সেমিফাইনাল পর্ব শুরু৷ ব্রাজিল বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পথে৷ বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা মূলত দুই শিবিরে বিভক্ত৷ একপক্ষ দেখতে চান ব্রাজিলের জয়, অন্যপক্ষ আর্জেন্টিনার৷ তবে এক ব্লগার চান শুধু সুন্দর ফুটবলের জয়৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘বিশ্বকাপ চলছে৷ স্বভাবতই ফুটবল নিয়ে মাতামাতিটা আকাশচুম্বী৷ একদল ব্রাজিল, একদল আর্জেন্টিনা, কেউ কেউ জার্মানি, নেদারল্যান্ডস৷ একদল আছে অ্যান্টি-আর্জেন্টিনা, অ্যান্টি-ব্রাজিল৷ প্রিয় দলের জার্সি কেনা, পতাকা উড়ানো৷ চায়ের দোকান, ক্লাস রুম, ড্রয়িং রুম থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়েও চলছে কথার লড়াই৷ কার দল সেরা? কোন দলের শক্তির জায়গা কী? এসব নিয়ে ঝড়ো তর্কযুদ্ধ৷''
আমার ব্লগের এই ব্লগার জানিয়েছেন, ‘‘১৯৯৮-তে প্রথম বিশ্বকাপ দেখি৷ ঐ সময়ে অল্প অল্প ফুটবল বুঝতাম৷ এই যেমন-গোল, ফাউল, রেফারি ইত্যাদি ইত্যাদি৷ ১৯৯৮-তে আমি ব্রাজিল করতাম আব্বুর প্ররোচনায়৷ ২০০২ থেকে খেলার আদি অন্ত মোটামুটি বুঝি আর তখন থেকেই আর্জেন্টিনার অন্ধ ভক্ত৷''
ব্রাজিল-জার্মানি ম্যাচ, জার্মানিতে ব্রাজিল
২০১৪ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি স্বাগতিক ব্রাজিল৷ ছবিঘরে থাকছে দু’দলের ম্যাচ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আর জার্মান ফুটবলে সাড়া জাগানো কয়েকজন ব্রাজিলিয়ানের কথা৷
ছবি: Getty Images
ব্রাজিল অনেক এগিয়ে
এবারের সেমিফাইনালটি হবে ব্রাজিল-জার্মানির ২২তম ম্যাচ৷ আগের ২১ বারে সেলেসাওরা জিতেছে ১২ বার, আর জার্মানি জয় পেয়েছে মোট চারটি ম্যাচে৷ বাকি পাঁচটা ম্যাচ শেষ হয়েছে অমীমাংশিতভাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানিকে হতাশায় ডোবানো সেই ম্যাচ
দু’দলের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনালে৷ সেই ম্যাচে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল৷ ব্রাজিলের হয়ে গোল দুটো করেছিলেন রোনাল্ডো৷ জার্মানদের কাছে সেই ম্যাচ একেবারেই স্মরণযোগ্য হয়নি৷ ম্যাচের পরই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন জার্মান ফুটবলার৷
ছবি: picture-alliance/ASA
হলুদ-জ্বর
ইতিমধ্যে একটি করে হলুদ কার্ড পাওয়ায় জার্মানির ফিলিপ লাম, শোয়াইনস্টাইগার, খেদিরা আর হ্যোভেডেস ব্রাজিলের বিপক্ষে হয়তো খেলতে নামতেন দুরু দুরু বক্ষে৷ আগের নিয়ম অনুযায়ী, আগের একটি হলুদ কার্ডের সঙ্গে সেমিফাইনালে আরেকটি যোগ হলে ফাইনাল থেকে বাদ পড়তেন তাঁরা৷ এখন অবশ্য আগের হলুদ কার্ড সেমিফাইনালের হিসেবে আসবে না৷ সুতরাং ব্রাজিলকে হারাতে পারলে আরেকটি করে হলুদ কার্ড পেলেও ফাইনালে খেলতে পারবেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘গ্রেট’ এলবার
জিওভানে এলবার৷ জার্মানিতে খেলা অন্যতম সেরা ব্রাজিলিয়ান৷ বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলেছেন ৬ বছর৷ ওই সময়ে ১৩০টিরও বেশি গোল করে বায়ার্নকে লিগ শিরোপা জিতিয়েছেন চারবার৷ বাভারিয়ায় দারুণ জনপ্রিয় এলবার৷ তবে ব্রাজিলে খুব একটা কদর পাননি৷ ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন মাত্র ১৫টি ম্যাচ৷ কিন্তু জার্মানিতে এখনো তাঁর ভীষণ কদর৷ এই বিশ্বকাপে এলবার ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন জার্মান চ্যানেল এআরডি-র হয়ে৷
ছবি: AP
গোলমেলে ব্রেনো
ব্রেনো জার্মান লিগ বুন্ডেসলিগায় খেলতে এসেছিলেন ২৪ বছর বয়সে৷ ছিলেন বায়ার্ন মিউনিখ দলে৷ ২০১১ সালে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে৷ তিন বছরের কারাদণ্ড হলেও ২০১৩ সালে মুক্তি পান৷ এমন দুঃসময়েও তাঁর পাশে থেকেছে বায়ার্ন৷ নিজেদের অনুর্ধ-২৩ দলের কোচের দায়িত্ব ব্রেনোকেই দিয়েছে তারা৷ ব্রাজিলের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ১৪টি ম্যাচ খেলা ব্রেনো উচ্ছৃঙ্খলতার কারণেই বেশি দূর এগোতে পারেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডর্টমুন্ডের প্রিয় সন্তান
লিওনার্দো ডে ডস সান্টোস৷ ডেডে নামেই বেশি পরিচিত ব্রাজিলিয়ান এই ফুটবলার৷ জার্মানিতে খেলেছেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে৷ দু’বার বুন্ডেসলিগা জিতিয়েছেন ক্লাবটিকে৷ গত বছর তুরস্কের এক ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে৷ ফলে জার্মানিতে খেলার পাঠ বোধহয় চুকেছে৷ তুর্কি ক্লাবেই সম্ভবত ক্যারিয়ার শেষ করতে চলেছেন ডেডে৷ বয়স ৩৬৷ ব্রাজিলের হয়ে একটি ম্যাচ খেলা এই ফুটবলারের ফুটবলকে অনেক দেয়ার থাকলেও বয়সটা অনুকুলে নেই৷
ছবি: Lars Baron/Bongarts/Getty Images
বাভারিয়ার ব্রাজিলিয়ান
ছবির এই তিন ব্রাজিলিয়ানের সঙ্গে জুড়ে আছে বায়ার্ন মিউনিখের নাম৷ দান্তে (ডান দিকে) সেমিফাইনালে খেলতে পারেন দুটি হলুদ কার্ডের কারণে বাদ পড়া অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার জায়গায়৷ মিডফিল্ডার লুইস গুস্তাভো (বাঁ দিকে) তো ব্রাজিল দলের প্রায় নিয়মিত সদস্য৷ সম্প্রতি বায়ার্ন ছেড়ে ভল্ফসবুর্গে যোগ দিয়েছেন তিনি৷ ছবির তৃতীয় জন রাফিনইয়া (মাঝে) ২০১১ সাল থেকে খেলছেন বায়ার্নে, তবে বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলে সুযোগ পাননি৷
ছবি: Thomas Niedermueller/Bongarts/Getty Images
নেইমার নেই, নেই রয়েস
চোটের কারণে নেইমার বিশ্বকাপে আর খেলতে পারবেন না বলে বিশ্বজুড়েই চলছে হাহাকার৷ জার্মান দলের অপহিরার্য ফুটবলার মার্কো রয়েসও কিন্তু চোটের কারণে বিশ্বকাপে খেলতে পারছেন না৷ বিশ্বকাপের আগে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে চোট পান রয়েস৷ সেখানেই শেষ তাঁর ২০১৪ বিশ্বকাপ স্বপ্ন৷
ছবি: Reuters
স্কোলারি বনাম ল্যোভ
দু’দলের দুই তারকা কোচ৷ ব্রাজিলে লুই ফেলিপে স্কোলারি আর জার্মান দলে ইয়াওখিম ল্যোভ৷ দলের সাফল্যে দুজনেরই রণকৌশল বড় ভূমিকা রেখে আসছে৷ সেমিফাইনালেও বড় ভূমিকা রাখবেন দুজন৷ ব্রাজিল-জার্মানি ম্যাচে দুই কোচের কৌশলের লড়াইটাও নিঃসন্দেহে বড় আকর্ষণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রেকর্ডের সামনে ক্লোজে
সেমিফাইনালে যদি সুযোগ পান আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি গোলও করতে পারেন তাহলেই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটা নিজের করে নেবেন মিরোস্লাভ ক্লোজে৷ ব্রাজিলের সাবেক গ্রেট রোনাল্ডো আর ক্লোজে দু’জনেই ১৩টি করে গোল করেছেন বিশ্বকাপে৷ তাই রেকর্ডটি এখনো তাঁদের যৌথ মালিকানায়৷ আর একটি গোল পেলেই রোনাল্ডোকে ছাড়িয়ে যাবেন ক্লোজে৷
ছবি: Getty Images
10 ছবি1 | 10
সমর্থকদের মধ্যে সুন্দর-অসুন্দর লড়াইয়ের উল্লেখও আছে রাব্বির লেখায়৷ সেরকম লড়াইয়ে নিজেও যে শরিক হন তা জানাতে গিয়ে রাব্বি লিখেছেন, ‘‘আমি আর্জেন্টিনার অন্ধ সমর্থক৷ তাই মাঝে মাঝে মজা করে অনেক স্ট্যাটাস দেই বিভিন্ন দলকে তাচ্ছিল্য করে৷ কিন্তু আমি অল্প হলেও বুঝি আর্জেন্টিনা দলের সামর্থ্য কতটুকু অথবা ব্রাজিল, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসের মধ্যে কার শক্তির জায়গা কতটুকু, কোন ম্যাচে কী ফলাফল হতে পারে৷ তাই নিজেদের পণ্ডিত ভেবে অত ফাল পারার কী আছে!''
ফুটবলের অন্য সব আসরের চেয়ে বিশ্বকাপ আলাদা৷ এর আকর্ষণ সর্বব্যাপী৷ তাই রাব্বি রহমানও লিখেছেন, ‘‘আপনি হয়ত ক্লাব ফুটবল নিয়মিত দেখেন, কিন্তু গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলেটাও বিশ্বকাপের সময় তার প্রিয় দলের খেলা নিয়মিত দেখে মন দিয়ে৷ জার্সি পরে, পতাকা ওড়ায়, তার সব আবেগ উজাড় করে দেয়৷....জয় হোক ফুটবলের, প্রস্ফুটিত হোক আমাদের মনুষত্যবোধ আর শিষ্টাচারের চর্চা৷ জয়তু বিশ্বকাপ ফুটবল!!!''
সামহয়্যারইন ব্লগে মামুন বেলায়েতের লেখাটিও ব্রাজিল বিশ্বকাপ নিয়ে৷ শিরোনাম ‘আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল নয়, ভালো খেলার জয় হোক'৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল৷ আনন্দ-বিনোদনের কিছু দিন৷ কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেটিনা, কেউ বা জার্মানি...৷ সবার মাঝেই দৃঢ় মনোবল৷ খেলছে ১১ জন, নাচছে কোটি মানুষ৷ এর মাঝেই ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মাঝে দ্বন্দ্ব আর সংঘাত৷ এ সংঘাতে জড়ানো মানুষগুলোর অনেকেই সমর্থিত দলের ৫ জন প্লেয়ারের নামও জানে না৷ অনেকে প্রিয় দলের পতাকার জন্য কত টাকাই না খরচ করলেন৷ কী লাভ জানি না৷''