পশ্চিমবঙ্গের পুজো কমিটিগুলির জন্য ২৫৮ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪৩ হাজার পুজো কমিটি সরকারি অনুদান পাবে।
বিজ্ঞাপন
আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ দিতে পারছে না রাজ্য সরকার। অনেক বিভাগ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ অর্থ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। কারণ, সরকারের কাছে টাকা নেই। সমানে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার নীতি নেয়ায় সিংহভাগ অর্থই চলে যাচ্ছে সুদ ও ঋণ পরিশোধ করতে। এই অবস্থাতেও পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে সরকারি সাহায্যের পরিমাণ আরো বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত, রাজ্যের ব্লক পর্যায় পর্যন্ত ৪৩ হাজার পুজো কমিটি ৬০ হাজার টাকা করে পাবে। সেই সঙ্গে তাদের বিদ্যুতের বিলেও ৬০ শতাংশ ভর্তুকি পাওয়া যাবে। দমকল-পুরসভা-পঞ্চায়েত করও কমিটিগুলিকে দিতে হবে না। রাজ্যের আর্থিক হাল যেরকমই হোক না কেন, দুর্গাপুজো নিয়ে রীতিমতো কল্পতরু মমতা।
পদযাত্রাও হবে
দুর্গাপুজো নিয়ে পদযাত্রার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ১ সেপ্টেম্বর এই পদযাত্রা হবে। দুর্গাপুজো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় এই পদযাত্রা হবে। দুপুর দুটোয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে জমায়েত হবে। সেখানে পুজো কমিটিগুলো আসবে। তারা রঙ-বেরঙের পতাকা, ছাতা নিয়ে রঙিন পোশাক পরে সেখানে যাবে। ১০ হাজার পড়ুয়াও তাতে অংশ নেবে। সেজন্য সব স্কুল-কলেজ আগে ছুটি হয়ে যাবে। অফিসও।
বাঁশি, শাঁখ, ঢোল, ব্যান্ড নিয়ে মিছিল হবে। রানি রাসমণি রোড ধরে মিছিল ধর্মতলায় যাবে। এতদিন পুজোর পর বিসর্জনের সময় কার্নিভাল হতো। এবার শুরু ও শেষে দুইদিন কার্নিভালের ব্যবস্থা করেছেন মমতা।
শুরু হয়েছে সেই মহালয়ার পর থেকে। একের পর এক পুজোর উদ্বোধন করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি নেতারাও। তবে বামেরা পুজোর উদ্বোধনে নেই। তারা ব্যস্ত বুকস্টল নিয়ে।
ছবি: Satyajit Shaw
উদ্বোধনে ব্যস্ত মমতা
প্রতিদিন প্রচুর পুজোর উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাত জুড়ে। কখনো উত্তর, কখনো দক্ষিণ বা মধ্য কলকাতায় পুজোর উদ্বোধনে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। উপরের ছবিটি দক্ষিণ কলকাতার ৬৬ পল্লির পুজোর।
ছবি: Satyajit Shaw
সঙ্গী ফিরহাদ হাকিম
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনেক পুজোর উদ্বোধনেই দেখা গেছে দলের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। ৬৬ পল্লির পুজোর উদ্বোধনেও সঙ্গী ফিরহাদ।
ছবি: Satyajit Shaw
নাকতলায় পুজো উদ্বোধনে
নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
ছবি: Satyajit Shaw
দেবীমূর্তির আরাধনায়
উদ্বোধনের পর দুর্গামূর্তির পায়ে ফুল ছড়িয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছবি: Satyajit Shaw
তারকাদের সঙ্গে মদন মিত্র
তারকাদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক মদন মিত্রের পুজো উদ্বোধন। মদন মিত্রের সঙ্গে ছিলেন দুই তারকা, বনি ও কৌশানি।
ছবি: Satyajit Shaw
পুজো উদ্বোধনে দিলীপ ঘোষ
বিজেপি নেতারাও পুজোর উদ্বোধন করেছেন। তবে গতবার পুজোর উদ্বোধনে তারা যতটা সক্রিয় ছিলেন, এবার তার থেকে কিছুটা কম। দলের রাজ্য সভাপতি না থাকলে কী হবে, দিলীপ ঘোষ কয়েকটি পুজোর উদ্বোধন করেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw
সিপিএমের বুকস্টল
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সময়ও বাম নেতাদের পুজোর উদ্বোধনে বিশেষ দেখা যায়নি। তারা বরাবর পুজোমণ্ডপের বাইরে বইয়ের স্টল দেন। এবারও দিয়েছেন। তারা তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw
বুকস্টল দিয়েছে এসইউসি-ও
আরেক বাম দল এসইউসি-ও বইয়ের স্টল দিয়েছে পুজোমণ্ডপের বাইরে। তারাও দীর্ঘদিন ধরে পুজোর সময় বইয়ের স্টল দেন।
ছবি: Satyajit Shaw
তৃণমূলেরও বুকস্টল
তৃণমূলও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। কিছুদিন আগেই শুরু হয়েছে দলীয় মুখপত্র জাগো বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র। পুজোসংখ্যাও বের হয়েছে। বুকস্টলে সেসবই রাখা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw
9 ছবি1 | 9
দীর্ঘ ছুটি
এবার দুর্গাপুজোয় টানা ১১ দিন সরকারি ছুটি থাকবে। মমতা জানিয়েছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপুজোর ছুটি থাকবে। তবে সরকারি কর্মীদের জন্য ছুটির সুখবর এখানেই শেষ নয়। ২২ ও ২৩ অক্টোবর শনি ও রোববার। ২৪ ও ২৫ অক্টোবর থাকবে কালীপুজোর ছুটি। ২৬ তারিখ অতিরিক্ত ছুটি নেয়া যাবে। ২৭ অক্টোবর ভাইফোঁটার ছুটি। ২৯ ও ৩০ আবার শনি ও রোববার। ৩১ তারিখ ছটের ছুটি। ফলে আবার কার্যত ১০ দিনের ছুটি পাবেন সরকারি কর্মীরা। ছুটিতে ছুটিতেই কেটে যাবে অক্টোবর মাস। ফলে মমতার পুজো-প্যাকেজের মধ্যে কমিটিগুলিকে ঢালাও অনুদান, কর্মীদের ঢালাও ছুটি, কার্নিভাল সবই আছে।
কেন সরকারি সাহায্য?
মমতা বলেছেন, ''অনেকে অনেকরকম কথা বলেন। তারা বলেন, কলকাতায় নাকি দুর্গাপুজো হয় না। সরস্বতী পুজো করতে দেয়া হয় না। কিন্তু সত্য হলো, কলকাতার মতো দুর্গাপুজো আর কোথাও হয় না।'' তাই সরকারের হাতে টাকা না থাকলেও পুজো কমিটিগুলোকে সাহায্য দেয়ার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
বিরোধীদের সমালোচনা
বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ''টাকার অভাবে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতি করা যাচ্ছে না। রাস্তার মেরামতি হচ্ছে না। হাসপাতালে ওষুধ নেই। খালি পদে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। সরকারি কর্মীদের ডিএ দেয়া হচ্ছে না। সরকার ভাবছে পুজো কমিটিগুলো তাদের বাঁচিয়ে দেবে।''
ভারত-বাংলা সীমান্তে 'ভাগের মা' থেকে জুতোর প্যান্ডেল, কলকাতার সেরা ও বিতর্কিত পুজো
কলকাতার অসংখ্য পুজোর মধ্যে থেকে সেরা কিছু পুজোর ছবি থাকছে এখানে। থাকছে কিছু বিতর্কিত পুজোর কথাও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ভারত-বাংলা সীমান্তে 'ভাগের মা'
দক্ষিণ কলকাতার বড়িশা স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোয় উঠে এসেছে এক অভিনব থিম। ক্লাবের কর্মকর্তারা থিমের নাম দিয়েছেন 'ভাগের মা'। ভারত ও বাংলাদেশের দুই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার মাঝে নো ম্যানস ল্যান্ডে দুর্গা। এনআরসি, উদ্বাস্তু, ডিটেনশন সেন্টার সবকিছুই ঢুকে গিয়েছে এই থিমে। সেকারণেই এই পুজোর থিম সাম্প্রতিক ও অভিনব।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিতর্কের কেন্দ্রে জুতোর প্যান্ডেল
দমদম পার্কের ভারতচক্রের পুজো। থিম হলো কৃষক আন্দোলন। সেটা করতে গিয়ে মণ্ডপের একাংশে জুতো, চটি লাগানো হয়েছিল। তা নিয়েই প্রবল বিতর্ক। ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগার কারণে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, কৃষক আন্দোলনের বিষয়টি বোঝাতেই এটা করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ভিতরের ছবি
জুতোর মণ্ডপের ভিতরের ছবি। এই অংশ নিয়ে অবশ্য কোনো বিতর্ক নেই। খুবই শিল্পসম্মতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপের এই অংশ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কলকাতার বুর্জ খলিফা
প্রায় ২৫০ জন কর্মী দুই মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে কলকাতার শ্রীভূমিতে তৈরি করেছেন বুর্জ খলিফা পুজোমণ্ডপ। ১৪৫ ফুট উঁচু। আয়নার ব্যবহার করা হয়েছে। দুবাইয়ের নজরকাড়া ভবনের অনুকরণে কলকাতায় এই পুজো প্যান্ডেল দেখতে ভিড় হয়েছে মারাত্মক। রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর শ্রীভূমির পুজো প্রতিবারই নতুন নতুন চমক দেয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিতর্কে বন্ধ লেজার শো, প্রবেশও বন্ধ
সন্ধ্যা নামতেই বুর্জ খলিফাতে শুরু হতো দৃষ্টিনন্দন লেজার শো। কিন্তু দমদম বিমানবন্দরের কাছে এই মণ্ডপের লেজার শো-র ফলে পাইলটদের বিমান রানওয়েতে নামাতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই লেজার শো বন্ধ করে দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছিল। একে করোনা, তার উপর বিমানবন্দরের রাস্তা প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়, তাই এখানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে প্রতিমা দর্শন। কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তির দেবী
নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজো। থিম দেশভাগ। দেবী এখানে শান্তির প্রতীক। তাই হাতে কোনো অস্ত্র নেই। সেরা পুজোর পুরস্কার পেয়েছে তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
চেতলা অগ্রণী
কলকাতার আরেকটি সেরা পুজো চেতলা অগ্রণী। অপূর্ব দুর্গাপ্রতিমা মানুষকে টেনে এনেছে অগ্রণীর মণ্ডপে।
একটি সংস্থার বিচারে কলকাতার সেরা প্রতিমা ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাঙ্ক পার্কের এই প্রতিমা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কুমারটুলি পার্কের পুজো
কলকাতার সেরা পুজোর তালিকায় স্থান পেয়েছে কুমারটুলি পার্কের এই পুজোও।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শারদ সম্মান পাওয়া পুজো
জগৎ মুখার্জি পার্কের এই পুজোও শারদ সম্মান পেয়েছে। অন্যরকম মণ্ডপ ও দৃষ্টিনন্দন প্রতিমার জন্য।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অন্যরকম প্রতিমা
টালা প্রত্যয়ের এই পুজোও পুরস্কার পেয়েছে। একেবারে অন্যরকম প্রতিমা। এখানেও দেবীর হাতে কোনো অস্ত্র নেই। ধ্যানমগ্ন দুর্গা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একডালিয়া এভারগ্রিন
রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সুখোপাধ্যায়ের পুজো। একডালিয়া এভারগ্রিন এখনো থিম পুজোয় নাম লেখায়নি। কিন্তু এই পুজোর আকর্ষণও কম নয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঐতিহ্যের পুজো
বাগবাজার সর্বজনীনও থিমের পুজোয় নেই। তারা ঐতিহ্যে বিশ্বাসী। কলকাতার অন্যতম পুরনো এই বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা দেখতে মানুষ বহু দূর থেকে আসেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া হলো, ''পুজোয় টাকা দিলে তার বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। কিন্তু পুজোয় দিলে ইদ, বড়দিনেও দেয়া উচিত। তা তো দেয়া হয় না। অধীরের বক্তব্য, রাজ্যে ঋণের বোঝা লাফিয়ে বাড়ছে। সরকার ডিএ দিতে পারে না। এই অবস্থায় পুজোকে ঘিরে বাঙালির আবেগ মুখ্যমন্ত্রী কিনতে চাইছেন।''
সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ''বাঙালির আবেগের উৎসব দুর্গাপুজো সরকারি সাহায্য ছাড়াই যুগ যুগ ধরে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী চান, সরকার টাকা দেবে, আর পুজো কমিটিগুলি মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, ফ্লেক্স লাগিয়ে তার বন্দনা করবে।''
তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, ''পুজোকে ঘিরেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির সচল হয়। অসংগঠিত ক্ষেত্রের লাখ লাখ মানুষ কাজ পান। এটা তাদের জীবন ও জীবীকার প্রশ্ন। তাই মুখ্যমন্ত্রী অনুদান দিয়ে তাদের ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চেয়েছেন।''
দুর্গা রূপে মমতা ব্যানার্জি এবং বিতর্ক
03:56
কেন আপত্তি?
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''জনগণের সরাসরি কাজে লাগে না, এমন জায়গায় খরচ করা আমার অপচয় বলে মনে হয়।''
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তের প্রশ্ন, ''মমতা কি শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখেননি? একটা দেশ কীভাবে দেউলিয়া হয়ে গেল, তা তো আমাদের চোখের সামনে আছে।'' ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। সরকার চাকরি দিতে পারছে না। সামান্য টাকা দিয়ে ঠিকে কর্মী নিয়োগ করছে। সেখানে এত টাকা কেন জলাঞ্জলি দেয়া হবে?''
আশিস মনে করেন, ''মমতা রাজনৈতিক স্বার্থেই এই অনুদান দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এভাবে বিজেপি-র হিন্দুত্বের মোকাবিলা করতে পারবেন না।''