রাতে চলন্ত বাসে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয় এক তরুণীকে৷ ধর্ষণ ও হত্যার পরও ধর্ষকরা বিকারহীন৷ পৈশাচিক এই ধর্ষণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়৷
বিজ্ঞাপন
গত শুক্রবার টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ওই বাসের পাঁচ কর্মী৷ মুঙ্গলবার পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ আটকদের মধ্যে তিনজন ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে৷ একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত ওই তরুণী বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাসে করে কর্মস্থল ময়মনসিংহে ফিরছিলেন৷
টুইটারে খবরটি শেয়ার করে তাজিম তাঁর পরিচিত সব নারীকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘সকল বান্ধবী, ছোটবোন, বড়বোনগণ পড়ুন আর সাবধান হোন৷ সমাজে খারাপ মানুষের অভাব নেই৷''
শামিম রহমান খবরটি পড়ে ক্ষুব্ধ এবং হতাশ৷ তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ধর্ষণ রোধে আমাদের অপর্যাপ্ত আইন দেখে আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করছে৷ কোথায় আমাদের আইন প্রণেতারা? এখন কী করছেন তাঁরা? টেলিভিশনে গেলেই তাঁরা বাচাল হয়ে পড়েন৷ ধর্ষকদের সব ক্ষেত্রে ফাঁসিই হওয়া উচিত৷''
ধর্ষণের খবর এলেই শুরু হয় সাময়িক তোলপাড়৷ তারপর ধীরে ধীরে সবাই তা ভুলে যান৷ এই বিষয়টি লক্ষ্য করে তীব্র হতাশা নিয়ে ফেসবুকে রূপম মজুমদার লিখেছেন, ‘‘পরিবহনে নারীরা নানানভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন৷ গোটা দেশ এ নিয়ে উত্তাল হবার কথা ছিল৷ হয়নি৷ কখনোই না৷ কোথাও পরিচ্ছন্নতা নাই৷ কোথাও একাত্তরের মতন চেতনার জোয়ার নেই৷ রাষ্ট্র তৈরি করছে একেকটা বদমাশ৷ ভালো মানুষ হবার শিক্ষা আজ কোথাও দেওয়া হয় না৷ তনুর ধর্ষক/খুনি কে বা কারা, তা-ই তো আমরা জানতে পারলাম না৷ গুরু পাপে লঘু শাস্তিতে পরিসংখ্যানের কলেবরই কেবল বৃদ্ধি পাচ্ছে৷''
অনেকের মতো জামশেদ জনি রিশাদও এ অবস্থার অবসান চান৷ চান ধর্ষকদের কঠোর সাজা৷ দেশে আর কেউ ধর্ষণের শিকার না হোক – এ-ও চান তিনি৷ কিন্তু কবে আসবে সেদিন? ফেসবুকে সেই প্রশ্নটা রেখেছেন তিনি এভাবে, ‘‘আর কত নারী ধর্ষিত হলে, কত মানুষের মৃত্যু হলে, আমাদের বিবেক জাগবে?''
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?