1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর্থিক সংকটে থাকা মমতার ২৫৮ কোটির পুজো-প্যাকেজ

২৩ আগস্ট ২০২২

পশ্চিমবঙ্গের পুজো কমিটিগুলির জন্য ২৫৮ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪৩ হাজার পুজো কমিটি সরকারি অনুদান পাবে।

ফাইল ছবি।
ফাইল ছবি।ছবি: Prabhakarmani Tewari/DW

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ দিতে পারছে না রাজ্য সরকার। অনেক বিভাগ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ অর্থ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। কারণ, সরকারের কাছে টাকা নেই। সমানে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার নীতি নেয়ায় সিংহভাগ অর্থই চলে যাচ্ছে সুদ ও ঋণ পরিশোধ করতে। এই অবস্থাতেও পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে সরকারি সাহায্যের পরিমাণ আরো বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত, রাজ্যের ব্লক পর্যায় পর্যন্ত ৪৩ হাজার পুজো কমিটি ৬০ হাজার টাকা করে পাবে। সেই সঙ্গে তাদের বিদ্যুতের বিলেও ৬০ শতাংশ ভর্তুকি পাওয়া যাবে।  দমকল-পুরসভা-পঞ্চায়েত করও কমিটিগুলিকে দিতে হবে না। রাজ্যের আর্থিক হাল যেরকমই হোক না কেন, দুর্গাপুজো নিয়ে রীতিমতো কল্পতরু মমতা। 

পদযাত্রাও হবে

দুর্গাপুজো নিয়ে পদযাত্রার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ১ সেপ্টেম্বর এই পদযাত্রা হবে। দুর্গাপুজো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় এই পদযাত্রা হবে। দুপুর দুটোয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে জমায়েত হবে। সেখানে পুজো কমিটিগুলো আসবে। তারা রঙ-বেরঙের পতাকা, ছাতা নিয়ে রঙিন পোশাক পরে সেখানে যাবে। ১০ হাজার পড়ুয়াও তাতে অংশ নেবে। সেজন্য সব স্কুল-কলেজ আগে ছুটি হয়ে যাবে। অফিসও। 

বাঁশি, শাঁখ, ঢোল, ব্যান্ড নিয়ে মিছিল হবে। রানি রাসমণি রোড ধরে মিছিল ধর্মতলায় যাবে। এতদিন পুজোর পর বিসর্জনের সময় কার্নিভাল হতো। এবার শুরু ও শেষে দুইদিন কার্নিভালের ব্যবস্থা করেছেন মমতা। 

দীর্ঘ ছুটি

এবার দুর্গাপুজোয় টানা ১১ দিন সরকারি ছুটি থাকবে। মমতা জানিয়েছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপুজোর ছুটি থাকবে। তবে সরকারি কর্মীদের জন্য ছুটির সুখবর এখানেই শেষ নয়। ২২ ও ২৩ অক্টোবর শনি ও রোববার। ২৪ ও ২৫ অক্টোবর থাকবে কালীপুজোর ছুটি। ২৬ তারিখ অতিরিক্ত ছুটি নেয়া যাবে। ২৭ অক্টোবর ভাইফোঁটার ছুটি। ২৯ ও ৩০ আবার শনি ও রোববার। ৩১ তারিখ ছটের ছুটি। ফলে আবার কার্যত ১০ দিনের ছুটি পাবেন সরকারি কর্মীরা। ছুটিতে ছুটিতেই কেটে যাবে অক্টোবর মাস। ফলে মমতার পুজো-প্যাকেজের মধ্যে কমিটিগুলিকে ঢালাও অনুদান, কর্মীদের ঢালাও ছুটি, কার্নিভাল সবই আছে। 

কেন সরকারি সাহায্য?

মমতা বলেছেন, ''অনেকে অনেকরকম কথা বলেন। তারা বলেন, কলকাতায় নাকি দুর্গাপুজো হয় না। সরস্বতী পুজো করতে দেয়া হয় না। কিন্তু সত্য হলো, কলকাতার মতো দুর্গাপুজো আর কোথাও হয় না।'' তাই সরকারের হাতে টাকা না থাকলেও পুজো কমিটিগুলোকে সাহায্য দেয়ার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। 

বিরোধীদের সমালোচনা

বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ''টাকার অভাবে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতি করা যাচ্ছে না। রাস্তার মেরামতি হচ্ছে না। হাসপাতালে ওষুধ নেই। খালি পদে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। সরকারি কর্মীদের ডিএ দেয়া হচ্ছে না। সরকার ভাবছে পুজো কমিটিগুলো তাদের বাঁচিয়ে দেবে।'' 

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া হলো, ''পুজোয় টাকা দিলে তার বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। কিন্তু পুজোয় দিলে ইদ, বড়দিনেও দেয়া উচিত। তা তো দেয়া হয় না। অধীরের বক্তব্য, রাজ্যে ঋণের বোঝা লাফিয়ে বাড়ছে। সরকার ডিএ দিতে পারে না। এই অবস্থায় পুজোকে ঘিরে বাঙালির আবেগ মুখ্যমন্ত্রী কিনতে চাইছেন।'' 

সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ''বাঙালির আবেগের উৎসব দুর্গাপুজো সরকারি সাহায্য ছাড়াই যুগ যুগ ধরে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী চান, সরকার টাকা দেবে, আর পুজো কমিটিগুলি মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, ফ্লেক্স লাগিয়ে তার বন্দনা করবে।'' 

তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, ''পুজোকে ঘিরেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির সচল হয়। অসংগঠিত ক্ষেত্রের লাখ লাখ মানুষ কাজ পান। এটা তাদের জীবন ও জীবীকার প্রশ্ন। তাই মুখ্যমন্ত্রী অনুদান দিয়ে তাদের ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চেয়েছেন।'' 

দুর্গা রূপে মমতা ব্যানার্জি এবং বিতর্ক

03:56

This browser does not support the video element.

কেন আপত্তি?

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''জনগণের সরাসরি কাজে লাগে না, এমন জায়গায় খরচ করা আমার অপচয় বলে মনে হয়।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তের প্রশ্ন, ''মমতা কি শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখেননি? একটা দেশ কীভাবে দেউলিয়া হয়ে গেল, তা তো আমাদের চোখের সামনে আছে।'' ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। সরকার চাকরি দিতে পারছে না। সামান্য টাকা দিয়ে ঠিকে কর্মী নিয়োগ করছে। সেখানে এত টাকা কেন জলাঞ্জলি দেয়া হবে?''

আশিস মনে করেন, ''মমতা রাজনৈতিক স্বার্থেই এই অনুদান দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এভাবে বিজেপি-র হিন্দুত্বের মোকাবিলা করতে পারবেন না।''

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)