‘ফুটবলে শুধু যে বোকাই আছে তা নয়, বোকার হদ্দও আছে’ – এ কথা জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী কয়েকজন ফুটবলারকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে জার্মানিরই এক পত্রিকা৷
বিজ্ঞাপন
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আর্জেন্টাইনদের কটাক্ষ করে নেচে জার্মানিতেই এখন তুমুল সমালোচিত মারিও গ্যোৎসেরা৷ গ্যোৎসের গোলেই ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারায় জার্মানি৷ তারপর থেকে আরেকটি উপমাও যোগ হয়েছে নামের আগে, গ্যোৎসে এখন ‘ওয়ান্ডার বয়' গ্যোৎসে৷ তবে মঙ্গলবার বার্লিনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ‘ওয়ান্ডার বয়' এবং তাঁর আরো পাঁচ সতীর্থ যে কাণ্ড করেছেন তাকে জার্মান সংবাদ মাধ্যম মোটেই ভালোভাবে নেয়নি৷ তাঁদের নাচকে ‘কুরুচিপূর্ণ' বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ফুটবলার হিসেবে তাঁদের বুদ্ধি নিয়ে উল্টো কটাক্ষই করেছে পত্রিকাগুলো৷
বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আগমন
লাখো ভক্তের অপেক্ষার অবসান হলো৷ দেশে ফিরেছে বিশ্বকাপ জয়ী জার্মান দল৷ বার্লিনের টেগেল বিমানবন্দরে লুফৎহানসার বিমান অবতরণের পর থেকে চলছে বিজয়ী সম্ভাষণ৷
ছবি: Reuters
ওই আসছে....
টেগেল বিমানবন্দরে জনসমুদ্র৷ কারো কারো আর তর সইছিল না৷ বিমানের দেখা পাওয়া মাত্রই তারকা খেলোয়াড়দের দেখতে হাতে দুরবিন তুলেন নেন তাঁরা৷ এখানে বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের টেরাসেই দুরবিন হাতে ব্যস্ত একজন৷
ছবি: ADAM BERRY/AFP/Getty Images
লুফৎহানসা হয়ে গেল ফ্যানহানসা
স্থানীয় সময় সকাল সোয়া দশটায় অবতরণ করে লুফৎহানসার বোয়িং ৭৪৭ বিমান৷ বিশেষ দিনে লুফৎহানসাও বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দলের ফ্যান, অর্থাৎ ভক্ত৷ তাই বিমানের নামের জায়গায় লুফৎহানসা নয়, লেখা ছিল ফ্যানহানসা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার আগে অধিনায়ক
ফুটবলারদের বিমান থেকে নামিয়ে আনতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ সিঁড়ি৷ বিশ্বকাপে জার্মানির চার সাফল্যের প্রতীক হিসেবে আঁকা ছিল চারটি তারকা৷ বিমানের গায়েও বড় বড় করে লেখা ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ এবং ২০১৪৷ ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ের সুবাদে পাওয়া জুলে রিমে ট্রফির অনুরূপ ট্রফিটি নিয়ে বিমান থেকে প্রথমে নেমে আসেন অধিনায়ক ফিলিপ লাম, তাঁর পেছনেই জার্মানির পতাকা গায়ে সহ-অধিনায়ক বাস্তিয়ান শোয়াইনস্টাইগার৷
ছবি: Matthias Kern/Bongarts/Getty Images
বিজয় মঞ্চের দিকে যাত্রা
বিমান থেকে বাসে৷ ছাদখোলা বাসটির গায়েও লেখা ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ এবং ২০১৪৷ ব্রাজিল থেকে সদ্য ফেরা দলটির খেলোয়াড়রা একে একে উঠলেন বাসে৷ ওঠার আগে সবাইকে পরিয়ে দেয়া হয় কালো টি-শার্ট৷ বিশ্বকাপ জয়ের স্মারক এই টি-শার্টগুলোর গায়ে লেখা #১, অর্থাৎ সবাই এক নম্বর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রান্ডেনবুর্গে অপেক্ষা
ব্রান্ডেনবুর্গ গেটে বিশাল মঞ্চকে ঘিরে অপেক্ষা করছে কয়েক হাজার ফুটবলভক্ত৷ ছেলে-বুড়ো, তরুণী-বৃদ্ধা সবাই এসেছেন বিশ্বকাপ জয়ীদের অভিনন্দন জানাতে৷ এই তরুণীকে আলাদাভাবেই ধরেছে ফটোগ্রাফারের ক্যামেরা৷
ছবি: ADAM BERRY/AFP/Getty Images
ভক্তের বিশ্বকাপ
জার্মান দলের দুই ভক্তের হাতেও ছিল বিশ্বকাপ ট্রফি৷ নকল হলেও তাঁদের ট্রফিটি কিন্তু আসলের তুলনায় বিশাল!
ছবি: picture-alliance/dpa
সমর্থক পরিবার
বিশ্বকাপ জয়ীদের সংবর্ধনা জানাতে ব্রান্ডেনবুর্গ গেটে ছিল ব্যাপক আয়োজন৷ নাচে-গানে মুখর চারপাশ৷ জার্মানির তারকা খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দেখতে এক সমর্থক এসেছিলেন দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে৷
ছবি: DW/B. Gräßler
তিন তরুণ
ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানির পুরো দলের পারফরম্যান্সই ছিল অসাধারণ৷ তবে শেষ হাসিটা ‘বিস্ময় বালক’ মারিও গ্যোটৎসের উপহার৷ তাঁর গোলেই আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে জার্মানি৷ এখানে গ্যোয়েটৎসের সঙ্গে টনি ক্রুস এবং শ্যুর্লে৷
ছবি: Reuters
ট্রফি হাতে বিশ্বজয়ীরা
হাজার হাজার সমর্থকের করতালি আর হর্ষধ্বনির মাঝে মঞ্চে উঠে আসেন জার্মান দলের খেলোয়াড়রা৷ শুরু হয় ট্রফি নিয়ে উল্লাস৷ জার্মানিতে আনন্দ-উল্লাস তো সবে শুরু৷ বিজয়ী বীরদের নিয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় এ উল্লাস নিশ্চয়ই আরো কিছুদিন চলবে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের পেছনে বিশাল মঞ্চে ৫ লাখ সমর্থকের সামনে নেচে-গেয়ে বিশ্বকাপ জয় উদযাপন করার এক পর্যায়ে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় কুঁজো হয়ে নেচে বেড়াতে দেখা যায় গ্যোৎসেসহ ছয় জার্মান ফুটবলারকে৷ কী নাচ ছিল সেটা? খেলোয়াড়রা তা-ও বলে দিয়েছেন৷ নাচতে নাচতে তাঁরা তখন গাইছিলেন, ‘‘এইভাবে গাউচোরা (আর্জেন্টাইনরা) হাঁটে, গাউচোরা হাঁটে ঠিক এইভাবে৷'' তারপরই লাফিয়ে নাচের ভঙ্গি বদলে ফেলেন তাঁরা৷ সোজা হয়ে নাচতে নাচতে তাঁরা তখন গাইতে থাকেন, ‘‘আর এভাবে জার্মানরা হাঁটে, জার্মানরা হাঁটে ঠিক এইভাবে৷'' উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের কাছে পুরো পরিবেশনাটি নিছক বিনোদনই মনে হয়েছিল৷ তাই নাচ দেখে তাঁরা প্রাণ খুলে হেসেছেন আর হাত তালি দিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরা ফুটবলারদের৷
কিন্তু সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াটা হয়েছে উল্টো৷ ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং গ্যোয়েৎসেদের সমালোচনা করে লিখেছে, ‘‘ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের কাছে বিজয় উদযাপনের অনুষ্ঠানটা জার্মানদের জন্য যেন এক আত্মঘাতী গোল৷ ফাইনালের প্রতিপক্ষকে ভাঁড়ের মতো কটাক্ষ করে ফুটবলাররা একটি মুক্তমনা, সহনশীল জাতিকেই খাটো করেছে৷''
টাগেসস্পিগেল গ্যোৎসেদের নাচকে ‘রুচিহীন' আখ্যা দিয়ে লিখেছে, এর মাধ্যমে ফুটবলাররা ব্রাজিলের মাঠে যে সুন্দর আচরণ দেখিয়ে সুনাম কুড়িয়েছিল তার অনেকটাই মাটি করে দিল৷ পত্রিকাটি জনসমক্ষে একটি জাতিকে কটাক্ষ করার মতো ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের সমালোচনা শেষ করেছে এভাবে, ‘‘জার্মানদের শালীনতাবোধের নিজস্ব অহংকারটাও গেল৷ তাঁদের কাছে নিজেদের আনন্দটাই যথেষ্ট ছিলনা, বোঝা গেল, দুঃখে নুয়ে পড়া প্রতিপক্ষের ওপর আরেকটু অত্যাচার চালানোর পরই শুধু তাঁদের আনন্দ পূর্ণতা পায়৷ জার্মানির বাইরের অনেক মানুষের মাথায় বিশ্বকাপের স্মৃতি হিসেবে এখন হয়তো এ ব্যাপারটাই থাকবে৷ এটাও হয়তো ঠিক যে এভাবে নেচে তাঁরা হয়তো বিশেষ কিছু বোঝাতে চাননি৷ কিন্তু তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন, ফুটবলে শুধু যে বোকাই আছে তা নয়, বোকার হদ্দও আছে৷ ''