ছ’জন রোগীকে হত্যার দায়ে নিলস এইচ. নামের পুরুষ নার্সটি ইতিমধ্যেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে৷ সে আরো ৮৪ জন রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে, বলে তিন বছরের তদন্তের পর প্রকাশ৷
বিজ্ঞাপন
নিলস এইচ.-এর কৃত হত্যাকাণ্ডগুলি ঘটে ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ডেলমেনহর্স্ট ও ওল্ডেনবুর্গের দু'টি ক্লিনিকে৷ আদালতের বিচার অনুযায়ী সে রোগীদের এমন ইনজেকশন দিত, যার ফলে রোগীর হার্ট ফেল করার বা ব্লাড সার্কুলেশন ফেল করার লক্ষণ দেখা দিত৷ তখন নিলস এইচ. তাদের আবার বাঁচিয়ে তুলত, যাতে সহকর্মীদের সামনে সে ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রশংসা পেতে পারে৷ কিন্তু রি-অ্যানিমেশন সবসময়ে কাজ করত না৷ এভাবে ছ'টি হত্যাকাণ্ডের জন্য নিলস এইচ.-কে আদালতে পেশ করা হয়৷ বিচারকমণ্ডলী তাকে দু'টি হত্যা, দু'বার হত্যার প্রচেষ্টা ও গুরুতর শারীরিক হানি ঘটানোর দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন৷ নিলস এইচ. স্বয়ং আদালতে এ কথাও বলে যে, সে ৩০ জন রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী৷
মানুষ হত্যায় সিদ্ধহস্ত নারীরা
‘সিরিয়াল কিলার’ জ্যাক দ্য রিপারের কথা সবাই জানেন৷ আরো অনেক কুখ্যাত খুনির কথাও শুনেছেন হয়ত৷ তবে কোনো নারী সিরিয়াল কিলার বা খুনির কথা কি শুনেছেন? ছবিঘরে থাকছে এমনই ভয়ঙ্কর পাঁচ নারীর কথা৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
রক্ত দিয়ে গোসল করতেন অ্যার্জেবেত বাথোরি
হাঙ্গেরিতে ১৫৬০ সালে জন্ম, মৃত্যু ১৬১৪ সালে৷ তার গল্প শুনলে মনে হবে কোনো ভৌতিক ছবির কাহিনি শুনছেন৷ বলা হয়ে থাকে, ৫৪ বছরের জীবনে তিনি ৮০ থেকে ৬০০ জনকে খুন করেছিলেন৷ যাঁদের খুন করতেন, তাঁদের রক্ত দিয়ে গোসলও করতেন অ্যার্জেবেত বাথোরি৷ ভয়ঙ্কর খুনি হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম আছে তাঁর৷
টাকা আর সম্পত্তির লোভে খুন করতেন বেল গানেস
নরওয়ের বেল গানেসের জন্ম ১৮৫৯ সালে, মৃত্যু ১৯০৮ সালে৷ ইতিহাসে ইনি ‘ব্ল্যাক উইডো’ নামে পরিচিত৷ নরওয়ের এই নারী জীবনে ৪০ জনের মতো মানুষকে হত্যা করেছেন৷ নিহতদের মধ্যে তাঁর স্বামী, পানিপ্রার্থী, বোন, এমনকি সন্তানও ছিল বলে ধারণা করা হয়৷ মূলত জীবন বিমার টাকা এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার জন্যই খুন করতেন তিনি৷ খুনের সাক্ষী না রাখতে গিয়ে অনেক জনকে হত্যা করতে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/TopFoto
সন্তানকে বাঁচাতে তিন খুন
লিওনার্দা চিয়ানচিউলি (১৮৯৪-১৯৭০)৷ ইটালির এই নারী মাত্র তিনজনকে হত্যা করেই বিশ্বকুখ্যাত৷সন্তানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেতে হবে শুনে ভাবনায় পড়ে যান লিওনার্দা৷ সন্তানকে যুদ্ধ থেকে দূরে রেখে বাঁচানোর একটা উপায়ই এলো মাথায়৷ লিওনার্দা ভাবলেন, সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে অন্যের প্রাণ উৎসর্গ করলে ছেলেকে বাঁচানো যাবে৷ তারপর একে একে তিনজন মধ্যবয়সি নারীকে হত্যা করলেন লিওনার্দা৷
কুস্তিগির থেকে সিরিয়াল কিলার
মেক্সিকোর হুয়ানা বারাথা৷ জন্ম ১৯৫৭ সালে৷ ছিলেন পেশাদার কুস্তিগির৷ তবে মানুষ হত্যায় নেমে সেই পরিচয় প্রায় ভুলিয়ে দিয়েছেন৷ হুয়ানাকে এখন ঠান্ডা মাথার সিরিয়াল কিলার হিসেবেই চেনে সবাই৷ কমপক্ষে ১১ জনকে খুন করেছেন৷ আরো ৪৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনেও তাঁর হাত আছে বলে সন্দেহ করা হয়৷ ১১ জনকে খুন করার জন্য ৭৫৯ বছরের জেল হয়েছে হুয়ানার৷ এখনো জেলেই আছেন হুয়ানা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Deolarte
ধর্ষকামীদের হত্যা?
যুক্তরাষ্ট্রের আয়েলিন ক্যারল ওয়ারনোস ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে সাতজনকে খুন করেছিলেন৷ আয়েলিনের দাবি, ওই সাতজন পতিতা হিসেবে কাজ করার সময় তাঁকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল, আত্মরক্ষার্থে হত্যা করতে হয় তাদের৷এ দাবির সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ফ্লোরিডার আদালত৷ তাঁর জীবনকাহিনী নিয়ে টিভি সিরিয়াল, পূর্ণ দৈর্ঘ ছবিও হয়েছে৷ ‘মনস্টার’ ছবিতে আয়েলিনের চরিত্র রূপায়ন করে অস্কার জেতেন শার্লিজ থেরন৷
ছবি: Getty Images/Florida DOC
5 ছবি1 | 5
হাসপাতালে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ‘কার্ডিও' নাম দিয়ে ওল্ডেনবুর্গ পুলিশের যে বিশেষ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়, তারা প্রায় তিন বছর তদন্তের পর এবার ঘোষণা করেছেন যে, নিলস এইচ. শুধু মামলায় উল্লিখিত ছ'জন রোগীই নয়, সম্ভবত আরো ৮৪ জন রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী৷
আজ ৪০ বছর বয়সি পুরুষ নার্স নিলস এইচ.-কে ডেলমেনহর্স্ট ক্লিনিকের আইসিইউ বিভাগে ছ'টি হত্যাকাণ্ডের জন্য সাজা দেওয়া হয়৷ যদি আরো ৮৪টি হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সে জার্মানিতে দায়রা অপরাধের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ‘সিরিয়াল কিলার'-দের মধ্যে গণ্য হবে৷
১০০-র বেশি মৃতদেহ কবর থেকে বার করা হয়েছে
তদন্তকারীরা যে নিলস এইচ.-এর সব অপরাধের হদিশ পেয়েছেন, এমন নয়, কেননা একাধিক মৃত রোগীকে দাহ করা হয়েছে, যার ফলে কবর থেকে দেহাবশিষ্ট বার করে ময়না তদন্ত করা সম্ভব হয়নি – বলে জানান ওল্ডেনবুর্গের পুলিশ প্রধান ইওহান ক্যুহনে৷ নয়ত গত তিন বছরে তদন্তকারীরা শত শত রোগীর মেডিক্যাল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখেছেন, ২০০ জন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা খুঁটিয়ে বিবেচনা করেছেন, এছাড়া ১০০-র বেশি রোগীর মৃতদেহ কবর থেকে বার করে ময়না তদন্ত করে দেখা হয়েছে, লাশে কোনো ওষুধের চিহ্ন আছে কিনা৷
নিলস এইচ প্রথম ধরা পড়ে, যখন একজন মহিলা নার্স তাকে হাতে-নাতে ধরে ফেলেন৷ সেটা ছিল ২০০৫ সালের ঘটনা৷ কিন্তু তার অপরাধের ব্যাপকতা উপলব্ধি, তদন্ত ও নথিবদ্ধ করতে আরো দশ বছর সময় লেগে গেছে৷
‘স্বপ্নের নিবাস’ জেলখানা!
নেদারল্যান্ডসে অপরাধ কমে যাচ্ছে৷ তাই কর্তৃপক্ষ অব্যবহৃত জেলখানার এক অভিনব ব্যবহার বের করেছে৷ সেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের অস্থায়ী নিবাসের করা হয়েছে৷ প্রশ্ন হলো, থাকার জায়গা হিসেবে জেলখানা কেমন?
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
প্রথম দর্শনে স্বপ্নের নিবাস
অপরাধ নেই৷ তাই নিজেদের কারাগারগুলো বেলজিয়াম ও নরওয়েকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ডাচ সরকার৷ তারপরও অনেক জায়গা খালি৷ তাই এবার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের অস্থায়ী নিবাস হিসেবে এ সব কারাগার ব্যবহারের৷ ছবিটি আমস্টারডামের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেলমারবায়েস কারাগারের৷ এটি এখন একটি শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্র৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
অন্ধকারে আশার আলো
মাকো হুসা নামের এই নারী করিডোরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন৷ ৪০ বছর বয়সি এই শরাণার্থী এসেছেন ইথিওপিয়া থেকে৷ বেলমারবায়েস কারাগারে আশ্রয় নেয়া ৬০০ শরণার্থীর একজন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
কয়েক বর্গমিটারের স্বাধীনতা
পাকিস্তানের সংঘাতময় শহর পেশওয়ার থেকে পালিয়ে এসেছেন রাওয়াইজ ভাট্টি৷ ২৬ বছরের এই উচ্ছ্বল যুবককে প্রায়ই গিটার বাজিয়ে গান গেতে দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
নিপীড়নের ভয় নেই
সাবেক এই কারাগারের বর্তমান নিবাসীদের অনেকেই সংঘাত, নির্যাতন ও সুযোগের অভাবে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ এই শান্তির আশ্রয় এখন তাদের একটা নতুন শুরুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে৷ ছবিতে প্রার্থনায়রত ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছর বয়সি এক তরুণী৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
নতুন বন্ধন
বুরুন্ডির এক যুবক তাঁর নতুন কঙ্গোলিজ বন্ধুকে সাইকেল চালানো শেখাচ্ছেন৷ দু’জনই বেলমারবায়েসকে তাঁদের নতুন ঘর বলে মনে করেন৷ এই কারাগারে অনেক খালি জায়গা আছে যেখানে তাঁরা অবসর সময় কাটাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
মনে পড়ে স্বজনদের কথা
ডাচ ইমিগ্রেশন সার্ভিসের হিসেবে, ২০১৫ সালে তাদের কাছে আশ্রয় চেয়ে ৫৮,৯০০ জনের আবেদন জমা পড়েছে৷ পরের বছর সংখ্যাটি কমে ৩১,৬০০ হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, শরণার্থী আসা বন্ধ নেই৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইরিত্রিয়ান এক শরণার্থী তাঁর ফেলে স্বজনদের ছবি দেখাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
শিশুরাও আছে এখানে
কারাগারে নিজের ধরে মোবাইল ফোন হাতে সিরিয়া থেকে আসা পাঁচ বছর বয়সি সান্দি ইয়াযজি৷ ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ইউরোপে ১ লাখ ৭০ হাজার তরুণ শরণার্থী এসেছেন৷ এদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের সংখ্যা অনেক বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে অনেক দূরে
সিরিয়ার শহর বানিয়াস থেকে আসা শরণার্থী শিশু সহোদর মুসতাফা ও আবুদল রাহমান আরো দুই শিশুর সঙ্গে মিলে টেবিল ফুটবল খেলছে৷ কর্তৃপক্ষ সব বয়সিদের বিনোদনের জন্য কিছু না কিছু ব্যবস্থা রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
8 ছবি1 | 8
নিলস এইচ.-এর ডিউটি থাকলেই এত বেশি রোগী মারা যান কেন, তা নিয়ে ক্লিনিকে কথাও উঠেছিল৷ সে যে রোগীদের হত্যা করছে, ডেলমেনহর্স্টে তার বাস্তব হদিশও ছিল, বলে সরকারি কৌঁসুলির বিশ্বাস – যে কারণে দু'জন সাবেক সিনিয়র ফিজিসিয়ান ও বিভাগীয় হেড নার্সের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার দরুণ নরহত্যার মামলা করা হচ্ছে৷ ওল্ডেনবুর্গ ক্লিনিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনও তদন্ত চলেছে৷
ওল্ডেনবুর্গের পুলিশ প্রধান ইওহান ক্যুহনে-র মতে এর মধ্যে অনেক হত্যাকাণ্ড রোধ করা সম্ভব ছিল৷ তদন্তকারীদের মতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আরো সত্বর সক্রিয় হওয়া ও পুলিশকে সচেতন করা উচিত ছিল৷ ওল্ডেনবুর্গ ক্লিনিকেও নিলস এইচ. সংক্রান্ত অনেক কিছু চোখে পড়েছিল, বলে ক্যুহনে জানান৷
ফলশ্রুতি
জার্মান রোগী সুরক্ষা নিধি নিলস এইচ.-এর ঘটনার ফলশ্রুতি দাবি করেছে৷ পুলিশের বিশেষ কমিশনের সর্বাধুনিক বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে নিধির সভাপতি অয়গেন ব্রিশ জানিয়েছেন যে, নিলস এইচ.-এর পর্যায়ক্রমে হত্যাকাণ্ডের পরেও জার্মানির ২,০০০ হাসপাতালের অনেকগুলিতে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়নি৷ অধিকাংশ হাসপাতালে বেনামিতে খবর প্রদানের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ময়না তদন্তের প্রয়োজন৷ এছাড়া হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রমে মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান ও ওষুধপত্র প্রদানের উপর বিশদ নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত, বলে ব্রিশ-এর দাবি৷