আর্থিক তদন্তের মুখে ড. ইউনূস
৯ ডিসেম্বর ২০১৬বাংলাদেশ ব্যাংক-এর ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং এনবিআর আলাদা আলাদাভাবে চিঠি দিয়ে তাঁদের ব্যাংক হিসাবের নানা তথ্য চেয়েছে৷ এনবিআর-এর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)৷
ড. ইউনূসকে এনবিআর যে চিঠি পাঠিয়েছে, তাতে ড. ইউনূস ও তাঁর স্ত্রীসহ গ্রামীণ ব্যাংকের নামে এফডিআর, মেয়াদি আমানত, সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ বিতরণের তথ্য, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার, ভল্ট এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া তাঁর ট্যাক্স সংক্রান্ত তথ্যও চাওয়া হয়েছে৷ গ্রামীণ ব্যাংক বা গ্রামীণ ব্যাংক সশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তাঁর, তাঁর স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের আর্থিক লেনদেনের হিসাব চওয়া হয়েছে৷ ড. ইউনূসের স্ত্রী আফরোজী ইউনূসের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েও আলাদা চিঠি দেয়া হয়েছে বলে খবর৷
এ নিয়ে ইউনূস সেন্টারের মুখপাত্র সাব্বির ওসমান কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘‘এনবিআর-এর নোটিস সম্পর্কে আমার পক্ষে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়৷''
তবে ড. ইউনূসের আয়কর রিটার্ন-এর তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘প্রফেসর ইউনূস তাঁর আয়কর সম্পর্কিত সব তথ্য সব সময়ই সময়মত দিয়েছেন৷’’
এনবিআর চিঠি দিয়েছে ১৭ নভেম্বর৷ এরপর চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক৷ তাদের চিঠি অনুযায়ী এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ঐ সব তথ্য পাঠানোর কথা৷
এর আগে ২০১৫ সালে এনবিআর ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ‘দান কর’ না দেওয়ার অভিযোগ করে তা পরিশোধে নোটিস দেয়৷
এদিকে শুধু ড. মুহাম্মদ ইউনূসই এবং তাঁর স্ত্রীই শুধু নয়, আরো অন্তত ১১ জনের ব্যাংকের হিসাব ও আয়করের নানা তথ্য নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ সরকারে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআর তাদের ব্যাংক হিসাবের খবর নিচ্ছে৷ অবশ্য গোয়েন্দাদের হাতে কী তথ্য রয়েছে তা জানা যায়নি৷ তাছড়া এই চিঠির ব্যাপারের বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআর-এর আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্যও পাওয়া যায়নি৷
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং করফাঁকি রোধে এনবিআর এ ধরনের উদ্যোগ নিতেই পারে৷ এটা তাদের এখতিয়ার৷ তবে সেটা যদি রাজস্ব ফাঁকি রোধে না হয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হয়রানির উদ্দেশ্যে হয় তা হবে দুঃখজনক৷’’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৮৩ সালে ক্ষুদ্রঋণ তিবরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন৷ প্রতিষ্ঠার সময়কাল থেকেই তিনি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করছিলেন৷ ২০০৬ সালে তিনি ও গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পায়৷ কিন্তু ২০১১ সালে তাঁকে ঐ পদ থেকে অপসারণ করা হয়৷ ড. ইউনূসের কিরুদ্ধে আদালতে গেলেও সরকারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে৷
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷