৮ কোটি ৭০ লক্ষ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে শেয়ার করার কথা জানিয়েছে ফেসবুক৷ অর্থাৎ, আগে যা বলা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি৷ এবং সেই সঙ্গে নতুন প্রাইভেসি আইনের কথা জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ও দ্য অবজারভার পত্রিকা দু'টি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা সম্বন্ধে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকেই কেলেঙ্কারির শুরু৷ কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা একটি ডাটা মাইনিং ফার্ম বা তথ্য সংগ্রহ কোম্পানি; তারা নাকি যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল৷
গতমাসে খবর বেরোনোর পর ফেসবুক পাঁচ কোটি ইউজারের ডাটা লিক হওয়ার কথা স্বীকার করে; এবার বলেছে ৮ কোটি ৭০ লক্ষ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা৷ ফেসবুকের মুখ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা মাইক শ্রোপফার বুধবার নতুন পরিসংখ্যানের সঙ্গে ফেসবুক ইউজারদের জন্য এক পর্যায় নতুন সেফটি টুলস বা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথাও জানান৷ ‘‘প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের ৮ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের ফেসবুক তথ্য অনুচিতভাবে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে শেয়ার করা হয়ে থাকতে পারে,'' বলেন শ্রোপফার৷
যুক্তরাজ্যভিত্তিক কনসাল্টেন্সি সংস্থাটি কোনো ধরণের ভুলের কথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে, সংস্থার তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে ‘সরল বিশ্বাসে' ফেসবুক তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল – অন্যান্য অ্যাপ ডেভেলপাররা যেভাবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে থাকে৷
সাকারবার্গ মার্কিন কংগ্রেসে বিবৃতি দেবেন
ফেসবুকের প্রধান কার্যনির্বাহী মার্ক সাকারবার্গ জানিয়েছেন যে, তিনি আগামী ১১ এপ্রিল একটি হাউস কমিটির সামনে তাঁর বিবৃতি দেবেন৷ মার্কিন ফেডারাল ট্রেড কমিশন ও ইউরোপের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধান করছেন৷
সাকারবার্গের শুনানি ‘‘গ্রাহক তথ্যের গোপনীয়তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গগুলির উপর আলো ফেলবে ও অনলাইনে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে কি করা হচ্ছে, সব মার্কিনিকে তা বুঝতে সাহায্য করবে,'' কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান গ্রেগ ওয়াল্ডেন ও একজন উচ্চপদস্থ ডেমোক্র্যাট ফ্র্যাঙ্ক ফ্যালোন একটি বিবৃতিতে বলেছেন৷ ‘‘আমরা মিস্টার সাকারবার্গের কমিটির সামনে বিবৃতি দেবার প্রস্তুতির প্রশংসা করি এবং তিনি আমাদের প্রশ্নের যেসব জবাব দেবেন, আমরা তার প্রতীক্ষায় রয়েছি৷''
ফেসবুকের সঙ্গ ছাড়লো যারা
তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে ফেসবুকের সাম্প্রতিক কেলেংকারির ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে #ডিলিটফেসবুক শীর্ষক একটি প্রচারণা চলছে৷ অনেকে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দিচ্ছেন৷
ছবি: Colourbox/Maxx-Studio
স্পেসএক্স ও টেসলা
ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা ও রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর উদ্যোক্তা এলোন মাস্ক টুইটারে জানিয়েছিলেন, তিনি এই দুই কোম্পানির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেবেন৷ এরপর সেগুলো মুছে দেয়া হয়৷ প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্টে প্রায় ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন অনুসারী ছিল৷
ছবি: Reuters/T. Baur
মজিলা
জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার ফায়ারফক্সের কোম্পানি মজিলা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখবেন৷ আর তারা ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করার কথা না বললেও সেখানে নিয়মিত পোস্ট দেয়া স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে৷
ছবি: LEON NEAL/AFP/Getty Images
কমার্ৎসবাঙ্ক
জার্মানির অন্যতম বড় এই ব্যাংকও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছে৷ ব্যাংকের ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রধান জার্মান এক পত্রিকাকে বলেন, ‘‘তথ্য নিরাপত্তা ও ব্র্যান্ডের সুনাম রক্ষা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷’’
ছবি: Daniel Roland/AFP/Getty Images
হোয়াটসঅ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাকটন
২০০৯ সালে ফেসবুকে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন৷ এরপর তিনি হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করেন৷ সেই হোয়াটসঅ্যাপ ২০১৪ সালে ফেসবুক কিনে নিয়ে বিলিওনেয়ার হয়ে যান ব্রায়ান অ্যাকটন৷ এরপর ২০১৭ সালে হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে দিয়ে সিগন্যাল নামে আরেকটি অ্যাপে বিনিয়োগ করেন৷ ২০ মার্চ তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘এখন সময়৷ #ডিলিটফেসবুক৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gerten
সোনোস
স্পিকার তৈরির মার্কিন এই প্রতিষ্ঠান ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে৷ তবে কোম্পানিটি ফেসবুককে একেবার ‘পরিত্যাগ’ করবে না, কারণ, এটি ‘খুবই কার্যকর’ একটি সেবা বলে মনে করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Sonos
ড. ওয়েটকার
জার্মানির খাদ্য বিষয়ক এই কোম্পানি ২১ মার্চ টুইটারে একটি পোস্ট দিয়ে বলেছিল, পোস্টটি এক হাজারবার রিটুইট হলে কোম্পানির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেয়া হবে৷ এক হাজারবার রিটুইট হতে সময় বেশি লাগেনি৷ তারপর কথা অনুযায়ী ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেয় ড. ওয়েটকার৷ কিন্তু একদিন পর আবার ফেসবুকে ফিরে আসে তারা৷ কারণ হিসেবে বলে, ফেসবুক ছাড়া ‘থাকতে পারেনি’ তারা৷
ছবি: Dr. Oetker
ফেসবুকের উত্তর
কিছু কোম্পানির ফেসবুক ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ফেসবুক বলেছে, ‘‘যত কোম্পানির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তাদের বেশিরভাগই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷ তারা আশ্বস্ত হয়েছে যে, আমরা বর্তমান চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে গ্রহণ করব এবং আরও ভালো কোম্পানি হয়ে উঠবো৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
7 ছবি1 | 7
ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গকে ১০ই এপ্রিল সেনেটের জুডিসিয়াল কমিটির সামনেও আবির্ভূত হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে – যেমন জানানো হয়েছে গুগল প্রধান সুন্দর পিচাই ও টুইটার প্রধান জ্যাক ডর্সি-কে৷
চোর পালালে...
সাকারবার্গ বলেছেন যে, তিনি ‘‘বিশ্বে ফেসবুকের দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট ব্যাপক মনোভাব না নিয়ে একটি বিশাল ভুল'' করেছেন৷
এ সপ্তাহের সূচনায় তাঁকে বলতে শোনা যায় যে, তথ্যের অপব্যবহার সংক্রান্ত অনুসন্ধানে যে সমস্যাবলী আবিষ্কৃত হয়েছে, তা ঠিক করতে কয়েক বছর সময় লেগে যাবে৷
বড় বেশি ‘আদর্শবাদী' হওয়াটাই ফেসবুকের সমস্যা, বলেছেন সাকারবার্গ৷ মানুষ আর মানুষের মধ্যে যোগাযোগকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ‘‘আমরা কিছু কিছু ‘টুল'-এর খারাপ দিকটা পুরোপুরি ভেবে দেখিনি বা পর্যাপ্ত সময় দিইনি৷''
নতুন ‘প্রাইভেসি' নীতি
আগামী সোমবার সব ফেসবুক ইউজার তাদের ফেসবুক ফিডে একটি লিংক পাবেন, যার মাধ্যমে ইউজাররা দেখতে পারবেন, তারা কোন কোন অ্যাপ ব্যবহার করছেন এবং তারা এইসব অ্যাপের সঙ্গে কোন কোন তথ্য শেয়ার করেছেন৷ তারা যেসব অ্যাপ আর চান না, সেগুলি ডিলিট করার সুযোগ থাকবে৷ এছাড়া ফোন নাম্বার বা ইমেল ঠিকানা দিয়ে কোনো ইউজারের খোঁজ করার অপশনটিও রিমুভ করা হচ্ছে৷
কয়েক সপ্তাহ আগে ফেসবুক জানায় যে, ইউজার যদি কোনো অ্যাপ তিন মাস ব্যবহার করে না থাকেন, তাহলে ফেসবুক অ্যাপ ডেভেলপারের সেই ইউজারের ডাটা অ্যাকসেস করার সুযোগ বন্ধ করে দেবে৷ অ্যাপ ডেভেলপাররা নিয়ম মেনে চলে বললেই ফেসবুকের পক্ষে তাদের বিশ্বাস করাটা পর্যাপ্ত নয়, বলেন সাকারবার্গ৷
এসএমএস-এর ২৫ বছর
‘শর্ট মেসেজ সার্ভিস’ বা এসএমএস-এর ২৫ বছর পূর্তি হয়েছে গত ডিসেম্বরে৷ ১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রথম এসএমএসটি পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Maule/Fotogramma/ROPI
সিইউ এলইউ
এসএমএস-এর ভাষার একটি উদাহরণ৷ সিইউ হচ্ছে ‘আই উইল সি ইউ লেটার’ বা ‘আমি তোমার সঙ্গে পরে দেখা করব’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ৷ আর এলইউ মানে হচ্ছে ‘লাভ ইউ’৷ এই ২৫ বছরে এমন অনেক সংক্ষিপ্ত বার্তা আবিষ্কৃত হয়েছে৷ এসব বার্তা সমগ্রের ওয়েবসাইটও আছে৷
ছবি: DW/Brunsmann
মোবাইল ফোন নয়, কম্পিউটার
এখন সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই এসএমএস পাঠানো হয়৷ তবে ১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রথম ক্ষুদে বার্তাটি কম্পিউটার থেকে পাঠানো হয়েছিল৷ ব্রিটিশ টেলিকম কোম্পানি ভোডাফোন এর টেকনিশিয়ানরা পরীক্ষামূলকভাবে ‘ম্যারি ক্রিসমাস’ বার্তাটি পাঠিয়েছিলেন৷
ছবি: Fotolia/Pavel Ignatov
উদ্ভাবক
ছবিতে যাঁকে দেখতে পাচ্ছেন তাঁর নাম ফ্রিডহেল্ম হিলেব্রান্ড৷ তিনি জার্মান ডাক বিভাগে কাজ করতেন৷ ফরাসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানি পিটিটিতে কর্মরত ব্যার্নহার্ড গিলেব্যার্ট-এর সঙ্গে মিলে ১৯৮৪ সালে তিনি প্রথম এসএমএস-এর ধারণা দিয়েছিলেন৷
ছবি: privat
সর্বোচ্চ সীমা
এসএমএস-এর মডেল ছিল পোস্টকার্ড আর টেলেক্স বার্তা৷ টেকনিশিয়ানরা গবেষণা করে দেখতে পেয়েছিলেন যে, এ ধরনের যোগাযোগে ১৬০ বা তার কম বর্ণ ব্যবহৃত হয়৷ তাই এসএমএস-এর সর্বোচ্চ সীমা ঠিক করা হয়েছিল ১৬০ বর্ণ৷
ছবি: DW
লাভের হিসেব
নব্বইয়ের দশকে মোবাইল ফোনের প্রসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেলিকম কোম্পানিগুলো এসএমএস সেবার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হতে থাকে৷ ১৯৯৬ সালে জার্মানিতে প্রায় ১০০ মিলিয়ন এসএমএস পাঠানো হয়েছিল৷ ২০১২ সালে সেই সংখ্যাটি ছিল ৫৯ বিলিয়ন৷ জার্মানিতে এসএমএস পাঠানোর সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ৩৯ ইউরো সেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
মোবাইল অ্যাপের আবির্ভাব
জার্মানিতে এসএমএস পাঠানোর প্রক্রিয়াটি ‘সিমসেন’ নামে পরিচিত৷ ডিকশনারিতেও এই শব্দটি ঢোকানো হয়েছে৷ ২০০৯ সাল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ, জুম, ফেসবুক মেসেঞ্জারের মতো মেসেঞ্জার অ্যাপ চালু হয়৷ সেগুলো দিয়ে বিনামূল্যে এসএমএস পাঠানো যায়৷
ছবি: Fotolia/bloomua
এখনও জনপ্রিয়
মেসেঞ্জার অ্যাপ আসার পরও এখনও জার্মানিতে এসএমএস জনপ্রিয়৷ ২০১৬ সালে প্রায় ১২.৭ বিলিয়ন এসএমএস পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় টেলিযোগাযোগ কার্যালয়৷