দুই দেশের লড়াইয়ে তুরস্ক ইন্ধন দিচ্ছে বলে কোনো কোনো মহল মনে করছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার শান্তি প্রস্তাব খারিজ করেছে দু'টি দেশই।
ছবি: Armenian Defense Ministry/AP/picture-alliance
বিজ্ঞাপন
নাগর্নো-কারাবাখের দখল নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের যুদ্ধ অব্যাহত। বৃহস্পতিবারেও যুযুধান দুই দেশ ক্রমাগত শেলিং করে গিয়েছে। নাগর্নো-কারাবাখের বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে। মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। এখনো পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে বহু সাধারণ মানুষও আছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাশিয়া দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সরকার তাতে রাজি হয়নি।
তুরস্ক কি আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে? যত দিন যাচ্ছে, ততই এই প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে। মঙ্গলবার আর্মেনিয়া অভিযোগ করেছিল, তুরস্কের এফ১৬ যুদ্ধবিমান তাঁদের বায়ুসেনার বিমান ধ্বংস করেছে। বুধবার ফের তারা দাবি করেছে, তুরস্কের যুদ্ধবিমান দিনভর আর্মেনিয়ার এয়ার স্পেসে বিপজ্জনক ভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে। তুরস্ক অবশ্য কোনো অভিযোগই স্বীকার করেনি। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান বলেছেন, আজারবাইজানের উচিত নাগর্নো-কারাবাখ দখল করে আর্মেনিয়াকে শিক্ষা দেওয়া। তার জন্য তুরস্ক আজারবাইজানকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
আজারবাইজান, আর্মেনিয়ার মধ্যে সংঘাতের কারণ কী?
২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছে৷ এর কারণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Armenian Defense Ministry/Reuters
সংঘাতের কারণ
২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছে৷ এর কারণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল৷
ছবি: Defence Ministry of Azerbaijan/Reuters
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল কোথায়?
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ৷ পাহাড় ও বন ঘেরা দুর্গম এই অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাস করেন৷ তাদের বেশিরভাগই আজারবাইজানের শাসনের বিরোধী আর্মেনীয়৷ অঞ্চলটির আয়তন প্রায় চার হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার৷
প্রথম সংঘাত
গত শতকের আশির দশকের শেষদিকে যখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার প্রক্রিয়া চলছে, তখন থেকেই নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাতের শুরু৷ ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে এই সংঘাত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাণ হারান প্রায় ৩০ হাজার মানুষ৷ সংঘাতের কারণে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আর্মেনীয়দের হাতে৷
ছবি: Reuters/Photolure/V. Baghdasaryan
আর্মেনিয়ার সহায়তা
১৯৯৪ সালের পর থেকে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে আর্মেনিয়া৷ এছাড়া সারা বিশ্বে থাকা আর্মেনীয়রাও ঐ অঞ্চলের জন্য দান করে থাকেন৷ ছবিতে কারাবাখের সবচেয়ে বড় শহর স্টেপানাকিয়ার্ট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Zuma/imago images
মাঝেমধ্যেই সংঘাত
যুদ্ধবিরতি চললেও নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সৈন্যদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ ২০১৬ সালে এক সংঘাতে (ছবি) প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারান৷ এছাড়া গত জুলাইতেও মোটামুটি বড় আকারের সংঘাত হয়েছিল৷ রবিবার শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন৷ নিহতদের অন্তত ১১ জন বেসামরিক নাগরিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Baghdasaryan
আবার কেন সংঘাত?
জুলাইয়ের সংঘাতের সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার সমাধানে ততটা আগ্রহ দেখায়নি৷ অতীতে রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ঐ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে মধ্যস্থতা করলেও বর্তমানে করোনা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, বেলারুশ, লেবানন পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া যায়নি৷ তাই রবিবার থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷
ছবি: Armenian Defense Ministry/Reuters
এবারের সংঘাত কতটা বড়?
‘জর্জিয়ান স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিসিস সেন্টার’-এর সিনিয়র ফেলো গেলা ভাসাদজে বলছেন, ১৯৯০ দশকের পর এই ‘প্রথম’ আর্মেনিয়া ও কারাবাখ ঐ অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক যান জড়ো করছে৷ আজারবাইজানও সামরিক আইন জারি করেছে৷ এছাড়া আকাশ থেকে হামলা চালানোর সিস্টেম, ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি সবকিছুর ব্যবস্থা করছে দেশটি৷
খ্রিস্টানপ্রধান আর্মেনিয়ার সবচেয়ে বড় বন্ধু রাশিয়া৷ তাদের সঙ্গে সামরিক চুক্তিও আছে দেশটির৷ আর মুসলমানপ্রধান দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি আছে তুরস্কের৷ তবে বিশ্লেষক গেলা ভাসাদজে বলছেন, রাশিয়া ও তুরস্ক হয়ত সরাসরি এই সংঘাতে যুক্ত হবে না, কারণ, এতে যুক্ত হয়ে খুব বেশি লাভ নেই৷ বরং এর ফলে তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷
ছবি: Armenian Defense Ministry/AP/picture alliance
রাশিয়ার সুযোগ
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে সমর্থন জানিয়ে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের বিরোধী নাভালনিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ সমালোচনার মুখে আছে রাশিয়া৷ এই অবস্থায় রাশিয়া যদি আলোচনার মাধ্যমে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে বিশ্বমঞ্চে রাশিয়া প্রশংসিত হতে পারে৷ পুটিন ইতিমধ্যে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look/Belarus 24 TV
9 ছবি1 | 9
বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই ধারণা, তুরস্ক সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়লে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ চেহারা নেবে। অন্য দিকে, রাশিয়া বুধবার দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানায়। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, যুদ্ধ থামিয়ে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আলোচনায় বসুক। কিন্তু আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া-- কোনো দেশই এই প্রস্তাবে কর্ণপাত করেনি। আজারবাইজানের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর্মেনিয়া নাগর্নো-কারাবাখ থেকে সরে গেলেই তারা শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। তার আগে পর্যন্ত যুদ্ধ প্রক্রিয়া জারি থাকবে। আর্মেনিয়াকে শিক্ষা দেওয়া হবে। অন্য দিকে আর্মেনিয়াও জানিয়েছে, আজারবাইজান তাদের এলাকা দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের উচিত জবাব দেওয়া হবে।
দীর্ঘ দিন ধরে নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের দ্বন্দ্ব। তবে ১৯৯৪ সালে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়। সেই চুক্তি লঙ্ঘন করেই দুই দেশ যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। নাগর্নো-কারাবাখ এখনো মুক্তাঞ্চল। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশাসনও রয়েছে। তাদের বক্তব্য, দুই তরফ থেকেই তাদের এলাকার উপর আক্রমণ হচ্ছে। আজারবাইজান ড্রোন ব্যবহার করে গোলাবর্ষণ করছে বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই তারা মনে করছে।