শান্তিতে নোবেল জয়ী এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পরিবারের সদস্যদের আর্থিক বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ তলব করা হয়েছে তাঁদের ব্যাংকের হিসাব৷ তবে ইউনূস ছাড়াও তলব করা হয়েছে আরো ১১ জনের ব্যাংক হিসাব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ব্যাংক-এর ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং এনবিআর আলাদা আলাদাভাবে চিঠি দিয়ে তাঁদের ব্যাংক হিসাবের নানা তথ্য চেয়েছে৷ এনবিআর-এর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)৷
ড. ইউনূসকে এনবিআর যে চিঠি পাঠিয়েছে, তাতে ড. ইউনূস ও তাঁর স্ত্রীসহ গ্রামীণ ব্যাংকের নামে এফডিআর, মেয়াদি আমানত, সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ বিতরণের তথ্য, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার, ভল্ট এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া তাঁর ট্যাক্স সংক্রান্ত তথ্যও চাওয়া হয়েছে৷ গ্রামীণ ব্যাংক বা গ্রামীণ ব্যাংক সশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তাঁর, তাঁর স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের আর্থিক লেনদেনের হিসাব চওয়া হয়েছে৷ ড. ইউনূসের স্ত্রী আফরোজী ইউনূসের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েও আলাদা চিঠি দেয়া হয়েছে বলে খবর৷
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশেই দারিদ্র্যমোচনে সহায়তা করছে না ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প৷ নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এই উদ্ভাবন এখন উন্নত বিশ্বেও গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জার্মানি এক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে উদাহরণ৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images
সিলভিয়ার গল্প
বাড়িতে বাড়িতে চিঠিপত্র বিলি করতে করতেই জার্মানির সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার একটি বিষয় লক্ষ্য করেন৷ অনেক বাড়ির ছাদে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল৷ তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, এসব প্যানেল পরিষ্কার করা হয় কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ক্ষুদ্রঋণের সন্ধান পান তিনি৷
ছবি: privat
দু’হাজার ইউরো দিয়ে শুরু
সিলভিয়া আবিষ্কার করেন, সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ তেমন কেউ করছে না৷ অথচ মাত্র দু’হাজার ইউরো দিয়ে মেশিন কিনে এই কাজ করা সম্ভব৷ কিন্তু সাধারণ ব্যাংক এত কম টাকা ঋণ দিতে রাজি নয়৷ সিলভিয়া তখন ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নেন৷
ছবি: DW/G.Rueter
জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত উন্নত অর্থনীতির কারণে জার্মানিকে ক্ষুদ্রঋণের অনুপযুক্ত মনে করা হতো৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন৷ ২০১০ সালে জার্মান সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এদেশে চালু হয় ক্ষুদ্রঋণ তহবিল৷ এই তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার হার দ্রুতই বাড়ছে৷
ছবি: Fotolia/apops
ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে ৬০টি প্রতিষ্ঠান
জার্মান মাইক্রোফিন্যান্স ইন্সটিটিউটের ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে বর্তমানে ৬০টির বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা দিচ্ছে৷ তাদের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ তিন হাজার থেকে ২০ হাজার ইউরোর মধ্যে৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Fotolia/Guido Grochowski
চাহিদা বাড়ছে
শুধু জার্মানি নয়, গোটা ইউরোপেই ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে৷ মার্কিন পত্রিকা ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের’ এক জরিপ বলছে, ইউরোপে ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে৷ শুধু স্পেনেই এই সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নিয়েছেন ৭৫ হাজার ব্যবসায়ী৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সুদের হার লাভজনক নয়
ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ দানের ক্ষেত্রে সুদের হার এখন মাত্র দশ শতাংশ৷ এই হার ঋণদাতাদের জন্য লাভজনক নয়৷ তবে সরকার এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সহায়তা দিচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সন্তুষ্ট সিলভিয়া
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ শুরু করা সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার কিন্তু সন্তুষ্ট৷ শুরুর দিকে বছরে আশিটির মতো কাজের অর্ডার পেতেন তিনি৷ এখন সেই অর্ডারের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে৷ একেকটি অর্ডার থেকে তাঁর আয় তিন থেকে চারশো ইউরো৷ ফলে ঋণের টাকা শোধ করা কোনো বিষয়ই নয়৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
ক্ষুদ্রঋণের জনক মুহাম্মদ ইউনূস
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক৷ বিশ্বের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে এই সম্মাননা অর্জন করে গ্রামীণ ব্যাংক৷ অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ক্ষুদ্রঋণের ধারণা কাজে লাগিয়ে আশির দশকে ব্যাংকটি গড়ে তোলেন৷ বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক দেশে সাফল্য দেখিয়েছে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প৷
এদিকে শুধু ড. মুহাম্মদ ইউনূসই এবং তাঁর স্ত্রীই শুধু নয়, আরো অন্তত ১১ জনের ব্যাংকের হিসাব ও আয়করের নানা তথ্য নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ সরকারে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআর তাদের ব্যাংক হিসাবের খবর নিচ্ছে৷ অবশ্য গোয়েন্দাদের হাতে কী তথ্য রয়েছে তা জানা যায়নি৷ তাছড়া এই চিঠির ব্যাপারের বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআর-এর আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্যও পাওয়া যায়নি৷
‘‘বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হয়রানির উদ্দেশ্যে হলে তা হবে দুঃখজনক’’
This browser does not support the audio element.
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং করফাঁকি রোধে এনবিআর এ ধরনের উদ্যোগ নিতেই পারে৷ এটা তাদের এখতিয়ার৷ তবে সেটা যদি রাজস্ব ফাঁকি রোধে না হয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হয়রানির উদ্দেশ্যে হয় তা হবে দুঃখজনক৷’’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৮৩ সালে ক্ষুদ্রঋণ তিবরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন৷ প্রতিষ্ঠার সময়কাল থেকেই তিনি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করছিলেন৷ ২০০৬ সালে তিনি ও গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পায়৷ কিন্তু ২০১১ সালে তাঁকে ঐ পদ থেকে অপসারণ করা হয়৷ ড. ইউনূসের কিরুদ্ধে আদালতে গেলেও সরকারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে৷
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷