গত ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট হাবিয়ের মিলেই যখন দায়িত্ব নেন, তখন তিনি বলেছিলেন, মুদ্রাস্ফীতি কমবে।
আর্জেন্টিনায় মার্চে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১১ শতাংশ। একমাস পর তা কমে হয়েছে আট দশমিক আট শতাংশ। ছবি: Agustin Marcarian/REUTERS
বিজ্ঞাপন
মার্চের তুলনায় এই মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার কমেছে। মার্চে এই হার ছিল ১১ শতাংশ। এপ্রিলে তা হয়েছে আট দশমিক আট শতাংশ। এটাকেই তাদের জয় হিসাবে দেখছে প্রেসিডেন্ট মিলেইয়ের অফিস। তিনি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন মাসিক মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিল ২৫ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, মুদ্রাস্ফীতির হার কমানোই হবে তার প্রথম কাজ।
প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তার মৃত্যু-পরোয়ানায় সই করা হয়ে গেছে।
কিন্তু সরকারি রিপোর্ট বলছে, এপ্রিলে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার দেখানো হয়েছে ২৮৯ দশমিক চার শতাংশ।
মিলেই কড়া হাতে অর্থনীতির হাল ধরেন। সরকারি খরচ ও বাজেট ঘাটতির পরিমাণ কম করার চেষ্টা করেন।
তিনি ৫০ হাজার সরকারি চাকরি শেষ করে দেন। সরকারি কাজের জন্য নতুন বরাত দেয়া বন্ধ করেন। তেল ও পরিবহনে ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করেন।
আর্জেন্টিনার সেলুনে ১৯,৯০০% মুদ্রাস্ফীতির ইতিহাস
৪১ বছর ধরে মানুষের চুল কাটেন রুবেন গালান্তে৷ কিন্তু এক সময় অভাব দেখ৷ দিলে কারণ বুঝতে শুরু করেছিলেন দোকানের সব হিসেব লিখে রাখা৷ তাতেই তিনি এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনামে৷ ছবিঘরে বিস্তারিত....
ছবি: Agustin Marcarian/REUTERS
দুশ্চিন্তায় কাহিল রুবেন গালান্তে
আর্জেন্টিনায় দ্রব্যমূল্য এখন এমন অসহনীয় পর্যায়ে যে রুবেb গালান্তে ভেবে পান না বাকি জীবন কাটাবেন কিভাবে৷ ৬৭ বছরের জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই দেখেছেন ঠিকই, তবে এমন দুঃসময় আর কখনো দেখেছেন বলে মনে হয় না, ‘‘আজকের তুলনায় ১৫ পেসোর ওই দিনগুলোয় আমার ক্রয়ক্ষমতা অনেক বেশি ছিল৷ এখন তো একজনের চুল কাটার টাকায় একটা মোৎসারেলা পিৎসাও কেনা যায় না!’’
ছবি: Agustin Marcarian/REUTERS
১৫ থেকে ৩০০০
‘১৫ পেসোর দিন’ বলতে রুবেন গালান্তে আসলে ১৯৯১ সালের দিকের কথা বুঝিয়েছেন, নিজে তো তখন তরুণ ছিলেনই দেশের অর্থনীতিও যথেষ্ট ভালো ছিল৷ একজনের চুল কেটে পেতেন ১৫ পেসো, ৩২ বছর পর ১৫ পেসো বেড়ে হয়েছে ৩০০০ পেসো৷ দেখে মনে হয় অনেক টাকা, কিন্তু বাজারে গেলে বোঝা যায় ৩০০০ পেসো সেই ১৫ পেসোর চেয়ে কত অসহায়!
ছবি: Agustin Marcarian/REUTERS
খেরোখাতায় দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের চিত্র
রুবেনের ক্ষৌরকারের জীবন শুরু ১৯৮৩ সালে৷ শুরুটা ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে৷ গরিবি হালের সেই হেয়ার স্যালন অল্প কিছুদিনেই বেশ জমে যায়৷ ১৯৯১ সালে দোকানঘরটি কিনে নেন৷ কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে দেশে দেখা দেয় অর্থনৈতিক মন্দার লক্ষণ৷ দিন যায়, বছর যায় কিন্তু দেশের অর্থনীতি আর ভালো হয় না৷ ২০ বছর আগে কী ভেবে যেন হিসেব লিখতে শুরু করেছিলেন রুবেন৷ তার সেই খাতা বা নোটবুকগুলো এখন যে দেখে সে-ই অবাক হয়৷
ছবি: Agustin Marcarian/REUTERS
অর্থনৈতিক মন্দা : কির্শনার থেকে আলবার্তো ফার্নান্দেস
প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের শাসনামলে তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ৭৫৭% মুদ্রাস্ফীতি দেখছে আর্জেন্টিনা৷ প্রেসিডেন্ট নেস্তর কির্শনারের শাসনামলে (২০০৩-২০০৭) একজনের চুল কাটার মজুরি ১৫ পেসো ৫৩% পর্যন্ত বেড়েছিল, তারপর ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ কির্শনারের সময় বেড়েছে ২০০%, ২০১৫ সালে মারিসিও মাক্রির আমলে আইএমএফ-এর ৫৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে আরো বড় সংকটে পড়ে আর্জেন্টিনার অর্থনীতি৷
ছবি: Agustin Marcarian/REUTERS
১৯,৯০০০ % মুদ্রাস্ফীতি!
২০ বছর ও তার আগের নানা দ্রব্যের দাম এবং সেবার অর্থমূল্যের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করে রুবেন দেখেছেন কিছু ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি ১৯, ৯০০০%-এ গিয়ে ঠেকেছে৷ ভাবা যায়!
ছবি: Agustin Marcarian/REUTERS
5 ছবি1 | 5
আইএমএফ এবং বিনিয়োগকারীরা এই সব সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। আইএমএফ মঙ্গলবারই আর্জেন্টিনাকে ৮০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
গরিব ও শ্রমিকরা বিপাকে
বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, অর্থের এই ছাঁটাইয়ের ফলে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হবে। পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইকনমিক্সের সঙ্গে যুক্ত মনিকা দ্য বলে মনে করেন, ''মানুষ খরচ করা কমিয়ে দিয়েছে বলে সার্বিকভাবে খরচ কমে গেছে। তাই মুদ্রাস্ফীতির হার কম হয়েছে।''
তার মতে, ''মানুষের অবস্থা আগের থেকে খারাপ হয়েছে। তারা বাধ্য হয়ে খরচ কমাচ্ছে।"
মিলেইয়ের সমালোচকরা দাবি করেছেন, তার নীতির ফলে গরিব ও শ্রমিকদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়েছে।
সরকারি তথ্য বলছে, গরিবদের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। তার সমালোচকদের মতে, খরচ কমানো ও অর্থ না থাকার কারণে এটা ঘটেছে।