কিয়েভের কাছে হস্টমেলের একটি গ্যারাজ থেকে উদ্ধার ১১টি দেহ। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া 'যুদ্ধাপরাধ' ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিজ্ঞাপন
ফের একাধিক দেহ উদ্ধার হলো কিয়েভের অদূরে হস্টমেল থেকে। মঙ্গলবারই ওই অঞ্চলের প্রাশনিক কর্তা জানিয়েছিলেন, প্রায় ৪০০ মানুষের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বুধবার প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, একটি গ্যারাজ থেকে ১১ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। বুচায় যেমন হাত বাঁধা অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়েছিল, এখানেও দেহগুলি সেভাবেই ফেলে রাখা ছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, রাশিয়ার সেনাই এ কাজ করেছে। এছাড়াও বুচায় বেশ কিছু হস্টমেলের বেসামরিক মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ। আশপাশের অঞ্চলে তাদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
বুচার ঘটনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি
01:07
দিনকয়েক আগেই কিয়েভ এবং সংলগ্ন শহরতলী থেকে রাশিয়ার সেনা ফিরে গেছে। তারপরেই একের পর এক মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। বুচা, হস্টমেলের রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল মৃতদেহ। বুচায় উদ্ধার হয়েছে গণকবর। এরপর হস্টমেলের গ্যারাজ থেকেও ১১ জনের দেহ উদ্ধার হলো। অভিযোগ, যাদের দেহ উদ্ধার হয়েছে, তারা কেউ সেনা নয়, লড়াইয়েও অংশগ্রহণ করেননি। রাশিয়ার সেনা সাধারণ মানুষকেও ছাড়েনি।
জেলেনস্কির অভিযোগ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইউক্রেনে যে যুদ্ধাপরাধ করেছে, তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। টেলিগ্রামের নিজস্ব চ্যানেলে প্রাত্যহিক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, 'রাশিয়ার সেনা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৃতদেহ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তারা যে অঞ্চলগুলি এখনো দখল করে রেখেছে, সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেহগুলি।'
জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কারণ, বুচার ঘটনার পর গোটা বিশ্ব যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, রাশিয়া তা নিয়ে চিন্তিত। তারা জানে, আরো বহু শহরে একইধরনের যুদ্ধাপরাধ তারা করেছে। ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। ফলে দ্রুত দেহ লোপাট করার চেষ্টা হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, গোটা ইউক্রেন জুড়ে কয়েক হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ।
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে ২৪ ফেব্রুয়ারি৷ নিজস্ব অস্ত্র ছাড়াও পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার মোকাবিলা করছে ইউক্রেন৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
কিনজাল মিসাইল
মিগ-৩১ বিমানের গায়ে সাদা কিনজাল মিসাইল দেখতে পাচ্ছেন৷ শব্দের গতির চেয়ে এর গতি প্রায় পাঁচগুণ বেশি৷ তাই একে হাইপারসনিক মিসাইল বলা হয়৷ ১৯ মার্চ রাশিয়া জানায়, ইউক্রেনের পশ্চিমের একটি বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে এই মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর ২৯ মার্চ এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া নিয়মিত এমন মিসাইল ব্যবহার করছে৷ ছবিটি ২০১৮ সালে তোলা৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
ভ্যাকুয়াম বোমা
এই বোমা থার্মোব্যারিক বোমা বা অ্যারোসল বোমা নামেও পরিচিত৷ ছবিতে রাশিয়ার টিওএস-১এ থার্মোব্যারিক রকেট লঞ্চার দেখা যাচ্ছে, যেটা থেকে ভ্যাকুয়াম বোমা ছো়ড়া হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধে এই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷ ভ্যাকুয়াম বোমার আঘাতে অনেক বড় আগুনের গোলা সৃষ্টি হয়৷ এটি সুরক্ষিত ভবন, যন্ত্রপাতি ধ্বংস করতে পারে৷ মানুষকে মেরে ফেলতে কিংবা আহত করতে পারে৷
ছবি: Leonid Faerberg/ZUMAPRESS/picture alliance
ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমা
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাচেলেট বুধবার জানান, রাশিয়া জনবহুল এলাকায় অন্তত ২৪ বার এমন বোমা ব্যবহার করেছে বলে তার অফিস অভিযোগ পেয়েছে৷ এই বোমার এমন নামকরণের কারণ এই বোমায় অনেকগুলো ছোট ছোট বোমা (বম্বলেট) থাকে৷ ক্লাস্টার বোমা বিস্ফোরিত হলে ছোট বোমাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে একটা বিশাল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: MOHAMMED ZAATARI/AA/picture alliance
কালিবা ক্রুজ মিসাইল
ইউক্রেনের সামরিক ও সরকারি ভবনে হামলা চালাতে কালিবা ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করেছে রাশিয়া৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: Tass/imago images
ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক মিসাইল
এই মিসাইল সর্বোচ্চ ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে৷ বড় ভবন ও সুরক্ষিত, দুর্ভেদ্য অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে এটি৷ বেলারুশ থেকে কিছু ইস্কান্দার মিসাইল ইউক্রেনের দিকে ছোড়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: Russian Defense Ministry via AP/picture alliance
আর্টিলারি সিস্টেম
২৬ ফেব্রুয়ারির এই ছবিতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার বেলগোরোদ এলাকায় ‘উরাগান’ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম দেখা যাচ্ছে৷ তার দুদিন আগে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া৷ উরাগান ছাড়াও রাশিয়ার কাছে সোভিয়েত আমলের ডিজাইন করা ‘গ্রাট’, ‘স্ম্যার্শ’ রকেট লঞ্চার আছে৷
ছবি: Mikhail Voskresenskiy/SNA/imago images
ফসফরাস বোমা?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২৫ মার্চ জানান, রাশিয়া ইতিমধ্যে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে৷ লুহানস্কের গভর্নর জানান একটি গ্রামে এমন বোমা হামলায় দুই শিশুসহ কমপক্ষে চারজন মারা গেছেন৷ জেলেনস্কির মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, রাশিয়া ‘‘কখনও আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করেনি৷’’ ছবিতে ১৯৪৫ সালে ফসফরাস বোমার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: United Archives International/imago images
জ্যাভলিন মিসাইল
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ব্যবহার করছে ইউক্রেন৷ পশ্চিমা দেশগুলো এসব তাদের সরবরাহ করেছে৷ গত ডিসেম্বরের ছবিতে জ্যাভলিনসহ ইউক্রেনের সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷
এটি একটি অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল৷ এটিও পশ্চিমের কাছ থেকে পেয়েছে ইউক্রেন৷
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
বায়রাকতার ড্রোন
যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেনকে এই ড্রোন দিয়েছিল তুরস্ক৷ এটি ব্যবহার করে রাশিয়ার মিলিটারি কনভয়ের উপর হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী৷
ছবি: Emrah Yorulmaz/AA/picture alliance
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব
ওরিক্স মিলিটারি অ্যানালিসিস ব্লগের তথ্য উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত রাশিয়ার ৩১৮টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে কিংবা সেনারা ফেলে পালিয়ে গেছেন৷ এছাড়া পাঁচশর বেশি সাঁজোয়া যান, ১৬টি ফাইটার জেট, ৩৫টি হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে ওরিক্স৷ আর ইউক্রেন হারিয়েছে ৭৯টি ট্যাঙ্ক, প্রায় ২০০টি সাঁজোয়া যান, ১২টি জেট ও ১৩টি জাহাজ৷
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
11 ছবি1 | 11
জাতিসংঘের ভোট
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে ভোট হওয়ার কথা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে রাশিয়াকে আর থাকতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা। বুচার ঘটনার পর অ্যামেরিকা এই ভোটের আবেদন জানায়। এখনো পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘে যত ভোট হয়েছে, প্রতিটিই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গেছে। বৃহস্পতিবারের ভোটও তেমন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এবং সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে রাশিয়াকে সরে যেতে হবে।
জাতিসংঘের সাধারণ সভা ৪৭টি দেশকে চার বছরের বছরের জন্য এই মানবাধিকার কাউন্সিলে মনোনীত করে। রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশেরই সময় শেষ হবে ২০২৩ সালে। বিশেষজ্ঞদের অন্য অংশের বক্তব্য, ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে প্রস্তাব পাশ করাতে হবে। ফলে অন্য ভোটের থেকে এই ভোট অনেক কঠিন বলে মনে করছেন তারা।
সমস্যায় রাশিয়ার সাধারণ মানুষ
গোটা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা আসলে রাশিয়ার সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলছে, মন্তব্য করেছেন অ্যামেরিকায় থাকা রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত। সম্প্রতি রাশিয়ার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাঙ্কের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অ্যামেরিকা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্ক স্বারব্যাঙ্ক এবং চতুর্থ বৃহত্তম আলফা ব্যাঙ্ক। অধিকাংশ রাশিয়ানের সম্পত্তি এই দুই ব্যাঙ্কে গচ্ছিত বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। অ্যামেরিকা জানিয়েছে, ওই দুই ব্যাঙ্কের সঙ্গে কোনোরকম সংযোগ রাখবে না অ্যামেরিকা। বিদেশে তাদের সম্পত্তি ফ্রিজ করা হবে। এর ফলে রাশিয়ার সাধারণ মানুষ বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন অ্যামেরিকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত।
নেতাদের পরিবারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের পরিবারের সদস্যদের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অ্যামেরিকা। বিদেশে তাদের সম্পত্তিও এবার ফ্রিজ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়াও একাধিক রাশিয়ার প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।