েছিল। বিরাট জানিয়ে দেন, তিনি টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করবেন।
ছবি: AFP/D. Sarkar
কোহলির জায়গায় রোহিত
এরপর কোহলির জায়গায় রোহিত শর্মাকে প্রথমে ভারতের টি-টোয়েন্টি টিমের অধিনায়ক করা হয়। কিছুদিন পর একটা বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, একদিনের ক্রিকেটেও রোহিতই অধিনায়ক হবেন। বোর্ডের যুক্তি ছিল, সাদা বলের ক্রিকেটে একজনই অধিনায়ক থাকা উচিত।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
সৌরভের সাফাই
কোহলির কাছ থেকে এইভাবে একদিনের ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ ছিনিয়ে নেয়ার পর প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। তখন সৌরভ জানান, কোহলিকে জানিয়েই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর তিনি কোহলিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। কোহলি সেটা শোনেননি। সাদা বলে একজন অধিনায়ক থাকা উচিত বলে নির্বাচকরা রোহিতকে অধিনায়ক করেছেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Paranjpe
বিরাটের জবাব
এরপর বোমা ফাটান বিরাট কোহলি। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সৌরভ তাকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার কোনো কথা বলেননি। আর একদিনের ক্রিকেটে রোহিতকে অধিনায়ক ঘোষণার দেড় ঘণ্টা আগে তাকে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেটাও দক্ষিণ আফ্রিকায় দল নির্বাচন নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পর একেবারে শেষে।
ছবি: Getty Images/A. Davidson
'বোর্ড দেখছে'
প্রশ্ন হলো, কে ঠিক বলছেন, সৌরভ না বিরাট? সৌরভ এরপর জানিয়েছেন, বোর্ড বিষয়টি দেখছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝখানে বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। দল দেশে ফেরার পর নিতে পারে।
ছবি: privat
গাভাস্কারের মতে
সুনীল মনোহর গাভাস্কার মনে করেন, বিরোধের কারণ, কোহলির বিবৃতি। টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময় কোহলি বলেছিলেন, তিনি টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক থাকবেন। তার বলা উচিত ছিল, এই দুই ফরম্যাটে অধিনায়ক থাকতে তার কোনো অসুবিধা নেই। কোহলির কথায় বোর্ড চটেছে বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ছবি: picture alliance/AP Photo
অশ্বিন বনাম শাস্ত্রী
ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে অন্যতম রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি সম্প্রতি ক্রিকইনফোডটকমে বলেছেন, ২০১৮-১৯-এর অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় কোচ রবি শাস্ত্রীর একটি কথায় ভেঙে পড়েছিলেন। সে সময় একটি টেস্টে স্পিনার কুলদীপ যাদব পাঁচ উইকেট নেয়ার পর রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, কুলদীপই এখন ভারতের সেরা স্পিনার। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সফল বোলার অশ্বিন এই কথাটা মেনে নিতে পারেননি বলে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Parks
শাস্ত্রীর জবাব
রবি শাস্ত্রী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, সবার টোস্টে মাখন মাখানো একজন কোচের কাজ নয়। তার কাজ, কোনো এজেন্ডা ছাড়া ঠিক তথ্য পরিবেশন করা। কুলদীপ সেই টেস্টে অসাধারণ বল করেছিলেন এবং পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। তিনি এত ভালো বল করেছিলেন বলেই ওই কথাগুলো বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন শাস্ত্রী।
ছবি: dapd
শাস্ত্রী খুশি
শাস্ত্রীর বক্তব্য, তার ওই মন্তব্যের ফলে অশ্বিন আরো ভালোভাবে নিজের কাজটা করেছেন। তাই তিনি খুশি। শাস্ত্রীর দাবি, তার মন্তব্যের পরই অশ্বিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন। উপরের ছবিতে মহম্মদ শামির সঙ্গে শাস্ত্রী।
ছবি: IANS
9 ছবি1 | 9
শূন্য থেকে শুরু
সৌরভ জানিয়ে দিয়েছেন, তাকে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। সবাইকেই তাই হয়। তিনি বলেছেন, শেষটাই সকলে দেখে। আমায় এখন হয়তো নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে। আর যে কোনো নতুন ভূমিকায় নামা মানে শূন্য থেকেই শুরু করা।”
সাফল্য দাবি
সৌরভ বলেছেন, "করোনাকালেও আমরা আইপিএলের আয়োজন সফলভাবে করেছি। কমনওয়েলথ গেমসে আমাদের মেয়েদের ক্রিকেট দল রুপো পেয়েছে। পুরুষরা তো বিদেশে একের পর এক সিরিজে সাফল্য পেয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন শক্তি দেখা যাচ্ছে।”
তারপরেই সৌরভ যোগ করেছেন, সারাজীবন তো কেউ প্রশাসক থাকতে পারে না। তিনি এটাও বলেছেন, একদিনে কেউ শচিন টেন্ডুলকর বা নরেন্দ্র মোদী হতে পারে না। তাই প্রশাসক হিসাবে তিনি ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছেন। শুরুতেই সাফল্য পাওয়ার জন্য বড় লাফ মারতে যাননি।
প্রতিক্রিয়া
সৌরভ আবার বোর্ড সভাপতি না হওয়ার পর তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, বিজেপি-তে যোগ না দেয়ার ফল এটা। শান্তনুর এই মন্তব্য নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল কথার লড়াই শুরু হয়।
সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ রবি শাস্ত্রী বলেছেন, তিনি খুবই শুশি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে এই প্রথমবার একজন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার সভাপতির আসনে বসতে চলেছেন। বিনি দক্ষ ও তার ব্যক্তিত্ব নিয়েও কোনো কথা হবে না বলে তিনি মনে করেন।
সৌরভ সরে যেতে বাধ্য হওয়ায় খুশি বিরাট কোহলির সমর্থকরা। নেটমাধ্যমে তাদের খুশির প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে। কিছুদিন আগেই সৌরভের সঙ্গে বিরাটের সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছিল।