আর কতদিন জার্মানিতে মাস্ক পরে কেনাকাটা করতে হবে? চ্যান্সেলার ম্যার্কেলের মতে অনেকদিন, তবে বিভিন্ন রাজ্যের রাজনীতিবিদরা ভিন্নমত পোষণ করেন৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংক্রমণের হার কম থাকায় গত সপ্তাহান্তে মেকলেনবুর্গ ফোরপর্মান রাজ্যের অর্থ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী হ্যারি গ্লাভে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন৷ তা নিয়ে সারা দেশে রাজনীতিকদের মধ্যে বিতর্কের সূচনা হয়৷তিনি বলেছিলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণের হার যদি এত কম থাকে তাহলে মাস্ক পরার আর তেমন কোনো প্রয়োজনীয়তা আমি দেখছি না৷''
করোনা-মাস্ক নিয়েও শিল্প!
ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আজকাল পথেঘাটে মাস্ক-পরা মানুষের অভাব নেই৷ শিল্পী ও ডিজাইনাররা মাস্ক সাজিয়ে তুলছেন নতুন সাজে৷ এমনই কিছু দৃষ্টান্তের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/H. Yan
গ্রাফিটি-মাস্ক
আন্তর্জাতিক স্তরে স্ট্রিট-আর্ট শিল্পীরা বেশ কিছুকাল আগেই করোনা ভাইরাস ও সাদা মাস্ক নিয়ে সৃজনশীল কাজ শুরু করে দিয়েছেন৷ যেমন, ১৬ বছর বয়সি স্প্রে শিল্পী এসএফ এথেন্সে ছাদের উপর বিশাল এক ছবি এঁকেছেন৷ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে সেই মোটিফ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/ANE
মাস্ক নিয়ে ফ্যাশন শো
মার্কিন ফ্যাশন ব্র্যান্ডের তৈরি এই মাস্ক দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা যায় কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ তবে মুখ খালি রাখার বদলে এমন কাপড়ের মাস্ক পরা ভালো৷ ২০২০ সালের শুরুতে নিউ ইয়র্ক শহরে এক ফ্যাশন শো-তে প্রদর্শিত এই মাস্ক মুখ ঢাকার শৌখিন আভরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল৷ অনেক ফ্যাশন-সচেতন মানুষ সাদামাটা মাস্কের বদলে রংচংয়ে, সুন্দর মাস্ক পরতে পছন্দ করেন৷
ছবি: Getty Images/NYFW - The Shows
ডিজাইনার মাস্ক
জার্মানিসহ কয়েকটি দেশের নামী ডিজাইনাররা করোনা-মাস্ক নিয়ে মন্দা কাটিয়ে ব্যবসার নতুন আইডিয়া পাচ্ছেন৷ বার্লিন, কোলোন ও মিউনিখ শহরের তরুণ ও অপরিচিত ডিজাইনাররাও এই প্রবণতায় গা ভাসাচ্ছেন৷ নাকমুখ ঢাকা দেবার এই আবরণ সম্ভবত ২০২০ সালের করোনা-ফ্যাশন হিসেবে মিউজিয়ামে স্থান পাবে৷
ছবি: Getty Images/NYFW - The Shows
টাইয়ের সঙ্গে মানানসই মাস্ক
কেতাদূরস্ত মানুষ বেশ ফিটফাট থাকতে ভালোবাসেন৷ করোনা সংকটের সময়েও হালফ্যাশনের কোট-প্যান্ট-টাই না পরলে তাঁদের চলে না৷ বার্লিনের এক টাই কোম্পানি লম্বা অথবা বো টাইয়ের সঙ্গে মানানসই মাস্ক তৈরি করেছে৷ শুধু পুরুষদের জন্যই ভালো মানের রেশম দিয়ে তৈরি এই সব মাস্কের কয়েকটি সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
মাস্কের বৈচিত্র্যে সৃজনশীলতার ছোঁয়া
মাস্ক তৈরির ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার কোনো সীমা নেই৷ শুধু ধুয়ে আবার ব্যবহার করতে পারলেই চলবে৷ তবে এমন সুন্দর কাজ করা ডিজাইনার মাস্ক বারবার ওয়াশিং মেশিনে ঢোকানোর প্রয়োজন না হলেই ভালো৷ ফুটন্ত পানি ঢেলে পরিস্কার করে ঠান্ডা হবার পর তোয়ালের মধ্যে বিছিয়ে সেটি গুটিয়ে ফেলতে হবে৷ শুকিয়ে গেলে আবার পরে ফেলা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Koall
সাত দিনে সাত মাস্ক
যারা নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করছেন, তাদের অনেকে আবার দিন অনুযায়ী আলাদা ডিজাইনার মাস্ক ব্যবহার করছেন৷ সেগুলি যাতে এলোমেলো না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে সাপ্তাহিক চার্টের মতো মাস্ক ঝোলানোর ব্যবস্থা করেছেন একজন৷ যেমন শনিবার ফুটবলের দিন, তাই মাস্কেও হলের মোটিফ৷ পছন্দের ক্লাবের প্রতি সংহতি দেখাতে ফ্যান হিসেবে ক্লাবের লোগোসহ মাস্ক পরে টেলিভিশনের সামনে বসার অনুভূতিই আলাদা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hörhager
পরিবেশবান্ধব মাস্ক
কেউ যদি ফ্যাশনদূরস্ত মাস্ক পছন্দ না করেন, তিনি অনায়াসে নাকমুখ ঢাকতে প্রাকৃতিক উপাদানও ব্যবহার করতে পারেন৷ বড় একটা পাতা নিয়ে রাবারব্যান্ড দিয়ে এভাবে মাস্কের কাজ চালানো সম্ভব৷ এমনটা কীভাবে করা সম্ভব, গাজার এই ফিলিস্তিনি মেয়েটি তা দেখিয়ে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
করোনা সংকটের সময় শিল্পকলা
চারুকলার ক্ষেত্রেও করোনা মাস্কের মোটিফ প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে৷ কখনো চিত্রকলা বা পোস্টারে তা শোভা পাচ্ছে৷ কখনো বা কার্টুন হিসেবে মোনালিসা নাকমুখ ঢেকে রেখেছে৷ পোল্যান্ডের ভাস্কর ইগর মিতোরাই ক্রাকো শহরে প্রকাশ্যে বিশাল এক ভাস্কর্য সৃষ্টি করেন৷ এখন সেটির মুখও ঢেকে দিয়েছেন তিনি৷ হয়তো বর্তমান সংকটের স্মরণে এই আবরণ চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
8 ছবি1 | 8
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বের্ন্ড আল্টহুসমানও সংক্রমণের হার এমন থাকলে মাস্ক না পরার অনুমতি দেয়ার পক্ষে৷ স্যাক্সনি রাজ্যের সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী পেট্রা ক্যোপিংয়েরও একই মত৷
তবে সোমবার রাতে মাস্ক পরা নিয়ে নতুন এই বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ম্যার্কেল সরকারের মুখপাত্র আন্দ্রেয়াস টিম জানিয়েছেন, সরকার মনে করে, মেকলেনবুর্গ -ফোরপর্মান রাজ্যে আগের মতোই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক থাকা দরকার৷
রাজনীতিকদের বড় একটা অংশ এখনো মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক রাখার পক্ষে৷
কেনাকাটার সময় মাস্ক পরা বাতিলের কঠোর বিরোধিতা করে জার্মান চ্যান্সেলার ম্যর্কেল বলেছেন, ‘‘যেসব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়, সেসব স্থানে মাস্ক পরা গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অপরিহার্য৷''
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন স্পান এ বিষয়ে বলেন, ‘‘জনগণ অধৈর্য হওয়ার কারণ আমি বুঝতে পারছি, তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চান, কিন্তু ভাইরাস এখনো আছে৷ তাই বদ্ধঘরে মাস্ক পরা জরুরি৷''